পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৩ মে, ২০১৭

রাডার বিজয় দিবস সংখ্যা (সম্পূর্ণ)


* পিডিএফ কপি পেতে ক্লিক করুন এখানে

[ব্লগ সম্পাদকের নোট: রাহুমুক্তি সংখ্যা আপলোড করার দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর  অবশেষে রাডারের বিজয় দিবস সংখ্যা তুলে দেয়া সম্ভব হলো। নানা কারণে এতদিন এ বিষয়ে কাজ করা যায়নি, এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

রাহুমুক্তি সংখ্যার পরই ১৯৯১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। অনিয়মিত ম্যাগাজিনটির ৩২-পৃষ্ঠার এই সংখ্যাটিও অন্যান্য সংখ্যাগুলোর মতো সে সময় ব্যাপক প্রাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছিল। আমরা এখানে এই সংখ্যার সব লেখা আগা থেকে গোড়া বহুবহু তুলে দিয়েছি। কিছু বানান সংশোধন করা ছাড়া কোন লেখা এডিট করা হয়নি। আশাকরি লেখাগুলো এ সময়ের পাঠকদেরও ভালো লাগবে।]


রাডার
হিল লিটারেচার ফোরামের একটি অনিয়মিত প্রকাশনা
১৬ই ডিসেম্বর’৯১
বিজয় দিবস সংখ্যা


বিজয় দিবস ও আজকের বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্র ও জনগণের প্রত্যাশা

তথাকথিত কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি পার্বত্য জনগণের দুর্ভোগ

খালেদার প্রতি CHT Commisson -এর চিঠি

এম. এন. লারমাকে যেমন দেখেছি

পেরুর গণযুদ্ধই বিশ্ব বিপ্লবের নতুন অগ্রযাত্রা

তিন জন ছাত্র নেতার সাক্ষাতকার


পৃষ্ঠা - ২

চিঠি পত্র

“রাডার”-কে অভিনন্দন
প্রিয় সম্পাদক,
নিপীড়িত নির্যাতিত জুরাছড়ি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে ও “রাডার” প্রকাশনা কমিটিকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি। রাডারের “রাহুমুক্তি” সংখ্যা আমার খুব ভালো লেগেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান দঃসময়ে আপনাদের এই সাহসী পদক্ষেপকে আমি স্বাগত জানাই। আমাদের ছাত্র সমাজকেই জেগে উঠতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে। “রাডার” জুম্ম ছাত্র সমাজের মধ্যে সংগ্রামী চেতনার অগ্নিমশাল জ্বেলে দিক -এ কামনা করছি।                                                                                                       
জে. পি. চাকমা / জুরাছড়ি।

“আমরাও আছি রাডারের প্রতিবাদী ব্যানারে”
কাপুরুষের মতো সব সহ্য করছি আমরা। দেখেও না দেখার ভান করছি, শুনেও না শুনার মতো, জেনেও না জানার মতো অভিনয় করছি। যেন সবাই নির্জীব জড় পদার্থ হয়ে গেছি। সব সওয়া হয়ে গেছে আমাদের। কখনো শান্তিবাহিনীর লেবাস দিয়ে, কখনো তাদের সাথে গোপন সম্পর্ক থাকার সন্দেহে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় আমাদের ওপর। বিনা পারিশ্রমিকে রুটিন মাফিক প্রতিদিন বেগার খাটতে হয় সেনা ক্যাম্পে। বিশ্রী গালিগালাজ, কটুক্তি-সেতো কিল, ঘুষি আর বুটের লাঠির তুলনায় ভদ্র ব্যবহারই বটে। তবুও যেন হয়রানীর শেষ নেই। সারাদিন খাটুনির পর অবসন্ন দেহ এলিয়ে দিয়ে একটু নিরিবিলি ঘুমোবার যো নেই। স্যারদের হুকুম, পাহারা দিতে হবে সারা রাত - যাতেশান্তি সেনারা ক্যাম্প এট্যাক করতে না পারে।                                                    
কিন্তু আর কতদিন সহ্য করবো আমরা? চিরদিন কি হুকুমের গোলাম হয়ে থাকা ?   
শেষে রাডারকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি - এসব মধ্যযুগীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিবাদের জন্য। ভয় নেই। এগিয়ে চলো। আমরাও আছি “রাডার”-এর প্রতিবাদী ব্যানারে।                                                                          
রাসেল / খাগড়াছড়ি।

“চলার পথের সঙ্গী হতে চাই”
সংগ্রামী সম্পাদক, অভিনন্দন।                                                                                       
“কন্ঠরুদ্ধ কোন সুগায়কের অমর কবিতা
নিজেই প্রকাশ করে - আমি যেন তার
সুধা কন্ঠ হই, সুধা কন্ঠ হই।
রক্তিম যেন এক উত্তাপ হই।”
আপনারা কন্ঠরুদ্ধ পারিজাত ধবল মনের অধিকারী পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাসমূহের মনের কবিতা প্রকাশ করেছেন। প্রতিবাদ করেছেন অন্যায় অত্যাচারের। তাই আপনাদের রক্তিম উত্তাপের সাথে আমার মনের রক্তিম উত্তাপ আমি মিশিয়ে দিতে চাই। আমি আপনাদের চলার পথের সঙ্গী হতে চাই। হোক সে দুর্গম, বন্ধুর।
আমি “রাডার”-এর রিপোর্টার কিংবা সংবাদাতা হতে চাই। যদি হতে পারি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবো।
প্রদীপ তালুকদার / রাউজান।

“সংবাদাতা হতে আগ্রহী”
প্রিয় সম্পাদক
আমি পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার একজন জুম্ম জাতির সদস্য। সম্প্রতি প্রকাশিত “রাডার” -এর রাহুমুক্তি সংখ্যা পেয়েছি। আপনাদের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে “রাডার” -এ সংবাদাতা হতে ইচ্ছুক। পাহাড়ি জনগণ তথা জুম্ম জাতির সুখ-দুঃখ, নিপীড়ন, নির্যাতন ও শোষণের কথা দেশবাসীর সম্মুখে তুলে ধরার লক্ষ্যে আপনাদের অন্যতম প্রকাশনা জুম্ম মুক্তির পথ “রাডার” -এর সংবাদাতা হিসেবে যথাসাধ্য দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেলে আমার মানব জীবন স্বার্থক বলে মনে করবো।
মানিক ত্রিপুরা (মথুরা) / মাটিরাঙ্গা।

“রাডার” পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে
প্রতিবাদের আলো ছড়িয়ে দিক”

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, “রাডার”                                                                                                                       শুভেচ্ছাসহ লিখছি। আপনাদের প্রকাশিত ২৫ শে সেপ্টেম্বর ’৯১ -এর “রাহুমুক্তি সংখ্যা” পেয়েছি। পার্বত্য অঞ্চলের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে এ ধরনের আলো ছড়িয়ে পড়–ক এটাই আমরা চাই। কিন্তু একটা বড় পরিতাপের বিষয় যে, এযাবত যে সব সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল, এবং যত সংখ্যা পাঠিয়েছিলেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। যার কারণে গ্রামের ব্যাপক জনসাধারণের কাছে পৌছানো সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র কয়েকজন শিক্ষিত ব্যক্তি এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ভেতর সীমাবদ্ধ ছিল। সেজন্য আমি “রাডার” প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেসব আলো ছড়িয়ে দেবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এজেন্ট এবং সংবাদাতা হতে আগ্রহী। পরিশেষে আপনাদের পত্রিকার বহুল প্রচার কামনা করছি। 
সুভাষ দত্ত চাকমা / মারিশ্য।

“এখন আর জনগণ সেনাবাহিনীর আশ্রয় চায় না”
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক “রাডার”,  
শুভেচ্ছা নিবেন। গত ২৫শে সেপ্টেম্বর ’৯১ - এ প্রকাশিত “রাডার” আমার খুব ভাল লেগেছে। প্রত্যেকে চায় অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। তাই আমাদের শিক্ষিত ছাত্র সমাজকেই এই প্রতিবাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এত কিছু অন্যায় অবিচার হওয়া সত্ত্বেও আমরা নিরবে নিস্তব্ধে বসে আছি। তারা (সেনাবাহিনী) আমাদেরকে পুতুলের মত ব্যবহার করছে। আপনারা হয়ত জানেন, জুরাছড়ির মত উশৃংখল উপজেলা হয়ত অন্য কোথাও নেই। এ এলাকার জনগণকে সেনাবাহিনীরা দু’বছর আগে “গুচ্ছগ্রাম” নামক বন্দীশালায় বন্দী করে রেখেছে। সেনাবাহিনীরা যাকে তাদের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেছে বলে দাবী করে। কিন্তু এ এলাকার জনগণ আর সেনাবাহিনীর আশ্রয় চায় না। যেতে চায় তাদের নিজ নিজ বাসস্থানে। এখানে আগে অনেক নির্যাতন নিপীড়ন হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো আমার মনে নেই। কারণ তখন আমি ছোট ছিলাম। আমি এখনও অংকুরিত বীজ মাত্র। আমাকে বলতে আমার মত তরুণদেরকে যদি আপনারা শিক্ষা দেন তাহলে আমরাই একদিন জাতিকে শিক্ষা দেবো। আমি এখনও মাত্র ১৫ বছরে পা দিয়েছি। এই পনেরটি বসন্ত যেন পার্বত্য এলাকার নির্যাতনের স্বাক্ষী। পরিশেষে “রাডার” পরিবারের শুভ কামনা করে-

জয় গোপাল চাকমা / জুরাছড়ি।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা), কভার পৃষ্ঠা

রাডার
হিল লিটারেচার ফোরামের একটি অনিয়মিত প্রকাশনা
১৬ই ডিসেম্বর৯১
বিজয় দিবস সংখ্যা

 
বিজয় দিবস ও আজকের বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্র ও জনগণের প্রত্যাশা

তথাকথিত কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি পার্বত্য জনগণের দুর্ভোগ

খালেদার প্রতি CHT Commisson -এর চিঠি

এম. এন. লারমাকে যেমন দেখেছি

পেরুর গণযুদ্ধই বিশ্ব বিপ্লবের নতুন অগ্রযাত্রা

তিন জন ছাত্র নেতার সাক্ষাতকার

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা - ২, চিঠি পত্র

চিঠি পত্র

“রাডার”-কে অভিনন্দন
প্রিয় সম্পাদক,
নিপীড়িত নির্যাতিত জুরাছড়ি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে ও “রাডার” প্রকাশনা কমিটিকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি। রাডারের “রাহুমুক্তি” সংখ্যা আমার খুব ভালো লেগেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান দঃসময়ে আপনাদের এই সাহসী পদক্ষেপকে আমি স্বাগত জানাই। আমাদের ছাত্র সমাজকেই জেগে উঠতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে। “রাডার” জুম্ম ছাত্র সমাজের মধ্যে সংগ্রামী চেতনার অগ্নিমশাল জ্বেলে দিক -এ কামনা করছি।                                                                                                       
জে. পি. চাকমা / জুরাছড়ি।

“আমরাও আছি রাডারের প্রতিবাদী ব্যানারে”
কাপুরুষের মতো সব সহ্য করছি আমরা। দেখেও না দেখার ভান করছি, শুনেও না শুনার মতো, জেনেও না জানার মতো অভিনয় করছি। যেন সবাই নির্জীব জড় পদার্থ হয়ে গেছি। সব সওয়া হয়ে গেছে আমাদের। কখনো শান্তিবাহিনীর লেবাস দিয়ে, কখনো তাদের সাথে গোপন সম্পর্ক থাকার সন্দেহে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় আমাদের ওপর। বিনা পারিশ্রমিকে রুটিন মাফিক প্রতিদিন বেগার খাটতে হয় সেনা ক্যাম্পে। বিশ্রী গালিগালাজ, কটুক্তি-সেতো কিল, ঘুষি আর বুটের লাঠির তুলনায় ভদ্র ব্যবহারই বটে। তবুও যেন হয়রানীর শেষ নেই। সারাদিন খাটুনির পর অবসন্ন দেহ এলিয়ে দিয়ে একটু নিরিবিলি ঘুমোবার যো নেই। স্যারদের হুকুম, পাহারা দিতে হবে সারা রাত - যাতেশান্তি সেনারা ক্যাম্প এট্যাক করতে না পারে।                                                    
কিন্তু আর কতদিন সহ্য করবো আমরা? চিরদিন কি হুকুমের গোলাম হয়ে থাকা ?   
শেষে রাডারকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি - এসব মধ্যযুগীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিবাদের জন্য। ভয় নেই। এগিয়ে চলো। আমরাও আছি “রাডার”-এর প্রতিবাদী ব্যানারে।                                                                          
রাসেল / খাগড়াছড়ি।

“চলার পথের সঙ্গী হতে চাই”
সংগ্রামী সম্পাদক, অভিনন্দন।                                                                                       
“কন্ঠরুদ্ধ কোন সুগায়কের অমর কবিতা
নিজেই প্রকাশ করে - আমি যেন তার
সুধা কন্ঠ হই, সুধা কন্ঠ হই।
রক্তিম যেন এক উত্তাপ হই।”
আপনারা কন্ঠরুদ্ধ পারিজাত ধবল মনের অধিকারী পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাসমূহের মনের কবিতা প্রকাশ করেছেন। প্রতিবাদ করেছেন অন্যায় অত্যাচারের। তাই আপনাদের রক্তিম উত্তাপের সাথে আমার মনের রক্তিম উত্তাপ আমি মিশিয়ে দিতে চাই। আমি আপনাদের চলার পথের সঙ্গী হতে চাই। হোক সে দুর্গম, বন্ধুর।
আমি “রাডার”-এর রিপোর্টার কিংবা সংবাদাতা হতে চাই। যদি হতে পারি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবো।
প্রদীপ তালুকদার / রাউজান।

“সংবাদাতা হতে আগ্রহী”
প্রিয় সম্পাদক
আমি পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার একজন জুম্ম জাতির সদস্য। সম্প্রতি প্রকাশিত “রাডার” -এর রাহুমুক্তি সংখ্যা পেয়েছি। আপনাদের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে “রাডার” -এ সংবাদাতা হতে ইচ্ছুক। পাহাড়ি জনগণ তথা জুম্ম জাতির সুখ-দুঃখ, নিপীড়ন, নির্যাতন ও শোষণের কথা দেশবাসীর সম্মুখে তুলে ধরার লক্ষ্যে আপনাদের অন্যতম প্রকাশনা জুম্ম মুক্তির পথ “রাডার” -এর সংবাদাতা হিসেবে যথাসাধ্য দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেলে আমার মানব জীবন স্বার্থক বলে মনে করবো।
মানিক ত্রিপুরা (মথুরা) / মাটিরাঙ্গা।

“রাডার” পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে
প্রতিবাদের আলো ছড়িয়ে দিক”

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, “রাডার”                                                                                                                       শুভেচ্ছাসহ লিখছি। আপনাদের প্রকাশিত ২৫ শে সেপ্টেম্বর ’৯১ -এর “রাহুমুক্তি সংখ্যা” পেয়েছি। পার্বত্য অঞ্চলের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে এ ধরনের আলো ছড়িয়ে পড়–ক এটাই আমরা চাই। কিন্তু একটা বড় পরিতাপের বিষয় যে, এযাবত যে সব সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল, এবং যত সংখ্যা পাঠিয়েছিলেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। যার কারণে গ্রামের ব্যাপক জনসাধারণের কাছে পৌছানো সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র কয়েকজন শিক্ষিত ব্যক্তি এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ভেতর সীমাবদ্ধ ছিল। সেজন্য আমি “রাডার” প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেসব আলো ছড়িয়ে দেবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এজেন্ট এবং সংবাদাতা হতে আগ্রহী। পরিশেষে আপনাদের পত্রিকার বহুল প্রচার কামনা করছি।
সুভাষ দত্ত চাকমা / মারিশ্য।

“এখন আর জনগণ সেনাবাহিনীর আশ্রয় চায় না”
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক “রাডার”,  
শুভেচ্ছা নিবেন। গত ২৫শে সেপ্টেম্বর ’৯১ - এ প্রকাশিত “রাডার” আমার খুব ভাল লেগেছে। প্রত্যেকে চায় অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। তাই আমাদের শিক্ষিত ছাত্র সমাজকেই এই প্রতিবাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এত কিছু অন্যায় অবিচার হওয়া সত্ত্বেও আমরা নিরবে নিস্তব্ধে বসে আছি। তারা (সেনাবাহিনী) আমাদেরকে পুতুলের মত ব্যবহার করছে। আপনারা হয়ত জানেন, জুরাছড়ির মত উশৃংখল উপজেলা হয়ত অন্য কোথাও নেই। এ এলাকার জনগণকে সেনাবাহিনীরা দু’বছর আগে “গুচ্ছগ্রাম” নামক বন্দীশালায় বন্দী করে রেখেছে। সেনাবাহিনীরা যাকে তাদের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেছে বলে দাবী করে। কিন্তু এ এলাকার জনগণ আর সেনাবাহিনীর আশ্রয় চায় না। যেতে চায় তাদের নিজ নিজ বাসস্থানে। এখানে আগে অনেক নির্যাতন নিপীড়ন হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো আমার মনে নেই। কারণ তখন আমি ছোট ছিলাম। আমি এখনও অংকুরিত বীজ মাত্র। আমাকে বলতে আমার মত তরুণদেরকে যদি আপনারা শিক্ষা দেন তাহলে আমরাই একদিন জাতিকে শিক্ষা দেবো। আমি এখনও মাত্র ১৫ বছরে পা দিয়েছি। এই পনেরটি বসন্ত যেন পার্বত্য এলাকার নির্যাতনের স্বাক্ষী। পরিশেষে “রাডার” পরিবারের শুভ কামনা করে-

জয় গোপাল চাকমা / জুরাছড়ি।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): সম্পাদকীয়, পৃষ্ঠা - ৩

নিজের ঢোল নিজে বাজাই - ২
আমরা পাহাড় চিরে বেরিয়ে আসা
দুর্দান্ত ঝর্ণার মতো একঝাঁক প্রতিবাদী তরুণ।
তারুণ্যের অমোঘ শক্তিতে ছিন্ন করতে চাই
শত প্রতিকুলতা-জঞ্জাল-বাধাবন্ধন। 
ভাসিয়ে নিতে চাই সকল অন্যায়-অত্যাচার-শোষন-বঞ্চনা। 
প্রগতির উজান বেয়ে পৌঁছে যেতে চাই মুক্তির মোহনায়।
স্থান নেই এখানে সুবিধাবাদ ও শক্তির লেহী দালালদের।
আমরা নিপীড়িত মেহনতি মানুষের শত্রুদের
অকাতরে মৃত্যু কামনা করি।
বিরোধীতা করি সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা,
স্বৈরাচার আর সামরিক আধিপত্যের অশুভ শক্তির।
নিষ্কৃতি চাই নিয়ন্ত্রণের করাল থাবা থেকে।
ভাঙতে চাই জরাগ্রস্থ এই অপুংসক সমাজদেহকে। 
ইতিহাসের রক্ত ফেনিল পথ বেয়ে পৌঁছে যেতে চাই
শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থার স্বর্ণাভ জগতে।
অতএব, প্রগতির মন্ত্রে বিশ্বাসী 
টগবগে তারুণ্যের আপোষহীন সংগ্রামী
বন্ধুদের খুঁজে বেড়াচ্ছি সন্তর্পনে।
বেরিয়ে এসো অচলায়তন -
প্রতিক্রিয়াশীলতার পাহাড় ভেঙে।
মহাকালের নতুন স্বপ্ন নিয়ে এসো
হাতে হাত মেলাই।
এগিয়ে যাই দুঃসাহসী অভিযাত্রায়। 
রুঢ় বাস্তবতার কষাঘাত চিরে অনিবার্য
বিজয় অর্জনে যায় যদি জীবনটা যাক।


যোগাযোগ (বার্তা ও চিঠি) :-
৩২০, পূর্ব বাড়ী, জগন্নাথ হল, ঢা, বি।
৩০৯, শান্তি নিকেতন, চ, বি।

প্রাপ্তিস্থানঃ-
পাঠক সমাবেশ, মুজিব হলের বিপরীতে, ঢাকা।
দীপ্র প্রকাশনী, ৬৮/২ পুরানা পল্টন, বাসস-এর নীচে।
কারেন্ট বুক সেন্টার, চট্টগ্রাম।
বুক স্টল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
৩৫৬, নবাব আব্দুল লতিফ হল, রা, বি।

রাডার
সম্পাদকীয়
সুপ্রিয় পাঠক, প্রাণঢালা রক্তিম অভিবাদন। আপনাদের ব্যাপক সাড়া আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। স্রেফ “রাডার” কেনা অথবা  বেচার জন্যে অনেককে নিগৃহীত হতে হয়েছে। অনেককে পরতে হয়েছে শারীরিক নির্যাতনের মতো সহজলভ্য অলংকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঐ দানবীয় হিংস্রতা আপনাদের “মার্ডার হলেও রাডার কিনবো” - এই বুকফাটা বজ্র উচ্চারণকে রুদ্ধ করতে পারেনি। পারেনি রাডারের প্রতি আপনাদের অকৃত্রিম ভালোবাসাকে মার্ডার করতে। আমরাও আপনাদের অদম্য সাহস ও ভালোবাসাকে আমাদের বুকে ধারণ করে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করতে চাই - “মার্ডার হলেও রক্ত-অক্ষরে নিপীড়িত-নির্যাতিত জনতার কথা লিখে যাবো রাডারের পাতায় পাতায়।”
তাই প্রিয় পাঠক, শ্যোন দৃষ্টির রোষানলে পড়েছি আমরা। শত্রুর সন্দেহজনক গতিবিধি রাডারে স্পষ্ট। সম্মুখে কর্কটের অশুভ রাহু উদ্যত। যে কোন মুহুর্তে ’৭৪ এর মরণাস্ত্র আবার আঘাত হানতে পারে রাডারকে। অসহ্য নরক যন্ত্রনায় গোঙাতে পারে আমাদের প্রচ- প্রতিবাদী কন্ঠ। তবুও আমরা শংকিত নই। কারণ তারুণ্যের মহাশক্তির কোনো মৃত্যু নেই। আমরা অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছি রাডারের রাহুমুক্তিতে। প্রয়োজনে যে কোন অশুভ শক্তির অগ্নিকুণ্ডে তারুণ্যের সতীত্ত্ব পরীক্ষা দেবো অধিকারহারা দুর্ভাগা জনতার কথা বলতে। প্রিয় পাঠক, আমাদের সুখে, দুঃখে, বেদনাতে আমরা শুধু আপনাদের ভালোবাসার উঞ্চ উত্তাপ বুকে নিবিড়ভাবে অনুভব করতে চাই।
গণঅভ্যুত্থানের পর এক বছর পেরুলো। সামরিক স্বৈরাচার সরে গেছে শাসন কাঠামো থেকে। আজকের বিংশতিতম বিজয় বর্ষেও তো গণতন্ত্রের প্রাণখোলা নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। গণতন্ত্রের আদ্যাক্ষরও ভাবা যায় না আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে। অলিখিত সামরিক শাসন চলছে সুদীর্ঘ কাল থেকে। এভাবে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এ দেশের জওয়ান সেনাদের ভাবমূর্তিকে ধ্বংস করছে। হীন স্বার্থে সেনা ভাইদের অবতীর্ণ করানো হচ্ছে হানাদারের ভূমিকায়। একাত্তরে যারা দুর্ভাগা জনতার মুক্তির জন্য লড়েছিল জীবন বাজী রেখে, আজ তারাই পার্বত্য জনতার (অস্তিত্বের) সংগ্রামকে দমন করতে ব্যস্ত। কি বিচিত্র আমাদের এই দেশ।
আমরা সেনাবাহিনীর নয়, সেনাশাসনের বিরোধী। তাই আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অচিরেই সেনাশাসনের অবসান কামনা করি। এই বিংশতিতম বিজয় বার্ষিকীতে নির্বাচিত সরকারকে অবশ্যই গণতন্ত্রের পরীক্ষা দিতে হবে।
প্রিয় পাঠক, সামনে ইংরেজী নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছা।

“হিল লিটারেচার ফোরাম” -এর পক্ষে “রাডার” প্রকাশনা কমিটি ও সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ৪

ঘটনা প্রবাহ

১০ই নভেম্বর মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার মৃত্যু বার্ষিকী উদযাপিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের উদ্যোক্তা, প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপিত হয়। উল্লেখ্য, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর জনসংহতি সমিতির বিভেদপন্থীদের দ্বারা নৃশংসভাবে নিহত হন।
এই মহান নেতার স্মরণে ছাত্ররা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। ঢাকায় অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদ কক্ষে প্রয়াত নেতার জন্য এক স্মরণ সভার আয়োজন করে। স্মরণ সভার শুরুতে ছাত্ররা প্রয়াত নেতা ও তার সাথে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে। তারপর আলোচনা সভা শুরু হয়। আলোচকগণ প্রয়াত নেতার মৃত্যুকে জুম্ম জাতি সহ সমগ্র বাংলাদেশের অপুরণীয় ক্ষতি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। ছাত্র-ছাত্রীরা এই মহান নেতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে। আলোচনা সভা শেষে জগন্নাথ হল মন্দিরে প্রয়াত নেতার উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো হয়।                                                                                                                                      
খাগড়াছড়ির স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ঐ দিন খালি পায়ে স্কুল কলেজে যায় এবং কালো ব্যাজ ধারণ করে। বিকালে মহান নেতার উদ্দেশ্যে জনবল বৌদ্ধ বিহারে ফানুচ উড়ানো হয় এবং হাজার বাতি জ্বালানো হয়। কমপক্ষে ৪০০ জন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও যুবক-যুবতী এ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে।

রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি ছাত্ররা কলেজ প্রাঙ্গনে প্রয়াত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার মৃত্যু বার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বাঙ্গালী ছাত্র গণপরিষদ এতে বাধা প্রদান করে এবং সেখানে তারা সভা অনুষ্ঠিত করবে বলে তক্ষণাভাবে ঘোষণা দেয়। অনেক বাদানুবাদের পর কলেজ প্রাঙ্গনে কোন সভা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। ফলে পাহাড়ি ছাত্ররা লারমার স্মরণে একটি শোক মিছিল বের করে।                                                                                               
রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাঙ্গামাটি জেলখানার পাহাড়ি কয়েদীরাও ১০ই নভেম্বর প্রয়াত নেতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেন।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ৫-৮

মানবাধিকার
পার্বত্য চট্টগ্রাম মানবাধিকার লংঘনের স্বর্গপুরী

[সুষ্টু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে কথিত গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতার মসনদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরও পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। জেল-জুলুম, শারীরিক নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নি-সংযোগ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলা-ইত্যাদি ঘটনার খবর আমাদের হাতে অহরহ আসছে। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লংঘনের খবরগুলো এই কলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। - সম্পাদনা পরিষদ]

মাটিরাঙ্গা
মাটিরাঙ্গায় দুর্গাপূজা উসব পণ্ড দুর্গাদেবী প্রতিমাসহ গনেশ-কার্তিকের মূর্তি ভাঙচুর ঠাকুরবাবা প্রহৃত
মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। ১৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার ৯১ ইং। “গোমতী সর্বজনীন কালি মন্দির কমিটি” কর্তৃক বিপুল উসাহ উদ্দীপনা ও ভক্তি সহকারে যে “সারদীয় দুর্গা পূজা” আয়োজন করা হয় তা ভন্ডুল হয়েছে।
দুর্গোসবের ৮/১০ দিন পূর্বে প্রতিমাগুলো রঙ করানোর উদ্দেশ্যে রৌদ্রে শুকোতে দিলে স্থানীয় অনুপ্রবেশকারীরা রাতের অন্ধকারে সেগুলো ভাঙচুর করে দেয়। এতে দুর্গাদেবীর প্রতিমাসহ গনেশ-কার্তিক প্রভৃতি মূর্তিগুলোর হাত-পা ভেঙ্গে যায়। উক্ত ঘটনার সুবিচার পাবার আশায় পূজা উদযাপনকারীরা স্থানীয় ক্যাম্পের অধিনায়কের শরণাপন্ন হলে তাদেরকে ৫০০/৬০০ টাকা দিয়ে ফের দেয়া হয়। সুবিচার না পেয়ে তারা বিফল মনোরথে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষেরা ক্ষোভে-দুঃখে প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলে। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তারা আবারও মূর্তি নির্মাণ করে কোন মতে উসবের আয়োজন সম্পন্ন করেন।
কিন্তু অত্যাচার উপীড়নে তাদের সমস্ত আয়োজন ভন্ডুল হয়ে যায়। পূজা মহোসব চলাকালে মোঃ দুলাল মিয়া নামের এক বেআইনী অনুপ্রবেশকারী পাণ্ডা সন্দেহজনকভাবে মন্দির এলাকায় সারাদিন ঘোরাফেরা করে। সন্ধ্যায় মদ্যাসক্ত অবস্থায় সে প্রাক্তন ওয়ার্ড মেম্বার বিপ্র কুমারের বাড়ীতে যায় এবং বাসরিক পূজার আহার আয়োজনকালে মহোসবের উপাসক ঠাকুরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। দেব-দেবীদের উদ্দেশ্যে অবমাননাকর কথাবার্তা বলে মিথ্যা সংবাদ দেয়। মহোসবের উপাসক ঠাকুর শান্তিবাহিনীদের সাথে বসে খাওয়া-দাওয়া করছে বলেও ষড়যন্ত্রমূলক রিপোর্ট দেয়। নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন সহসা বিপ্র কুমারের বাড়ীতে চড়াও হয়ে ঠাকুরবাবাকে নির্বিচারে মারধোর করতে থাকে। এলাকার জনৈক ব্যক্তি তাতে আপত্তি জানালে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন তাকেও নিষ্ঠুরভাবে প্রহার করে।
উক্ত ঘটনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাড়াও এলাকাবাসীদের মনে দারুণ ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আনাচে কানাচে যেভাবে ধর্মীয় উপীড়নের মাত্রা বেড়ে চলেছে তাতে পাহাড়িদের মন বিষিয়ে উঠছে। নিজেদের আচার-প্রথা ও রীতি অনুসারে কোন সামাজিক অনুষ্ঠান করতে গেলে যেভাবে প্রতিবন্ধকতা আসছে তাতে মাটিরাঙ্গা উপজেলার পাহাড়ি জনসাধারণ বিক্ষুব্ধ। জানা গেছে, অনুপ্রবেশকারী দুলাল মিয়া নাকি স্থানীয় ক্যাম্পে মিথ্যা বানোয়াট রিপোর্ট দিয়ে এলাকাবাসীদের হয়রানী করছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।  [সংবাদটি মাটিরাঙ্গা থেকে প্রেরিত]

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ৯ - ১০

বিশেষ রচনা
বিজয় দিবস ও আজকের বাংলাদেশ
-মিঃ সুপ্রিয়

এবার আমরা বিশতম বিজয় বার্ষিকী পালন করছি। একুশে পা দেবে বাড়ন্ত যৌবনা এই বঙ্গ ললনা। পেছনে ফেলে এলো সে ধূসর অতীত। সমুখে নিরাশায় কুঁকড়ে যাওয়া অনুজ্জ্¦ল ভবিষ্যত। বর্তমানে চলছে এই প্রিয় মাতৃভূমির বুক জুড়ে তীব্র ক্ষুধা, দুর্যোগ, রাজনীতির বেসাতি আর অবিরাম সন্ত্রাসের রক্তাক্ত নৈরাজ্য। অবাধ ন্যাকামী নৃত্যের আস্ফালনে স্বাধীনতা বিরোধী কালো শকুনেরা অবজ্ঞা করছে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দ্রুত বিকাশে বিষিয়ে যাচ্ছে সামাজিক পরিবেশ। রাষ্ট্রীয় মঞ্চে অভিনয় করছে তারাই যারা একাত্তোরে বিজয় চায়নি। যারা হাত রাঙিয়েছে আমার মুক্তিযোদ্ধা পিতা কিংবা ভাইয়ের রক্তে। অসুরে চাহিদা মিটিয়ে নিয়েছে আমার স্নেহময়ী মা-বোনের ইজ্জত হরণ করে। সাধের সংসদীয় গণতন্ত্রের মহেন্দ্রকালে তারাই ভীড় জমিয়েছে খোলস পরে। তর তর করে উঠে গ্যাছে গণতন্ত্রকামী শত মানুষের লাশের সিঁড়ি ভেঙে ক্ষমতার লোভনীয় মোহনায়। পল্লী বাংলা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পর্যায়ে উদঙ্গ বাজিয়ে নাচানাচি শুরু করেছে তারা। বস্ত্র হরণ পর্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এখন স্রেফ লুটেপুটে নেয়ার আনন্দ আয়োজন। লক্ষ মুক্তিকামী জনতার রক্ত ভেজা পথ বেয়ে যে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে এই সুজলা, সুফলা নারীর পৃথিবী কাঁপানো জন্ম, তার হৃপিণ্ডেই চলছে নখর অস্ত্রোপচার। বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ, মহামারীর মত আজন্ম পাপে ভারী হয়ে আসছে মাটি। রূপসী বাংলার চোখে বিস্ময়, হৃদয় তার অসহনীয় বেদনায় বিক্ষত। ক্লান্তিকর এ পদযাত্রা।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ১১ - ১৩

প্রচ্ছদ নিবন্ধ
তথাকথিত কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি : পার্বত্য জনগণের দুর্ভোগ
- মিঃ মানবমিত্র ।

১.প্রাক-কথনঃ  রক্তাক্ত সংঘাতময় এক জনপদের নাম পার্বত্য চট্টগ্রাম। একদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দশ ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য সশস্ত্র গণসংগ্রাম এবং অন্যদিকে সেই সংগ্রামকে দমন করার জন্য সামরিক প্রচেষ্টা- পার্বত্য চট্টগ্রামকে পরিণত করেছে এক অগ্নিগর্ভ রণক্ষেত্রে। এখানে উগ্র বারুদ অত্যাচারে জনজীবন হয়েছে দুর্বিসহ। তথাকথিত কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির যাঁতাকলে পিষ্ঠ পাহাড়ি বাঙালী নির্বিশেষ। দীর্ঘ অত্যাচার, নির্যাতন আর যন্ত্রণায় ক্ষত-বিক্ষত পার্বত্য জনতার আজ বেদনার্ত উচ্চারণ - “জীবন আমাদের নয়”। সত্যিই সারা পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ এক “অপারেশন থিয়েটার”। কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি নামক বেয়নেট দিয়ে জনজীবনের ওপর চালানো হচ্ছে আনকোরা ডাক্তারের অপারেশন সার্জারী। পার্বত্য জীবন আজ কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির হাতে জিম্মি।

২.কেন কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি?: কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির আক্ষরিক অর্থই হলো সামরিকভাবে বিদ্রোহ দমন। পার্বত্য চট্টগ্রামে একজন সামরিক অফিসারের ভাষায়, “Our aim is to gradually finish the insurgency" কিন্তু কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির আপাতঃ উদ্দেশ্য বিদ্রোহ দমন হলেও এর চুড়ান্ত লক্ষ্য পাহাড়ি জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে দেয়া। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা তথা অস্তিত্ব সংরক্ষণের সমস্যা। অন্য কোন কারণে নয়, একমাত্র জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই এই বিদ্রোহের সূত্রপাত। কাজেই পাহাড়ি জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের গ্যারান্টি না দিয়ে সামরিক উপায়ে অর্থা কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির মাধ্যমে উদ্ভুত বিদ্রোহ দমন করার অর্থই হলো জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেয়া।

৩.কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির জন্য নিয়োজিত বাহিনীঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে বিশাল সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। Chittagong Hill Tracts Campaign and Information Network এর একটি প্রচারপত্র অনুযায়ী দেশের নিয়মিত বাহিনীর এক তৃতীয়াংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত। অপরদিকে CHT কমিশনের রিপোর্ট মতে যদি প্রতি দশজন পাহাড়ির জন্য একজন সেনাবাহিনী নিয়োজিত থাকে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাসংখ্যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০,০০০। কিন্তু কেন এই বিশাল সামরিক বাহিনী বা এই সামরিক বাহিনীর কাজ কি ? CHT কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী " The justification for the massive military buildup in the CHT is that it needed to counter and contain insurgency activities of the Shanti Bahini (SB). Counter-insurgency is their main task." বর্তমানে সারা পার্বত্য চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম এরিয়া কমাণ্ডারের নেতৃত্বে কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি চালাচ্ছে নিয়মিত সেনাবাহিনী, BDR, পুলিশ, আনসার, VDP, এবং একটি   Naval Base.

৪.কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির ট্রেনিং : কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির ট্রেনিং দেয়ার জন্য ঢাকায় Defence Staff College নামে একটি সামরিক কলেজ রয়েছে। সেখানে বৃটেনের সামরিক বাহিনীর অভিজ্ঞ অফিসারগণ প্রশিক্ষণ দেন। তাছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসারগণ বিদেশ থেকেও কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির ট্রেনিং নিয়ে থাকেন। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের US Army Intelligence Centre Military Staff College Fort Lavenworth, যুক্তরাজ্যের  Aldershot and Camberley, পাকিস্তানের  National Defence College এবং মালয়েশিয়ার Staff College ইত্যাদি।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ১৪ - ১৫

এম, এন, লারমাকে যেমন দেখেছি
-আব্দুল্লাহ সরকার

সত্তোর দশকের কথা। আজ দীর্ঘ প্রায় দেঢ় যুগ পর মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আমার অনেক কথাই বেশ মনে পড়ছে। তকালীন জাতীয় সংসদে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এবং আমি নিজের এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। সমসাময়িক রাজনৈতিক জীবনে আমরা পরস্পর খুবই কাছাকাছি ছিলাম। এতে করে তার চিন্তা, চেতনা, রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে কাছ থেকে জানার সুযোগ আমার হয়েছে। তখন সারা দেশের নানাবিধ সমস্যাসহ পার্বত্যাঞ্চলের সংখ্যালঘু পাহাড়ি জনগণের ন্যায্য অধিকার নিয়েও আমরা বিস্তারিত আলাপ করেছি। তিনি বরাবরই নিপীড়িত নির্যাতিত মেহনতি শ্রেণীর দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে জাতীয় সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করতেন। বাংলাদেশের মত একটি অনুন্নত পুজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় কোন রাজনৈতিক ধারণায় সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় তা তিনি গভীরভাবে ভাবতেন। দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার সমস্যাকে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নিয়ে আসার গুরুত্ব সম্পর্কে আমি প্রায়ই লারমাকে বলতাম। যেহেতু পাহাড়িয়া এলাকার জনগণ বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কোন বিচ্ছিন্ন অংশ নয়, কাজেই তাদের সমস্যা অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণেরই সমস্যা। ৭২ সালে তিনি পাহাড়ি জনগণের চার দফা দাবী শেখ মুজিবর রহমানের নিকট পেশ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, তকালীন সরকার তার দাবী সমূহের মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও বাঙালী জাতীয়তা থেকে ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বকীয় বৈশিষ্টের অধিকারী পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের অস্তিত্বের প্রশ্নে এম, এন, লারমা সুস্পষ্টভাবে যুক্তি দেখিয়েছেন। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকারের পর যে সরকারসমূহ ক্ষমতাসীন হয়েছেন তারাও পার্বত্য এলাকার ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতি অনুসরণ করেছে। যেহেতু তাদের শ্রেণীগত চরিত্র অভিন্ন, সুতরাং তাদের শাসন শোষণের প্রকৃতিও এক। এটাই বাস্তব। তাই স্বাধীনতাত্তোর প্রতিটি সরকারই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে একইভাবে চিহ্নিত করে তারই ভিত্তিতে দমন পীড়নের কৌশল অবলম্বন করেছে। ফলে সংখ্যালঘু জনগণের মনে মূল ভূ-খন্ডের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ক্রমেই অবিশ্বাস আর সন্দেহ বেড়েছে বই কমেনি।

মঙ্গলবার, ২ মে, ২০১৭

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ১৬ - ১৭

চালচিত্র

“মার্ডার হলেও রাডার কিনবো”
রাডারের রাহুমুক্তি সংখ্যা প্রকাশিত হবার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে এই সংখ্যাটি খুবই সমাদৃত হয়। অনেককে রাডার পড়ার জন্য নিগৃহীত হতে হয়েছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহালছড়িতে প্রতুল বিকাশ খীসাকে রাডার কেনার দায়ে জনৈক আর্মি কর্তৃক উরুতে লাঠি খেতে হয়েছে। পরে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “লাঠি নয়, মার্ডার হলেও রাডার কিনবো।”

কাশীরাম চাকমা-র জীবনের মূল্য ৫,০০০ টাকা
গত ১০ই মে ’৯১ রাতে কাউখালী উপজেলার মিদিঙ্গ্যাছড়ি গ্রামের কাশীরাম চাকমা নামক জৈনক কৃষককে সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে যায়। দৈহিক নির্যাতনের ফলে তিনি শেষ পর্যন্ত মারা যান। ১৩ তারিখ তার লাশ ফেরত দেয়া হয় এবং তার সকারের জন্য ৫,০০০ টাকা প্রদান করে বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য এলাকাবাসীকে বিশেষভাবে হুমকি দেয়া হয়। উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালে এই কাউখালীতেই সংঘটিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে কলংকময় ঘটনা “কলমপতি হত্যাকাণ্ড”।

সহানুভূতি চাওয়ার শাস্তি ৪০০ ঘনফুট কড়ই গাছ
খাগড়াছড়ি জেলার ভাইবোনছড়া আর্মি ক্যাম্প কমা-ারের কড়া নির্দেশ- “গুচ্ছগ্রামবাসীদের সপ্তাহে অন্ততঃ দুদিন বিনা পারিশ্রমিকে ক্যাম্পে কাজ করে দিতে হবে। অবহেলা করলে চরম দণ্ড।” লাঠি ছাড়া কথা বলতে তিনি অভ্যস্ত নন। “অসহায় গ্রামবাসী সপ্তাহে একদিন ক্যাম্পে কাজ করবে এবং কমাণ্ডার সাহেব তার লাঠি ব্যবহার করবেন না”- এই মর্মে জনৈক জেলা পরিষদ সদস্যের মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কিন্তু বিধি বাম। সদয় দৃষ্টি বর্ষিত হলো না। বরং কমা-ার সাহেব আরো বেশী ক্ষেপে গেলেন। তার বিরুদ্ধে আপত্তি দাখিল! এত বড় ধৃষ্টতা! অতএব, গ্রাসবাসীদের ডেকে কড়া নির্দেশ এই ধৃষ্টতা দেখানোর বাড়তি সেলামী হিসেবে ৪০০ ঘনফুট কড়ই গাছ সংগ্রহ করে দিতে হবে। অনন্যোপায় হয়ে সন্ত্রস্ত গুচ্ছগ্রামবাসী হুকুম মানতে বাধ্য হয়।

“বিশ্বজি আর সুবোধকে আটক করতে পারে না”
গত ৯ই জুলাই ঢাকার টি,এস,সি - তে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন উপলক্ষে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শাসনের চিত্র তুলে ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের জন্য ৫ দফা দাবী সম্বলিত একটি লিফলেট প্রচার করে। এজন্যে খাগড়াছড়ি ক্যান্টম্যান্টে ডাক পড়ে পদলেহী লেজুরদের, যারা “জেলা পরিষদ” নামক প্রতিষ্ঠানে পুতুল নাচ দেখান। স্যারেরা গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে সামনে বসা। বার বার উক্ত লিফলেটটি পড়ে শুনানোর পর স্যার বললেন- “তোমাদের আমরা কী জন্য বানিয়েছি ? তোমাদের ছেলেরা ঢাকায় গিয়ে এগুলো কি করছে ? তোমরা এদের নিষেধ করতে পার না?” ইত্যাদি ইত্যাদি। জেলা পরিষদ নেতারা বাকশক্তিহনি। তারা স্যারদের সামনে কিছুই বলতে পারলেন না। শেষে বেরিয়ে এসে পুরুষোত্তম, পূর্ণজ্যোতি, অরুণোদয় পরস্পরকে বলাবলি করতে লাগলেন- “খালি আমাদের উপর খবরদারী। বিশ্বজি আর সুবোধ -কে আটক করতে পারে না?” উল্লেখ্য পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন বাবু সুবোধ বিকাশ চাকমা এবং সভাপতিত্ব করেছিলেন বাবু বিশ্বজি চাকমা। তাই তাদের উপর লেজুড়দের এত আক্রোশ।

“বুয়েট; বি,আই,টি; কৃষি কলেজে পাহাড়ি ছাত্রদের ভর্তি অনিশ্চিত”
বুয়েট; বি,আই,টি; মেডিকেল ও কৃষি কলেজে যে কোটা সিষ্টেম চালু আছে তার সিলেকশন দিয়ে থাকেন চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জি,ও,সি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এবার যথা সময়ে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীরা দরখাস্ত দাখিল ও পরীক্ষা দেয়ার পরও জি,ও,সি, ভর্তি অনুমোদন দিচ্ছেন না। অথচ ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির শেষ সীমা অতিক্রান্ত হয়ে ক্লাশ শুরু হয়ে গেছে। এভাবে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্য চট্টগ্রাম সেনানিবাসে জিম্মি হয়ে আছে।

“রাডার বিক্রির দায়ে মুচলেকা আদায়”
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত দেওয়ান রাজুকে রাডার বিক্রয় করার জন্য পুলিশ ১লা অক্টোবর ৯১ ইং আটক করে। পরে তাকে “পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাথে সংশ্লিষ্টতা পরিত্যাগ করবে” -এই মুচলেকা আদায় করে মুক্তি দেয়া হয়। বর্তমানে রাঙ্গামাটির লাইব্রেরীগুলোতে “রাডার” বিক্রি নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

“ষ্টাইপেণ্ড প্রদানে ক্যাপ্টেন হারুন ও দীপালোর অবৈধ প্রভাব”
গত ২৪/৯/৯১ ইং তারিখে মহালছড়ি উপজেলা পরিষদের ষ্টাইপেণ্ড প্রদানের জন্য বাছাই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহেব যোগ্যতার ভিত্তিতে বৈধ ছাত্র- ছাত্রীদের ষ্টাইপে- প্রদানের পক্ষপাতি। কিন্তু বাঁধ সাধলেন ক্যাপ্টেন হারুন ও তার অনুগত লেুজুড় উপজেলা চেয়ারম্যান দীপালো। তাদের অভিমত হলো সেনাবাহিনীর অনুগত লোকদের ছেলেমেয়েদেরকে ষ্টাইপে- দিতে হবে। অবশেষে তাদের মতই প্রাধান্য পেল। ষ্টাইপে- দেয়া হলো (১) বিপুল খীসা পীং সুধাংশু খীসা, (২) জ্ঞানেশ্বর চাকমা ও (৩) মঞ্জু বিকাশ চাকমা - পীং ধৃতরঞ্জন চাকমা-কে, যদিও তাদের ছাত্রত্ব নেই। উল্লেখ্য, কথিত দীপালো চাকমা গত উপজেলা নির্বাচনে সেনাবাহিনীর উলঙ্গ হস্তক্ষেপে প্রতিদ্বন্দ্বী আদি শংকর খীসাকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাই এখন সেনাবাহিনীর পদলেহনই তার ক্ষমতার ভিত্তি, জনসমর্থন নয়।

“শান্তিবাহিনী আত্মসমর্পনের কেচ্ছা”
খাগড়াছড়ি ব্রিগেডের মাথায় ভূত চেপে বসলো, যেভাবেই হোক শান্তিবাহিনী যে আত্মসমর্পন করছে তা দেখাতে হবে। অতএব, ৬/১১/৯১ ইং তারিখ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার আয়োজন। খাগড়াছড়ি কলেজিয়েট হাইস্কুলের ছাত্রাবাস “শান্তিনিকেতন কটেজ” থেকে ৮/৯ জন স্বাস্থ্যবান পাহাড়ি ছাত্রকে ব্রিগেড অফিসে ডেকে এনে শান্তিবাহিনীর পোশাক পরিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর তাদের হাতে অস্ত্র দিয়ে ছবি তোলা হয় এবং ভি,ডি,ও -তে ধারণ করা হয়। ছবি তোলার সময় ছাত্রদের মধ্যে নন্দিত নামের একজন আত্মসমর্পনকারীকে বসানো হয়, যাতে এই বানোয়াট ঘটনা সম্পর্কে জনগণের মনে বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টি করা যায়। এই ঘটনার দু’দিন পর প্রায় সব পত্রিকায় “১১ জন শান্তিবাহিনীর আত্মসমর্পণ” শিরোনামে উক্ত ঘটনাটি পরিবেশন করা হয়।

“মুখ লুকানো ছবি এবং .... ”
সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় হঠা কয়েকজন উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা খাগড়াছড়ি নতুন কুঁড়ি কেজি স্কুলে পদধূলি দিতে যান। সেখানে শিক্ষয়িত্রীদের সাথে চা-নাস্তা ও গল্প-গুজবের পর পাহাড়ি শিক্ষয়িত্রীদের ছবি তোলার অনুরোধ করা হয়। শিক্ষয়িত্রীরা এতে রাজী না হলে অনুরোধ আদেশে পরিণত হয়। অগত্যা শিক্ষয়িত্রীরা ক্যামেরার সামনে দাড়ালেন। তাদের হাতে দেয়া হলো “শান্তিবাহিনী নিপাত যাক”, “আমরা বাংলাদেশকে ভালবাসি” ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার। অপমানে, দুঃখে, ক্ষোভে শিক্ষয়িত্রীরা ব্যানারের আড়ালে মুখ লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন। এই মুখ লুকানো ছবি সেনা অফিসারদের কতটুকু কাজে লেগেছে তা জানা যায় নি, তবে এই ঘটনার পর পাহাড়ি শিক্ষয়িত্রীরা পদত্যাগ করেন বলে জানা গেছে।

“ভূবনের উপাতে বাঁশ বিক্রেতারা অতিষ্ঠ”
ব্রিগেডিয়ার ইব্রাহিমের আমলে গঠিত তথাকথিত টাইগার বাহিনীর প্রধান কুখ্যাত ভূবন চাকমার দাপতে এখন নানিয়ারচরের বাঁশ বিক্রেতাগণ অতিষ্ঠ। বিক্রেতাদের কাছ থেকে সে ট্যাক্স আদায় করছে এবং না দিলে “শান্তিবাহিনী” বা “শান্তিবাহিনীর সহযোগী” বলে আর্মির হাতে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। ফলে বেচারা বাঁশ বিক্রেতাদের বাধ্য হয়ে দাবীকৃত ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। অধিকন্তু পাহাড়ি বাঁশ বিক্রেতাদেরকে এক কিস্তিতে দাম পরিশোধ না করার জন্য ব্যবসায়ীদেরকে আদেশ দিচ্ছে, যাতে বিক্রেতারা বারে বারে বাজারে এসে দাম নিয়ে যেতে বাধ্য হন এবং সেও বার বার ট্যাক্স আদায় করতে পারে। ব্যবসায়ীদের প্রতি তার বক্তব্য- “তোমরা যদি সব টাকা একসাথে দিয়ে দাও, তাহলে ওরা অর্ধেক টাকা শান্তিবাহিনীকে দিয়ে দেবে।”

“পাহাড়িদের জমি অনুপ্রবেশকারীদের দখল”
বর্তমানে পানছড়ি, দিঘীনালা ও কমলছড়ি এলাকার পাহাড়িদের ব্যাপক জমি-জমা সমতলবাসী অনুপ্রবেশকারীদের দখলে চলে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষভাবে এর মদদ দিচ্ছে বলে জানা গেছে। পানছড়ি ও দিঘীনালা এলাকার অধিবাসীরা বর্তমানে অনেকে ভারতে শরণার্থী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আর যারা দেশে রয়েছেন তারা “গুচ্ছগ্রাম” নামক বন্দী শিবিরে দিন যাপন করছেন। গুচ্ছগ্রামবাসীদেরকে তাদের নিজ নিজ জায়গা-জমিতে সেনাবাহিনী চাষাবাদ কিংবা ঘর-বাড়ি করতে দিচ্ছে না। অথচ এসব পাহাড়িদের জায়গা-জমিতে এখন প্রতিনিয়ত অনুপ্রবেশকারীদের বসত বাড়ি গড়ে উঠেছে এবং এভাবে পাহাড়িরা তাদের জায়গা-জমি হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়ছে।

“প্রতি পরিবার মাত্র দুই কেজি চাল কিনতে পারবে”

২৭/১০/৯১ ইং মহালছড়ি জোনের জোনাল কমা-ার নির্দেশ দিয়েছেন যে, পাহাড়িরা পরিবার প্রতি মাত্র ২ কেজি চাল কিনতে পারবে। অধিকন্তু, তার নির্দেশে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ২৫/১০/৯১ ইং তারিখে পাহাড়িদের কাছ থেকে বাজার থেকে ফেরার সময় সমস্ত চাল কেড়ে নেয়। এভাবে প্রায় ১০/১২ মন চাল কেড়ে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে যা আর ফের পাওয়া যায় নি।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ১৮ - ১৯

সংসদীয় গণতন্ত্র ও জনগণের প্রত্যাশা
-         মিঃ পারদর্শী

অবশেষে জনগণের চাপে ক্ষমতাসীন সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা হলো সরকার পদ্ধতির প্রশ্নে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন চুড়ান্ত রূপ লাভ করলো রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বিল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস এবং সর্বোপরি সংবিধানের বিধানানুযায়ী গণভোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। যদিও স্বৈরাচারী এরশাদের আস্তানা রংপুরের জনগণ পাইকারী হারে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির বিরুদ্ধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির গালে চপেটাঘাত লাগায়। দীর্ঘ ৯ বছরের স্বৈরাচারী শাসন-শোষণে পিষ্ট জনগণ বুঝি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। এবার বুঝি বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে চললো। দারিদ্য-পীড়িত বাংলার জনতা পাবে গণতন্ত্রের সোনালী আভা। তাদের ভাত-কাপড়-বাসস্থানের সমস্যা বুঝি দূর হবে। কিন্তু এ স্বপ্ন দেখতে না দেখতে জনতার মোহভঙ্গ হলো যখন বি,এন,পি, সরকার প্রেসিডেন্টের আসনে বসালো রাজাকার আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে। এবপর একের পর এক শুরু হলো রাজাকারদের গুরুত্বপূর্ণ পদে ক্ষমতায় বসিয়ে পুনর্বাসন। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত জনাব পন্নীকে করা হলো দেশের প্রাণকেন্দ্র আইন সভার ডেপুটি স্পীকার। সর্বোপরি দেশের উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষাবস্থা সম্বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করে। কমনওয়েলথ সম্মেলন থেকে ফিরে এসেই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বললেন, দেশে কোন দুর্ভিক্ষাবস্থা নেই। অথচ জনগণ জানে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং পার্বত্যঞ্চলে দারুণ খাদ্যভাব বিরাজ করছে এবং অনাহারে অর্ধাহারে মানুষ দিন গুণছে। মৃত্যুর সংবাদও কম আসেনি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে যদি এ ধরনের মন্তব্য শুনতে হয় তাহলে সংসদীয় সরকারের ভবিষ্য যে কী হবে তা সচেতন জনগণ ভাল করেই জানেন। তদুপরি দেশের প্রধান তিনটি বৃহ রাজনৈতিক জোটের রূপরেখা (যে রূপরেখার ভিত্তিতে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিলো) এবং সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের দশ দফা দাবী বাস্তবায়নের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। তিন জোটের রূপরেখা এবং সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের দশ দফার অন্যতম প্রধান দাবী ছিল স্বৈরাচারী এরশাদের সহযোগীদের কোন দলে আশ্রয় না দেয়া। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশের প্রধান দুটি দল (ক্ষমতাসীন বি,এন,পি এবং বিরোধী আওয়ামী লীগ) তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একের পর এক এরশাদের সহযোগীদের নিজের দলে আশ্রয় দিয়ে পুনর্বাসন করতে থাকলো। এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে ? সবচেয়ে জঘন্যতম বিশ্বাসঘাতকতা হচ্ছে ৯০ -এর ছাত্র-গণ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান অপরাধী নীরু, অভিদেরকে শুধুমাত্র দলের স্বার্থে নিজের দলে আশ্রয় দেয়া। স্বৈরাচারী এরশাদের সহযোগীরা ক্ষমতাসীন সরকারী দল এবং প্রধান বিরোধী দল উভয়ের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে। এরা একে অপরকে দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দোষ ঢেকে রাখার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে। সর্বোপরি এরশাদ পতন আন্দোলনের অন্যতম প্রধান শক্তি সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের দশ দফা দাবীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অগ্রাহ্য করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করলো এই সংসদীয় সরকার জনগণের মৌলিক সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। রংপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে যখন মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে মারা যাচ্ছে ঠিক সেই মুহুর্তে সংসদে আলোচনা হচ্ছে সাংসদরা লাল পাসপোর্ট কিভাবে পাবেন, প্রধান মন্ত্রীর সুযোগ সুবিধা কী হবে, কোন মন্ত্রীরা কত টাকা বেতন পাবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের অবরোধ-হামলা সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে সরকারী দল এবং প্রধান বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠন সমূহের মধ্যে গুলি পাল্টা গুলির কারণে শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ ছাত্র, টোকাই। দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে একে অন্যের উপর। জনগণের টাকায় পোষা পুলিশ পালন করছে নীরব ভূমিকা। এজন্য পুলিশ প্রশাসনকে প্রশ্ন করা হলে তারা স্পষ্টভাবে জবাব দিচ্ছে “আমাদের উপর নির্দেশ না থাকলে আমরা কী করবো।” সরকারী কর্মচারীদের বেতন স্কেল নিয়ে আন্দোলন হলে সরকার তা দমন করে নির্মমভাবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর পুলিশ এবং মাস্তানদের লাঠি চার্জ করা হয়। স্বৈরাচারী ভঙ্গীতে শ্রমিকদের উপর আক্রমণের ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রি। ফলে বেকার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক এবং গার্মেন্টস শিল্পের মত একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হচ্ছে ধ্বংসের মুখোমুখী। ভাঙচুরের প্রতিবাদে বুয়েটের শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ মিছিলেও পুলিশ বাধা দান করে। মুদ্রাষ্ফীতির পরিমাণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে জনজীবন বিপর্যস্ত করেছে। মোদ্দাকথা, সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করার পরও জনগণের এই দশা ! এসবের মূল কারণ হচ্ছে, সরকার পদ্ধতিতে পরিবর্তন হলেও শাসন কাঠামো পূর্বের মতই রয়ে গেছে। কাজেই রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পরিবর্তনের ফলে দেশের শাসন ব্যবস্থায় বড় ধরনের আশা করাটা বোকামী। জনগণের মৌলিক সমস্যা সমাধান করতে হলে দরকার এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভেঙ্গে নতুন করে সাজানো। অর্থা বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক সমস্যা সমাধানের পথ নিহিত রয়েছে।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ২০ - ২২

সাক্ষাতকার
[পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা নিঃসন্দেহে একটি জাতীয় রাজনৈতিক সমস্যা। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি এ সমস্যা সমাধানের জন্য দেশের সচেতন ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিকর্মীসহ সকল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এই ভূমিকাকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে কে কী ভাবছেন তা পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার জন্য আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, ছাত্র নেতা, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সচেতন মহলের সাক্ষাতকার ছাপাবো। এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে গত সংখ্যায় (রাহুমুক্তি সংখ্যা) আমরা গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব বদরুদ্দীন উমরের সাক্ষাতকার ছেপেছিলাম। এ সংখ্যায় তিনজন বিশিষ্ট ছাত্র নেতার সাক্ষাতকার ছাপানো হলো]

প্রশ্নসমূহ নীচে দেয়া হলোঃ-
(ক) পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু পাহাড়ি জনগণের যে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম চলছে তাকে আপনার সংগঠন কিভাবে মূল্যায়ন  করে ? এ সমস্যার ব্যাপারে আপনাদের সংগঠনের কি কর্মসূচী আছে?
(খ) পার্বত্য এলাকায় যে ব্যাপক সামরিকীকরণ এবং সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় গোপন সার্কুলারের মাধ্যমে যে বিপুল অ-পাহাড়ি পুনর্বাসন করা হচ্ছে সে সম্পর্কে আপনাদের কী বক্তব্য?
(গ) পাহাড়ি ছাত্ররা বরাবরই তাদের দাবী দাওয়া নিয়ে জাতীয় রাজনৈতিক মূল স্রোতধারায় মিলিত হবার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তাদের আন্দোলনের প্রবাহকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার ব্যাপারে আপনারা কী ভূমিকা নিতে পারেন ?
(ঘ) বিদ্যমান রাষ্ট্রযন্ত্রের অধীনে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের আন্দোলনের ফলাফল কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন? তাদের স্বায়ত্তশাসনের দাবীর সাথে আপনি কি একমত ?
(ঙ) পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি অন্যতম জাতীয় সমস্যা। অথচ এ সমস্যা সমাধানের জন্য জাতীয় রাজনৈতিক দলসমূহ দুর্ভাগ্যজনকভাবে উদাসীন। এর সমাধানের দাবী শুধু সেখানকার অধিবাসীদের আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। তাই এ ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসার জন্য আপনাদের ভূমিকা সম্পর্কে মন্তব্য করুন।

পাহাড়ি জনগণের সাথে দেশের ব্যাপক অ-পাহাড়ি জনগণের কোন বিরোধ নেই।
ফয়জুল হাকিম, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন

ক) পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু পাহাড়ি জনগণের যে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম চলছে তাকে আমাদের সংঠন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করে। এ সমস্যার ব্যাপারে আমাদের সংগঠনের কর্মসূচী মূলতঃ আমাদের রাজনৈতিক জোট, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের নেতৃত্বে জাতিগত সংখ্যালঘু ও সংখ্যালঘু জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রশ্নে সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করেছে।

খ) পার্বত্য এলাকায় যে ব্যাপক সামরিকীকরণ এবং সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় গোপন সার্কূলারের মাধ্যমে যে বিপুল অ-পাহাড়ি পুনর্বাসন করা হচ্ছে সে সম্পর্কে আমরা অবহিত। এ কাজ এ দেশের শাসক সংখ্যালঘু লুটেরা ধনিক-বণিক শ্রেণীর সরকারসমূহ করে আসছে উগ্র জাতীয়তাবাদের আবরণে এবং পাহাড়ি জনগণের উপর শোষণ-শাসন বলব রাখতে অ-পাহাড়িদের ধারা অব্যাহত রেখে পাহাড়ি জনগণের সাথে অ-পাহাড়ি জনগণের “বিরোধ” সৃষ্টির মাধ্যমে। এই “বিরোধ” কে সামনে রেখে এরা সামরিকীকরণের প্রক্রিয়াকে গ্রহণযোগ্য করবার অপচেষ্টায় লিপ্ত। আমরা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, মনে করি পার্বত্য এলাকাসহ দেশের যে-কোন স্থানে সামরিকীকরণের বিরোধীতা করা ছাড়া গণতান্ত্রিক সংগ্রাম এক কদমও অগ্রসর হতে পারে না।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ২৩ - ২৬

 দৈনিক গিরিদর্পনে প্রকাশিত হাতেম তাই-এর কিছু কথার জবাবেঃ
-  মি. গণমুক্তি

দৈনিক গিরিদর্পনের ২২/১০/৯১ ইং তারিখের “হিল লিটারেচার ফোরামের ‘রাডার’, আজকের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং আমাদের কিছু কথা” শীর্ষক লেখাটি আমাদের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। আমরা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছিলাম মত-পথ নির্বিশেষে আমাদের সমালোচনা করার অধিকার সবার। পাশাপাশি আমরাও আমাদরে লেখার অধিকার চেয়েছি। মতামত প্রকাশ ও আলোচনা-সমালোচনার ব্যাপারে এই হচ্ছে আমাদের পরিস্কার বক্তব্য। তাই যে কোন গঠনমূলক, সৃজনশীল, দিক নির্দেশনামূলক সারগর্ভপূর্ণ আলোচনা-সমালোচনা আমাদের কাছে বেশ আদরণীয়। আমরা যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে সে ধরনের লেখা দেখতে চাই।

দৈনিক গিরিদর্পনে প্রকাশিত হাতেম তাই সাহেবের লেখা আমরা যে মনযোগ ও আগ্রহের সাথে দেখতে চেয়েছি, দুঃখজনক হলেও সত্য, তার লেখায় আমরা মনযোগ দেবার মতো কোন কিছুই পাইনি। আগ্রহের পরিবর্তে তার লেখা পড়তে অনীহা এসেছে এবং ঘৃণা জেগেছে।

তিনি পরিণত মন ও কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে লিখতে পারেননি। আবেগের বশবর্তী হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। অনেক অসংলগ্ন, অশোভন ও কুরুচিপূর্ণ উক্তি করে ফেলেছেন। সচরাচর আমরা কোন উদ্ভট ও অন্তসারশূন্য লেখাকে আমল দিই না এবং পরোয়াও করিনা। হাতেম তাই সাহেবের কাণ্ডজ্ঞানহীন সমালোচনাকেও আমরা মোটেই আমল দিতাম না। অহেতুক কাগজ-কালি খরচের বিলাসিতা করতে যেতাম না। কিন্তু তিনি সমালোচনা করার নামে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি লঙ্ঘন করে যেভাবে ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন তা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না।                                                                  
দেশের এত পত্র-পত্রিকা থাকতে কিসের তাড়নায় তিনি দৈনিক গিরিদর্পনের মতো একটা বিশেষ (?) পত্রিকায় রাডারের সমালোচনা করতে গেলেন ? এটা কি ঐ পত্রিকার কাট্তি বাড়াবার একটা বাণিজ্যিক কৌশল ? রাডারের Good will থেকে কিছু ফায়দা লুটার ন্যাকামীপনা ? নাকি আবার অন্য কিছু ? হাতেম তাই সাহেব যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ঐ সমালোচনা লিখে থাকুন- আমরা তার প্রতিটি লাইন ও বাক্যের জবাব দিতে পারি। উদ্ভট সমালোচনার পেছনে কাগজ ও কালি অপচয়ের কথা ভেবে আমরা শুধু নীচের কিছু বিষয়ের উপর আমাদের বক্তব্য তুলে ধরছিঃ

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ২৭

গত সেপ্টেম্বর ১৩ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত জার্মানীর হামবুর্গ মিউজিয়াম অব এটনোলজিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত যে ৩য় আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়ে গেল সে সম্মেলনের একটি প্রেস রিলিজ আমরা পেয়েছি। সেই প্রেস রিলিজের ভাষান্তর ছাপানো হলোঃ

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
উন্নয়ন সাহায্যসমূহ বাংলাদেশে সামরিকীকরণ এবং মানবাধিকার লংঘনে সহায়তা করে।
সম্মেলনে বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার এবং উন্নয়ন সাহায্য। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এক বিরাট অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের বৃহত্তর বাঙালী জনগোষ্ঠী থেকে সাংস্কৃতিক, জাতিগত এবং ভাষাগতভাবে ভিন্ন আদিবাসীদের আবাসভূমি। এই আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আগ্রাসনের শিকার।
সম্মেলনে কানাডা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী পাহাড়িসহ বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আদিবাসী জনগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করেন। উক্ত সম্মেলনে কিছু বাঙালী অংশগ্রহণকারীও ছিলেন। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট। এছাড়াও মানবাধিকার কর্মী এবং সমাজ বিজ্ঞানীরা বক্তব্য পেশ করেন।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ২৮


প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিকট ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলফ্রেড টেলক্যাম্পার -এর চিঠি।

পার্লামেন্ট ইউরোপিয়ান                                                               প্রধান মন্ত্রী               
৯৭-১১৩ রু বেলির্য়াড                                                                মিসেস্ বেগম খালেদ জিয়া
এম, এ, ই ৭২৬                                                                       প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়, 
১০৭০ ব্রাসেলস                                                                        ঢাকা,  
 বেলজিয়াম।                                                                            বাংলাদেশ।

২০ শে সেপ্টেম্বর ১৯৯১

ডিয়ার মিসেস প্রধানমন্ত্রী,
পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে ১৯৯০ -এর ডিসেম্বরে আমি বাংলাদেশ সফর করি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাঙ্গালী বসতিস্থাপনকারীদের দ্বারা মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগসমূহ তদন্ত করার জন্য এই মানবাধিকার কমিটির উদ্দেশ্য ছিল। আমাদের কমিশন “জীবন আমাদের নয়” শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যেখানে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগ এবং সফরের তথ্য উল্লেখ করেছি। বর্তমানে আমি জানতে পারলাম, বাংলাদেশে এই রিপোর্ট সরবরাহকারী মানবাধিকার কর্মীদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাংলাদেশ নাগরিক কমিটির মিঃ এস, এম, শহীদুল্লাহ ও রাশেদুর রহমান তারাকে পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার মিঃ তাবিবুর রহমান কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদ এবং হুমকি দেয়া হয় এবং আমাদের “জীবন আমাদের নয়” রিপোর্টের ৯৬০ কপি বাজেয়াপ্ত করা হয়। আমার জানা মতে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের রিপোর্ট বাংলাদেশে নিষিদ্ধ নয় এবং সেহেতু এই রিপোর্টের পুনঃপ্রকাশ বা বিতরণ বেআইনী নয়। সবিনয়ে আপনাকে এই তথ্য অবগত করছি যে আমাদের কমিশনের সফর ছিল সম্পূর্ণ বৈধ এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সহায়তায় এই সফর সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু যদি এই রিপোর্ট বিতরণ নিষিদ্ধ হয়ে থাকে তবে তাতে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও তথ্য বিনিময়ের মত মৌলিক মানবাধিকার লংঘিত হবে।

সুতরাং উপরোল্লেখিত মিঃ শহীদুল্লাহ এবং মিঃ তারাকে ভীতি প্রদর্শন ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমি জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই রিপোর্টের জন্য পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা বা বাংলাদেশের অন্য সরকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশী নাগরিকদের হয়রানী বন্ধের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমি আপনাকে অনুরোধ করছি।
যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের রিপোর্ট নিষিদ্ধ হয়ে থাকে তবে অনুগ্রহ পূর্বক আমাকে অবগত করান। আমি কমিশনের সকল সদস্যদের পক্ষ থেকে এই রিপোর্ট বিতরণের ক্ষেত্রে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করার জন্য আপনাকে এবং আপনার সরকারকে আহ্বান করছি। এই রিপোর্ট ইউরোপিয়ান দেশগুলিতে এবং ইউরোপিয়ান কমিশনে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষন করতে পেরেছে। আমি নিশ্চিত যে জাতীয় সরকারসমূহ এবং ইউরোপিয়ান কমিশন বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এই পরিস্থিতির আলোকে তারা পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

ধন্যবাদান্তে
উইলফ্রেড টেলক্যাম্পার