পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১২

রাডার রাহুমুক্তি সংখ্যা


* পিডিএফ কপি পেতে ক্লিক করুন এখানে



রাডারের রাহুমুক্তি সংখ্যা সম্পর্কে দু'টি কথা

রাডার পত্রিকার রাহুমুক্তি সংখ্যা আপলোড করা হলোনব্বইয়ের ছাত্র-গণআন্দোলনে সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর রাডারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলে এটি প্রথম প্রকাশ করা হয়এই সংখ্যায় যারা লিখেছেন তাদের মধ্যে প্রসিত বি. খীসা ছাড়া বাকিরা সবাই ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেননিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাদের নাম এখনো গোপন রাখা হলোএকই কারণে কম্পোজ ও মুদ্রণসহ যারা বিভিন্নভাবে রাডার প্রকাশে সহযোগিতা করেছেন তাদের নামও প্রকাশ করা হলো নাপরবর্তীতে পরিস্থিতির অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের পরিচয় সবার কাছে তুলে ধরা হবে

রাডার প্রকাশনার সাথে যারা জড়িত ছিলেন তারা তখন সবাই বয়সে ও অভিজ্ঞতায় নতুনফলতঃ লেখায় অনেক বানান ভুল রয়ে গেছেএখানে সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করা হয়েছেআর পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাগুলোর "জুম্ম" পরিচয় সে সময় বাংলায় "পাহাড়ী" লেখা হতোপ্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক প্রয়াত আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এই বানানকে অশুদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন এবং দীর্ঘ "ঈ" কারের পরিবর্তে "ই"কার ব্যবহারের পরামর্শ দেনএখানে তাই করা হয়েছেআর "বাঙালী" বানান পরিবর্তন করে ''-কার দিয়ে "বাঙালি" লেখা হয়েছেএছাড়া বাদ বাকি সব কিছু আগের মতো রাখা হয়েছেযদি এ সম্পর্কে কোন মতামত, পরামর্শ বা সমালোচনা থাকে তাহলে আমাদেরকে লিখে জানানোর অনুরোধ থাকলোআমাদের ইমেইল ঠিকানা : radarcht@gmail.com

সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১২

রাডার সংকলন



* পিডিএফ কপি পেতে ক্লিক করুন এখানে



রাডার

সংকলন


(হিল লিটারেচার ফোরাম-এর একটি অনিয়মিত প্রকাশনা)
শুভেচ্ছা মূল্য : ৫ টাকা

প্রকাশ কাল : ১লা নভেম্বর '৮৯ ইং

সম্পাদকীয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অঙ্গনে সাহিত্যমনা ও সৃজন প্রয়াসী ছাত্র/ছাত্রীদের কাছে রাডার অতি পরিচিত একটি দেয়ালিকা। ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের মহান আত্মোৎসর্গকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ২১শে ফেব্রুয়ারী১৯৮৭ ইং সনে "রাডার" এর প্রথম আত্মপ্রকাশ। সেই থেকে অনিয়মিতভাবে রাডার এর কিছু লেখা সংকলন আকারে ব্যাপক পাঠক সমাজে ছড়িয়ে দেবার চিন্তাভাবনা শুরু। এবারের রাডার সংকলন সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে পাঠক সমাজের কাছে আমাদের নিবেদন

গোড়াতেই স্বীকারোক্তি করা দরকার -- রাডারে প্রকাশিত লেখাগুলো সবে চর্চার পর্যায়ে। এখনও তথ্যবহুল কিংবা গবেষণাধর্মী হয়ে উঠতে পারেনি। তাছাড়াএকটি দেয়ালিকার মতো সীমাবদ্ধ আঙ্গিকে যতটুকু সম্ভবলেখাগুলোর ব্যাপ্তিও তার মাঝে আবদ্ধ। রাডার সংকলনকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তবেই যথাযথভাবে দেখা হবে। যে কোন মতামত ও আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণীয়

আমাদের কাছে লেখার ঠিকানা :

সম্পাদক
রাডার
হিল লিটারেচার ফোরাম
৩০৯ শান্তি নিকেতন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
চট্টগ্রাম


সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ও কিছু কথা

মিঃ শিবাশীষ চাকমা

বন্দুকের নলই রাজনৈতিক মতার উৎস মাও সে তুং-এর এই উক্তিটি বারবার মনে পড়ছে। কেন জানি আজকাল এ কথাটি বারবার হৃদয়ে দাগ কেটে যাচ্ছে। সরকারের জঘণ্যতম মুখোশটি জুম্ম জনগণ বারবার দেখছে আর অস্তিত্ব নামক বস্তুটি খামছে ধরেছে। জাতির এ সংকটময় মুহুর্তে জুম্ম জনগণ বিশ্বের সকল মানবতাবাদী মানুষের কাছে বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তনাদ করছে আর তারা তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে ক্ষুদ্র দাবীনামা সরকারের কাছে তুলে ধরছে। সরকারের হীন ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা আর অমানুষিক নির্যাতনে জুম্ম জনগণ আজ শংকিত

গত ৮ই৯ই এবং ১০ই সেপ্টেম্বর ১৯৮৮ ইংপার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জন্য তিনটি ভয়াবহ কালোরাত্রি অতিবাহিত হয়। যার বর্ণনা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সুস্থ মস্তিষ্কে এ ধরনের গণহত্যাসকল মানবতাবাদী মানুষের মনকে নাড়া না দিয়ে পারে না। এ এক হৃদয় বিদারক কাহিনী। পৃথিবীর এ এক ছোট্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম নামক এলাকায় প্রতিনিয়ত যে অমানুষিক নির্যাতনহত্যাকান্ডধর্ষণ চলছে তা পৃথিবীর মানুষের কাছে এখনো কুয়াশার মতোই রয়ে গেছে। আর সরকার সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। জানিনা আর কতো কালোরাত্রি জুম্ম জনগণের জন্য অপো করছে

এভাবে নির্যাতনহত্যাধর্ষণ করে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের কল্যাণ তথা সমস্যা সমাধান করতে চায়। এই স্বৈরাচারী সরকার জুম্ম জাতির কল্যাণ সাধন করতে পারে না। তারপরও সরকার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বলছে -- 'আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাই'। কিন্তু সরকারের সাম্প্রতিক নির্যাতনহত্যাকান্ড ও ধর্ষণ জুম্ম জনগণের শান্তি ফিরিয়ে আনার পূর্বশর্ত নয়

সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের জন্য ৯ (নয়) দফা দাবীকে সমর্থন করছেন। এ নয় দফা দাবী সরকারের মদদপুষ্ট আমলাদের দাবীতাদের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের দাবীজুম্ম জনগণের দাবী নয়। তাই এ দাবী জুম্ম জনগণের কল্যাণ তথা অস্তিত্ব রা করতে পারে না। আমলাদের দ্বারা জুম্ম জনগণ বার বার প্রতারিত হয়েছেহারিয়েছে তাদের সর্বস্ব। কিন্তু তারা তাদের শেষ অস্তিত্বটুকু আর হারাতে রাজী নয়। তাই তারা এ দাবীকে জুম্ম জনগণ ধ্বংসের দাবী হিসাবে চিহ্নিত করেছেন

পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ তাদের ঐতিহ্যভাষাসংস্কৃতি এবং তাদের অস্তিত্ব রার জন্য বদ্ধপরিকর। রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও তারা সংকল্পবদ্ধ। তারা নিজ জায়গায় শান্তিতে বসবাস করতে চায়তারা শান্তিপ্রিয়অশান্তি তাদের কাম্য নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আস্থাশীল এবং তারাও এ দেশের সামগ্রীক উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে প্রত্যাশী

জুম্ম জাতির ঐতিহ্যভাষাসংস্কৃতি ও অস্তিত্ব রার জন্য তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কর্তৃক সরকারকে দেয়া ৫ (পাঁচ) দফা দাবীকে যুগোপযোগীযুক্তি সংগত এবং গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন

সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে জিইয়ে রেখে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন -- যার পরিণতি উভয় পরেই মঙ্গলজনক নয়। তাই ৫ (পাঁচ) দফা দাবীর ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সকল বুদ্ধিজীবীআইনজ্ঞসাংবাদিক এবং সচেতন নাগরিকদের প্রতি তারা আহ্বান করছেন
(রাডার৭ই অক্টোবর '৮৮ ইং৬ষ্ঠ সংখ্যা থেকে সংকলিত)


রাঙ্গা মাটির চিঠি

প্রধীর তালুকদার

য়ুনিভার্সিটির ব্যস্ততার দিনগুলোতে ক্যাম্পাস জীবন যখন সত্যি সত্যিই হাঁফিয়ে উঠে তখন ভ্রমণ বিলাসীতা পেয়ে বসে। দূরের কোথাও প্রকৃতির মায়ায় জড়িয়ে যেতে প্রাণটা দাপাদাপি শুরু করে। সুযোগের প্রত্যাশায় দিন গুনতে গুনতে সুযোগ মেলেও যায়
ছিয়াশির এপ্রিল মাসের প্রথমার্থ। চৈত্র সংক্রান্তি কাটাতে রাঙ্গামাটি গিয়েছি। কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত দ্বীপতুল্য প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে মনোরম শহর রাঙ্গামাটি। বিকেলে হ্রদের পাড়ে পাড়ে লোকের ভিড় জমে। আড্ডা প্রিয় তরুণ-তরুণীরাই বেরোয় এ সময় বেশী। মানসিক বিনোদন ও প্রকৃতিকে উপলব্ধি এ দু'টো কারণে ওদের কাটা পাহাড়বটতলাডিয়ার পার্ক ইত্যাদিতেই বেশী দেখা যায়। কাটা পাহাড় জায়গাটাকে একটা মিনি সি বিস্‌ বলা যায়। কর্ণফুলীর পাড় ঘেঁষে খাড়া পাহাড়টার একদিক ভেঙে গিয়েই বালুর চর। সম্মুখে কাপ্তাই কৃত্রিম হ্রদের অথৈ জলরাশিদণিটায় পর্যটন মোটেলউত্তর-পূর্বে ডি. সি. বাংলোপূর্ব দিকে ইতিহাসের সাী হয়ে হ্রদের পানিতে আকণ্ঠ ডুবে আছে ভূবন মোহন রাজার প্রাসাদ। ষাট দশকে হ্রদের জলে তলিয়ে যাওয়া দাদা দাদীনানা নানীদের মুখরিত জীবন চিত্র ভাবলাম কল্পনায়। ভারতের নিরঞ্জন চাকমার কবিতার বাংলা করলাম মনে মনে -
সেথা বড় গাঙের বিস্তৃত পাড়ে
                         এখনো হয়তো
নির্জনে পড়ে আছে বিস্তৃত বালুচর
যার ধুলোয় এখনো হয়তো লেগে আছে
নানা নানীদের কর্মশ্রান্ত শরীরের
                                     ঘর্মবিন্দু
বড় গাঙের নির্জন কোনায় এখনো
                                     হয়তো
দাদা দাদীদের স্বপ্নীল জীবনের
                                     অফুরন্ত
ইচ্ছের কত কথা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে

মনটা ভারী হয়ে এলো। চৈত্র্যের হৃদয়স্পর্শী বাতাস বইছে। একটা পাথরের উপর বসে সরোজ ও তার বান্ধবী সৃজনীর আলাপ হচ্ছিল রাঙ্গামাটি বাসীদের জীবন জীবিকার নানা দিক নিয়ে। প্রাণোচ্ছল তরুণরা দল বেঁধে হাঁটছে। সরোজ ও সৃজনীদের মত আরও অনেক ভালোবাসার ভেলায় চড়া যুগলদের দেখলাম। রাঙ্গামাটির প্রত্যেকটি ছেলে মেয়েতরুণ তরুণীদের আশাদীপ্ত জীবন্ত উজ্জ্বল মনে হলো। তারুণ্যের সজীবতায় এ তরুণ সমাজে অসংখ্য প্রতিভার অস্তিত্ব আছে হয়তো
ততণে আঁধার বিছানো হয়েছে। ফেরার পথে অনেক বন্ধুর সাথে দেখা হলো। ১৬ই এপ্রিল আমি হলে চলে আসি। পরের দিন রাঙ্গামাটি থেকে একটা চিঠি আসে আমার ঠিকানায় -- ছোট্ট একটা চিঠি -- চিঠি না বলে চিরকুট বলাই শ্রেয়
বন্ধু,
বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। তোমার একটি কথা মনে পড়ে। আমাদের শিার সাথে প্রতিভারও বিকাশ হচ্ছে। তবে তা স্বাভাবিকভাবে নয়। একটি বিষ্ফোরণোম্মুখ পরিস্থিতিতে। আগামী বিজুতেও এসো
প্রাণঢালা শুভেচ্ছাসহ
সরোজ-সৃজনী
১৫/৪/৮৬





দিনের পর দিন
মি. অপ্রিয়

অবশেষে ২৪তম গ্রীষ্মকালিন অলিম্পিকের দিনগুলো একে একে তলিয়ে গেলো। সিউলের উল্লাসভরা মাঠ থেকে অলিম্পিক পতাকা নামানো হলো। মশালের অগ্নিশিখা নিবিয়ে দেয়া হয়েছে
বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদরা ফিরে যাবে নিজ নিজ দেশে। সিউলের উল্লাসমুখর মাঠগুলোও ধীরে ধীরে উত্তেজনাহীন হবে
এতদিন শুধু অলিম্পিকের কথা। অলিম্পিক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা। এখন অলিম্পিক খেলা শেষ। টিভি পর্দায় এতদিনের আনন্দ-উৎসুক্যও শেষ। এসব আসলে সাময়িক। আবার ঘুরে-ফিরে সেই ক্যাম্পাস জীবন। যেখানে নির্মমবিক্ষোভপ্রতিবাদমুক্তিআশা প্রেরণাদের মতো উচ্ছল প্রাণবন্ত ছেলে মেয়েদের দুঃখ-বিষাদসুখ-সমৃদ্ধিই নিত্যদিনের অনুভূতি। এখানেই বাস্তবতাকে খঁজে পেতে হবে
Closing ceremony দেখা শেষ। প্রায় বিকেল হয়ে এলো। 'বিপ্লবধূমায়িত চা'য়ে চুমুক দিয়ে মনে মনে হিসেব মিলিয়ে নিচ্ছে
মন থেকে কিছুতেই Opening ceremony এর দৃশ্যগুলো মুছে যেতে চাইছে না
আসলে স্বাধীন দেশের মুক্ত মানুষেরা কত প্রাণভরে হাসতে পারে। আনন্দে মেতে উঠতে পারে। বিজয় ধ্বনিতে দশ দিগন্ত মুখর করতে পারে। তাই তো স্বাধীনতা মানুষের এত প্রিয়। মানুষ জীবন হারাতে পারে। কিন্তু স্বাধীনতা হারাতে পারে না
স্বাধীনতা। উহ্‌ ! স্বাধীনতা কত প্রিয় মানুষের। এমন কি ইতর প্রাণীদের কাছেও
ছোট্ট একটি পাখিও সোনার পিঞ্জরে আবদ্ধ জীবনের চাইতে ঝঞ্ঝাবিুদ্ধ অজানা আকাশ বেছে নেবে। অজানা আকাশ থেকে আকাশে পারি জমিয়েসে তার আহার জুটিয়ে নেবে। নয়ত ঝড়-ঝঞ্ঝার দিনে উপবাস থাকবে। কিন্তু তবুও সে সোনার পিঞ্জরে বন্দী হবে না

বিপ্লব আনমনে এসব ভাবছে। এমনি মুহূর্তে নির্মম আর বিক্ষোভের ডাকে বিপ্লব সম্বিৎ ফিরে পেলো। বিকেলের নাস্তা সেরে নিতে ওরাও দোকানে হাজির। কিছু ভাবছো?
হ্যাঁ। নিশ্চয়ই
কি নিয়েআমরাও জানবো না?
জানবে না মানেঅবশ্যই জানবে। ভাবছি মুক্ত মানুষেরা কত উচ্ছল। কত প্রেরণাদীপ্ত। আমরাও যদি ওরকম হতে পারতাম। চলো আমরা আগামী শতাব্দীর দিকে এগিয়ে যাই। চেতনা শাণিত করি
সবাইকে জানিয়ে দিই আগামী দিনের বার্তা। নির্মম আর বিক্ষোভ সায় দিলো। তিন জনে চলে গেলো। মুক্তিকে রিং করবে। বিপ্লব ডায়াল ঘুরিয়ে নিলো। অপর পাশ থেকে মৃদু স্বর ভেসে এলো
হ্যালো। বিপ্লবকি খবর?
ওহ্‌ মুক্তি তোমাকে মজার কথা শোনাবো
বাহ্‌ ! বলো শুনি সেই মজার কথা
আগামী দু'হাজার সালের মধ্যেই রাঙ্গামাটিতে অলিম্পিক খেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ......
ঠাট্টা করছো?
না সত্যিই বলছি। রাঙ্গামাটি স্টেডিয়ামে অলিম্পিক খেলা উদ্বোধন হবেই। অর্থাৎ করবো
সে চিন্তা এখন কেন?
এখন মানেঅবশ্যই আগেভাগে চিন্তা-ভাবনা থাকতে হবে
সিউলে চার বছর আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। আমাদের তো আরো জটিল। বন্ধুর পথ। ঝঞ্ঝাবহুল। তবুও শপথ -- আমরা মুক্ত হাওয়ায় বিচরণ করবো। অন্ধকারের নাগপাশ ছিন্ন করে বেরিয়ে আসবো। উচ্ছল মানুষের ভীড়ে আমরাও সামিল হবো
দেখো মুক্তি -- একদিন না একদিন রাঙ্গামাটি স্টেডিয়ামে অলিম্পিক খেলা হবেই। আজকে রাঙ্গামাটি আর সেই রাঙ্গামাটি থাকবে না। হবে তিলোত্তমা। বড় বড় স্ট্রিট হয়ে যাবে। আমুল পরিবর্তন আসবে। সমাজের চেহারা পাল্টে যাবে। চোখ বুঁজে একটিবার আগামী শতাব্দীর ছবি আঁকি। মনের পর্দায় ফুটিয়ে তুলি --
দু'হাজার সালের কোন এক বসন্তকাল। সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। রাঙ্গামাটিতে অলিম্পিক খেলা উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে। রাস্তায় রাস্তায় শত শত ছেলে মেয়ে বিজয়ের গান ধরেছে। স্টেডিয়াম উল্লাসে ফেটে পড়ছে
প্রেসিডেন্ট ভি আই পি লাউঞ্জ থেকে দাঁড়ালেন। এণি উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। চতুর্দিক থেকে বিউগলের সুর বেজে উঠলো। মিলিটারী ব্যান্ডে বাজ বাজছে
অলিম্পিকের পতাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। হেলিকপ্টার স্টেডিয়ামের উপর পুষ্পবৃষ্টি ছিটিয়ে যাচ্ছে। শত শত বেলুন ও শান্তির স্বেত কপোত উড়ে গেলো। অলিম্পিকের অগ্নিমশাল অমিত তেজে জ্বলছে ... ...'
উহ্‌ ! একরাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে মুক্তি, -- সেদিন আর কতদূরেবিশৃঙ্খল মানুষ কবে সুশৃঙ্খল হবেজাতির মান-মর্যাদার জন্য বুক ফুলে দাঁড়াবে?
গভীরভাবে আত্মজিজ্ঞাসা করে দেখো মুক্তি। সেদিনের জন্য কার কি ভূমিকা নিতে হবে। অথচ আজ কে কি করছে
আজকের মতো রাখি। গুড বাই
[রাডার৭ অক্টোবর৮৮ ইং ৬ষ্ঠ সংখ্যা থেকে সংকলিত]

চতুর্থ সংখ্যা
দিনের পর দিন

রমজানের দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে সবাই ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছে। এতদিন বাড়ীতে কাটাবার পর প্রথমদিন ক্যাম্পাসে ঢুকতে কেমন যেন নতুন নতুন মনে হচ্ছিল মিস্‌ মুক্তির কাছে। ছেলে-পিলেরা আবার দলবেঁধে মাঠের এদিক-সেদিক ঘোরাফিরা করতে শুরু করেছে। পরিচিত-অপরিচিত অনেক মুখ ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছে। এ কয়দিন বাসার ও সঙ্গীদের সান্নিধ্য ফেলে হলে এসে কেমন যেন শুন্যতাবোধ করছিল মিস্‌ মুক্তি। মনে মনে নানান প্রশ্ন ও কৌতুহল ভেসে আসছিল। এতদিন বিপ্লবরা কেমন কাটিয়েছে দিনগুলো তা জানার জন্য মুক্তির মন চঞ্চল হয়ে উঠলো। সহসা বিপ্লবকে ফোনে খোঁজ করলো

মুক্তি : হ্যালো ... ... বিপ্লব। ক্যাম্পাসে এসেছো?
বিপ্লব : ওহ্‌ ! মুক্তি নাকিকবে আসলেঅনেকদিন পরএবার বলো কেমন কাটিয়েছো ছুটিতে?
মুক্তি : এই ধরো বাসায় রান্না-বান্নার কাজে সাহায্য করে। সঙ্গীদের সাথে গল্প- গুজব করে। আর কি জানো?
বিপ্লব : এত কৌতুহল সৃষ্টি করছো কেনবলে ফেলো
মুক্তি : মানে তোমরা কেমন ছিলেকি করছিলেআর বর্তমানে তো Hill Tracts এর পরিস্থিতি ভীষণ উত্তপ্ত। প্রতিদিন নারী নির্যাতনউৎপীড়ন আর অনাচারের খবর আসছে। জানো বিপ্লব আমারও প্রবল ঘৃণায় প্রীতিলতা কিংবা লায়লা খালেদের মতো অস্ত্র নিয়ে মানবতার দুশমন বর্বরদের ঘাঁটিগুলো উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হয়েছিল
বিপ্লব : Bravo ! Bravo ! । সাবাস!
মুক্তি ! একটি অধিকারহারা নির্যাতিত লাঞ্ছিত জাতি এ কথাই তো শুনতে চায় মেয়েদের কাছ থেকে। তথা সবার কাছ থেকে। অথচ কি জানোইদানিং ছেলে মেয়েরা প্রায়ই কৃত্রিম বিলাসিতায় নির্লজ্জভাবে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। ফুটপাতে টাঙানো সস্তা চরিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীদের অনুকরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর অন্য কোন দিকে তাদের ভ্রুপে নেই। মনে করছে তাদের সেই নোংরামীর চর্চাটাই ফ্যাশান। আসলে কি জানো মুক্তিতাদের নৈতিক চেতনাবোধ তো দূরের কথা। ইজ্জত সম্ভ্রমও নেই। না হলে এত নীচুতার পরিচয় কিভাবে তারা দিতে পারেকথায় বলে "সৎ সঙ্গে স্বর্গবাসঅসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।"
ঐ ফুটপাতে টাঙানো চলচিত্রের রংবাজদের ফলো করলে যুব সমাজও সর্বনাশ হবে। অধঃপতন হবে। তাই প্রকৃতপে অনুসরণ করা উচিত বিশ্বের প্রখ্যাত মনিষীদের যারা সঠিক পথ দেখিয়েছেন। যদি কিছু শিখতে হয়তাহলে ভালোটাই তো শিখা উচিত। আর যদি কিছু হারাতে হয় তাহলে খারাপ ধ্যান-ধারণাগুলোই হারানো উচিত। নিজের ঐতিহ্য ও মান মর্যাদাকে নয়। কি বলো মুক্তি?
মুক্তি : আসলে আমিও তো তাই বলি। গণচীন মুক্তির পরও বুর্জোয়া ধ্যান-ধারণা ও অপসংস্কৃতি ঝেড়ে ফেলে নৈতিক চেতনা শাণিত করার জন্য সেখানে Cultural Revolution এর প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। আমাদেরও জীর্ণ শীর্ণ সমাজকে পাল্টাবার জন্য প্রয়োজন Revolution.
বিপ্লব : এই তোতবুও অনেকে বুঝতে পারে না যে সমাজ পরিবর্তনের মোম পন্থা হচ্ছে Revolution. আর হ্যাঁ সেদিন BBC এর 'সপ্তাহপ্রতিবেদন (... ...) শুনেছিলে?
মুক্তি : তা তো অবশ্যই। তবে আমারও BBC এর পক্ষ হয়ে ঢাকার সংবাদদাতা আতাউস সামাদকে কিছু প্রশ্ন করার ছিল
সেই সাতকারটি কল্পনা করে নেয়া যাক
০ ০ ০ ০ ০

মুক্তি : আচ্ছাসামাদ সাহেব আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই
আঃ সাঃ হ্যাঁ করুন
মুক্তি : প্রথমে একটা কথা জানতে চাই। বহুল কথিত প্রবাদ "যার নুন খায়তার গুণ গায়"। কথাটা আপনি কতদূর বিশ্বাস করেন?
আঃ সাঃ কথাটা তো ঠিক
মুক্তি : ওহ্‌ ! এজন্যই বুঝি আপনি সেদিন (... ...) সরকারী হেলিকপ্টারে চড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে নিরপেক্ষ থাকতে পারেননি। আপনি বলেছিলেন 'সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নাকি যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিলেনঅথচ প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে কি পার্বত্য চট্টগ্রামের আসল পরিস্থিতি জেনে নিতে পারতেন না?
অথচ কেবল সরকারের গুণকীর্তন করার জন্যই আপনি ব্যস্ত ছিলেন। আপনার প্রতিবেদনের সত্যতার উপর BBC কার্যালয় থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার প্রশ্ন করা হচ্ছিল। তবুও আপনি সরকারের গুণগানে বেহুঁশ। কি নির্লজ্জ বেলেল্লাপনা ! দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর BBC রই একমাত্র নিরপে সংবাদ সংস্থা হিসেবে একটা নিরঙ্কুশ ভাবমূর্তি রয়েছে অথচ আপনার মতো সংবাদদাতা (?) কে দিয়ে কি সেই নিরপেতা বজায় রাখা সম্ভব?
আঃ সাঃ আহা ! এত গোমর ফাঁক কিভাবে বের করেনদয়া করে এসব জনসমে প্রচার করবেন না। BBC কে জানিয়ে দেবেন না
মুক্তি : শোনা যায় 'কাশিম বাজার কুটি' (বঙ্গভবন) থেকে নাকি আপনি পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভ্রান্ত রিপোর্ট পাঠানোর জন্য মোটা মাসোহারা পান। আর ঢাকায় বিলাস বহুল জীবন-যাপনে প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন?
আঃ সাঃ (বাকশক্তি রুদ্ধ হয়ে যায়)
মুক্তি : সামাদ সাহেব যা রটে তা কিছু বটেও আপনাকে নিয়ে আমাদের কৌতুহল এখনও শেষ নয়। আর একদিন প্রশ্ন করবো

চেঙ্গী সেতুর ওপারে

প্রসিত বি. খীসা

সুমিতের সাথে ভার্সিটিতে এসে আবার দেখা। তার সাথে পরিচয় সেই এসএসসি পরীক্ষা দেবার পর থকে। একসঙ্গে ঘুরেছি। আড্ডা জমিয়েছি। সেদিনের দিনগুলো কত না আনন্দের। ফেলে আসা সেই আনন্দঘন মুহূর্তগুলো কত না জীবন্ত
কলেজ লাইফ এক সাথে কাটেনি। লিখে পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময় হতো। তাই অবস্থানগত দূরত্ব ছিল বটে। কিন্তু বন্ধুত্বআন্তরিকতা আর মনের দিক থেকে বরাবরই ঘনিষ্ট ছিলাম। এখানে আবার দেখা হবে। একসাথে পড়বো। দলবেঁধে ঘুরবো। আবার সেই আড্ডা জমবে। আসলে কোনদিন ভাবতেই পারিনি। ভার্সিটিতে অনেক নতুন পরিচিত মুখের ভীড়ে 'সুমিতআগের আসন নিলো। এখানে আরো ঘনিষ্ট হলাম। এক সাথে খেয়েঘুরেআড্ডা জমিয়ে
তাকে কোনদিন গোমরামুখো হতে কিংবা অভিমান করতে দেখিনি। ঠোঁট চেপে সবসময় দুষ্টুমি মাখা হাসি লেগেই আছে। সুমিত আসলে বন্ধুবৎসলআন্তরিক আর আড্ডা প্রিয়ও বটে। এসব মিলে তার বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিত্ব। তার সাথে অবসর মুহূর্তগুলো[তে] দারুণ আড্ডা জমতো
সুমিত টগবগে তরুণ। স্বভাবতই মনও রঙিনঅস্থির ও স্বপ্ন বিভোর। কল্পনার ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত। তাকে এই বয়সে 'আসল নামদিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে চাই না। বিশেষ করে এই সময় আর নতুন সম্ভাবনায়। ... ...।
এসব বিবেচনায় রেখে প্রসঙ্গটির প্রধান চরিত্র 'সুমিতনামেই চালিয়ে দিচ্ছি
Hill Tractsএর ছেলে হয়েও সুমিতের কোনদিন খাগড়াছড়ি যাওয়া হয়নি। তাই খাগড়াছড়ি যাবার বাসনা তার দীর্ঘদিনের। "মানুষ যা চায়তা-ই পায়"। সুযোগও এসে গেল। সেদিন দুপুর। দু'জনে বসে বসে গল্প করছি। সেই মুহূর্তে সুমিতের তিনজন গার্ল ফ্রেন্ড হাজির। তারা সুমিতকে খাগড়ায় পাঠাবে। একদম নাছোড়বান্দা। ভীষণ চাপাচাপি শুরু করে দিলো। অথচ সুমিত কোনদিনই খাগড়ায় যায়নি। তাদের হঠাৎ এ প্রস্তাবে সুমিতও হতচকিত। তাই তার মনোভাব 'না বোধক'। জানিনামনে মনে 'হ্যাঁ বোধকছিল কিনা। তবে আমার সহযোগিতা পেলে সুমিত তাদের আস্থা ও মন দুটোই রাখতে পারবে। অন্তত তা নিশ্চিত। সুদিনে দুর্দিনে সুমিত বরাবরই আমার পাশে থেকেছে। তার সমর্থনসহযোগিতা ও সাহচর্য কোনদিন ক্রুটি হয়নি। কেউ তার প্রতি ভরসা কিংবা আস্থা হারিয়ে ফেলবে। অন্তত তা আমি চাইতে পারি না। হতেও দিতে পারি না। আমি জানতাম --বিপরীত ধর্মীদের সাথে সুমিতের খাতির ও অন্তরঙ্গতা বরাবরই উঞ্চ ছিল। তার ঘাটতি আমার চোখে পড়েনি। তার মন রার্থে অনেকবার সাহচর্য দিতে হয়েছে। কোনদিন ইচ্ছায় আবার কোনদিন অনিচ্ছায়। সুমিত আমার একান্ত অন্তরঙ্গ বন্ধু। আজও তার মন রার্থে কিচ্ছু করে দেবো নাসে কি করে হয়A friend in need is a friend indeed. ঠিক হলো খাগড়ায় যাওয়া হবে
পরের দিন খুব ভোরে কুশিয়ারা এক্সপ্রেসে চেপে খাগড়ার পথে রওনা হলাম। আঁকা-বাঁকা পাহাড়ী পথ। রাস্তার দু'পাশে ঘন বন। এব্রো-থেব্রো পাহাড়। পাহাড়ের চূড়ো রেয়ে ঝর্ণা নামছে। সুমিত নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকন করতে ব্যস্ত। কোস্টার দ্রুত চলছে। মাঝে মাঝে সঙ্গীত আর ছন্দের মূর্ছনা। দীর্ঘ পথ। বেশ তন্দ্রা পেয়ে বসেছিল। এক সময় কোস্টার খাগড়াছড়ির দ্বারপ্রান্তে এসে গেলো। এটাই সেই আতংকময় আলুটিলা। এখান থেকে সবকিছু দেখা যায়। চেঙ্গী নদীখাগড়াছড়ির টাউন চমৎকার। যেন সাজানো গুছানো
যখন কোস্টার খাগড়াছড়ি প্রবেশ করলো মনে হলো টাউনটি যেন হারিয়ে গেছে। রাস্তাগুলো সরু ও ও দীর্ঘ হয়ে গেছে। সাজানো বিল্ডিংগুলো যেন সরে গেছে
তারপর বেশ ঘুরলাম। খাগড়া'য় বেশ ক'টা দিন কাটলো। সহজেই আপন হতে পারা সুমিতের একটা বড় গুণ। খাগড়ায় এসেও তার ব্যতিক্রম দেখলাম না। প্রথম প্রথম ভাবছিলাম - সুমিতের হঠাৎ মা। সে একা নিঃসঙ্গ বোধ করবে। তাই প্রায়ই তাকে সঙ্গ দিতে যেতাম। বিকেলে ঘুরতেমাঠে বেড়াতে সুমিতের কাছে যেতাম। আসলে ততদিনে তো সুমিত সবাইকে আপন করে ফেলেছে। যখন সুমিতকে খোঁজ নিতে যাইতখন দেখতাম সে হয় হারমোনিয়াম তবলা নিয়ে গান ধরেছে। সবাইকে মাতিয়ে রেখেছে। নয়ত গল্প জুড়ে দিয়েছে। মনে মনে খুশী হলাম। অন্তত আমি ছাড়াও সুমিত নিঃসঙ্গ থাকবে না। খাগড়ায় সুমিতের দিন আনন্দে কাটলেআমি বেঁচে যাই। তাতেই আমার স্বস্তি। অথচ তখন ঘুণারেও জানতে পারিনি। সেই কটা দিনের স্মৃতি সুমিতকে তাড়া দিয়ে বেড়াবে। খাগড়ায় দিনগুলো শেষ। অবশেষে চলে আসার পালা। টিকিট নিয়ে যথারীতি ষ্টেশনে সুমিতের অপো করছি। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। কোস্টা ছেড়ে দেয় দেয় অবস্থা। অথচ সুমিতের দেখা নেই। আমারতো রীতিমত সন্দেহ আর সংশয়। আবার মনে মনে রাগও হচ্ছে। সবকিছু ঠিক হবার পরও কেন এই খামখেয়ালীপনাএটা কি সময় জ্ঞানের অভাবকোন অঘটন হয়নি তোদুশ্চিন্তায় ও রাগে অস্থির হচ্ছি
এমনি সময়ে সুমিত হাজির। তার সেই দুষ্টুমী মাখা হাসি নেই। বরং বিষন্নতার ছাপ। তাকে আনমনা আর ভারাক্রান্ত মনে হলো। তার উপর আর রাগ করতে পারলাম না। নিমেষে মেজাজ শূন্য মাত্রায় নেমে এলো। এতদিনের হাসিখুশী সুমিত হঠাৎ বিষণ্ন। ভাষাহীন হয়ে পড়েছে। কিচ্ছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সুমিতকে কান্ত দেখে কিছু জিজ্ঞেস করে বিরক্ত করতে ইচ্ছে হলো না। শুধু মনে মনে সংশয় আর প্রশ্নের উদয় হচ্ছে
কোস্টার খাগড়াছড়ি ছেড়ে চলে আসছে। সুমিতের দুচোখ ঝাপসাআমমনে সে পেছনে তাকিয়ে রয়েছে। হয়তো কারোর বিদায় জানাবার প্রত্যাশায় কিনাকে জানেঅবশেষে যখন চেঙ্গী সেতু ফেলে আসছি। তখন সুমিতের চোখ বেয়ে রীতিমতো অঝোর বারিধারা নামছে
তার এই নীরব কান্নায় অভিভূত না হয়ে পারলাম না। ইচ্ছে হলো গাড়ী থামিয়ে দিই। জিজ্ঞেস করি সুমিতকে। সে কিছু হারিয়েছেকিছু ফেলে এসেছেচেঙ্গী সেতু দিয়ে গেলে আজো সুমিতের কান্নার কথা চোখে ভাসে
কেন সেদিন সুমিতের সেই কান্না তা আজো বুঝা হয়নি। হয়ত কোন দিন জানতেও চাইবো ন
(রাডার৭ই অক্টোবর '৮৮ ইং ৬ষ্ঠ সংখ্যা থেকে সংকলিত)


ক্যাম্পাসের দিন কাল

পর্যবেক্ষক

আষাঢ় মাসটার মাঝামাঝিতে এসেই বৃষ্টি নামা শুরু করেছে। যদিও নবীনদের আগমনে ক্যাম্পাসে ক্ষীণ প্রাণ চাঞ্চল্য অনুভূত হচ্ছে তার চেয়েও ছাত্র সংগঠনগুলোর আনমনা কার্যক্রম সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্যণীয়। আষাঢ়ী প্রকৃতির জড়তাচ্ছন্নতাই বোধ হয় সমস্ত কিছুর উত্তেজনাকে ম্লান করে দিয়েছে। নবাগত ছাত্র / ছাত্রীদের কাশ যেমন চলছে অত্যন্ত উদাসীনভাবে তেমনি প্রথম বর্ষের পরীক্ষার তারিখ নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে সবখানেই। এছাড়া দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে যে তালবাহানা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে নিরাশ হওয়ারই কথা। মাস্টারস্‌ ফাইন্যাল-এর পরীক্ষা পিছাবে কি পিছাবে না তা নিয়েও সংশয়ে দিন কাটাচ্ছে শেষ বর্ষীয় ছাত্র/ছাত্রীরা

তবে যারা প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন তাদের জন্য এ বাদলা দিনগুলো সামান্য অসুবিাধার সৃষ্টি করলেও নিরবে আড্ডা দেয়ার যথেষ্ট অনুকূলে। কিন্তু যারা প্রেমও নয় বন্ধুত্বও নয় অথচ প্রতিদিন বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরেবোটানিক্যাল গার্ডেনে কিংবা খেলার মাঠে বেড়াতে যান তাদের জন্য নিঃসন্দেহে বিরক্তিকরই বটে। যারা একেবারেই পড়ার টেবিলের মায়া কাটাতে পারেন না তাদের জন্য এখনকার দিনকাল ভালই কাটছে বলা যায়। আর ঘুম প্রেমিক ছাত্র / ছাত্রী যাই হোকএই বৃষ্টির দিনগুলোতে লেপ কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমিয়ে সময়ের নদী (অবসর) পাড়ি দিতে খুবই ভালো লাগছে নিশ্চয়ই
[রাডার৪র্থ সংখ্যা থেকে সংকলিত]

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহড়িরা কি উপজাতি?
শক্তি পদ ত্রিপুরা

দীর্ঘ দিন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের (বর্তমানে খাগড়াছড়িরাংগামাটিবান্দরবান এই তিনটি জেলা) পাহাড়িদের উপর ইচ্ছাকৃতভাবে 'উপজাতিনামের অপবাদ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এতদিন যাবৎ এই নামটি দেশে এবং বহিঃর্বিশ্বে ব্যাপক প্রচলিত হয়েছে। কিন্তুআদতে উপজাতি মানে কিপার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের বেলায় তা প্রযোজ্য কিনাকেউ ভেবে দেখেনি। বরং যুগের পর যুগ চাপিয়ে দেয়া 'উপজাতিনামের পরিচিতি নিয়ে আমরা বৃথা সন্তুষ্ট। আর অন্যান্যরাও পাহাড়িদেরকে উপজাতি বলে হেয় প্রতিপন্ন করতে সদা ব্যস্ত
এমতাবস্থায় এই বিভ্রান্তির বেড়াজাল কাটাবার জন্য কিছুটা আলোচনার প্রয়োজন। এই বিতর্কমূলক বিষয়টি আলোচনা করতে গিয়ে আমাদের ইতিহাসের দিকে একটু দৃষ্টি নিপে করতে হবে। বৃটিশরা যখন বিজয়ী হয়ে বাংলায় আসে তখন তারা ভারতীয়দেরকে প্রথমে মুসলমান সম্প্রদায়হিন্দু সম্প্রদায় নামে অভিহিত করেন। ভারতীয়দের মধ্যে সৈয়দ আমীর আলীই প্রথম ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম দাবী করলেন যেভারতীয় মুসলমান কোন সম্প্রদায় নয়তারা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি। পরবর্তীকালে তাঁর এ দাবীর উপর ভিত্তি করে হিন্দু ও মুসলমানদেরকে সম্প্রদায় না বলে জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ঠিক তেমনিভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী পাহাড়িদেরকেও তারা (বৃটিশ) উপজাতি (Tribe) নামে আখ্যায়িত করে। কিন্তু তৎকালীন সময়ে পাহাড়িদের প থেকে এই 'উপজাতিনামক অপবাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রতিবাদ করা হয়নি। অবশ্য তৎকালীন সময়ে পাহাড়িদের প থেকে প্রতিবাদ করার মত সচেতনতা না হওয়ারই কথা। কারণ সচেতনতার ভিত্তি হল শিক্ষা। তাও বিশেষতঃ উচ্চ শিক্ষা। কিন্তু তখনকার সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী পাহাড়িদের উচ্চ শিক্ষার কথা নাইবা বললামসাধারণ শিক্ষার হার পর্যন্ত নিতান্ত স্বল্প পরিমাণের ছিল। যার ফলে এর বিরুদ্ধে পাহাড়িদের প থেকে কোন প্রকার প্রতিবাদ উঠেনি। সেই থেকে পাহাড়িদের উপর 'উপজাতিনামক অপবাদের সূচনা। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের উপর বৃটিশরা এই অপবাদ দেয়ার পিছনে কারণ রয়েছে। বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের সাহায্যে বৃটিশরা যখন বঙ্গভূমি করায়ত্ত করে নেয়তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকেও তাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। কিন্তু শত চেষ্টা ও প্রলোভন সত্বেও তারা (বৃটিশ) পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকতে পারেনি। বরং পাহাড়িরা বীর বিক্রমে তাদেরকে বাধা দিয়েছিলো। কোনভাবে কাবু করতে না পারায় তখন তারা পাহাড়িদের বীরত্ব ও স্বাধীনচেতা মনোভাবকে ব্যঙ্গ করে 'উপজাতিআখ্যা দিয়েছিলেন। এভাবে বৃটিশের চাপিয়ে দেয়া 'উপজাতিনামক অপবাদটি দেশে ও বহিঃর্বিশ্বে ফলাওভাবে প্রচারিত হতে থাকে। আর মানুষের মনেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা সত্যি সত্যি উপজাতি এ বদ্ধমূল ধারণা জন্মে। এ ক্ষেত্রে হিটলারের প্রচারণা বিভাগের প্রধান গোয়েবেলস এর উক্তিটিই যথার্থভাবে প্রমাণিত হয়েছে। গোয়েবেলস বলতেন, 'একটা মিথ্যাকে বার বার বললে লোকে তা সত্য বলে ধরে নেয়এই ত গেল পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের উপর উপজাতি’ নাম চাপিয়ে দেয়ার পিছনে ঐতিহাসিক কারণ। এবারে দেখা যাক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা উপজাতি কিনা?
বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেমন সোভিয়েত রাশিয়াচীনভিয়েতনাম এবং পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে বহুসংখ্যক জাতিসত্তার সার্থক অস্তিত্ব রয়েছে। এই সব দেশগুলিতে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদেরকে কোনদিন উপজাতি কিংবা আদিবাসী অপবাদ দিয়ে হেয় করা হয় না। বরং সমমর্যাদার ভিত্তিতে তাদের ঐতিহ্যসংস্কৃতি ও কৃষ্টিবোধকে বিকশিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদেরকে উপজাতি’ আখ্যায়িত করার পিছনে অনেকেই সংখ্যালঘু’, পাহাড়ীয়া এলাকায় বসবাস’ ইত্যাদি কারণকে যুক্তি দেখাতে চান। কিন্তু সংখ্যালঘু হলে উপজাতি হতে হবে তার কোন মানে নেইআর পাহাড়ীয়া এলাকায় বসবাস করলে 'উপজাতিকিংবা 'আদিবাসীবলে অভিহিত করা যুক্তিসঙ্গত নয়। তাছাড়া অনেকেই একটা জাতির অধীনে বসবাস করলে উপজাতি বলে অভিহিত করতে প্রয়াসী হন। কিন্তুবৃটিশ আমলে হিন্দু ও মুসলমানরা বৃটিশের শাসনাধীনে থাকলেও তাদেরকে উপজাতি বলে আখ্যায়িত করতে পারেনি। অনুরূপভাবে পাকিস্তান আমলেও পূর্ব বাংলার জনগণকে উপজাতি বলে আখ্যায়িত করা যায়নি। আসলে বর্তমান সভ্যতার আলোকে উপজাতি শব্দটি যুগের সাথে সংগতিহীন। বিশেষতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের বেলায় তা আরো বেশী বেমানান
এবারে দেখা যাক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদেরকে জাতি বলে অভিহিত করা যায় কিনা
জে. ভি. স্টালিন জাতির সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বলেছেনজাতি হল একটি সম্প্রদায় (Community)লোকের একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায় রেসিয়াল বা কুলগত নয়ট্রাইবেল বা গোষ্ঠীগতও নয়।" জে. ভি. স্টালিন এটাই ইংগিত দিতে চেয়েছেন একটি জাতি সংগঠিত বা পরিণত হয় কতকগুলো জাতিসত্তার সমন্বয়ে। যেমন আধুনিক ইটালিয়ান জাতি সংগঠিত হয়েছিল রোমানটিউটনএট্রোস্কানগ্রীকআরব ও অন্যান্য জাতিসত্তার সমন্বয়ে। সুতরাং জাতি -- কুলবা গোষ্ঠী থেকে আসছে নাজাতি হল একটি ঐতিহাসিক সম্প্রদায় ‘Nationality’ বিকশিত হয়ে Nation রূপ লাভ করে। উদাহরণস্বরূপ -- ইংলিশস্কটিশওয়েলস ও আইরিশ Nationality দের সমন্বয়ে British Nation গঠিত বা পরিণত হয়। অনুরূপভাবে গণ প্রজাতন্ত্র চীনেও বহু জাতিসত্তার (Nationality) সমাবেশ ঘটেছে। সেখানে বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিকভাবে সামঞ্জস্য রেখে Nationality বলা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমামারমাত্রিপুরা ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীদেরকে যথাক্রমে Nationality বলা অধিকতর যুক্তিসংগত। এই চাকমা Nationalityমারমা Nationality ও অন্যান্য Nationality দের সমন্বয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা Jumma nation -এ পরিণত হয়েছে। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের বেলায় সেই শতাব্দীর ঘুনেধরা 'উপজাতিনামের অপবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অচল
এ সমস্ত বাস্তবতার আলোকে এটাই বলতে হয় যেপার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা উপজাতি নয় কিংবা আদিবাসীও নয়বরং বিভিন্ন জাতিসত্তার সমন্বয়ে ঐতিহাসিকভাবে বিকশিত একটি 'জুম্মজাতি' (Jumma nation) বা পাহাড়ি জাতি



শরৎ বাবুর খোলা চিঠি

মি. শ্রুতিপূর্ণ

গত ২৭শে নবেম্বর '৮৬ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়িয়া শ্যামল বাংলার আরও একটি নিভৃত পল্লীতে জীবনের আরেক অধ্যায় যখন রচনা করিতেছি তখন বসন্ত দ্বারে হাত রাখিয়াছে। গাছে গাছে সবুজ পত্রের সাজ সাজ রব উঠিয়াছে। পলাশ আর শিমূল রাঙা ফুলে বনানীও মন রাঙাইতে ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছে। শিশির সিক্ত একটি সকালে বুকের মাঝে মন নামক বস্তুটি যেখানে অবস্থান করিতেছে সেখানে ফালগুনীতোমার শূন্যতা গভীরভাবে অনুভব করিলাম। দুইটি বিপরীত প্রেমাত্মা যখন খুবই কাছে আসিয়া হৃদয়াবেগে পুলকিত হইয়া শহীদ মিনারের পাদদেশে বসিয়া মনোবাসনা উজার করিয়া বলিতেবোটানিক্যাল গার্ডেনের মধ্যিখানে বসিয়া বিকেল বেলাটি কাটাইতে কিংবা খেলার মাঠের সবুজ চত্বরে একান্ত কাছে বসিয়া হৃদয়ের অফুরন্ত কথার মালা গাঁথিতে ভালো লাগিতেছিল তখনই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হইয়া গেল
তারপরই তোমার আমার বিচ্ছেদ ঘটিয়া গেল। বান্দরবানের বালাঘাটায় আসিয়া বুঝিলাম "ছোট প্রেম শুধু দূরেই ঠেলিয়া দেয় না কাছেও টানে।" চিম্বুক পাহাড় হইতে শুরু করিয়া হিল টপ যাদি পাহাড়ের মাথায় উঠিয়া বসন্ত প্রকৃতির সহিত হারাইয়া যাইতে চাহিয়াছিশংখ নদীর পাথুরে পাড়ে পাড়ে ঘুরিয়া তোমার শূন্যতা ভুলিয়া থাকিতে চাহিয়াছিকিন্তু সবই ব্যর্থ হইয়া গিয়াছে
জানিতাম রাজুও তোমাকে গভীর ভালোবাসিত। সহায় পাগল মনে তুমিও লোক নিন্দাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করিয়া তাহাকে উজার করিয়া ভালো বাসিয়া ফেলিলে। ইহাতে কাহার কি লাভ হইল বা কি তি হইল সে অংক কষিবার দুঃসাহস কাহারও নাই। আমি নিজেও কষিয়া দেখি নাই। ভবিষ্যতেও কষিব বলিয়া মনে হয় না। ইহাতে দূরত্ব বাড়িবে বৈ কমিবে না। কিন্তু আপন সামাজিক রণশীলতাকে অসহায় করিয়া তুমি আরেক সামাজিক রণশীলতার বাঁধায় নিজে অবগাহন করিতে গেলেই আমি শুধু কষ্টই অনুভব করি না উপরন্তু অসহায় হইয়া পড়ি। চোখ রাঙাইয়া হয়ত প্রশ্ন করিবে "কেন?" এই "কেন" -এর উত্তর আমি একা দিতে পারিব না
আজ ভবঘুরে জীবনের অনেকগুলি বসন্ত পিছনে ঠেলিয়া দিয়াছিপ্রত্যন্ত পল্লীতে ঘুরিয়া বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছিঅসংখ্য মনের সহিত একাত্ম হইয়াছি কিন্তু কোথাও তোমার ঐ "কেন"-এর উত্তর খুঁজিয়া পাই নাই। জীবনের সায়াহ্নে দাঁড়াইয়া বোধ হইতে লাগিলউত্তর করিতে তোমাকেও অর্ধভাগ সম্পন্ন করিতে হইবে
এই ফালগুনে "ফালগুনী" প্রকৃতি হাতছানি দিয়া ডাকিতেছেআম্র মুকুলের সুবাসে মুখরিত বসন্ত আহ্বান জানাইতেছে। সারা দাও হে "ফালগুনী"শরৎ ক্যাম্পাসে ফিরিবার আয়োজন দেখিতে চায়
তোমারই
"শরৎ"
[রাডার১ম সংখ্যা থেকে সংকলিত]

শরৎ বাবুর খোলা চিঠির জবাবে ফালগুনী
মিস্‌ চৈত্রা

শরৎ,
৪ঠা ফেব্রুয়ারী ক্যাম্পাসে ফিরিয়া শুধু ক্যাম্পাসই নয় নিজের জীবনটাকেও ফাঁকা মনে হইল। তোমার অনুপস্থিতি নিজের অজান্তেই তিল তিল উপলব্ধি করিলাম। কে জানিত তোমার চিঠি 'রাডারএ ধরা পড়িবে এবং শেষ পর্যন্ত তোমার এ ফালগুনীকে মর্মাহত করিবে। কে জানিত আমাদের প্রেম নামক ঘটনাটি কমবেশী সবাই জানিয়া ফেলিবে। আমার এ চিঠি পড়িয়া অনেকেই মুখ লুকাইয়া হাসিবেঅনেকে ব্যঙ্গচ্ছলে আড়ালে তিরস্কার করিবে ইহাতে সন্দেহ নাই। তবুও লিখিলাম
প্রেম দুই ধরনের হইতে পারে। এক জীবনের প্রয়োজনেদুই বন্ধুত্বের প্রয়োজনে। তোমার আমার প্রেম প্রথমোক্ত প্রেম। 'রাজু' 'ফালগুনীরপ্রেম দ্বিতীয়োক্ত প্রেম। কোন না কোন ভাবগত কারণে রাজুর কাছাকাছি হইয়াছিলাম। তাই বলিয়া সন্দেহ নামক বস্তুটিকে মনে প্রশ্রয় দিয়া বসিবে তাহা আমি ধারণা করিতে পারি নাই
আসলে তোমাদের ছেলের জাতটাই বেপরোয়া সন্দেহে গড়া। শুধু মেয়েদের দোষ ধরিতেই ব্যস্ত। এ উচ্চ শিক্ষায় আসিয়া উচ্চ মানের পরিচয় থাকা উচিত। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের শেষ প্রান্তে আসিয়া তোমার যেমন বুঝিবার সময় হইয়াছে আমারও তো নিজেকে জানিবার চিনিবার সময় হইয়াছে
যাই হোক কাশ এবং পরীক্ষা রীতিমত চলিতেছে। তোমার ক্যাম্পাসে ফিরিয়া আসা উচিত। তোমার আগমনের পথপানে চাহিয়া রহিলাম
ইতি
তোমারই
ফালগুনী

[রাডার২য় সংখ্যা থেকে সংকলিত]

বৈশাখীর সমালোচনা
(সাময়িকীর জন্য বাছাইকৃত)

প্রিয়
সম্পাদক,
বাংলা নববর্ষের অগ্রিম প্রাণঢালা শুভেচ্ছা নিন। সাথে সাথে রাডার প্রকাশনায় যারা জড়িত তাদের এবং রাডারের গুণগ্রাহী পাঠক / পাঠিকাদের জানাই হৃদয় খোলা ভালোবাসা
সাহিত্যাঙ্গনে আপনাদের "রাডার" বড় ভূমিকা না রাখলেও ক্যাম্পাসাঙ্গনে এর বলিষ্ঠ পদচারণা এবং মিশ্র চরিত্র একদিকে যেমন রাজনীতি সচেতনদের আকৃষ্ট করেছেতেমনি আনন্দ দিচ্ছে প্রেমানুরাগীদের। মি. অপ্রিয়-এর নিষিদ্ধ ঘোষিত অথচ জনপ্রিয় যায় যায় দিনের অনুকর[ণে] "দিনের পর দিন" পার্বত্যাঞ্চলের সমস্যাকে ভেতর থেকে দেখার বা জানার দিক নির্দেশ করে। পাশাপামি মি. সুপ্রিয়-এর "তৃতীয় চিন্তা" পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার প্রতি পপাতহীন দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে আমাদের আগ্রহী করে তুলছে। মি. শ্রুতিপূর্ণ ও মিস চৈত্রার প্রেমপত্র রচনা সত্যি সত্যি উদার মনের পরিচয় বহন করে। কবিতা বা ছড়া যা রাডারে পড়েছি মোটামুটি মন্দ নয়। রাডারের অন্যান্য কলামে বেশ বৈচিত্র্যের স্বাদ আমরা পাই। ছেলে মেয়েদের প্রেম সম্পর্কিত লেখাই বেশী আনন্দ দেয় বিশেষতঃ মেয়েদের। তাই রাজনৈতিক নিবন্ধের পাশাপাশি শরৎ ফালগুনীর মত প্রেমালাপও আমরা রাডারে পড়তে চাই
শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন গোটা দেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়েও লিখুন। এ-তে করে রাডার আরও সচেতন পাঠক / পাঠিকা সৃষ্টি করবে। হলের মেয়েদের সমস্যা নিয়েও কিছু লিখুন। সবচেয়ে বড় কথা দিনের পর দিনের লেখক আগামী সংখ্যায় সে অভাব পূরণ করবেন। কোন উদ্যোগই সমালোচনার উর্ধে নয়। তাই রাডারের কিছু কিছু ক্রুটি আমরা যে দেখি এটা নির্দ্ধিধায় স্বীকার করি। তবুও রাডারে প্রেমবিরহভালোমন্দসত্য মিথ্যা ধরা পড়ুক এটাই চাই
ওহো ! আমরা মেয়েদের মধ্যে অনেক রাডারের অনুরাগী পাঠিকা ঠিক করেছি যে আপনাদের (বিজুসাংগ্রাইবিষু) চৈত্র সংক্রান্তি উৎসবে যোগ দেবো। তাছাড়া আপনাদের দেয়া বিঝুর নিমন্ত্রণ খেতেও আমরা প্রস্তুত
যাই হোক রাডারের অগ্রযাত্রা কামনা করেই ইতি টানি
শুভেচ্ছাসহ
শুভাকাঙ্খি
বৈশাখী

কবিতা গুচ্ছ

কারাগার

-- উ সা নু

সারাণ একটি মুক্ত আকাশ খুঁজি
এখানে অবসর নেই
মুক্ত বাতাস নেই
মনে পড়ে মুক্ত দিগন্তের মাঠ
বিস্তীর্ণ শস্য ক্ষেত্র
অসীম পথ
গ্রামের পর গ্রাম
পাহাড়ের পর পাহাড়
নদীসবুজ গাছ-গাছালী
পাখীর উড়া উড়ি
দেখি আকাশ ধাঁধানো বিমানের প্রিগতি
রাখালের বাঁশী
ছুটে যেতে ইচ্ছে করে
            সেই কবে থেকে
            আমাকে বন্দী করে রেখেছে
            সময় আর ফুরায় না
            পায়খানাপ্রস্রাবের গন্ধ আর দৈহিক অত্যাচার
            সেই কবে থেকে সইয়ে গেছে
            বিদ্যুতের শকে দেহটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে
            তবুও ভাবি --
            একটা মুক্ত আকাশ পাবো
            মিলিত হবো স্বজনদের সাথে
            কিন্তু চারি দেয়াল থেকে যখন মুক্তি পাই --
            তখন আমি মিশে গেছি
            আকাশ যেখানে মিশে গেছে
            নদী যেখানে থেমে গেছে
গালাপ এবং কলি
শহীদুল ইসলাম শহীদ
১ম বর্ষ (পুরাতন)রসায়ন

নির্মলনিষ্কলুষ ভালোবাসাকে পদদলিত করে
তুমি চলে গেলে -- যাও;
আমি তোমাকে বাধা দিব না
নতজানু হয়ে চাবনা প্রেম ভিক্ষা
অনাহারীর মত আদ্র চোখে বলবো না
একটুখানি প্রেম দাও
আভিজাত্যের মিথ্যে অহংকার
খর্ব হবার পর
খানিকটা ভালোবাসার তাগিদে
যখন আমায় ভাববে
তখন মনে রেখো
আমি ছিলাম একটি গোলাপ --
মানে যে কথা তোমাকে বলা হয়েছে,
আর একটি কলি
মানে যে কথা তোমাকে আজো বলা হয়নি
কলিটি ধরণীতে কোনদিনই
ফুল হয়ে ফুটবে না
হয়তো ফুটতো যদি তোমার
কোমল হাতের পরশ পেত
একটুখানি আদর পেত উঞ্চ ঠোঁটের

শোষণ
আবদুল হামিদ সোহেল
বনবিদ্যাচ. বি

শোষণ দেখে প্রশ্ন জাগে
দেশ কি তোদের একার?
দুঃখ ভোগে মরছে মানুষ
ল কোটি বেকার
স্বদেশ-টাকে কি পেয়েছিস্‌?
সৃষ্টি করিস্‌ প্রাসন!
ঘিন্যে লাগে রূপটি দেখে
তোদের গড়া শাসন

(রাডার২য় সংখ্যা থেকে সংকলিত)

কেমনে বাঁচিবে অসহায় জাতি?
অমরজিৎ

উগ্র সাম্প্রদায়িকস্বৈরাচারী কালো শক্তির
বিষাক্ত শ্বাস প্রশ্বাস ও বর্বরতায়
বুক সদা প্রকম্পিত
সহজ সরল পার্বত্যবাসীর
চারিদিকে দেখি ধূমায়িত অসন্তোষ
বিস্ফোরণের অপক্ষায় বর্তমান
জীবন তাদের কাম্য
মৃত্যু যদিও পাশে ভীড় করছে
চারিদিকে হাহাকার
বুলেটের শব্দ আর বারুদের গন্ধে,
জীবন যে লড়াই করছে
মৃত্যুর সাথে সার্বণিক;
হায়আজো হয়নি লেখা
তাদেরি ভালে -- শ্রান্তির বাসভূমি
এমন দুর্বিসহ জীবন
কেমনে সহে বিজ্ঞজন
তাইতো দেখি তাঁদেরি সামনে
করছে অবলীলায় মানবতার হত্যালীলা
নির্লজ্জভাবে শকুনের দল
হায়বিজ্ঞজনহায় মানবজাতি
মানবতা মরে গেলে
কেমনে বাঁচিবে অসহায় জাতি?


হেল ছড়া

প্রদীপ চাকমা

হেল দেঝত্‌ থেইহ্‌েল কাবর
পারি আমি পিনি
হেল গাঙর হাবা হেই
মাজ নপারি কিনি

বাংলা :

            সবুজ দেশের বাসী মোরা
            সবুজ কাপড় পরতে মানা
            সবুজ নদীর পাড়ে থেকেই
            মাছ যায় না কেনা

(রাডার২য় সংখ্যা থেকে সংকলিত)

অনন্ত অভিযোগ
নাসরিন আক্তার প্রভা
ব্যবস্থাপনাচ. বি.

এক চিলতে আলো খেলে গেলো
নিঝুম আঙিনায়,
            ফিরেও চাইলে না,
কি এমন অহংকার তোমার?
এক পশলা বৃষ্টি গড়িয়ে গেলো
কাঙ্তি প্রত্যাশায়,
ফিরেও ডাকলে না
কি এমন অহংকার তোমার?
এক নিবিড় হত্যাকান্ড ঘটে গেলো
স্তব্ধ নিরবতায়,
থমকে দাঁড়ালে না,
কি এমন অহংকার তোমার?
যার অবলম্বন শুধু সুদৃশ্য
কিছু অংগ
তার সাজে নাসাজে না এমন
নিষ্ঠুর রংগ

সাহসী মৃত্যু
সচিব চাকমা

উদ্ধত রাইফেল
অটোমেটিক রিভলবারের ব্রাশে
যে কোন মুহূর্তে
মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়তে পারে
তোমার আমার
তাই বলে কি
দরজা-জানালার খিল মেরে
আরশোলার মত অন্ধকারে
রুদ্ধ করবে নিঃশ্বাস?
কাপুরুষের মত মরবে বার বার?
তার চেয়ে এসো
উন্মুক্ত লড়াইয়ের ময়দানে
ফুসফুসে নির্মল বায়ু ভরে নিয়ে
বীরের মৃত্যুকে বরণ করি

একটু শান্তির খোঁজে
যশেশ্বর চাকমা বিল্টু

একটু শান্তির খোঁজে
আমি অনেক জায়গায় ঘুরেছি
জানতে চেয়েছি ঠিকানা
আমি অনেকের কাছে হাত পেতেছি
হয়েছি অনেকের দ্বারস্থ

আমি মার্কস লেনিন
রবীন্দ্রনাথনজরুল
শিরীন-ফরহাদরাধামন-ধনপুদির কাছে
এ বিষয়ে প্রশ্ন রেখেছি --

আমি মদে ডুব দিয়ে দেখেছি
গাঁজায় দিয়েছি লম্বা টান
আমি 'সিডাঙ্নিখেয়েছি
ডজনের পর ডজন
বিশ্বাস করো
ঐ সবে আমি শান্তি পাইনি
আমি জানি
একমাত্র তোমার কাছেই আছে
অফুরন্ত শান্তি

[সমাপ্ত]