পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১২

রাডার রাহুমুক্তি সংখ্যা


* পিডিএফ কপি পেতে ক্লিক করুন এখানে



রাডারের রাহুমুক্তি সংখ্যা সম্পর্কে দু'টি কথা

রাডার পত্রিকার রাহুমুক্তি সংখ্যা আপলোড করা হলোনব্বইয়ের ছাত্র-গণআন্দোলনে সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর রাডারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলে এটি প্রথম প্রকাশ করা হয়এই সংখ্যায় যারা লিখেছেন তাদের মধ্যে প্রসিত বি. খীসা ছাড়া বাকিরা সবাই ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেননিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাদের নাম এখনো গোপন রাখা হলোএকই কারণে কম্পোজ ও মুদ্রণসহ যারা বিভিন্নভাবে রাডার প্রকাশে সহযোগিতা করেছেন তাদের নামও প্রকাশ করা হলো নাপরবর্তীতে পরিস্থিতির অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের পরিচয় সবার কাছে তুলে ধরা হবে

রাডার প্রকাশনার সাথে যারা জড়িত ছিলেন তারা তখন সবাই বয়সে ও অভিজ্ঞতায় নতুনফলতঃ লেখায় অনেক বানান ভুল রয়ে গেছেএখানে সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করা হয়েছেআর পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাগুলোর "জুম্ম" পরিচয় সে সময় বাংলায় "পাহাড়ী" লেখা হতোপ্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক প্রয়াত আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এই বানানকে অশুদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন এবং দীর্ঘ "ঈ" কারের পরিবর্তে "ই"কার ব্যবহারের পরামর্শ দেনএখানে তাই করা হয়েছেআর "বাঙালী" বানান পরিবর্তন করে ''-কার দিয়ে "বাঙালি" লেখা হয়েছেএছাড়া বাদ বাকি সব কিছু আগের মতো রাখা হয়েছেযদি এ সম্পর্কে কোন মতামত, পরামর্শ বা সমালোচনা থাকে তাহলে আমাদেরকে লিখে জানানোর অনুরোধ থাকলোআমাদের ইমেইল ঠিকানা : radarcht@gmail.com


এবার রাডারের রাহুমুক্তি সংখ্যা যে সময় প্রকাশিত হয়েছিলো সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে আলোচনা করা দরকারএতে প্রকাশিত লেখাগুলো বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে

রাডারের এই সংখ্যা (রাহুমুক্তি সংখ্যা) যখন প্রকাশিত হয় তখন দেশে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছেসদ্যজাত 'গণতন্ত্রকে' রক্ষা ও বিকশিত করার কথা জোরেশোরে শোনা যাচ্ছেকিন্তু দেশে এত পরিবর্তন সত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামে তখনও পরিবর্তনের কোন চিহ্ন নেইপুরো পার্বত্য এলাকায় তখন সামরিক বাহিনীর দৌর্দণ্ড প্রতাপ (এখনো খুব বেশী পরিবর্তন হয়েছে তা নয়)গুচ্ছগ্রাম, বড়গ্রাম, আদর্শ গ্রাম ও শান্তিগ্রাম নামক বন্দীশালায় পাহাড়িদেরকে আটক করে রাখা হয়েছেপরিচয় পত্র, অনুমতি পত্র ছাড়া কোথাও যাওয়া যেতো নাবাসাবাড়িতে নিকট আত্মীয় কিংবা অতিথি বেড়াতে আসলেও ক্যাম্পে তা জানাতে হতোখুন, ধর্ষণ, গ্রেফতার, নির্যাতন, সেটলার হামলা, জ্বালাও পোড়াও ছিল প্রাত্যহিক ঘটনাটাইগার বাহিনী, লায়ন বাহিনী, গ.প্র.ক (গণ প্রতিরোধ কমিটি) ইত্যাদি নামে সৃষ্ট সেনা এজেন্ট বা পার্বত্য রাজাকারদের দাপটে নিঃশ্বাস ফেলতে হতো ভয়ে ভয়ে - কী জানি কখন কার নামে সেনা ক্যাম্পে রিপোর্ট যায় এই দুশ্চিন্তায়হামলার আশঙ্কায় সেনা টহল দিয়ে রাস্তায় গাড়ি চলাচল করতোসেনাদের নির্দেশে সকাল দশটার আগে ও বিকেল ৪টার পর রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রাখতে হতো৬০ হাজারের মতো জুম্ম নরনারী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছেনএক কথায় তখন এক চরম অনিশ্চিত ও অসহনীয় পরিস্থিতি সারা পার্বত্য চট্টগ্রাম গ্রাস করেছিলএসব অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, মিছিল ও সভা-সমাবেশের কথা তখন চিন্তাও করা যেতো না

অপরদিকে, শান্তিবাহিনী বা জেএসএস-এর অবস্থাও মোটেই ভালো ছিল নাদীর্ঘ আন্দোলনে তারা রণকান্ত'৮৯ সালের জুনে এরশাদের চাপিয়ে দেয়া জেলা পরিষদের নির্বাচন বানচালের ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দেয়সরকারের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পনের খবর তখন প্রায়ই শোনা যেতোআর অনেকে যুদ্ধের ময়দান থেকে ইস্তফা দিয়ে শরণার্থী ক্যাম্পে ভিড় জমান

ঠিক এই পরিস্থিতিতে ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ রাডারের রাহুমুক্তি সংখ্যার আত্মপ্রকাশ ঘটেপ্রকাশের পর পরই তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেকারণ তখন এ ধরনের পত্রিকা পার্বত্য চট্টগ্রামে একেবারে নতুনজনগণের বুকে বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা অব্যক্ত দুঃখ বেদনার কথাগুলো এতে আন্তরিকভাবে তুলে ধরা হয়েছিলসে সময় দেশের পত্র পত্রিকায় পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের ওপর অবর্ণনীয় নিপীড়ন নির্যাতনের কোন খবর প্রচারিত হতো নাএসব কারণে রাডারে প্রকাশিত লেখাগুলো জনগণের মনে দাগ কাটতে সক্ষম হয়

সে সময় প্রসিত খীসার নেতৃত্বে যুগপৎভাবে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বিস্তৃতি ও রাডারের প্রকাশ পরিস্থিতিতে অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং অল্প সময়ের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক অভূতপূর্ব ছাত্র-গণ আন্দোলনের জোয়ার সৃষ্টি হয়ছাত্ররা দলে দলে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে যোগ দেয় এবং এলাকায় এলাকায় সেনা নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে ওঠেসেনা নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়হতাশার কালো মেঘ কেটে যায়জনগণ নতুন করে আশার আলো দেখতে পায়জুম্ম জাতি নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন ফিরে পায়শত্রুর কাছে জেএসএস সদস্যদের আত্মসমর্পন বন্ধ হয়তাদের মধ্যে নব উদ্যমে সংগ্রাম করার উদ্যম, সাহস ও প্রেরণা সঞ্চারিত হয়

তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাসে রাডারের গৌরবোজ্জ্বল ও বিশিষ্ট ভূমিকা অনস্বীকার্যআমরা আশা করি, নতুন প্রজন্ম, বিশেষত জুম্ম ছাত্র সমাজ, এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে জুম্ম জাতির সংগ্রামী চেতনার মশাল সমুন্নত রেখে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাবে
     -সম্পাদক, রাডার সিএইচটি ব্লগ


রাডার
হিল লিটারেচার ফোরামের একটি অনিয়মিত প্রকাশনা
২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯১
রাহুমুক্তি সংখ্যা


একান্ত সাক্ষাৎকারে বদরুদ্দীন উমর
বন্ধ হোক পাহাড়ের বুকে বাঙালির রক্তঝরা
জলপাই স্বৈরাচার, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রেক্ষিত
আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে ছাত্র ও যুব সমাজ
গণতন্ত্রের বলি পাহাড়ি জনগণ
* বিক্ষুদ্ধ সংলাপ
* CHT কমিশনের সুপারিশসমূহ
* রাডারের অভ্যুদয়
* দিনের পর দিন

পাতা : ২

ঘটনা প্রবাহ
প্রধানমন্ত্রী সমীপে মিজোরাম
চাকমা নেতাদের স্মারকলিপি পেশ
গত ১লা আগষ্ট ১৯৯১ ইং মিজোরামের চাকমা নেতৃবৃন্দ ভারতের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শ্রী পি ভি নরসিমা রাও-এর নিকট এক স্মারকলিপি পেশ করেনস্মারকলিপিতে তারা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের এবং পাহাড়ি জনগণের অমানবিক ও নিরাপত্তাহীন অবস্থা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেনপাহাড়ি জনগণের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যাসমূহ সমাধান করতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে রাজী করানোর জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান
দীর্ঘ স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বৃটিশ সরকার ১৯০০ সালের ৬ই জানুয়ারী “Chittagong Hill Tracts Regulation of 1900” প্রবর্তনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে "বহির্ভূত এলাকা" (Excluded Area) হিসেবে ঘোষণা দেনপরবর্তীতে "ভারতীয় শাসনবিধি ১৯৩৫" পার্বত্য চট্টগ্রামকে “Fully Excluded Area” হিসেবে এবং পাকিস্তান সরকার CHT Regulation 1900 -এ প্রদত্ত মর্যাদার ন্যায় অনুরূপ মর্যাদার স্বীকৃতি দেনকিন্তু ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের “Excluded Area” -র মর্যাদা বাতিল করেন যার ফলে পাহাড়ি জনগণ তাদের জাতীয় অস্তিত্ব, সামাজিক কাঠামো, প্রথা, ঐতিহ্য, ভাষা এবং ভূমিস্বত্ব সংরক্ষণের আইনগত অধিকার হারায়এরপর নেতৃবৃন্দ জেলা পরিষদের সমালোচনা করে বলেন, পরিষদের আইনসমূহ সাধারণ আইনের মর্যাদাসম্পন্ন বিধায় সরকার যে কোন সময় পাহাড়ি জনগণের মতামত ব্যতিরেকে তা বাতিল করে দিতে পারেনমোট কথা, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘুদের স্বায়ত্তশাসন হিসেবে বর্তমান জেলা পরিষদ খুবই অপ্রতুল
চাকমা নেতৃবৃন্দ মনে করেন, অপাহাড়ি বাঙালিরা সমতলে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত সমাধান হতে পারে নাভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রিত পাহাড়ি শরণার্থীদের তাদের স্ব স্ব এলাকায় প্রত্যাবাসনের পূর্বশর্ত হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঁচটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন --
(১) পাহাড়ি জনগণের উপর সকল প্রকার অত্যাচার নির্যাতন এবং গড়পরতা হয়রানি বন্ধ করতে হবে
(২) আদর্শগ্রাম, গুচ্ছগ্রাম, যৌথখামারে পুনর্বাসন করার নামে পাহাড়িদের গ্রাম ভেঙ্গে দিয়ে তাদেরকে (Relocating) স্থানান্তরিত করণ প্রকল্প বন্ধ করতে হবে
(৩) বেআইনী অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে
(৪) সেনাবাহিনীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করতে হবে
(৫) অপাহাড়ি পুনর্বাসিতদের প্রত্যাহার করতে হবে
নেতৃবৃন্দ মনে করেন, বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের জনগণের পাশাপাশি পাহাড়ি জনগণকে তাদের স্বকীয় স্বত্বা সংরক্ষণের মাধ্যমে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই পাহাড়ি জনগণের সমস্যার সমাধানের জন্য মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবেপার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা বাংলাদেশের একটি আভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং তা সমাধানের জন্য পাহাড়ি জনগণের দাবিসমূহ সরকারের মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করা উচিত বলেও তারা মনে করেন
শেষে তারা শান্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উপায়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেন

গণহত্যা বন্ধ করো
সম্প্রতি Chittagong Hill Tracts Campaign & Information Network "জুম্ম জনগণের উপর গণহত্যা বন্ধ করো, বাংলাদেশে মানবাধিকার সমর্থন করো" (Stop genocide of Jumma people, Support Human Rights in Bangladesh) শিরোনামে একটি লিফলেট প্রচার করেছেএতে বলা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন সামরিক বাহিনীর দখলাধীনএখানে সরকার তার নিয়মিত বাহিনীর এক  তৃতীয়াংশ সৈন্য মোতায়েন করেছেউক্ত প্রচার পত্রে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯১ সালের জুন পর্যন্ত সংঘটিত বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করা হয়এতে আরো বলা হয় যে, এ বছর জুন মাসে দাতা দেশগুলোর Paris Consortium মিটিঙ-এ কমপে সাতটি দেশ পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং বাংলাদেশকে সাহায্যের পরিমাণ কমিয়ে দেয়
প্রচার পত্রে বলা হয়েছে যে, সেনাছাউনীর চারপাশে বাঙালি ও জুম্ম জনগণের জন্য আলাদাভাবে নির্মিত গুচ্ছগ্রামের জনগণকে চলাফেরার কোন স্বাধীনতা দেয়া হয় না এবং সরকারী রেশনের অপ্রতুলতার জন্য অনেকেই উপোসে মরে যাচ্ছে
৯০-এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শক্তি এক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সারা দেশে এরশাদের ৯ বছরের স্বৈরাচার পতন ঘটালেও পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনো স্বৈরাচারমুক্ত নয় বলে প্রচার পত্রে বলা হয়
প্রচার পত্রে পাঁচটি দাবি জানানো হয় -
(১) CHT থেকে অনতিবিলম্বে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার
(২) বেদখলকৃত জুম্ম জনগণের জমি ফেরত দান
(৩) বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের প্রত্যাহার এবং পুনর্বাসনকরণ
(৪) চলাফেরা, বাক্‌ এবং সংগঠনের স্বাধীনতা দান
(৫) পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকারের প্রতি যথাযোগ্য শ্রদ্ধা প্রদর্শন

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সেমিনার
গত ১৩ই সেপ্টেম্বর পশ্চিম জার্মানীর হামবুর্গ শহরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সেমিনার শুরু হয়েছে১৬ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট চার দিন স্থায়ী এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিগণ প্রধানতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে "উন্নয়ন, সাহায্য ও মানবাধিকার" বিষয় নিয়ে আলোচনা করেনবক্তাগণ হচ্ছেন ডঃ উলফগেং মে - জার্মানী; উইফফ্রেড টেলকাম্পার - ব্রাসেলস; সৈয়দ হাশেমী - সহযোগী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার; রাশেদ খান মেনন - সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি; জেনেকী (আসলে শুদ্ধ উচ্চারণ হবে ইয়ানাকা) আরেন্স - আমস্টারডাম, আদিত্য কুমার দেওয়ান - ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা; চন্দ্র দাস চাকমা, সুহাস চাকমা, প্রজ্ঞাজ্যোতি ভিক্ষু, সুবিমল বিকাশ চাকমা, গৌতম চাকমা - ভারত; জেরেমী কুপার - বৃটেন; ডেইটার রেইনহার্ড - বার্লিন; উইলিয়ম ভেন সান্ডেল Erasmus University, Rotterdam, Tilman Zülich - জার্মানী এবং ফ্রান্সিস রোল্ট - বৃটেন

আমাদের দেখতে এবং বলতে কারোর করুণার প্রয়োজন নেইআমাদের প্রচারণার জন্য আমরা কারো দায়বদ্ধ নই

পাতা : ৩

নিজের ঢোল নিজে বাজাই
হিল লিটারেচার ফোরাম এক ঝাঁক প্রতিবাদী নিরস্ত্র কলম সৈনিকের ছাউনি
প্রতিবাদ প্রচলিত অব্যবস্থার বিরুদ্ধেসকল নিপীড়িত মেহনতি মানুষের স্বপক্ষে ঘৃণা করি সব ধরনের স্বৈরাচার আর বারুদ আধিপত্যচাই সুবিধাবাদী ও শক্তির পদলেহীদের অপমৃত্যুনিয়ন্ত্রণ নৈরাজ্যের অচলায়তনের দেয়ালে চির ধরাতে চাইনির্যাতন, সন্ত্রাসের ঘোর বিরোধী (ডেড অ্যাগেইনস্ট)নিখাদ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তারুণ্যের নির্ভীক যোদ্ধাদের তন্ন তন্ন করে খুঁজছি আমরা ঘুনেধরা সমাজ কাঠোমোয়যুদ্ধ আসন্নবিজয় আমাদের অনিবার্যখসে যাবে সাহসী যৌবনসময়ের হাত ধরে তবুও এ দুর্বার অভিযাত্রাবেরিয়ে এসো খামচে ধরা কানাগলির প্রাচীর ভেঙ্গেপ্রতিবাদ এবং আত্মরা দুই-ই হোক প্রকৃতির প্রথম হাতিয়ার

যোগাযোগ :

            * ৩২০, পূর্ব বাড়ী, জগন্নাথ হল, ঢা. বি
            * ১৩০ আহসানউল্লাহ হল, বুয়েট
            * ২২/৪ বি, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
            * ৩০৯, শান্তি নিকেতন, , বি
            * ২৪২, শাহ আমানত হল, , বি

প্রাপ্তিস্থান :
           
            * পাঠক সমাবেশ, মুজিব হলের বিপরীতে, ঢাকা
            * দীপ্র প্রকাশনী, ৬৮/২ পুরানা পল্টন, বাসস-এর নীচে
            * কারেন্ট বুক সেন্টার, চট্টগ্রাম
            * বুক স্টল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

রাডার
সম্পাদকীয়

আজ থেকে পাঁচ শত সত্তর দিন আগে ১৯৭৪ এর ধারা ১৭ (১) সি-তে প্রদত্ত দানবীয় ক্ষমতার রাহু গ্রাস করে আমাদের "রাডার" সংকলনের পরবর্তী সকল প্রকাশনাকেঅতপর দীর্ঘ কাল প্রচণ্ড ক্ষোভ, ঘৃণা আর প্রতিবাদের লক্ষ আগ্নেয়গিরি লালন করেছিঅসহ্য দুঃসময়ের মহাসাগর পাড়ি দিয়েছি যেন প্রতিদিননব্বইয়ের ছাত্র-গণ আন্দোলনের প্রলয়ে ধ্বসে পড়ে স্বৈরাচারনিষেধাজ্ঞা প্রদানের তিন শত পঁচিশ দিন পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রাজনৈতিক শাখা-৩, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সালমা নাসরীনের একটি সাদা খামের চিঠি আসে শান্তি নিকেতনেনিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়আমরাও রাহুমুক্ত হই
সুতরাং "রাডার' পুনর্জন্মের প্রাণপণ নিরলস আয়োজনকিন্তু চরম আর্থিক দৈন্যতার অনিবার্য ব্যারিকেডমহাকাশ ধৈর্য, অদম্য প্রচেষ্টা আর ঐকান্তিক ইচ্ছা ধারণ করে ডিঙিয়ে যাই আরও অনেক বাধার প্রাচীরস্বভাবতই প্রসব বেদনাঅবশেষে "রাডার" -এর সংকটময় জন্ম লাভ
সুপ্রিয় পাঠক / পাঠিকা, নৈমিত্ত্যিক এ সংকট কাটাতে প্রয়োজন আপনাদের নিবিড় সহায়তাআমরা কোন দল বা গোষ্ঠীর কাছে দায়গ্রস্ত নইআমরা আপনাদের কাছে দায়বদ্ধতাই আমাদের প্রকাশনার অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে আপনাদের সার্বিক সাহায্যই একমাত্র মূলধন
অতএব, অবাধ, সরাসরি যোগাযোগের সেতু রচিত হওয়া আবশ্যক

তাহলে তা বাড়িয়ে দিন

"হিল লিটারেচার ফোরাম" -এর পক্ষে "রাডার" প্রকাশনা কমিটি ও সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত

পাতা : ৪

রাডার -এর অভ্যুদয়
প্রসিত বি, খীসা
সময়ের স্রোতধারায় আবির্ভূত হয়েছিল একটি ভিন্নধর্মী সংগঠন ও পত্রিকারসে এক বিশেষ পটভূমিতেসারাদেশ তখন স্বৈরশাসন কবলিতউত্তাল গণআন্দোলন জেগে উঠেছিলস্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী জনতা প্রতিবাদ বিক্ষোভে মেতে উঠে
সেই '৮৬ সাল - পার্বত্যবাসীদের কাছে একটি বিভীষিকাময় বছরঐ বছরে পানছড়ি-দিঘীনালায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়হাজার হাজার সরলপ্রাণ পাহাড়ি নিজ বাস্তুভিটা হারিয়ে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সীমান্ত পাড়ি দেয়সারা পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা তখন থমথমেভয়াবহতম হত্যাকাণ্ডের ফলে পানছড়ি-দিঘীনালার জনপদগুলো এক নিষিদ্ধ প্রেতপুরীতে পরিণত হয়
সবাইকে অবাক করে সেদিন দেশের সংবাদপত্রগুলো ভয়ঙ্কর নীরবতা পালন করেস্বজনহারা-শোকাহত পার্বত্যবাসীরা সংবাদ মাধ্যমের ঐ ভূমিকায় হতবাক হয়ক্ষোভে-দুঃখে সেদিন সমস্ত পার্বত্যবাসী বাক্‌রুদ্ধপ্রকৃত ঘটনাবলী জানার কোন মাধ্যম বা উপায় ছিল নাহতভাগ্য পাহাড়ি ছাত্ররা সেদিন নিজ আত্মীয় পরিজনের খবরাখবর জানার জন্য ছটফট করছিলতীব্রভাবে অনুভূত হয়েছিল একটি বস্তুনিষ্ট সংবাদ মাধ্যমের
'৮৬ সালের সেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে সমস্ত ভ্রুকুটি উপো করে সিদ্ধান্ত হয়েছিল - একটি উপায় খুঁজে বের করারনির্ভীকচিত্তে এগিয়ে এসেছিলেন কিছু উচ্ছলপ্রাণ তরুণ১৬ই নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে Hill Literature Forum -এর আত্মপ্রকাশ ঘটে২৪শে নভেম্বরে গঠিত হয় একটি কমিটিপ্রচলিত গতানুগতিক পড়ালেখার পাশাপাশি জনজীবনের নিত্যদিনের অনুভূতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিব্যক্তি উচ্চারিত হয়অত্যাচারের ষ্টীম রোলারে পিষ্ট দুঃখী মানুষের হাসি-কান্নার অব্যক্ত সুর তুলে ধরার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়হিল লিটারেচার ফোরাম-এর পক্ষ থেকে অচিরেই একটি পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়যে পত্রিকায় থাকবে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যায় অবিচারের অন্ধকার অধ্যায়গুলোআবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে শুরু করে শত্রু পরে হামলার গতিবিধি যেভাবে রাডারের তরঙ্গে ধরা পড়ে -- তেমনিভাবে ঐ পত্রিকায়ও ধরা পড়বে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিদিনকার দুঃখ বেদনার ঘটনাবলী, ভেসে উঠবে জনজীবনের সঠিক চিত্রতাই পত্রিকার নাম “RADAR” প্রস্তাবিত হয়
২৬শে নভেম্বরে দু'দল ছাত্রের সংঘর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হলে, "রাডার" প্রকাশের প্রথম উদ্যোগ ব্যাহত হয়দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর '৮৭তে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে আবার রাডার প্রকাশের প্রচেষ্টা চলে
প্রথমদিকে প্রস্তুতিমূলক সংখ্যা হিসেবে "রাডারকে" দেয়ালিকা আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়'৮৭ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের মহান আত্মোৎসর্গকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়সেই থেকে যাত্রা শুরু
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অল্প সময়ের মধ্যেই সৃজনপ্রয়াসী সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা ছাত্রছাত্রীদের কাছে "রাডার" অতি পরিচিত হয়ে উঠেরাডারের লেখা, বৈশিষ্ট্য, আঙ্গিক এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল নতুনত্ব - যা ছাত্রছাত্রীদের অনুভূতিতে নাড়া দিতে পেরেছিলপাহাড়ি ছাত্রছাত্রীরা ছাড়াও অন্যান্য জেলার বন্ধুরাও "রাডার" -এ নিয়মিত লিখতেনশীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র সংগঠনের দেয়ালিকার ভিড়ে "রাডার" একটি মর্যাদার আসন গড়ে নিতে সম হয়েছিল
একটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে যেভাবে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের বিকাশ হওয়া উচিত - দুঃখজনক হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তা আশানুরূপভাবে হয়নিআজো অবস্থার তেমন কোন উন্নতি ঘটেনি
তার উপর সময়ে-অসময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়া - "রাডার" প্রকাশনায় অনেক বিঘ্ন ঘটতোঅনেক সংকট অচলায়তন ঘিরে ধরতোতবু সাধ্য অনুযায়ী নিয়মিত-অনিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসে "রাডার" প্রকাশিত হতে থাকেকিন্তু তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ ছিল
তাই সময়ের দাবীতে সীমাবদ্ধ গণ্ডি ছাড়িয়ে বৃহত্তর পরিসরে "রাডার" প্রকাশনা নিয়ে যাবার চিন্তা ভাবনা চলে'৮৯ সালের ১লা নভেম্বর প্রথমবারের মতো সংকলন আকারে রাডার প্রকাশিত হয়তাতে শুধুমাত্র দেয়ালিকার পূর্বেকার সংখ্যাগুলোর লেখাগুলোই বাছাই করে সংকলিত হয়েছিললেখায় কোন সম্পাদনা করা হয়নি এবং নতুন কিছুও সংযোজিত হয়নি
অথচ রাডারের সেই দেয়ালিকা সংকলনটিই স্বৈরাচারী সরকারের আমলে কু-নজরে পড়েস্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-৩ এর এক চিঠিতে [স্মারক নং ২৬৬ / স্বঃ মঃ (রাজ-৩)] ১লা মার্চ, ১৯৯০ ইং তারিখে রাডারের সেই সংকলন এবং পরবর্তী প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়পার্বত্য চট্টগ্রামে "রাডার"-ই বোধ হয় একমাত্র পত্রিকা (প্রস্তুতিরত) যা সরকারীভাবে প্রথম নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছেআমরা মোটেই বিষ্মিত হইনিপার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষকে নানাভাবে অবদমিত করে রাখা হয়েছে [,] সেই নিষেধাজ্ঞাও অবদমনের একটি নতুন সংযোজন মাত্র
"আপত্তিও নাকি এক ধরনের স্বীকৃতি"নিষেধাজ্ঞা জারী করে কণ্ঠ রুদ্ধ করতে গিয়ে স্বৈরাচারী সরকার প্রকারান্তরে রাডারকেই স্বীকার করে নিয়েছে
নব্বই -এর গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলে উক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। [স্মারক নং ২৯/ছাড়-৬৯১ স্বঃ মঃ (রাজ-৩) তারিখ : ২৬-১-১৯৯১ ইং]
নিষেধাজ্ঞার রাহুমুক্ত রাডারের আবার পুনর্জন্ম হতে চলেছেকিন্তু সম্মুখে কোন সহজ সোজা পথ নেইকত সমস্যা-সংকট আঁকড়ে ধরে পথ রুদ্ধ করতে চেয়েছেপ্রতিনিয়ত যেন রক্তচু উদ্যতএতে প্রকাশনা ব্যাহত হয়েছে কিন্তু থেমে যায়নি
যাদের নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তাদের আজ কেউ কেউ নেইহিল লিটারেচার ফোরামের অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন সেই চার জনযাদের একজন বর্তমানে চাকরীতেঅকান্ত পরিশ্রমের পরেও ক্লান্ত-শ্রান্ত মুহূর্তে সবসময় হাসিয়ে মাতিয়ে তুলতো - সে হচ্ছে বন্ধুবর মিঃ প্রদীপআজ পাশে নেইঅপরজন নিষ্ঠার সাথে কাজ করেও পরবর্তীতে নীতি-আদর্শের সাথে বিরোধীতা করে চলে যায়তার সম্পর্কে আর বলার প্রয়োজন পড়ে না - সে মিঃ প্রশান্তসুদিনে-দুর্দিনে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে কাজ এগিয়ে নিয়েছে - সে মিঃ প্রধীরনিজের নামেই তার পরিচয়
শুরু থেকেই ফোরামের কর্মকাণ্ডে ব্যাপৃত রয়েছে সে প্রবন্ধকার নিজে
তারপর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় এগিয়ে এসেছে মিঃ শক্তি, মিঃ শিবা, মিঃ সচিব ... ... আরো অনেকেযারা এগিয়ে না এলে হয়ত গতি সীমিত হতো
"রাডার" প্রকাশনা সবে তিন বছর হয়ে গেলোসময়ের নিরীখে এই তিন বছর কিছুই নয়তাই এখনও সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান নিয়ে কিছু বলার সময় হয়নিকিন্তু স্বল্প পরিসরে "রাডার" নিষিদ্ধ হয়ে পড়েছেএর ফলে স্বাভাবিক যে কৌতুহল ও প্রশ্ন জাগবে - তারই আলোকে আজকের এই লেখার আয়োজন
যে স্বপ্ন-সংকল্প নিয়ে যাত্রা শুরুবলতে দ্বিধা নেই তা আজো পূরণ হয়নিএকটি প্রকাশনা টিকিয়ে রাখা, আর বিশেষত তা যদি শিক্ষানবীশ ছাত্রদের করতে হয় - তাহলে কত কাঠখড় যে পোড়াতে হয় তা বলাই বাহুল্যআমাদের সাথে কোন দানবীর হাজী মুহম্মদ মহসীন নেইসদিচ্ছা আর আন্তরিক প্রচেষ্টাই একমাত্র পুঁজিতাই সম্বল করে প্রকাশনা চলছেদেয়ালিকা থেকে সংকলন, তারপর অনিয়মিত থেকে নিয়মিত ... ... এভাবে অবশেষে একদিন পরিণতরূপ নিয়ে রাডার প্রকাশিত হবে - সেই নিরন্তর স্বপ্ন আমাদের টেনে চলেছে
প্রকাশনা ব্যাপারে অদম্য উৎসাহ আর মনোবল ছাড়া আমাদের বোধ হয় আর কোন অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা নেইসত্য উচ্চারণে যারা নির্ভীক ও উৎসাহী সমস্ত নতুন প্রাণ বন্ধুদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান রইল "রাডার"-এর পদযাত্রায় সামিল হবার
যেদিন সমস্ত দুঃখ-পীড়িত মানুষের অব্যক্ত কথাগুলো রাডারে প্রকাশিত হতে পারবে - সেদিনই তবে রাডারের স্বপ্ন-সংকল্প সার্থক হবে। -রাডার

পাতা : ৫-৬

জলপাই স্বৈরাচার, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা
পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রেক্ষিত
৫০৯৩ বর্গমাইলের পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন বাংলাদেশের একটি বিচ্ছিন্ন এলাকাদেড় যুগেরও অধিক সময় ধরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত এ অঞ্চলআশি হাজারের বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে পাঁচ হাজারের শান্তি বাহিনীর এই অসম রক্তক্ষয়ী গেরিলা যুদ্ধজাতীয় আয়ের সিংহভাগ খোয়া যাচ্ছে নিয়তসরল প্রাণ পাহাড়ি ও পুনর্বাসিত বাঙালির রক্তে রাঙা হচ্ছে ঐ শৈলতটসাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তি বিস্তার করেছে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গআশির দশকেই ডজনখানেক মিনি মাইলায়ের শিকার হয়েছে পাহাড়ি জনতাসরকারী নীল নক্সার শিকার চার লক্ষ উদ্বাস্তু বাঙালির রক্তও কম ঝরেনিতবে এদেশের প্রচার মাধ্যম বড় নিষ্ঠুর এবং একপেশেবাঙালি হত্যার খবর যতটা রেডিও, টিবি, খবরের কাগজে এসেছে তার শতকরা এক ভাগও আসেনি পাহাড়ি হত্যার নৃশংস খবরকলমপতি, ভূষণছড়া থেকে শুরু করে অসংখ্য হত্যাকাণ্ডে যে শত শত পাহাড়ির তাজা রক্তে পার্বত্য জনপদ রঞ্জিত হচ্ছে সে কাহিনী তো প্রচার হয় নাবেসামরিক স্বৈরাচারে নিষ্পীষ্ঠ হয়েছে দেশবাসী কিন্তু সামরিক অত্যাচারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ি জাতিসত্তা যে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে সে খবর কে রাখে এ দেশে? শাসক বদলে কিন্তু শাসন ব্যবস্থা থাকে পূর্ববৎস্বৈরাচার উৎখাত হয় কিন্তু অত্যাচার তীব্রতর হয়গণতন্ত্র ফিরে অথচ সামরিকতন্ত্র আরও পাকাপোক্ত হয় সেই পার্বত্য চট্টগ্রামেতাই বিচ্ছিন্ন থাকে ঐ এলাকাদেশবাসী জানতেও পারে না ওখানের প্রকৃত চিত্র কি
ষাটের দশকে ব্যাপকভাবে সমতলের ছিন্নমূল জনতার স্রোত উপসে পড়ে পাহাড়িয়া এলাকায়অপর দিকে কাপ্তাই বাঁধে কর্ণফুলীর নীলজল ফুলে ফেঁপে উঠেতলিয়ে দেয় সুখের সমৃদ্ধ জনবসতি আর চূয়ান্ন হাজারের চাষোপযোগী ভূমিউৎখাত হয় লাখো মানুষচল্লিশ হাজারের উদ্বাস্তু পাহাড়ি জনতা পাড়ি জমায় চীন সীমান্তের অদূরে সেই অরুণাচলেঅনিশ্চিত ভবিষ্যতের ঝুঁকি নিয়ে যাওয়া এদেরই কিছু পরিবার ছড়িয়ে পড়ে ত্রিপুরা, মিজোরাম, আসাম কিংবা মেঘালয়েযারা দেশে থেকে যায় তারাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়অনেকেই নিজেদের ঠাঁই খুঁজে নেয় গভীর অরণ্যেজীবন জীবিকা যেখানে স্বাপদ সংকুলপাথর কঠিনতৎকালীন দায়সারা গোছের পুনর্বাসনেও ঘাটতি পড়ে চৌত্রিশ হাজার একর জমিরএ অনভিপ্রেত সংকটময় যুগে হুড়মুড়িয়ে চলে আসা বহিরাগতদের চাপ মাথা পিছু ভূমির এবং গোটা পরিবেশের ভারসাম্যকে মুচরে দেয়দিশেহারা হয় সরল জীবনযাপনঅস্তিত্ব বিলুপ্তির কালো আশঙ্কায় ছেড়ে যায় সরলপ্রাণ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মনএকাত্তরে পৃথিবীর বুক চিরে জেগে উঠে বাংলার মানচিত্রস্বভাবতই মুক্তির উল্লাসঅনেক পাওয়ার স্বপ্নস্বাধিকারের কাঙ্খিত স্বপ্নসেই ষাট দশকের শঙ্কিত তারুণ্যের নেতৃত্ব এগিয়ে যায় তথাকথিত জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেতা আর সমাজতন্ত্রের কানাগলিতে চার দফার সমর্থনেসেদিনের জাতির পিতা অমানবিক অবজ্ঞায় থু থু ফেলে দেন চার দফায়বাঙালি জাতীয়তাবাদের খড়গ উঁচিয়ে ধরেন তিনিতারুণ্যের ধারণা বদ্ধমূল হয় এ পথচলা অর্থহীনতবে আর কালক্ষেপন কেন! অস্তিত্ব রক্ষার হিরন্ময় স্বপ্ন অন্যভাবে দেখে নেয়ার কথা ভাবে সত্তর দশকের সেই টগবগে যৌবনকম্পিত হস্তে চার দফা বদলে যায় আগ্নেয়াস্ত্রেজাতিগত নিপীড়নের কালোহাত, সাম্রাজ্যবাদের বিষ দাঁত ভাঙতে মার্ক্সিয় চেতনার বিকাশ লাভ করে বিদ্রোহীর ধমনীতেভূমিষ্ট হয় প্রতিরোধ যুদ্ধের ক্ষুদে বাহিনীতারপর গেরিলা ট্রেনিংভারী হয়ে আসে দুর্গম পাহাড়িয়া পথগর্জে উঠে ব্যারালধূমায়িত হয় শান্ত সবুজ জনবসতিগেরিলাযুদ্ধের এ বারুদে শেখ সাহেব বিচ্ছিন্নতার গন্ধ পানরাষ্ট্রীয় অখণ্ডতায় পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সম্ভাব্য হুমকিকে অজুহাত দেখিয়ে পার্বত্য এলাকায় রুমা, আলীকদম এবং দিঘীনালাতে নির্মাণ করেন তিনটি সেনানিবাসপঁচাত্তোরের পনেরই আগস্টের পটপরিবর্তনে শাসকের হাত বদলে যায়একে একে জিয়া থেকে এরশাদ মতার মসনদ আঁকড়ে ধরেনদিনে দিনে পার্বত্য এলাকায় সামরিক ক্যাম্প বদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারেনিপীড়নের মাত্রা বাড়েCounter Insurgency -র সেনা তৎপরতার করাল থাবায় ত বিত হয় জনজীবনএখন প্রতি পাঁচ জন পাহাড়ির হৃৎপিণ্ডের দিকে তাক করে একটি ব্যারেল উদ্যতGun Poin-এর কাঠগড়ায় নিরীহ পাবলিকবাদী সরকার নিজেইবিচারক লেলিয়ে দেয়া ল নিরাপত্তা বাহিনীঅপরাধ অধিকার সচেতনতাশান্তি সেনার বেপরোয়া হামলাসুতরাং দমননীতি অনিবার্যল্যবস্তু সেই তুষার ধবলমনা অসহায় জনগণযাদের উপজাতি বলে উড়িয়ে দেয় বিংশ শতাব্দির সভ্যতা কিংবা এ সভ্যতার অসভ্য মানুষচিরহরিৎ বনানীর কার্পেট বিছানো পাহাড়ের উৎপাদিত পণ্য পানির দামে বেঁচে দিয়ে যারা যাপন করেন কঠোর জীবন
সমস্যার জন্যেই আন্দোলনআন্দোলনের জন্য সমস্যা নয়কিন্তু চেঙ্গী, মাইনী, কাচালং বিধৌত ঐ উপত্যকায় সন্ত্রাস দমনের নামে, সংহতি রক্ষার অছিলায় নিরাপত্তা কর্মীরা যা করছে তা আর যাই হোক রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষা করতে পারে নানির্বিচার অত্যাচারের নরক যন্ত্রণায় নীল ঐ পার্বত্যপুরীপ্রকৃতির অকৃপণ সম্পদ প্রাচুর্যের প্রাচীরে বিভৎস চিৎকারমানবাধিকার সেখানে আভূমি লুণ্ঠিতশিক্ষা, চাকুরী, ব্যবসায়, বাণিজ্য, চলাফেরা, কেনাবেচায় মোদ্দাকথা স্বাভাবিক জীবন যাপনে সামরিক নিয়ন্ত্রণ খড়গের মত ঝুলছেNo Tribal will put on olive green and black shirts/pants with immediate effect এরকম পরিধানের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারী হয় সেখানেহায় স্বাধীন বাংলাধিক্কার দাও ঐ মধ্যযুগীয় অধীনতার বর্বরতাকেছিঃ সার্বভৌমত্ব
আসলেই দুর্ভাগা এ দেশএ দেশের জাতিওপুরো রাষ্ট্রীয় কশেরুকায় নিঃশব্দ জলপাই জান্তার বিষাক্ত কর্তৃত্বএ কর্তৃত্ব কখনো দৃশ্যপটে কখনো পর্দার অন্তরালেএকদিকে অভুক্ত লক্ষ জনতার ক্ষুধাকাতর ঘোঙানী আর অন্যদিকে লাধিক সেনাবাহিনীর ব্যয়বহুল ব্যারাল গর্জন শুনতে হয় আমাদের এই মাতৃভূমিতেনির্মম বাস্তবতা৮৭ ভাগ বিদেশী নির্ভর অর্থনীতির এ দেশে সামরিক বিলাস? সন্ত্রাস দমন আর সমস্যার নিষ্পত্তি দু'টি ভিন্ন জিনিসCounter Insurgency -র ধার করা অপকৌশল প্রয়োগ পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্নতার দিকেই ঠেলে দেয়াসন্ত্রাস দমন দিবাস্বপ্ন মাত্রকিন্তু না, অপরাজেয় বাঙালির বীরত্ব লালন করা চাইগেরিলা ওয়ারফেয়ারের স্বর্গপুরীর সবুজ আবরণ উপড়ে ফেলতে চায় তারাকেটে সাফ করা হয় কলা বাগান, আম কাঠাল বাগান, বাঁশ ঝাড়বন বিভাগের সেগুন বাগিচা ন্যাংটো করা হয় কেটেহাজার কিলোমিটার পাহাড়িয়া পথের দু'ধারে চারশ গজ পর্যন্ত জঙ্গল কাটা অভিযান চলেএকই সাথে Road Protection -এর পাগলামো পেরেশানী পোহায় অভাগা সেপাইঅগণিত চেকপোস্টে হযরানির শিকার হয় হাজারো যাত্রীসকাল ১০টার আগে ও বিকেল ৪টার পরে অনিবার্য পরিবহন ধর্মঘটরাত ৮টার পর কোথাও কোথাও জারী হয় সান্ধ্য আইনের কালো শাসনকখনো Shoot at sight -এর মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনাও শুনা যায়এ সিদ্ধান্ত যে একেবারেই কার্যকর হয় না তা নয়বেসামরিক প্রশাসন জিম্মি থাকে বছরের পর বছরজাতীয় সংহতি আর স্বার্থের দোহাই দিয়ে বোঝা বানিয়ে রাখা হয় প্রশাসনের কর্তাকেজেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন কোনটাই বাদ পড়ে না ঐ স্বৈরাচারী ভূতের কবল থেকেনাগরিক জীবন বিপর্যস্ত
সমস্যা সমাধানে সমস্যা কোথায়? সমস্যা সদিচ্ছারবৃহৎ জাত্যাভিমান আর অমানবিক বাঙালির উগ্রতাসর্বোপরি সমস্যা নিরসনে সামরিক চর্চাসমস্যা সমাধানে সামরিক রণকৌশলের অপপ্রয়োগবুলেটের আগুনে রাজনৈতিক সমস্যা উড়িয়ে দেবার মধ্যযুগীয় অনুধাবনজলপাই স্বৈরাচারের স্বার্থপরিণামে পাশবিক বর্বরতার অক্টোপাস আঁকড়ে থাকে সাধারণ জনজীবনের শরীরেক্রমে সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হয়বিবিধ উপসর্গ মাথা চারা দেয়নব প্রজন্মের মাথা বিগড়ে যায়নিরন্তর বিক্ষুদ্ধ হতে থাকে নাগরিকশ্বাসরুদ্ধকর জনজীবনে নেমে আসে হতাশা, নৈরাজ্য, অবিশ্বাস, সাম্প্রদায়িকতার উগ্রতা, প্রতিহিংসাছাউনীর কালো টাকা দেদার বিলানো হয়প্রকৃত সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে নয় দফার (জেলা পরিষদ) টোপ ফেলানো হয়লকলকিয়ে উঠে আপোষকামীতার ঘৃণ্য অসুর আকাঙ্ক্ষাবিগলিত হয় সুবিধাভোগীদের লেজুর হৃদয়পদলেহী দালালী হৃৎপিণ্ডে তোলপাড় শুরু হয়পরিশেষে ঢাকঢোল পিটিয়ে নির্বাচনের প্রহসনধুলো দেয়া হয় বহিঃ বিশ্বের দাতা দেশের চোখে চোখেবেকুব বনে যায় সচেতন বিবেকপ্রহসনমূলক নির্বাচন নাটক মঞ্চায়নের আগে পরে অত্যাচারের ব্যাপকতা৪ঠা মে লংগদুর গণহত্যা১৯শে অক্টোবর '৯০ বরাদামে চৌদ্দ কিশোরীর উপর পাশবিক হামলা২৭শে ডিসেম্বর '৯০ লক্ষ্ণীছড়ির নারকীয় হত্যাঅব্যাহত নৈরাজ্যে পরিস্থিতি নাজুক আকার নেয়অথচ সেই দুর্যোগের ঘোলা জলে আমাদের বিকলাঙ্গ নেতৃত্বের নির্লজ্জ পদলেহন আর নয় দফার কল্পিত সোনার হরিণ শিকার দেশবাসীকে বিমূঢ় করে দেয়সুকৌশলে প্রলম্বিত করা হয় সমস্যাকেরাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা মুখ্য নয়মুখ্য হচ্ছে সেগুন কাঠের রমরমা পারমিট ব্যবসা আর কালো টাকায় পকেট ভর্তির রণকৌশলসমস্যাকে জিইয়ে রেখে সামরিক বাজেটের সিংহাংশ করায়ত্ব করার অপকীর্তিঅপরদিকে তিরানব্বই নীরুর বাঁশির সুরে কাঁপলো তিন জেলা পরিষদের গদিঅপার শান্তি আর সমাধানের রঙিন ফানুস উড়তে দেখলেন তারা সাদা চোখেপ্রথমে একুশ নয় তিন দফা লুফে নিয়ে জাবর কাটলেন তারাশৈলচত্বর গড়িয়ে কর্ণফুলির নীল জলে মিশে যায় অনেক হত্যার তাজা রক্তইত্যবসরে স্বৈরাচার হাত গুটিয়ে নেয়হিমালয় নিরপেতা আর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে মতাসীন হন জনাব শাহাবুদ্দীননব্বই সনের শেষ দিনের আগের দিন অর্থাৎ ৩০শে ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি রাঙামাটি যানরাঙামাটির সুধীজনসভায় তিনি এরশাদের দোসর এবং তার সৃষ্ট গণধিকৃত অব্যবস্থা জেলা পরিষদকে পাকাপোক্ত করার অঙ্গীকার করেনএই অঙ্গীকারও জলপাই স্বৈরাচারের আরোপিতপার্বত্য জেলা পরিষদ বাতিলের গণদাবীকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখালেন আমাদের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিসময় হেঁটে যায় পৃথিবীর পথেপ্রতীতি নিরপেক্ষ নির্বাচনে ক্ষমতারোহন করেন বি,এন,পি সরকারগণতন্ত্রের ঠুনকো ঘোড়া দৌড়ে আসে এই বাংলার মেঠো পথ ধরেবিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিম প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৪ই জুন '৯১ উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্তাদের সাথে মিলিত হন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আলোচনার জন্যপরের দিন বাসস জানায় ঐ আলোচনার খবরএরশাদ আমলের সকল অনুসৃত নীতিমালা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন তারানিষ্কৃতি পায় না পার্বত্যবাসী স্বৈরাচারের কবল থেকেভেংচি দেখিয়ে জেঁকে বসে জলপাই শাসনস্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জনগণকে উপহাস করে জ্বালা পরিষদের নেতৃত্বতারপর অব্যাহত দুর্ভোগ, ক্ষুধা, মুত্যু
আমরা সামরিক সমাধানের প্রচলিত ধারণার অবসান কামনা করিচাই নাগরিক জীবনে নিয়ন্ত্রণ উবে যাকগুড়িয়ে যাক উৎপীড়নের জগদ্দল পাথরহামলা পাল্টা হামলার রক্তফেনিল রণকৌশল বন্ধ হোকউপুর্যুপরি হত্যা, নির্যাতন থেকে রেহায় পেতে চায় পার্বত্যবাসী
ইফ্‌তেখার / সুপ্রীয়

পাতা : ৭-৮

বিক্ষুদ্ধ সংলাপ
মিঃ মানবমিত্র
প্রসঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রাম
জনগণ চায় শান্তি ও নিরাপদ জীবন,
সমস্যা সমাধানে প্রতিবন্ধক কারা?
বিরামহীন এক দীর্ঘ অত্যাচার নিপীড়ন চালানোর পর দেরীতে হলেও এরশাদ সরকার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলো যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যাসামরিক নয়, রাজনৈতিকভাবেই যে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে তাও সে স্বীকার করেছেকিন্তু সমস্যাকে চিনতে পারা বা স্বীকার করা এক জিনিস; আর সেই সমস্যাকে সমাধান করা অন্য এক জিনিসএমন অনেক অসাধু ডাক্তার আছেন যারা রোগীর অসুখ সঠিকভাবে চিনতে পারলেও অনেক সময় সঠিক ঔষুধটা প্রয়োগ করেন নাকারণ রোগীর অসুখটা যতই দীর্ঘ হবে ততই তার লাভরোগীকে বার বার তার কাছে আসতে হবে, বার বার টাকা গুনতে হবে, বার বার ঔষুধ কিনতে হবেরোগীর যন্ত্রণা যত দুর্বিসহ হোক তার কোন আসে যায় নাঠিক সেই রকম পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাও দীর্ঘায়িত হলে কিছু কিছু লোকের বেজায় লাভএই জন্য তারা তাদের শ্রীমুখে সমস্যা সমাধানের কথা বললেও বাস্তবে সমস্যাকে জিইয়ে রেখেছে এবং জনগণের আন্দোলনের চাপে পড়েও তাকে জিইয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেজনগণ অত্যাচার নির্যাতনে পিষে মরুক কিংবা নিঃস্ব হয়ে বিদেশে গিয়ে দুঃসহ জীবন যাপন করুক, গুচ্ছগ্রাম বা শান্তিগ্রামের মত বন্দীশালায় অনাহারকিষ্ট হয়ে মৃত্যুর দিন গুনুক কিংবা মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় ছটফট করুক -- তাতে তাদের কোন আসে যায় নাতারা চায় তাদের স্বার্থ, তাদের লাভজনগণের নরকযন্ত্রণার বিনিময়ে হলেও তারা চায় তাদের স্বার্থপ্রিয় পাঠক, আজ সময় এসেছে এসব ভণ্ড জনদরদী দু'মুখোদের কুৎসিত চেহারা জনগণের সামনে খুলে ধরারসময় এসেছে এসব কুলাঙ্গার জনবিরোধী কুশ্রী জানোয়ারদের উৎখাত করার
পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে প্রধান প্রতিবন্ধক হচ্ছে এমন একটা গোষ্ঠীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ যারা গায়ের জোরে সামাজিক আচার প্রথা থেকে শুরু করে প্রশাসনসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেনতারাই পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বেসর্বা তাদের দৌরাত্ম্যে জনগণ অসহায়তাদের কথায় সবকিছু চলেতাদের কথায় চাষীরা চাষ করে, ফসল ফলায়, জেলেরা মাছ ধরে, ছেলেমেয়েরা লেখা পড়ে, স্কুলে যায়তাদের কথায় গাড়ী চলে, দোকান চলে, বাজার খোলেতাদের কথায় সবকিছু হয়তারা এক একটা সম্রাটতাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সবসময় নতজানু হয়ে স্যালুট করে করে যেতে হয়কথা বলার সময় 'মহারাজা' সম্বোধন করতে হয়নীলদর্পন নাটকটা তাদের কাছে খুবই প্রিয়প্রতিদিন তারা জনগণকে সাথে নিয়ে এ নাটকটা রিহার্সেল করেতারা নিজেরা অভিনয় করে, আর জনগণকেও অভিনয় করায়এতে তাদের প্রচুর উপার্জন হয়জাতীয় আয় বাড়েআর জনগণের বাড়ে সীমাহীন দুর্দশাঅন্যান্য দেশেরও শেখা উচিত কিভাবে দেশের অলস শক্তিকে উৎপাদনমুখী করতে হয়ইদানিং তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের চাবিটাকেও তাদের হাতে নিয়েছেএকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা প্রচুর উপার্জন করে, অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই সরাসরি ব্যবসায়িক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়তারা দেশের পশ্চাদপদ বলে কথিত এ অঞ্চলের উন্নয়ন সম্পর্কেও খুবই সচেতনপ্রতি বছর তারা বিদেশ নির্ভর বাজেটের একটা মোটা অংশ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের লোকদের না খাইয়ে রেখেও এ অঞ্চলের অনুন্নত জনগণের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করে নেয়এ টাকা দিয়ে তারা রাস্তাঘাট ও ছাউনী তৈরি করেএতে তাদের জনগণের কাছে যেতে সুবিধে হয়তারা জানে জনকল্যাণের জন্য জনগণের কাছে যেতে হয়, জনগণের মন জয় করতে হয়নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তারা খুবই সচেতনকারণ জনসেবা করতে হলে সুস্বাস্থ্য থাকা চাইএজন্য তারা উন্নয়ন বাজেটের এক অগণ্য বিরাট সংখ্যক অংক দিয়ে আত্মসেবা করে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরার জন্যএকমাত্র সেই জনসেবা করতে পারে যে আত্মসেবা করতে জানেআত্মসেবা করে তাদের বেহেশ্‌তে যাওয়ার পথ সুগম হয়
তাই যতদিন সমস্যা থাকবে ততদিন তারা জনসেবার স্বার্থে আত্মসেবা করতে পারবেকারণ বেহেশ্‌তে যেতে হলে তাদেরকে আত্মসেবা করতেই হবেপ্রিয় পাঠক, আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কেন তারা সমস্যা সমাধানে বিরোধীতা করে
পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে বিরোধী আরও একটি গোষ্ঠী আছেতারাও জনকল্যাণের স্বার্থে আত্মসেবার জন্যই এতে বিরোধীতা করেতারা এতদঞ্চলের ভাগ্যবঞ্চিত, অবহেলিত ও দরিদ্র জনগণের কল্যাণের জন্য ইতিমধ্যে "অধিকার ও ভাগ্য উন্নয়ন প্রকল্প" নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেএই প্রকল্পের অভিজাত নাম হচ্ছে "স্থানীয় সরকার পরিষদ"জনগণ "প্রকল্পের" বিরোধীতা করলেও এখন তারা উন্নয়নের স্রোতে ভেসে যাচ্ছেআসলে মূর্খ জনগণ কিছুই বোঝে নাতারা শুধু শুধু বিরোধীতা করে
"প্রকল্পের" নেতারা এখন খুবই ব্যস্ততারা এয়ারকন্ডিশনড রুমে বসে দলবল নিয়ে গণউন্নয়নের জন্য মহা মহা পরিকল্পনা করেআসলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে না থাকলে কি এসব পরিকল্পনার বুদ্ধি মাথায় আসে? তদুপরি তাদেরকে মূর্খ জনগণ থেকে অনেক দূরে থাকতে হয়কারণ এইসব অবাধ্য, উচ্ছৃঙ্খল জনগণ তাদের কাজে উৎপাত করেএই জন্য তারা সব সময় পাইক পেয়াদা বেষ্টিত দুর্গে থাকেসান্ত্রীরা প্রভুর দুর্গের সপ্তদ্বারে দিনরাত অতন্দ্র পাহারা দেয়অবশ্য মাঝে মধ্যে প্রজাগণের অবস্থা দেখার জন্য তাদের দরদী মন ব্যাকুল হয়ে ওঠেতাই তারা বেরিয়ে পড়েনআর তখন সেকি কাণ্ডসর্বত্র হাঁক ডাক পড়ে যায়শুরু হয় ব্যস্ততাদিকে দিকে সাজ সাজ রব পড়ে যায়বাদ্য বাজনা বাজেমহামান্য নেতা স্বর্গীয় হাসি হেসে ফিটে কাটেনহাততালি পড়েতিনি অন্নহীনদের অন্ন দেন, বস্ত্রহীনদের বস্ত্র দেন, দুঃখীকে সান্তনা দেনতোতাপাখির মত উন্নয়নের অনেক পৌরাণিক কাহিনী শোনানকিছু অবাধ্য ছেলে ছোকরাকে শাসানজনগণ সুবোধ বালকের মত শোনে, হাসে আর হাততালি দেয়
"প্রকল্পের" নেতারা খুবই জনদরদী এবং কর্মঠতারা হেন তেন সব কাজ করেনজনগণকে তারা মোটেই কষ্ট দেন নাতারা জনগণকে শুধু হাততালি দিতে বলেনহাততালি দিলেই নাকি সব হবেউন্নয়ন হবে, দারিদ্র্য দূর হবে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবেসুখী সমৃদ্ধ পার্বত্য অঞ্চল হবে
জনগণের চরম দুর্দশা দেখেও "প্রকল্পের" নেতাদের মাথা ব্যথা হয় নাজুরাছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, মহালছড়ি, বুড়িঘাট প্রভৃতি এলাকায় যখন কৃত্রিম দুর্ভিরে করাল গ্রাসে অসহ্য ক্ষুধায় সামান্য খাদ্যের জন্য অজস্র মানুষ হাহাকার করে তখনও তাদের ডাইনিং নানা সুস্বাদু খাদ্যে উপ্‌সে পড়েঅনাহারে কেদাক্ত শরীর নিয়ে অনেকেই মৃত্যুর শীতল কোলে ঢলে পড়ে, অথচ নির্বিকার ভণ্ড নেতারা - তখনও তারা আরামে ঘুমায় তাদের এয়ারকন্ডিশন্‌ড ঘরেঅত্যাচার-নির্যাতন-বঞ্চনা আর বেদনার অনেক ইতিহাস পাহাড়ি জনগণের আছেসংগ্রাম, প্রতিরোধ ও বিজয়ের অনেক ইতিহাসও পাহাড়ি জনগণ সৃষ্টি করেছেকিন্তু এই প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের ইতিহাসে সৃষ্টি হলো দুর্ভিরে কবলে মৃত্যুর কলঙ্কজনক ঘটনাজনগণ না খেয়ে মরে অথচ তখনো প্রকল্পের নেতারা তাদের ব্যাংক ব্যালেন্স গোছাতে ব্যস্ত
"জনগণের এই মহান নেতারা" চান না পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন হোককারণ তাতে তাদের জনসেবার স্বার্থে আত্মসেবার কাজ বিঘ্নিত হবেতারা জনগণকে ভালোবাসেন বলে তাদেরকে "স্থানীয় সরকার পরিষদ" উপহার দিয়েছেনজনগণ যদি "ভদ্র ও শৃঙ্খল" হয়, তাহলে হয়ত তারা অদূর ভবিষ্যতে "স্থানীয় রাষ্ট্র"ও উপহার দেবেনতবে তাদের প্রভু এরশাদ থাকলে আরো ভালো হতোতিনি মতায় থাকলে হয়ত এতদিন পাহাড়ি জনগণের জন্য "স্থানীয় রাষ্ট্র" করে দিতেনএজন্য "প্রকল্পের" নেতারা তাদের প্রভুর পতনের পর খুব বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেনতাদের আত্মসেবা নিয়েও তারা চিন্তিত ছিলেনঅবশ্য তাদের নতুন প্রভু তাদের বাকী ১৯টি "চারণত্রে" দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তারা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছেনএজন্য উল্লসিত হয়ে তারা লেজ তুলে নৃত্যুও করেছেনএর আগে তাদের চারণক্ষেত্র ছিল তিনটিতবুও এই "চারণক্ষেত্র" তিনটিতে বিচরণে তারা দূর-নীতির যে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন তাতে তাদের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় প্রভুরা খুব সন্তুষ্ট হয়েছেনপ্রভুদের প্রতি অনুগত থাকার পুরস্কারই হচ্ছে এই ১৯টি চারণক্ষেত্র
আর এই ১৯টি চারণত্রে পেয়ে এই শিংওয়ালা প্রকল্প নেতাদের যেন ব্যাঙের পাঁচ পা গজিয়েছেতারা এখন হাম্বা হাম্বা শুরু করে দিয়েছেরাঙ্গামাটিতে চারণভূমি বিচরণকারী প্রাণীদের পালের গোদাটির দুঃসাহস এখন এতদূর গজিয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত তিনি তার প্রভুদেরও অবাধ্য হয়ে উঠেছেনশোনা যাচ্ছে, তাদের প্রভুরা অবাধ্য জনগণের নেতাদের (জনসংহতি সমিতি) সাথে আলাপ আলোচনা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেনএ খবর শুনে রাঙ্গামাটির ঐ পালের গোদাটি এখন দারুণ গোস্বা হয়েছেনতিনি তার নিজের প্রভুদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন যে, প্রভুরা যদি জনসংহতি সমিতির সাথে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আলাপ আলোচনা চালান তাহলে তিনি তার দলবল নিয়ে এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করবেন
আসলে এসব বিকৃত আত্মসেবকগণ ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট পেয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেতাদের জিহ্বায় এখন মতার স্বাদ পেয়ে বসেছেতারা জানে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার প্রকৃত সমাধান হলে তাদের অবস্থা হবে ভেজা বেড়ালের মতো বড়ই করুণতখন তাদের ক্ষমতা, দালালীপনা, দৌরাত্ম্য থাকবে নাতখন আর তারা নেতা সাজতে পারবে নানিরীহ জনগণকে প্রতারণা করতে পারবে নাতাদের ভণ্ডামীর অবসান হবেতাই তারা এখন অত্যধিক ভীতআর ভীত বলেই তারা এত মরণ চিৎকার শুরু করে দিয়েছেতাদের বিষ দাঁতগুলো যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ক্ষমতার ন্যাংড়া হাড়টা কামড়িয়ে থাকতে চেষ্টা করবেগণআন্দোলনের চাপে, জনগণের টানা হ্যাঁচড়ায় উলঙ্গ-ন্যাংটা হলেও তারা সহজে মতা ছাড়বে নাতারা বিরোধীতা করবেছলে-বলে-কৌশলে, দালালীতে, প্রতারণায় হলেও তারা গণআকাঙ্ক্ষাকে মাড়াতে চেষ্টা করবেএর আগেও তারা জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার সাথে বেঈমানী করেছেতাদের কাছে গণদাবী মুখ্য নয়, মুখ্য নয় সমস্যার সমাধানতাদের মুখ্য হলো অর্থ, স্বার্থ ও ক্ষমতাএই জন্যই তারা তাদের মামা চোর এরশাদের সাথে যোগসাজশে জেলা পরিষদ গঠন করে তা জনগণকে জোরপূর্বক খাওয়াতে চেষ্টা করছে
প্রিয় পাঠক, পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরঅবহেলিত, অত্যাচারিত, নির্যাতিত জনগণ চায় নিরাপদ জীবন; চায় শান্তি ও সমাধানকিন্তু সম্মুখে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু অশুভ শক্তিএদের বলপূর্বক উৎখাত ছাড়া সমাধানের পথ পরিস্কার হতে পারে নাতাই আসুন, আমরা এই গণশত্রুদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে লড়াই করে আমাদের সমাধান ও নিরাপদ জীবন আমরাই খুঁজে বের করি
-রাডার
....................
আমরা কিছুই বলতে পারি না
প্রতিবাদ করতে পারি না অন্যায়ের
দেখেও না দেখার মত
কাপুরুষের অভিনয় করছি
তিলে তিলে হেয় হচ্ছি বিবেকের
কাছেঅবাধ চলাচলে হিমালয়
বাধানিশ্চল পাথরের মত
অসহায়ভাবে হৃৎপিণ্ডের যন্ত্রণাকে
সহ্য করে কার কাছে করুণা
ভিক্ষে করছি আমরা?
..................

পাতা : ৯-১০

পাহাড়ের চূড়া থেকে
মিঃ পল্লব
গণতন্ত্রের বলি পাহাড়ি জনগণ
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ৫০৯৩ বর্গমাইল আয়তন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অবস্থিতঅরণ্য বন বনানী ও পাহাড়ের সমারোহে এই পার্বত্য অঞ্চল দশটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আবাস স্থলঅরণ্য বনানী ও পাহাড়ের কোলে লালিত এই জনগোষ্ঠী এককালে সহজ সরল ও সাদাসিদে জীবন যাপন করত বলেই অঞ্চলটি ছিল বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অপোকৃত শান্তএই শান্ত অঞ্চল এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে অশান্তিতে পরিণত হয়েছেপ্রতিদিন রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে এই পাহাড়ি জনপদঅথচ ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙ্গালী জনগণের সাথে একাত্ম হয়ে মরণপণ সংগ্রাম করেছিল পাহাড়ি জনগণওএই সংগ্রাম করার একমাত্র কারণ হচ্ছে পাকিস্তান সরকার দ্বারা তারা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল সেখান থেকে মুক্তি পাবে এবং স্বীয় জাতীয় অস্তিত্ব ও পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে বাঙ্গালী জনগণের পাশাপাশি থাকতে পারবেপাহাড়ি জনগণের এতদিনের স্বপ্ন কি সফল হয়েছে? কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, তাদের (পাহাড়িদের) সেই স্বপ্ন পূর্ণ হওয়াতো দূরের কথা, বরং যা পেয়েছিল সেটা পাকিস্তান আমল থেকে আরও ভয়াবহ ও করুণ১৯৭২ সালে যে চার চার মুলনীতির উপর বাংলাদেশে সংবিধান রচিত হয়েছিল তন্মধ্যে গণতন্ত্র ছিল অন্যতম একটি মূলনীতিতখনকার মুজিব সরকার তাদের সৃষ্ট গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে তারা রাজাকার আখ্যায়িত করে পাহাড়ি জনগণের উপর চালাতে লাগল হত্যা, নির্যাতন ও গ্রেফতারসেদিনকার নির্যাতনের চিহ্ন বুকে নিয়ে এখনও অনেক পাহাড়ি বেঁচে আছেনশুধু কি তা করে তখনকার সরকার তৃপ্তি পেয়েছিল? না তার চেয়ে আরও মারাত্মকভাবে পাহাড়ি জাতিসত্তার উপর আঘাত হানল পাহাড়িদেরকে বাঙ্গালী হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমেএমন কি সে সময় তাদের জাতীয় পরিচয়ের পরিবর্তে বাঙ্গালী লিখতে পর্যন্ত বাধ্য করা হয়েছিলএভাবে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে পাহাড়িরা তখনকার মুজিবের গণতন্ত্রের শিকার হয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে পাহাড়ি জনগণকে তাদের জাতীয় অস্তিত্ব তথাকথিত গণতন্ত্রের কবল থেকে রা করার জন্য নতুন করে ভাবতে হলশেখ সাহেবের এই গণতন্ত্র পূর্ণতা পেল ৭৫ সালে ১৫ই আগষ্ট স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে
৭৫ এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় সেনা বাহিনীর আবির্ভাব ঘটেকোন দেশে সেনা বাহিনী রাষ্ট্রীয় মতায় বসলে যা হয় বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিলপূর্ববর্তী সরকারকে স্বৈরাচারী বলে জিয়া নিজেকে অধিকতর গণতন্ত্রী দাবী করে সারা দেশে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করলেনযার ফলে, সমতল এলাকা থেকে লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পাহাড়ি জনগণের বাপ দাদার জায়গা জমির উপর পুনর্বাসনের ফলে পাহাড়ি জনগণ তাদের জায়গা জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়অন্যদিকে এই অনুপ্রবেশকারী বাঙ্গালীদেরকে রক্ষ করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার সেনা বাহিনী মোতায়েন করা হয়যার জন্য ১৯৮০ সালে কলমপতি ও কাউখালিতে সংঘটিত হয় জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডনিষিদ্ধ হয়ে যায় সবুজ ও কালো রঙের পোষাক পরিধান করাজিয়ার এই বিশুদ্ধ সামাজিক ন্যায়বিচারের ফলে অনেক পাহাড়ি মা হারায় তার দুধের সন্তানকে, অনেক পাহাড়ি বোন হয়ে যায় বিধবাএটাই হচ্ছে পাহাড়িদেরকে দেয়া জিয়ার সামাজিক ন্যায়বিচারএই মহান গণতন্ত্রের নায়ক যে গণতন্ত্রের পথ ধরে ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই গণতন্ত্রের পথ ধরে ক্ষমতার রঙ্গমঞ্চ থেকে তাকে চির দিনের জন্য বিদায় নিতে হলকিন্তু তিনি যে গণতন্ত্রের সুফল পার্বত্য চট্টগ্রামে রেখে গিয়েছিলেন তা আজও পাহাড়ি জনগণ অতি দুঃখের সাথে ভোগ করছে
ক্ষমতার ধারাবাহিক পালা বদলের মধ্য দিয়ে আর এক গণতন্ত্রের মাধ্যমে মতায় আসলেন গণতন্ত্রের অন্যতম সেনানায়ক এরশাদ সাহেবতিনি ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে পুর্বে রেখে যাওয়া গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে আরও প্রসারিত করলেন দেশব্যাপীযার সুফল দেশের সর্বস্তরের জনগণ অতি অল্প সময়ের মধ্যে পেতে লাগলেন আরও অধিকতর প্রত্যক্ষভাবেসেই গণতন্ত্রের ফলে দেশের জনগণ মূর্ছাগত প্রায়এরশাদের গণতন্ত্র আরও বেশী কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হল পার্বত্য চট্টগ্রামে, যার জন্য ৫০ হাজারেরও অধিক পাহাড়ি জনগণ সর্বস্ব হারিয়ে বিদেশের মাটিতে এখনও অবস্থান করছেএরশাদ সাহেব তার নয় বৎসরের গণতান্ত্রিক শাসনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের অনেক চিহ্ন পার্বত্য চট্টগ্রামে রেখে গেছেনযেমন ৮৬ সালে পানছড়ি, ৮৮ সালে বাঘাইছড়ি উপজেলার হীরাচরসহ কয়েকটি স্থানে এবং ৮৯ সালে লংগদুর হত্যাকাণ্ড ও ছোট হরিণা, ভুষণছড়াসহ আর অনেক জায়গায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডএরশাদের এই গণতন্ত্রের স্মৃতি পার্বত্যবাসী চিরদিন মনে রাখবেএরশাদ সাহেবের দ গণতান্ত্রিক প্রশাসনে মুগ্ধ হয়ে তার (এরশাদের) প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর সাহেব সংসদ অধিবেশনে বক্তৃতা দানকালে এরশাদ সাহেবকে চীনের মহান নেতা মাও সেতুঙ ও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রহাম লিংকনের সাথে তুলনা করেছিলেনকিন্তু দেশের জনগণ এত বেশী গণতন্ত্র হজম করতে না পেরে দেশ ব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সেই তথাকথিত গণতন্ত্র থেকে মুক্তি পাবার লক্ষ্যেএরশাদের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে জেগে উঠা আন্দোলনের সাথে একাত্ম হয়ে পার্বত্য এলাকার জনগণও অবিরাম সংগ্রাম করেছিলেনএরশাদের নয় বৎসরের গণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম, তা ৯০ সালে এসে পরিপক্ষতা পায়, যার ফলে এরশাদ সাহেব ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হনঅতঃপর ক্ষমতায় বসলেন তিন জোটের মনোনীত প্রার্থী ও বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরপেক্ষ বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মেদশুরু হয়ে যায় দেশব্যাপী নতুন গণতন্ত্রের বিজয় উল্লাসপাহাড়ি জনগণ সেই বিজয় উৎসবে একাত্মভাবে যোগ দিতে পারলেন নাকোথায় যেন তাদের সন্দেহ রয়ে গেলসেই সন্দেহটাকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত করে দিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে, রাঙ্গামাটির এক জনসভায় যখন ঘোষণা করলেন -- এরশাদ সাহেবের সৃষ্ট এবং পার্বত্য জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত জেলা পরিষদকে বহাল রাখা হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাড়ে ছয় লাখ জনগণের দাবীকে অগ্রাহ্য করে, ৯৩ জন (জেলা পরিষদের সদস্য) লোকের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট যে নিরপেক্ষতা দেখালেন তা পার্বত্যবাসী চির দিন স্মরণ রাখবে
অতপর শুরু হয় নতুন প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিস্থাপনের মহড়াবিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার করতে করতে দিনে দু'তিন বার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেনঅপরদিকে পেশাদারী মোসাহেবরা গণতন্ত্রের সুফল প্রচারে প্রতিযোগীতায় কোমরে কাপড় বেঁধে মাঠে নেমেছেনশুরু হয়ে যায় লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নির্বাচনী প্রচারাভিযানবৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো প্রচার করতে থাকেন কোন দল ক্ষমতায় গেলে জনগণকে কোন ধরনের গণতন্ত্র উপহার দেবেগণতন্ত্র প্রচারের জোয়ারে দুই বৃহৎ রাজনৈতিক নেত্রীদের মুখ ফসকে বের হয়ে যায় -- "পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান করা হবে।" অতীতের সকল গণতন্ত্র পার্বত্যবাসীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার ফলে ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের পরও পার্বত্যবাসীর মন থেকে সন্দেহের কালো মেঘ কেটে যায়নিকিন্তু স্বয়ং দু' নেত্রীর মুখ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান করা হবে শুনতে পেয়ে পাহাড়ি জনগণের মনে যে সন্দেহের ভাব ছিল, তা কেটে যায়তারপর বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামেও সুষ্ঠু গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পাহাড়ি জনগণ নিরলস পরিশ্রম করেছিলেনযার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের সব অঞ্চলের চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে অবাধ ও নির্ঝঞ্ঝাটভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়কে ভোট পেল কে পেল না সেটা বড় কথা নয়জনগণ যে কাউকে ভোট দিক না কেন, সেটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ মাত্র
৯০ এর অভ্যুত্থানের ফলে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধিদেরকে নির্বাচিত করলযার ফলে জনগণ লাভ করল একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতীয় সংসদএই স্বাধীন ও সার্বভৌম সংসদ দেশের জনগণকে কি দিতে পারল? নতুন নির্বাচন হওয়ার পর দু' দুবার সংসদ অধিবেশন বসল দীর্ঘ সময় ধরেএই সংসদ অধিবেশনের জন্য নিরীহ জনগণের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছেবিভিন্ন রং বেরঙের বিল পেশ করা হচ্ছে এবং পাসও হয়ে যাচ্ছেকিন্তু দুঃখের বিষয় পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যাপারে ভুলেও আজ পর্যন্ত সংসদে কোন বিল আনা হয়নিবাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা করা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক পাশে রেখেনতুনভাবে গণতন্ত্র চালু হওয়ার ফলে পার্বত্য জনগণ গণতন্ত্রের অনেক সুফল পেয়েছেযেমন পাহাড়ি ছাত্রদের নতুন করে ধরপাকড়, পাহাড়ি জননেতাদের সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার ও অমানুষিক নির্যাতন এবং বিনা বিচারে বিশেষ ক্ষমতা আইনের দ্বারা আটকঅনেক ছাত্র ও যুবককে হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্মগোপন করে থাকতে হচ্ছেবিভিন্ন পাহাড়ি চাকুরীজীবীদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাসী ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছেএই দেশে যতবার গণতন্ত্র নতুনভাবে আবির্ভাব হল, ততবারই পাহাড়ি জনগণের উপর নতুনভাবে চাপিয়ে [চেপে] বসল নির্যাতনের ষ্টীম রোলারএসবই হচ্ছে নতুন গণতন্ত্রের ফল
পরিশেষে এ কথাই বলতে চাইগণতন্ত্র যদি হয় নিজের জাতিগত পরিচয় থেকে বঞ্চিত হওয়া, গণতন্ত্র যদি হয় হত্যা-ধর্ষণ-গ্রেফতার, গণতন্ত্র যদি হয় বাপ দাদার জমি জমা থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে বিদেশে পরবাসী হওয়া, গণতন্ত্র যদি হয় কালো-সবুজ পোষাক পরিধান করতে না পারা, গণতন্ত্র যদি হয় সংসদ কে মারামারি, গণতন্ত্র যদি হয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অস্ত্রের ঝনঝনানি, তাহলে ধিক্‌ সেই গণতন্ত্রপার্বত্য জনগণ চায় না সে রকম গণতন্ত্রগণতন্ত্রের নামে যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে এসব কিছু করা হয় তাহলে পার্বত্যবাসী সেই গণতন্ত্রকে বরদাস্ত করবে নাগণতন্ত্রের নেতা নেত্রীদের কাছে অনুরোধ, জনগণের রক্ত দিয়ে আর গণতন্ত্রের খেলা খেলবেন না - দোহাইপার্বত্য এলাকার জনগণ এই নির্মম গণতন্ত্রের খেলা থেকে মুক্তি চায়
-           রাডার

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গটিত
গত ২৬শে আগষ্ট বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে ঢাকায় কমিশনের কার্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার সম্পর্কে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার কে . এম. সোবহানসভার প্রারম্ভে ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেনসভায় নাগরিক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ - CHT Commission-Gi LIFE IS NOT OURS বইয়ের উল্লেখ করে পার্বত্যাঞ্চলে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেনআলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি গণ-পরিষদের সভাপতি বাবু সুবোধ বিকাশ চাকমা, বাবু কল্প রঞ্জন চাকমা এম. পি, বাবু দীপংকর তালুকদার এম. পিপাকিস্তান, বার্মা, নরওয়ে, দণি কোরিয়া প্রভৃতি দেশের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেনসভায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার বিষয়ক একটি জাতীয় কমিটি গঠিত হয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানে একটি সংসদীয় কমিটি গঠনের ব্যাপারেও মত প্রকাশ করা হয়পরবর্তীতে নাগরিক কমিটির প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ ও রাশেদুর রহমান তারা CHT Commission Report “LIFE IS NOT OURS” পুনঃমুদ্রণের সময় গোয়েন্দা বিভাগ কর্তৃক নাজেহাল হনপরদিন অর্থাৎ ৩১শে আগষ্ট তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক সামরিক বাহিনীর অবস্থানকে ব্যাখ্যা করার জন্য সরকারের কাছে দাবী করে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন এবং গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপের নিন্দা করেন
-রাডার

পাতা : ১১-১২

বন্ধ হোক পাহাড়ের বুকে বাঙালির রক্ত ঝরা
অলীকমায়া
পার্বত্য চট্টগ্রামের শ্যামল-সবুজ পাহাড়ের বুকে নিরন্তর রক্ত ঝরছেপ্রচার মাধ্যমে জানা যায় - এ রক্ত ঝরার সূত্রপাত ঘটায় জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র ক্যাডার "শান্তিবাহিনী"বলাবাহুল্য, নিরীহ অপাহাড়ি বা বাঙালির নৃশংস মৃত্যুর সংবাদই বিভিন্ন পত্রিকায় বা প্রচার মাধ্যমে বড় বড় শিরোনাম হয়ে আসেনিরীহ-নিরস্ত্র লোকের প্রাণহানি বা নৃশংস মৃত্যু কোন মানবতাই সহ্য করে না - না করাই স্বাভাবিক
আমাদের প্রচার মাধ্যমগুলো "সন্ত্রাসবাদী শান্তিবাহিনী কর্তৃক নিরীহ বাঙালির মৃত্যু"-র সংবাদ পরিবেশনে খুবই ব্যাকুল, কিন্তু শান্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর মৃত্যু এবং এর প্রতিশোধমূলক তৎপরতায় নিরীহ পাহাড়ির মৃত্যু, গ্রেপ্তার এবং গ্রামছাড়া হবার সংবাদের প্রতি এদের বড়ই অরুচিএ প্রসঙ্গে সরকার আমিন যথার্থই বলেছেন -- "দেশবাসী পাহাড়ে সত্যি কি ঘটছে এবং ঘটানো হয়েছে এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারেনিমাঝে মধ্যে "শান্তিবাহিনী"-র নৃশংসতার খবর প্রচার করেছে যথাসাধ্যকিন্তু "শান্তিবাহিনী"-র তরুণেরা কেন মানুষ মারছে এবং এই হত্যাকাণ্ডের পর নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা প্রতিশোধ নিচ্ছে কিভাবে -- এর ফলে কি পরিমাণ নৃশংসতা হচ্ছে -- দেশের মানুষ এসব খবর জানতে পারেনি। (আজকের কাগজ, পাহাড়ের দিকে নজর দিন, ১৪ জুলাই, ১৯৯১ ইং)
"শান্তিবাহিনীর তরুণেরা কেন মানুষ মারছে" -এর কারণগুলো না জানার ভাণ করে প্রচার মাধ্যমে একপাকিভাবে কেবল "শান্তিবাহিনী" সন্ত্রাসের খবর প্রচার করলে আর এর বাদ-বাকী খবরগুলো সন্দেহজনকভাবে অজ্ঞাত রাখলে সমস্যার স্বরূপ কেবল তিমিরেই থেকে যাবে -- কিন্তু পরিস্থিতির কোন অগ্রগতি হবে নানিরীহ রাঙালির রক্ত ঝরানোই কি শান্তিবাহিনীর একমাত্র লক্ষ্য -- না নিরীহ বাঙালিকে পরিস্থিতির বলি করে সমগ্র বাঙালি জাতিকে পাহাড়ি-বিদ্বেষী বা পাহাড়িদের স্বাধিকার আন্দোলন বিরুদ্ধ করে তোলার অপচেষ্টার প্রক্রিয়া চলছে -- তাও আমাদের দেখতে হবে
জনসংহতি সমিতির "শান্তিবাহিনী" ক্যাডার সৃষ্টির পশ্চাতে একটি পটভূমি রয়েছে -- যা আমার এখানে অবতারণা করার বিষয় নয়। "শান্তিবাহিনী"-র আনুষ্ঠানিক জন্ম ১৯৭৫ সালে বলা হয়নিরীহ বাঙালির রক্ত ঝরানোই যদি শান্তিবাহিনীর একমাত্র লক্ষ্য হতো তাহলে ১৯৭৫ সাল হতে পার্বত্য এলাকায় বাঙালির রক্ত ঝরতোশান্তিবাহিনীকে দমন করার জন্য দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করা হয়একদিকে অবিরাম সেনাবাহিনীর অভিযান এবং অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঘটানোঅতঃপর শান্তিবাহিনীরাও সেভাবে জবাব দিতে বাধ্য হচ্ছে১৯৭৯ সালে প্রেঃ জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক গোপন বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একমাত্র ১৯৭৯ হতে ১৯৮৩ এই চার বছরে অন্ততপে চার ল বাঙালিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ ঘটানো হয় (C.H.T. Commission’s Report, May 91, P ... 63-64)বস্তুত পক্ষে এই ১৯৭৯ সাল থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর দ্বারা নিরীহ বাঙালির রক্ত ঝরা আরম্ভ হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে (C.H.T. Commission’s Report, May 91, P ... 43-44)
শান্তিবাহিনীর প্রচার পত্রে জানা যায়, অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হবার ইচ্ছা প্রথমদিকে শান্তিবাহিনীর ছিল নাশান্তিবাহিনী শুধু তাদের যার যার এলাকায় ফিরে যাবার নির্দেশ জারী করতো শান্তিবাহিনীর বক্তব্য ছিল তাদের মূল শত্রু মিলিটারি সরকারতারা লড়ছে সরকারের পাহাড়ি উচ্ছেদ ও নিধন নীতির বিরুদ্ধেঅনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে তাদের কোন শত্রুতা নেইকিন্তু তারা যদি সরকারী যন্ত্রের হাতিয়ার হয়ে পাহাড়িদের জমি-জমা দখল ও অত্যাচার চালায় তাহলে শান্তিবাহিনী তার সমুচিৎ ব্যবস্থা নেবে (সিদ্ধার্থ চাকমা, প্রসঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রাম, পৃ - ১২৮)বস্তুতঃ অনুপ্রবেশকারীরা এখন সেনাবাহিনীর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেনসেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা জনসভায় পাহাড়িদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন -- "আগামী কয়েক বছর পরে তোমাদের (পাহাড়িদের) নিঃশেষ করতে আমাদের (সরকারের) অস্ত্রের প্রয়োজন হবে নাযাদেরকে সমতল এলাকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের দিয়েই তোমাদের নিঃশেষ করা যাবে।" পূর্বে যেখানে প্রতিশোধমূলক তৎপরতায় সরাসরি সেনাবাহিনী জড়িত হতেন এখন তার দায় এড়ানোর জন্য অনুপ্রবেশকারীদের উস্কে দিয়ে প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে লংগদুতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পর কিছু বেসামরিক কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে অনুপ্রবেশকারীরা অকপটে স্বীকার করেন যে, সরকারী অর্থাৎ সেনাবাহিনীর পরামর্শ ছাড়া তারা ঘটনা করেন নাপাহাড়িদের যে সব জমি অনুপ্রবেশকারীদের দখলে গেছে তা সেনাবাহিনীর প্রত্য মদদেসেনাছাউনীর চারপাশ ঘিরে অনুপ্রবেশকারীদের গ্রামগুলো গড়ে উঠেছেফলে শান্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ অনুপ্রবেশকারীদেরকেই প্রাণ দিতে হচেছঅধিকন্তু অনুপ্রবেশকারীদেরকে V.D.P নাম দিয়ে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছে শান্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবার জন্যএভাবে তাদেরকে শান্তিবাহিনীর মুখে ঠেলে দিয়ে যুদ্ধের বলিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে
পাহাড়িদের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক যতগুলো রাজনৈতিক দাবী ছিল তন্মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য দাবী ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবেএই দাবীটি একজন বাঙালির দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থীকারণ একজন বাংলাদেশী হিসেবে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে (অনু ৩৬, বাংলাদেশ সংবিধান)কিন্তু সরকার বা রাষ্ট্রের দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন সংখ্যাগুরু বাঙালি জাতিকে এই মৌলিক অধিকারটি অবাধ ভোগ করতে দিয়ে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের মৌলিক অধিকার ও অন্যান্য অধিকার খর্ব হচ্ছে কিনাযদি তাই হয় তাহলে একটি কল্যাণকামী দেশের সরকারকে অবশ্যই কিছু বিধি-বিধান রাখতে হয়ে -- যাতে সংখ্যাগুরুদের দ্বারা সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব না হয়অর্থাৎ একটি রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রা করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারের -- যে সরকার সচরাচর সংখ্যাগুরুদের নিয়ে গঠিতবিশ্বের বিভিন্ন দেশে এভাবেই জাতিগত সমস্যা বা সংঘাতের পথ রোধ করা হয়েছেবাংলাদেশে এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে বাঙালি জাতির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হবার প্রশ্নই উঠে না বরং আজকের পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা উদ্রেক হবার প্রশ্নই আসতো না এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে জাতিগত সমস্যা মোকাবিলা করতে হতো নাএ কারণেই অনুচ্ছেদ ৩৬ শুরুর পুর্বেই জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে এই কথামালা জুড়ে দেয়া আছে
একটি রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার উপর জাতিগত শোষণ নিপীড়ন বন্ধ রাখতে হলে সেই জাতিসত্তা অধ্যুষিত এলাকায় সংখ্যাগুরু জাতির লোকের অনুপ্রেবেশ বন্ধ রাখা অবশ্যই প্রয়োজনঅন্যথায় বৃহৎ জাতীয়তাবাদের মধ্যে সংখ্যালঘু জাতিসত্তা বিলীন হতে বা মিশে যেতে বাধ্যএ জন্য সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র সমাজ ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ১০টি জাতিসত্তার সমাজ ও সংস্কৃতিকে রা করতে হলে তাদের ভূমি ও অন্যান্য অধিকার রা করতে হলে; সর্বোপরি তাদেরকে জাতিগত নিপীড়ন থেকে মুক্ত রাখতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি বা বাহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বন্ধ রাখা নিতান্ত প্রয়োজনএ ধরনের বিধিনিষেধ ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনের অধীনে প্রণীত ৫২ বিধিতে স্বীকৃত ছিল১৯৭৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত তৎকালীন সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এই বিধিটির স্থায়ীত্ব দাবী করেছিলেন মাত্রতারপর কর্ণফুলীর জল অনেক দূর গড়িয়েছে; সামরিক নির্যাতন চরমে উঠেছে; “পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগতদের অনুপ্রেবেশ বন্ধ করতে হবে এই দাবীকে টেক্কা মারার জন্য গোপন সিদ্ধান্ত ও সার্কুলারের মাধ্যমে ল ল নিরীহ বাঙালিকে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে একটি অঘোষিত যুদ্ধেক্ষেত্রের দাবানলের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছেতাই পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালির রক্ত ঝরানোর দায়ভার শান্তিবাহিনীর ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেই দায় এড়ানো যায় নাএ জন্য সরকার ও সেনাবাহিনীর গৃহীত অব্যবস্থাও যে দায়ী সে কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন নানইলে সবকিছু জেনেই সরকার ও সেনাবাহিনী নিরীহ বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি জ্বলন্ত সমস্যার সম্মুখে গিনিপিগের মত ব্যবহার করছেন কেন? তাছাড়া এখান থেকে যে সমস্ত ছিন্নমুল নিরীহ বাঙালি সরকারের মিথ্যা প্রলোভনে আশ্বস্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলে গেছে তারা ওখানে চরিত্র পাল্টালো কেন? বাংলাদেশের সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে তারাও পার্বত্য জাতিসত্তাসমূহের মত শোষিত ও নিপীড়িতপার্থক্য হচ্ছে -- বর্তমানে পার্বত্যবাসীরা জাতিগত নিপীড়ন ও শোষণের শিকার আর অনুপ্রবেশকারীরা শ্রেণীগত শোষণ ও নিপীড়নের শিকারপার্বত্য জাতিসত্তাসমূহ আপাততঃ জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে; অন্যদিকে সমগ্র বাঙালি জাতি শ্রেণী শোষণ ও নিপীড়নের বিরদ্ধে আন্দোলন করছেউভয়ের মূল শত্রু বুর্জোয়া সরকারকিন্তু অনুপ্রবেশকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়ে সরকারী যন্ত্রের সাহায্যে ব্যবহৃত হয়ে পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের আন্দোলনের বিরুদ্ধে বুলেটের মত কাজই বা করেন কেন?
সমস্যার মূলে একটা উল্লেখযোগ্য কারণ বেআইনী অনুপ্রবেশ১৯৭৩ সালের দাবী পার্বত্য চট্টগ্রামে বেআইনী অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে এক ধাপ উন্নীত হয়ে এখন হয়েছে বেআইনী অনুপ্রবেশকারীদের প্রত্যাহার করতে হবেএ দাবী কেবল শান্তিবাহিনীর নয় -- পাহাড়ি গণ পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ তথা সমগ্র পাহাড়িদেরই দাবীসুতরাং এদের প্রত্যাহার করলেই রক্ত ঝরা বন্ধ হবেতাছাড়া পাহাড়িদের ভূমি বেদখল হবার সমস্যারও নিরসন হবেসর্বোপরি শান্তিবাহিনী ও সরকারের শান্তি আলোচনায় এক ধাপ অগ্রগতি হবেআসুন সরকারকে এ পথে অগ্রসর হতে জোর দাবী করিকারণ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে এ পথই হবে সর্বোত্তমসরকার যেহেতু উদ্যোগী হয়ে অনুপ্রবেশকারীদের পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছেন -- সেহেতু আবার উদ্যোগী হয়ে তাদের প্রত্যাহার করতে পারবেন না কেন? এরা প্রত্যাহার না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্রমান্বয়ে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে পাহাড়িদের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হবে -- এতে কোন সন্দেহ নেই
-রাডার
.......................
একটি ঘোষণা
দেশের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রী কিংবা চাকরীজীবী, পেশাজীবী বেকার যুবক/যুবা আপনি যেই হোনরাডার প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্ট হোনএজেন্ট, রিপোর্টার বা সংবাদদাতা হতে হলে অবশ্যই লিখুন
...................
রাডার কিনুন, রাডার পড়ুন এবং
তাকে বাঁচিয়ে রাখুনরাডার
আপনার কথাই বলবে
.............

পাতা : ১৩-১৪-১৫

আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে ছাত্র ও যুব সমাজ

পারদর্শী

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এদেশে ছাত্র এবং যুব সমাজই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেএ দু'য়ের ভূমিকা বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস রচিত হয় নাবরং রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার প্রথম পাতায় তাদের বীরত্বপূর্ণ অবদান অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়১৯৫২ সনের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সনের কুখ্যাত হামিদ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯ সনের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সনের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সর্বোপরি, ১৯৯০ সনের এরশাদীয় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সমাজের শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছেঅন্য ভাষায় বলতে গেলে এরাই বাংলাদেশের মুখ্য রাজনৈতিক শক্তি



তোমরা এসেছ, ভেঙেছ অন্ধকার -
তোমরা এসেছ ভয় করিনাকো আর
পায়ের স্পর্শে মেঘ কেটে যাবে, উজ্জ্বল রোদ্দুর
  ছড়িয়ে পড়বে বহুদূর -- বহুদূর

প্রকৃতির লীলাভূমি বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্যাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাসও মূলতঃ একই প্রকৃতিরপার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে অতীতে যেমন ছাত্র ও যুব সমাজের ভূমিকা ছিল তেমনি বর্তমানেও তা প্রবলতর হচ্ছেভবিষ্যতে আরও প্রচণ্ড বেগ পাবেএর পিছনে অনেক কারণও আছেপাহাড়ি জনগণের আর্থ সামাজিক প্রক্ষাপট এবং দীর্ঘ দিন ধরে সাম্রাজ্যবাদী শাসন-শোষণই মূলতঃ ছাত্র-যুব সমাজকে রাজনীতিতে উৎসাহিত কিংবা বাধ্য করেবিশ্বের অন্যান্য সভ্য দুনিয়ার সাথে দীর্ঘ দিন বিচ্ছিন্ন থাকায় উন্নত জীবনের সাথে তাদের পরিচয় ঘটেনিউন্নত জীবন যাত্রার সাথে পরিচয় না হওয়াতে সেই জীবনের স্বাদও তাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনিতাই তাদের জীবন থেকে নিঃসঙ্গতা কোনদিন কাটেনিযে তিমিরে তাদের জন্ম সে তিমিরেই তাদের মৃত্যুতাইতো দারিদ্র্যের কালো ছোবল অক্টোপাসের মত ঘাড়ে জড়িয়ে ধরেদারিদ্র্যই তাদের জীবনের নিত্য সঙ্গীঅভাব অনটনের বেড়াজাল তাদেরকে মুক্ত চিন্তার পথ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রেখেছেআর এই সুযোগে কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল যুগে যুগে শোষণ-নির্যাতন চালিয়েছে
এই শোষণ-নির্যাতনের হাত থেকে এই এলাকার মৃতপ্রায় জনগণকে মুক্ত করার জন্য ছাত্র-যুব সমাজই প্রথম সোচ্চার কণ্ঠে প্রতিবাদ জানায়প্রতিবাদের ভাষা কখনও শান্তিপূর্ণ আবার কখনও মারমুখী আকার ধারণ করেছেশাসক শ্রেণীর অন্যায়-অবিচার প্রতিরোধ করাই এর উদ্দেশ্যএই অঞ্চলে যখনই প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে উঠেছে তখনই তা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করা হয়েছে এবং হচ্ছেকিন্তু আন্দোলন কোনদিন থেমে থাকেনি এবং ভবিষ্যতেও থেমে থাকবে নাঅত্যাচার-নিপীড়ন থাকলে সেখানে আন্দোলনও থাকবেএই প্রতিরোধ আন্দোলন অপ্রতিরোধ্যশক্তি প্রয়োগে একে দমন করা যায় নাবরং অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দেয়ার সামিল হয়এই আন্দোলন থামানোর বা দমনের পথ হচ্ছে অন্যায়-অবিচার বন্ধ বা নির্মূল করানিপীড়িতদের দাবী এবং অধিকারকে স্বীকার করে নেয়া
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাস দীর্ঘ দিনেরযখন যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তখনই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছেসংকট যত ঘনীভূত হয়েছে আন্দোলনের রূপও তত চরম আকার ধারণ করেছেএসব আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মাত্র পাহাড়ি জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষা করাআর অস্তিত্ব রক্ষা প্রধান উপায় হচ্ছে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার
সমাজের সবচে সচেতন এবং প্রগতিশীল অংশ হিসেবে ঘুণেধরা সমাজ ব্যবস্থার জটাবদ্ধ এবং স্বার্থান্বেষী মহলের শাসন-শোষণে পিষ্ট জনগণকে আলোর দিকে পরিচালিত করার জন্য ছাত্র-যুব সমাজই এগিয়ে এসেছিল১৯১৫ সালে চাকমা যুব সমিতি”, ১৯২৮ সালে চাকমা যুব সংঘ”, ১৯৫৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস এসোশিয়েশন”, ১৯৬০ সালে পাহাড়ি ছাত্র সমিতি এবং এগুলো ছাড়াও ঢাকা ট্রাইবেল স্টুডেন্টস্‌ ইউনিয়ন”, “চট্টগ্রাম উপজাতীয় ছাত্র পরিষদরাজশাহী ইউনিভার্সিটি ট্রাইবেল স্টুডেন্টস্‌ ইউনিয়ন ইত্যাদি ছাত্র সংগঠন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়েছিল
অবশেষে ১৯৮৯ সনের ৪ঠা মে'লংগদু গণহত্যা-র প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ -এর অভ্যুদয়এই লোমহর্ষক গণহত্যার আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানোর জন্য ঢাকার রাজপথে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ '৮৯-এর ২১শে মে মৌন মিছিল সহকারে জাতীয় প্রেস কাব-এর সামনে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেতৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রত্য সহযোগিতায় সেদিন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ মানবেতিহাসের এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে স্বেতপত্র প্রকাশ এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ উক্ত দাবীর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন এবং স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের লেলিয়ে দেয়া সামরিক বাহিনী এবং তাদের পোষ্য অনুপ্রবেশকারীদেরকে এই গণহত্যার জন্য দায়ী করেনতাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামে গণহত্যা বন্ধেরও দাবী জানান
লংগদু গণহত্যার রক্তে রঞ্জিত ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে গড়ে ওঠা এই পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ দশ ভিন্ন ভাষাভাষী পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানযার লক্ষ্য এই প্রতিষ্ঠানটিকে একটি নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করাসমগ্র বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি এই ছাত্র পরিষদ সঠিক কর্মসূচীর মাধ্যমে দশ ভিন্ন ভাষাভাষী পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতন ও বিপ্লবী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেপার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটময় মুহূর্তে এই ছাত্র পরিষদের ভূমিকা অত্যন্ত শক্তিশালীযেখানে দালালীর মত সস্তা রাজনীতি তথা গণবিরোধী কার্যকলাপ নির্ভর জেলা পরিষদ অসামরিক ছদ্মাবরণে সামরিক স্বৈরাচারের রাজত্ব কায়েম করেছে -- সেখানে দালালি উচ্ছেদের প্রক্রিয়া হিসেবে এই ছাত্র পরিষদের আন্দোলন পাহাড়ি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছুতে সাহায্য করবেপার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত ঘটনাবলী সম্বন্ধে পক্ষপাতদুষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার বিরুদ্ধে ছাত্র পরিষদ তৎপরবাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা ও রেডিও-টেলিভিশনসহ সকল প্রচার মাধ্যম মনগড়া প্রচারণার মাধ্যমে দেশের ব্যাপক জনগণকে বিভ্রান্ত করে রেখেছেএক সময় ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্বন্ধে লিখতে হলে অনুমতি নিতে হত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেবর্তমানে তা বহাল আছে কিনা আমাদের জানা নেইকারণ একটা, আর তা হল ওখানকার সত্য ঘটনাগুলো প্রকাশ না পাওয়াসত্য প্রকাশ পেলে সরকারের (তৎকালীন) আসল চেহারা জনগণের সামনে উন্মোচিত হবেআর উন্মোচিত হলে এত দিনের মিথ্যা প্রচারণা সত্যিকারভাবে মিথ্যা হয়ে যাবেএসব মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার বিরুদ্ধে মুখ খুললে আখ্যায়িত করা হয় শান্তিবাহিনী হিসেবেপ্রতিবাদকারীর ভাগ্যে জোটে জেল জুলুম ও অমানবিক নির্যাতনপাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তির জন্য গণতান্ত্রিক পথে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেতাই ছাত্র পরিষদের উপর বিভিন্ন কুচক্রী মহলের নজর চিলের চোখের মত তীক্ষ্ণযে কোন সময়, যে কোন মুহূর্তে ছোবল মারার সম্ভাবনা আছে
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে কোন পরোয়া করে নাকারণ এর লক্ষ্য গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের অস্তিত্ব সংরক্ষণএতে যে কোন বাধা অতিক্রম করতে ছাত্র পরিষদ পিছপা হবে নাপাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ইতিমধ্যে রাজপথের সঙ্গী হিসেবে বহু ছাত্র সংগঠনের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে
হতাশাগ্রস্ত পাহাড়ি জনগণের বুকে আশার সঞ্চার করতে চেতনার মশাল হাতে নিয়ে ছাত্র-যুব সমাজই পারে অগ্র বাহিনীর ভূমিকা নিতেদীর্ঘ দিনের সামন্তবাদী শোষণ এবং কায়েমী শাসক গোষ্ঠীর শাসন-শোষণে জর্জরিত পাহাড়ি জনগণ আর শোষণ চায় নাতারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে নিজেদের মেধা ও শ্রম খাটাতে চায়দেশের তথা পৃথিবীর শোষিত শ্রেণীর স্বার্থে শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়নিপীড়িত জনগণের এই আকাঙ্ক্ষাকে বুকে ধারণ করে আসুন পাহাড়ি ছাত্র-যুব সমাজ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলিপার্বত্য চট্টগ্রামে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনকে যারা বিপথে পরিচালিত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সংগ্রাম গড়ে তুলিপার্বত্য চট্টগ্রামের রক্ত রঞ্জিত ইতিহাসকে যারা কালিমা লেপন করতে উঠে পড়ে লেগেছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে জাগিয়ে তুলিইতিহাসের চাকাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে যারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে অভ্যস্ত তাদের কালো হাত ভেঙে ফেলিপার্বত্য চট্টগ্রামের বুক থেকে ডিভাইড এণ্ড রুল পলিসি-র মূল উচ্ছেদ করিসমাজের জঘন্যতম শত্রু সাম্প্রদায়িকতার বিষ দাঁত উপড়ে ফেলিসমাজের জরাজীর্ণ নীতি আদর্শ তথা কুসংস্কারের বেড়াজাল চিরে উঠে আসিপুরাতন দেয়াল ভেঙ্গে নতুন দেয়ালের ইমারত তৈরী করিমদ-জুয়া-গাঁজার আড্ডাখানা থেকে উঠে এসে মাথা তুলে দাঁড়াইসমাজে থেমে থাকা গতিতে তারুণ্যের গতি যোগ করিনিত্যদিনের মহা বিপদ সংকেতকে শান্তির ললিত বাণীতে পরিণত করিরাস্তা-ঘাটে চলাফেরার অবাধ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করিমানবতার জঘন্য শত্রু বিশ্বাসঘাতক, লেজুড়বৃত্তি, দালালী ও গণবিরোধী ব্যক্তি-স্বার্থপরতার বিষবাষ্প চিরতরে নির্মূল করিপাহাড়ি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের প্রতিবন্ধক এবং দালাল সৃষ্টির কারখানা কুখ্যাত স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের উর্বর মস্তিষ্কের ফসল (জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়া) গণবিরোধী ৯ দফা বা জেলা পরিষদ (পার্বত্য জেলা পরিষদ) চুরমার করে ফেলিএ যুগের তথা সভ্যতার কলংক মীর জাফর গোষ্ঠীদের চরিত্র জনসমে উন্মোচন করিগৌতম-জেরী-সমীরণ চক্রসহ তাদের পদলেহী গণ শত্রুদের উৎখাত করিপার্বত্য চট্টগ্রামের দশ ভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর সন্তানেরা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলিপার্বত্য চট্টগ্রামে দুলা গোষ্ঠী-দের সামাজিকভাবে বয়কট করিজন দাবীর প্রতি শ্রদ্ধ রেখে আন্দোলনের লৌহ কঠিন ভিত রচনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাইনচেৎ যুগ যুগ ধরে সামন্তবাদী শোষণ এবং শাসক শ্রেণীর নির্মম নির্যাতনের যাঁতাকলে পিষ্ট পাহাড়ি জনতার আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন মাঝ পথে ইতি ঘটবেকায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল তাদের দানবীয় জিহ্বা বের করে জনগণের রক্ত শোষণ করতে করতে নিঃশেষ করে ফেলবেবিষ বাষ্প ছড়িয়ে দেবে সবুজ-শ্যামল-শৈল ভূমির আকাশে বাতাসেকিন্তু এ যুগের তারুণ্যেভরা শিতি সন্তানেরা তা হতে দিতে পারে নাজনতার মুখে তারা হাসি দেখতে চায়
পাহাড়ি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে পাহাড়ি ছাত্র-যুব সমাজের শক্তিশালী ভূমিকা থাকবে তা বলার অপো রাখে নাসমাজের সবচে' সচেতন এবং মুক্ত বুদ্ধির অধিকারী হিসেবে এতে তাদের ভূমিকা থাকাই স্বাভাবিকআর এ ভূমিকা পালনের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষাঘুণেধরা অলস আরাধনার মাধ্যমে এ শিক্ষা লাভ করা যায় নাপ্রয়োজন বাস্তব ভিত্তিক শিক্ষারআত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন কি? কি জন্য এর প্রয়োজন? এসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর জানতে হবেএজন্য দরকার এতদ সংশ্লিষ্ট বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা ও খবরাখবর রাখাপাহাড়ি জনগণের কেন আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রয়োজন, এই আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার মানবতা এবং গণতন্ত্র বিরোধী কিনা তা জানার জন্য প্রয়োজন এ ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান আহরণজাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী পৃথিবীর ছোট বড় প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার স্বীকৃত রয়েছেকারণ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ব্যতীত কোন জাতিসত্তা বা জাতি উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে নাতাই প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ভোগ করার অধিকার রয়েছেজাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ভোগ করার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহ তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারেএই আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ব্যতীত জাতিসত্তার বিকাশ সম্ভব নহেআজকের পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে নজর দিলে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠেআত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারবিহীন পাহাড়ি জনগণ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছেসেখানে পাহাড়ি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের বদলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসামরিক ছদ্মাবরণে সামরিক নিয়ন্ত্রণাধিকারপার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যাপক এলাকা জুড়ে বলবৎ রয়েছে অঘোষিত সান্ধ্য আইনরাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ সবই সামরিক তত্বাবধানে রয়েছেঅজুহাত একটা, আর সেটা হচ্ছে বিদ্রোহী দমনবিদ্রোহী দমনের নামে মূলতঃ জনগণকে দমন করছে তারা
অথচ স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর দেশে এখন গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া চলছেদেশে এখন জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় রয়েছেএ নির্বাচিত সরকারের সবচে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির সরকার প্রবর্তনসংসদীয় সরকার জনগণের কাছে তার সমস্ত কার্যকলাপের জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেকিন্তু হায় ! দুর্ভাগা পার্বত্যবাসীতাদেরকে প্রতিদিন-প্রতি মুহূর্তে জবাবদিহি করতে হয় সামরিক বাহিনীর ক্যাম্পেদেশের একদিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আর ঠিক সেই সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক স্বৈরাচারএক দেশে দুই শাসন চলতে পারে না
পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেয়ার জন্য পাহাড়ি ছাত্র এবং যুব সমাজকে আরো ঐক্যবদ্ধ, আরো সচেতন হতে হবে, নিজেদের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যাপারে জনগণকেও লৌহকঠিন দৃঢ়তায় ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব মূলতঃ ছাত্র-যুব সমাজেরদল-মত নির্বিশেষে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে শরীক হওয়ার বিকল্প পথ নেইপৃথিবীতে যে জাতি যত বেশী ঐক্যবদ্ধ সে জাতি ততবেশী শক্তিশালীপৃথিবী থেকে অনেক জাতিসত্তার বিলুপ্তি ঘটেছেতার কারণ ঐক্যের অভাব এবং পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে না পারাপাহাড়ি জনগোষ্ঠীর যে সব মুখোশধারী আন্দোলনকারী আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে বাধা সৃষ্টি করছে তাদের বুঝার সময় এসেছেনচেৎ আত্মঘাতী কার্যকলাপের জন্য জনগণ তাদের মা করবে নানিজেদের কার্যকলাপের দায়-দায়িত্বের বোঝা নিজেদেরকেই বহন করতে হবেএমন সময় আসবে যখন জনগণ সব কাজকর্মের জবাব চাইবেতখন মা করার সময় উত্তীর্ণ হয়ে যাবে, থাকবে শুধু বিচারের সময়এমন সময় আসবে যখন বাংলাদেশের সকল মানবতাবাদী সংগঠন, রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসবেএজন্য পাহাড়ি ছাত্র যুব সমাজকে অন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখতে হবেবিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে হবেপার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনাবলীর সঠিক বিশ্লেষণ দিয়ে সত্য জানিয়ে দিতে হবেযাতে করে স্বার্থান্বেষী মহল মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে না পারেপ্রয়োজনবোধে যে সমস্ত ছাত্র সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী গোষ্ঠী পাহাড়ি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার আন্দোলনকে সমর্থন করে এবং পাহাড়ি জনগণের পে কাজ করছে সেসব ছাত্র সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী গোষ্ঠীর সাথে জড়িয়ে পড়তে হবেএক্ষেত্রে অবশ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও পেশাজীবী গোষ্ঠীর অগ্রণী ভূমিকা থাকা বাঞ্ছনীয়পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাদেরও এগিয়ে আসা উচিতএতে যেমন পাহাড়ি জনগণের উপকার হবে তেমনি সমগ্র দেশের জন্যও মঙ্গলকরকারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা বাংলাদেশের একটি জাতীয় সমস্যাসমস্যার সমাধান যত বিলম্বিত হবে তত এর জটিলতাও বাড়বে
-রাডার
..............................
হে শৃঙ্খলিত তারুণ্য, কোন সরু পথ খোলা নেই তোমার সম্মুখেবিুদ্ধ জনতার ভীড়ে নিরুপায় প্রজন্মকে প্রতিবাদী হতেই হবেজরাগ্রস্ত নেতৃত্বের সুবিধাবাদী চরিত্রের চোয়াল ভাঙোবিকলাঙ্গ রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার গালে প্রতিবাদের আঁচড় বসাতেই হবেনচেৎ অর্থহীন এ তারুণ্যএকই সাথে বিকৃত ও ধিকৃত সেই যৌবনও
........................

পাতা : ১৬-১৭-১৮-১৯

“LIFE IS NOT OURS”
LAND AND HUMAN RIGHTS
IN THE CHITTAGONG HILL TRACTS,
BANGLADESH

[গত বছরের ডিসেম্বরের আট থেকে ঊনত্রিশ তারিখ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত অবস্থা সরেজমিনে দেখার জন্য সাত সদস্যের C.H.T. কমিশন পার্বত্যাঞ্চল সফর করেনতারও আগে তারা নভেম্বরের শেষ দিকে পাঁচ দিন যাবত ত্রিপুরার বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ঘুরে দেখেনসফর শেষে তারা সুদূর ইউরোপে ফিরে গত মে মাসে ১২৭ পাতার জীবন আমাদের নয় শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন এবং লণ্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স এণ্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স -এ দু'দিন ব্যাপী সেমিনারের আয়োজন করেনএই রিপোর্টে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাস, সেনা মোতায়েন, ভূমি বেদখল, উন্নয়ন, ধর্ম, সংস্কৃতি ও সামাজিক অবস্থার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছেতাদের এই রিপোর্টে উন্মোচিত হয়েছে সমস্ত নিপীড়ন নির্যাতনের নির্মম সত্যতাপ্রকাশিত হয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যযুগীয় বর্বরতাএই রিপোর্টের শেষের দিকে তারা কিছু সুপারিশ পেশ করেছেনএখানে আমরা এই সুপারিশের ভাষান্তর করেছি।]

সুপারিশ সমূহ :-

১) অনুপ্রবেশকারীদের উপস্থিতি এবং ভূমি প্রসঙ্গ -
বাঙালি অনুপ্রবেশকারীদের সমতলে ফিরে যাওয়ার মধ্যে যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান নিহিত থাকে তবে এ ধরনের কর্মসূচীই এলাকার সমস্যার প্রকৃত সমাধান হবে বলে কমিশন মনে করেসরকারী এবং সেনাবাহিনীর সামরিক কর্মকর্তারা কমিশনের কাছে স্বীকার করেছেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি অনুপ্রবেশ ঘটানোর কর্মসূচী ছিল একটি মারাত্মক ভুল পদক্ষেপএ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারে না
পাহাড়ি জনগণ চায় বাঙালি অনুপ্রবেশকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে যাককিছু পাহাড়ি জনগণ মনে করে, সরকারী উদ্যোগে পুনর্বাসন কর্মসূচীর পূর্বে যারা এসেছিল তারাই থাকতে পারবে কিন্তু বাকীরা অবশ্যই সমতলে ফিরে যাবেএই অভিমত শুধু ঔ.ঝ.ঝ./ঝ.ই-র নয়সরকারী এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে সংলাপ কমিটির আলাপকালে এটাই ছিল প্রথম দাবীফলে সংলাপ কমিটির সদস্যরা সরকার, সেনাবাহিনী এবং J.S.S./S.B কর্তৃক আপোষকামী, বাস্তববাদী, সুবিধাবাদী ও দালাল হিসেবে চিহ্নিত হনব্যাপারটি হচ্ছে এই যে, সর্বস্তরের পাহাড়ি জনগণের অভিমত হলো বাঙালি অনুপ্রবেশকারীদের পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করতে হবে
সকল মহলই এই বাস্তবতা উপলব্ধি করছে যে, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নতুন বাঙালি অনুপ্রবেশকারীতারা ইতিমধ্যেই পাহাড়িদের ভূমি দখল করে নিয়েছেজেলা পরিষদ বিলসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামের অনুপ্রবেশকারীদের উপস্থিতিকে সরকারী ও আইনগতভাবে বৈধতা দিয়েছে এটাই J.S.S./S.B -র আপত্তির মূল কারণদুই ভাবে এই আইন কার্যকর হচ্ছে : প্রথমত জেলা পরিষদসমূহে অনুপ্রবেশকারীরা সংখ্যানুপাতে নির্দিষ্ট প্রতিনিধিত্ব পেয়েছেএই প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের মত অনুপ্রবেশকারীরাও স্থায়ী বাসিন্দার বৈধতা পেয়েছেদ্বিতীয়তঃ এই আইনসমূহ এমনভাবে প্রণীত হয়েছে যে এগুলি ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির কার্যকারীতা সম্পূর্ণভাবে রদ করে দিয়েছে১৯০০ সালে এই পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিতে এ অঞ্চলে অপাহাড়িদের অনুপ্রবেশ এবং ভূমি বন্দোবস্ত নিষিদ্ধ ছিলJ.S.S./S.B ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি অনুসারে বাঙালি পুনর্বাসনের অবৈধতা সম্পর্কে অভিযোগ করে আসছেJ.S.S./S.B বরাবরই ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বলবৎ এবং পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের অস্তিত্ব রার জন্য সাংবিধানিক নিশ্চয়তার দাবী করে আসছে
সংলাপ কমিটির কতিপয় সদস্য পুনর্বাসিত বাঙালি অনুপ্রবেশকারীদের প্রত্যাহারের মাধ্যমে যথার্থ সমাধানের অভিমত প্রকাশ করেছিলেনকিন্তু তারা ধরেই নিয়েছিলেন যে, এ ধরনের পদপে নেয়া নাও হতে পারে, অধিকন্তু জনমিতির এই ভারসাম্যতা ভবিষ্যতে অনুপ্রবেশকারীদের অনুকুলে যাবেঅনুপ্রবেশকারীদের সমতলে প্রত্যাহারের মধ্যেই যথার্থ সমাধান -- এ বিষয়ে কমিশন একমততথাপি, অনুপ্রবেশকারী এবং ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে আরো যথার্থ সুপারিশ প্রণয়নে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বেছে নেয়া হয়েছে-
ক) পার্বত্য চট্টগ্রামে আর কোন অবস্থাতেই বাঙালি পুনর্বাসন অনুমোদন করা যাবে নাসরকার ও সেনাবাহিনী কমিশনকে এই বলে আশ্বস্ত করেছে যে জেলা পরিষদ বাস্তবায়নে যে নীতিমালা প্রণীত হয়েছে, সে অনুসারে পরিষদের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোন নুতন অনুপ্রবেশকারী খাস জমি পাবে না এবং কোন অনুপ্রবেশকারীর কাছে ভূমিস্বত্ব হস্তান্তর করা যাবে নাকিছু কিছু তথ্যাভিজ্ঞ মহল পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে বলে ধারণা করছেনকমিশন ঐ অভিযোগ অনুসন্ধান করে দেখতে পারেনি
খ) পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিস্বত্বের বৈধতা অনুসন্ধানে সম একটি নিরপেক্ষ ও দক্ষ কমিটি থাকতে হবেরাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এই বিতর্কিত ভূমি সংক্রান্ত ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেনকমিশন মনে করে এই কাজ সম্পাদনের জন্য প্রস্তাবিত কমিটিগুলো যথেষ্ট দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা দেখাতে পারবে নাঅধিকন্তু এই কমিটিগুলো বর্তমানে ভূমি জরিপে নিয়োজিত স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারা প্রভাবিত হতে বাধ্য থাকবেযদি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অবৈধভাবে ভূমি দলিলাদি অনুপ্রবেশকারীদের কাছে হস্তান্তরিত হয়ে থাকে তবে সে সব সরকারী আমলাদের মাধ্যমেই হওয়ার সম্ভাবনাএ ক্ষেত্রেও ভূমি জরিপের প্রশাসন বহির্ভূত একটি কমিটির মাধ্যমে ঐ অনিয়মগুলো তদন্ত করে দেখতে হবেএর অর্থ এও যে, ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর থেকে নিয়োজিত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটগণ এই কার্য সম্পাদন করতে পারে না, যেহেতু সে সময় জেলা প্রশাসকই একই সাথে ভূমি দলিল এবং ভূমি বিরোধ বিচার সংক্রান্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন
এই ভূমি স্বত্বের সমস্যা ভারত থেকে শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের সাথে সম্পূর্ণভাবে সম্পৃক্তশরণার্থীরা এখন নিশ্চিত যে তাদের জমি জমা অনুপ্রবেশকারী বাঙালিদের দ্বারা দখল হয়েছেকমিশন মনে করে আসলেই তাদের জমি, সম্ভবতঃ অধিকাংশ জমি অনুপ্রবেশকারীরা দখল করে নিয়েছেকমিশন অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা এই বেদখলকৃত ভূমির পরিমাণ নির্ধারণ করতে সমর্থ হয়নিকিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যবেণসহ সাময়িকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের নিজের এলাকায় ফিরে আসা শরণার্থীদের বক্তব্য অনুসারে কমিশনের মনে হলো এই সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছেএই সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শরণার্থীরা স্বেচ্ছায় তাদের নিজ এলাকায় ফিরে আসবে না
গ) অনেক বাঙালি অনুপ্রবেশকারী এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছে এবং অনেকেই বলেছে যে তাদের জন্য যদি কোথাও এক চিলতে জমি দেয়া হয় তারা খুশী মনে সমতলে ফিরে যাবেতারা পার্বত্য চট্টগ্রামে আসার আগে ভূমিহীন ছিল অথবা সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছেসমতলে এখন তাদের জীবন যাপন যোগ্য সম্পদের অভাববর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি গুচ্ছগ্রামগুলোর অবস্থা ভয়াবহ, অনেকটা ত্রিপুরার শরণার্থী শিবিরগুলোর মত দুর্বসহযদি বাংলাদেশ সরকার এ সমস্ত সমস্যাসমূহের প্রতি নজর দেন তবে অনুপ্রবেশকারীদের স্থানান্তরের জন্য বিদেশী সাহায্য সহজলভ্য হবে বলে কমিশন আশা করছেসমতল এলাকা খুবই জনবসতিপূর্ণ, কিন্তু কিছু কিছু পুনর্বাসন কর্মসূচী অবশ্যই সম্ভব
ঘ) গুচ্ছগ্রামসমূহ অবশ্যই ভেঙে দিতে হবেসরকারী ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বার বার কমিশনকে বলেছে যে, পাহাড়ি এবং বাঙালি অনুপ্রবেশকারীরা স্ব-ইচ্ছায় গুচ্ছগ্রামে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেতবুও কমিশনের ধারণা, পুরো ব্যাপারটার মধ্যে জনগণকে জোরপূর্বক সংঘবদ্ধ করার অপচেষ্টা জড়িতপাহাড়ি জনগণের গ্রামগুলির উপর সামরিক অভিযানে পাহাড়িদের ঐ নির্ধারিত গুচ্ছগ্রামে যেতে বাধ্য করেছেগুচ্ছগ্রাম বানানোর একটাই উদ্দেশ্য আর তা হলো পাহাড়িদের ভূমি ব্যবহার প্রণালী ধ্বংস করা এবং তাদের নগদ শস্য উৎপাদনের অর্থনীতিতে অভ্যস্ত করানোপার্বত্য চট্টগ্রামের তিন অংশে রাবার চাষ এর একটি উদাহরণ
ঙ) পার্বত্যাঞ্চলে ভূমির ধারণমতা নির্ণয়ের জন্য একটি সুষ্ঠু জরিপ কাজ করা উচিৎএই জরিপ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ইতিমধ্যে যথেষ্ট তথ্য হাতের কাছে রয়েছেপাহাড়িরা ধান্য জমি, বাগান বাগিচা এবং জুম চাষের মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠিত ভূমি ব্যবহার পদ্বতিতে নিয়োজিতপার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি কল্পিত খালি জায়গা হিসেবে ধরা হয় এবং যেখানে অনুপ্রবেশকারীদের পুনর্বাসিত করার কথা বলা হয়কিন্তু এই অবাস্তব ধারণার এখনই অবসান হওয়া উচিৎ এবং ভূমি ও পরিবেশ সংকটের এই প্রকৃত রূঢ় বাস্তবতা সবার কাছে পরিস্কার হওয়া দরকারএই এলাকায় কি পরিমাণ পুনর্বাসন পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিকভাবে উপযুক্ত তা নির্ধারণের জন্য এলাকার ধারণ ক্ষমতা নির্ণয়ই আগামী দিনে বুদ্ধিমানের কাজ হবেযদি এটা নির্ণয় করা হয় তবেই পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বশাসিত সরকার ভূমি ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ হবে
চ) ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি পুরোপুরি বাতিল করা উচিৎ হবে নাকারণ ১৯০০ সালের শাসনবিধির যথেষ্ট রাজনৈতিক এবং আইনগত গুরুত্ব রয়েছেপুনর্বাসন ও ভূমি অধিকার সম্বলিত ১৯০০ সালের শাসনবিধির শর্ত বাস্তবায়ন কিংবা পরিবর্তন করার জন্য বাংলাদেশের আইনে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বশাসিত সরকারের নিকট ক্ষমতার্পন করা উচিৎ১৯০০ সালের শাসনবিধি অব্যাহত রাখার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অবশ্য কমিশন বিচার করে নাআদতে পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বশাসিত সরকার যাতে ভূমি সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আইনগত অধিকার পায়, তাই সমর্থন করেকিন্তু এই আইনগত অধিকারের স্বীকৃতি অবশ্যই ১৯০০ সালের শাসনবিধির মৌলিক বিষয়সমূহের কাঠামোর মধ্যে দিতে হবেবিচ্ছিন্নভাবে এমন কিছু করা উচিৎ নয় যা পাহাড়ি জনগণের কাছে অপ্রয়োজনীয়, অমর্যাদাকর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়

স্বায়ত্তশাসন : -

ক) পার্বত্য চট্টগ্রামে শীঘ্রই একটি বেসামরিকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবেকমিশনের রিপোর্টে বর্ণিত এই এলাকায় বর্তমানে নিয়োজিত সামরিক বাহিনী এবং সেনা তৎপরতা মারাত্মকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত এবং এই অবস্থা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন কিংবা শান্তির জন্য কোন পূর্বশর্ত হতে পারে নাস্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি পার্বত্য চট্টগ্রামে বেসামরিকীকরণের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিতএর পেছনে দু'টি কারণ নিহিতবর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী সামরিক ও বেসামরিক উভয় ক্ষমতার মূল ধারকসামরিক বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা হ্রাসের মধ্যে কেবলমাত্র পাহাড়ি জনগণের স্বায়ত্তশাসন অর্জন সম্ভব হতে পারেঅপরদিকে জেলা প্রশাসন কাঠামোর বেসামরিক প্রশাসন সামগ্রিকভাবে গুরুত্বহীনস্বায়ত্তশাসন বেসামরিকীকরণের মধ্যে সম্পর্কিত থাকার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে যে, শান্তি এবং স্থিতিশীলতা কেবলমাত্র তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন পাহাড়ি জনগণ বিশ্বাস করবে যে তাদের ভবিষ্যত নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার তারা পেয়েছেকেবলমাত্র ভূমি অধিকারের নিশ্চয়তা এবং স্বায়ত্তশাসনই ত্রিপুরা থেকে শরণার্থীদের ফিরতে আগ্রহী করবে এবং শান্তিবাহিনীর তৎপরতার অবসান হবে
খ) পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসন হবে কি হবে না তা বিতর্কের বিষয় নয় কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর কেমন স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা ভোগ করা উচিত, সেই ক্ষমতার পরিধি কেমন হবে এবং এই স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার কি বৈধ ভিত্তি থাকা উচিৎ সেটাই বিবেচ্য
এক কেন্দ্রীক রাষ্ট্র ব্যবস্থার দোহাই দিয়ে অতীতের সরকারসমূহ স্বায়ত্তশাসনের যুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলপৃথিবীতে অনেক এককেন্দ্রীক রাষ্ট্র আছে যাদের প্রদেশ কিংবা স্বায়ত্তশাসিত এলাকা রয়েছেসম্ভবতঃ এই প্রেক্ষিতেত ভারতের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভাবা যেতে পারে যেখানে স্বায়ত্তশাসনের চুক্তি সংবিধানের বিশেষ ধারায় সংযোজিত আছেকিন্তু যখন J.S.S./S.B ঐ স্বায়ত্তশাসন এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতার জন্য সাংবিধানিক বিধি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা দাবী করেছে তখনই বাংলাদেশ সরকারসমূহ এই দাবী প্রত্যাখ্যান করেছেবাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে নুতন তিনটি জেলা পরিষদ গঠনের সময় সীমিত স্বায়ত্তশাসনের মধ্য দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থার এই অনিবার্যতাকে মেনে নিয়েছেসংসদীয় আইনের মাধ্যমে জেলা পরিষদসমূহ গঠিত হয়এই জেলা পরিষদসমূহ কিন্তু সাংবিধানিকভাবে সংরতি নয়বাংলাদেশ যদিও আইনগতভাবে একটি এককেন্দ্রীক রাষ্ট্র কিন্তু বাস্তবে আইনের দৃষ্টিতে দেশের সর্বত্র অভিন্ন স্থানীয় সরকার কাঠামোর অস্তিত্ব এখন নেই এবং কখনো ছিল না
স্বায়ত্তশাসন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার শব্দ দু'টি যেহেতু সুস্পষ্ট এবং সহজবোধ্য তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে এগুলি রাজনৈতিক বিতর্কে ব্যবহৃত হয়ে আসছেপার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের মত আঞ্চলিক সংখ্যালঘুদের স্বার্থে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এবং আন্তর্জাতিক আইনে স্বায়ত্তশাসন যুক্তিসঙ্গতভাবে গৃহীত হয়েছেআন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং দেশীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের গ্রুপে স্বায়ত্তশাসন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার উভয় উচ্চারিত হয়ে আসছেপাহাড়ি জনগণ কৌশলগতভাবে দেশীয় সংখ্যালঘু নয়কমিশন এই পাহাড়ি জনগণকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে যেখানে বহিঃশক্তির রাজনৈতিক মতা এবং বর্তমান বহিরাগত বসতির পূর্বেও তারা এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বসবাস করে আসছিলেনকিন্তু কমিশন পাহাড়ি জনগণের এই পরিণতির চূড়ান্ত সমাধানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট নয় বরং পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ কি পরিমাণ যথার্থ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে সে ব্যাপারেই নিবদ্ধ থেকেছে
গ) নুতন জেলা পরিষদসমূহ বাস্তবিক কিছু প্রশাসনিক এবং আইনী ক্ষমতাসম্পন্ন সরকারী সংস্থাতাদের একটি সীমিত মাত্রা পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসন রয়েছেএকজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ পরিষদকে "সীমিত স্বায়ত্তশাসনের প্রতিনিধি" বলে বর্ণনা করেন
স্বায়ত্তশাসন বিভিন্ন ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক সংখ্যালঘু কিংবা জনগণের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন এমন একটি পদ্ধতি যেখানে ঐ সংস্কৃতির সংখ্যালঘুরা নিজেদের অস্তিত্ব এবং উন্নয়ন নিজেরাই নিশ্চিত করেপার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের অস্তিত্ব এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এখন কি পরিমাণ ক্ষমতা ও একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকার যথার্থ হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই সেই জনগোষ্ঠির বিশেষ সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সংগতিপূর্ণ হবেসুতরাং এটাই সুস্পষ্ট যে ভূমির উপর নিয়ন্ত্রণ একটি মৌলিক বিষয়তাই স্বায়ত্তশাসিত সরকারের ভূমি আইনের উপর সাধারণ আইনগত মতা থাকা যুক্তিযুক্তবর্তমান জেলা পরিষদসমূহের কাছে ভূমিহীনদের ভূমি হস্তান্তর অনুমোদন করার ব্যাপারে খুবই সীমিত মতা আছেএই মতা গুরুত্বপূর্ণ বটে, তবে স্বায়ত্তশাসনের ল্য অর্জনে খুবই সামান্যএই ভূমি আইনের উপর সাধারণ কর্তৃত্বের সাথে কৃষি, বন, জুম চাষ এবং পরিবেশগত সংরণ সংক্রান্ত কর্তৃত্বও অন্তর্ভুক্ত
স্বায়ত্তশাসনের দ্বিতীয় ত্রে হচ্ছে শিক্ষাআন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও শিক্ষার উন্মুক্ত সুযোগ থাকতে হবেপ্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে জেলা পরিষদসমূহকে কর্তৃত্ব দেয়ার মাধ্যমেই উপরোক্ত প্রয়োজনীয়তা এই জেলা পরিষদ বিল আংশিক স্বীকার করেছেভূমি অধিকারের জটিল বিষয়ের চেয়ে এটি খুবই সামান্য ব্যাপারশিার মাধ্যমে এবং পাঠ্যসূচীর উপর নিয়ন্ত্রণসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে সাধারণ এক্তিয়ার স্বায়ত্তশাসিত সরকারের অধীনে থাকা উচিৎএটাই ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে সমাজ কল্যাণ কর্মসূচীসমূহ সাংস্কৃতিকভাবে নিরপে নয়, সমাজ কল্যাণ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে জেলা পরিষদসমূহকে কর্তৃত্ব দানের মাধ্যমেই আবার জেলা পরিষদ বিল -এর সত্যতা স্বীকার করেস্বায়ত্তশাসিত সরকারের হাতেই সংস্কৃতি সংক্রান্ত বিষয় হস্তান্তর হওয়া উচিৎ এটাই সাধারণ নিয়ম
ঘ) J.S.S./S.B পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসনিক সংস্থা দৃঢ়তার সাথে দাবী করছেঅথচ সংলাপ কমিটি এবং সরকার তিনটি জেলা পরিষদের ব্যাপারে সম্মত হয়কমিশন বৈদেশিক সংস্থা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারের যৌক্তিকতাকে সুপারিশ করেযেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যা খুবই কম তাই আগামী দিনে জাতীয় সরকারের সাথে কাজ চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে একক স্বায়ত্তশাসিত সরকারই অধিকতর শক্তিশালী হবেপরিকল্পনা এবং উন্নয়নের জন্য এর অবশ্য ব্যাপক উপাদান আছেকমিশন নিজের দৃষ্টিতে এটাকেই উৎসাহিত করেযদিও তিন পরিষদ নাকি আরও অধিকতর পরিষদ থাকবে তা পাহাড়ি জনগণই নির্ধারণ করবেপাহাড়ি, উপজাতি বা আদিবাসী নামকরণ এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা নিতান্তই স্থানীয় ব্যাপারতিন কিংবা ততোধিক পরিষদ থাকার ব্যাপারে অবশ্যই গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবেএকটি কি তিনটি পরিষদের প্রশ্ন একটি রাজনৈতিক বিতর্কের প্রধান বিষয় হয়েছেকমিশন মনে করে স্বায়ত্তশাসনের একক বা একাধিক অঞ্চলের প্রশ্নে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণভোট হওয়া উচিৎএই প্রশ্নে ভোট গ্রহণ কেবলমাত্র পাহাড়ি জনগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ, কারণ স্বায়ত্তশাসনের জন্য তারাই স্বতন্ত্র উপলঅনুপ্রবেশকারী বাঙালিরা এই বিষয় নির্ধারণ ছাড়া অন্য নির্বাচনে অংশ নিতে পারে
ঙ) কমিশন মনে করে জেলা পরিষদের বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি মূলত সন্তোষজনক ছিল নাতখন সুষ্ঠূ ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অবস্থা ছিল খুবই জটিলতাছাড়া এটাই বাস্তব সত্য যে, স্বায়ত্তশাসনের মৌলিক বিষয় এবং ভূমি অধিকারের বিষয়সমূহের নিষ্পত্তি না হলে সেখানে অনুকূল পরিবেশ থাকতেই পারে নাপার্বত্য চট্টগ্রামে বেসামরিক কর্তৃত্ব স্থাপন, শরণার্থী প্রত্যাবর্তন কিংবা সন্ত্রাসী তৎপরতার অবসানের কোন অগ্রগতি সম্ভব হবে না যতণ না পর্যন্ত ভূমি অধিকার এবং স্বায়ত্তশাসন অর্জনে ঐ প্রক্রিয়াসমূহ পাহাড়ি জনগণের মনে সন্তোষজনক হবেপার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন এবং ভূমি অধিকারের প্রশ্ন নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ার জন্য সেখানে রাজনৈতিক স্বাভাবিকীকরণ অবশ্যই জরুরীএর অর্থ এই যে, J.S.S এবং পাহাড়ি বা বাঙালির প্রতিনিধিত্বকারীরা অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সংগঠনসমূহ তাদের কার্যক্রম চালাতে বৈধতা এবং অনুমোদন পাবেসরকারী প্রতিনিধি ও পাহাড়ি জনগণের দেয়া বক্তব্যে কমিশন ধরে নিয়েছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে বসবাসরত পাহাড়ি জনগণের মাঝেই চরমভাবে বৈদেশিক সাহায্য ধারণ করছেএই সমর্থন শুধুমাত্র ত্রিপুরায় কিংবা সেখানের ত্রাণ শিবিরে সীমাবদ্ধ নয়
চ) বর্তমানের জেলা পরিষদ বিলসসমূহ বাংলাদেশের সংসদে পাসকৃত প্রচলিত আইনের পর্যায়েএই আইনসমূহ যে কোন সময় পাহাড়ি জনগণের কিংবা তাদের প্রতিনিধিদের মতামত ছাড়াই বাতিল অথবা সংশোধিত হতে পারেআন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাধারণ আইনের ভিত্তিতে অনেক যথার্থ স্বায়ত্তশাসনের নজির আছেতবুও প্রচণ্ড অবিশ্বাস এবং সহিংস ইতিহাসের আলোকে কমিশন মনে করে যে, এই অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসিত সরকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা থাকা উচিত

মানবাধিকার লঙ্ঘন : -

কমিশনের এই রিপোর্টে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছেপাহাড়ি জনগণ খুন, জখম, ধর্ষণ, অত্যাচার ও গ্রেফতারের শিকার হচ্ছে এবং তারা উচ্ছেদ হচ্ছে নিজের ভিটেমাটি থেকে, বঞ্চিত হচ্ছে জীবন জীবিকার সহজ পথ থেকেতারা বেসামরিক এবং রাজনৈতিক অধিকার থেকে অবহেলিতঅর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত হয়ে আসছে
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়াদি তদন্ত ও তদারকির ক্ষেত্রে বর্তমান আন্তর্জাতিক আইনে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা বড় ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেএই বিষয়সমূহ জাতিসংঘের সংস্থাসমূহে এবং সম্ভাব্য সকল পদ্ধতিতে আলোচিত হয়েছেবিশেষ করে ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইনডিজেনাস পপুলেশন'স-এ এই বিষয়সমূহ আলোচিত হয়েছেইন্টারন্যাশন্যাল লেবার অরগেনাইজেশন বাংলাদেশ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণমূলক সফর সংক্রান্ত বিস্তারিত পরামর্শ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে বার বার তাগাদা দিয়ে আসছেএ ব্যাপারে অনেক বেসরকারী সংস্থাও সক্রিয়ভাবে জড়িত হয়ে কাজ করছে
সাহায্যদাতা দেশসমূহের কমিটিতেও পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়ে আসছেএ ছাড়া বিশেষ বিশেষ রাষ্ট্র যেমন, ডেনমার্ক, জার্মানী ও কানাডার সাহায্য সংস্থার সাথে সরকারী পর্যায়ে এ সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা চলছেকমিশন সকল সাহায্যদাতা দেশ এবং গোষ্ঠীকে আহ্বান করছে যে তাদের দেয়া সাহায্য যেন পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রক্রিয়াকে উসকে না দেয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতেকমিশন সেই সমস্ত সাহায্যের জন্য উৎসাহ যোগাবে যে সাহায্য বেসামরিকীকরণকে ত্বরান্বিত করবে, সমতলে অনুপ্রবেশকারীদের পুনর্বাসনে সাহায্য করবে, সহায়ক হবে স্বায়ত্তশাসনে এবং সাহায্য করবে পাহাড়ি জনগণের নিজেদের মধ্যে উন্নয়ন পদপে গ্রহণে, ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে
কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদেশী পর্যবেক্ষক গমণের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ঢাকার তৎকালীন সরকারের ঐ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও পার্বত্য চট্টগ্রামে খুব বেশী মানবাধিকার লঙ্ঘন হওয়াকে পছন্দ করেননিপূর্বে কমিশন যেমন প্রত্য করেছে যে অনেক পাহাড়ি জনগণ নিজেদের নিপীড়নমূলক অবস্থা থেকে রা করতে স্থানীয় সরকার এবং সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে মাথা নত করত নাঅন্য যে সমস্ত প্রতিবন্ধক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা অনুধাবনে বাধা দিয়েছে সেগুলি হচ্ছে বাংলাদেশের অস্থিতিশীল রাজনীতি, ইতিহাস এবং পর্যায়ক্রমিক মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগএ সমস্ত কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সার্বিক নীতি নির্ধারণ স্থানীয় সামরিক বাহিনীর হাতেই থেকে যায়
পার্বত্য চট্টগ্রামে সফরের সময় কমিশন অহরহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেকমিশন মনে করে বাংলাদেশের আইনের দৃষ্টিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সংক্রান্ত পর্বত প্রমাণ অনিয়ম হয়েছেকমিশন মনে করে আঞ্চলিক সংস্কৃতির সংখ্যালঘুদের স্বায়ত্তশাসনের পদ্ধতি হিসেবে বর্তমান জেলা পরিষদ ব্যবস্থা অপর্যাপ্তএই সমস্ত সমস্যার প্রতিকার সহজ নয় এবং অনিবার্যভাবে কিছু সময়ের প্রয়োজনএর মধ্যে সেখানে উন্নয়নের সুযোগ করে দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাই উত্তমএটি অবশ্যই বর্তমান আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব নয়জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত কমিশন সাময়িক কিংবা স্থায়ী ভিত্তিতে সবিশেষ যোগাযোগ রার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের নামোল্লেখ করেছেকমিশন শক্তিশালী বেসরকারী সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার উপর বিশেষ যোগাযোগ রার উদ্দেশ্যে অব্যাহতভাবে অনুসন্ধান এবং পরামর্শমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর সুপারিশ করছে
-রাডার

পাতা : ২০-২১

সশস্ত্র সংগ্রাম যদি ব্যাপক জনগণকে সংগঠিত করে তাঁদের সমর্থনের ভিত্তিতে সংগঠিত হয় তাহলে তা নিশ্চয়ই সমর্থন করা দরকার
একান্ত সাক্ষাৎকারে বদরুদ্দীন উমর

[হিল লিটারেচার ফোরামের প থেকে দুই সহকর্মী এই সাৎকার গ্রহণের আগের দিন টি.এস.সি-তে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব বদরুদ্দীন উমরের সাথে সৌজন্য সাৎ করেন। "রাডার" -এ প্রকাশের জন্য সাৎকারের প্রস্তাব দিলে তিনি নির্দ্ধিধায় সম্মতি দেন এবং পরের দিন হাটখোলাস্থ রোডে তার বাসায় আমন্ত্রণ জানানযথাসময়ে পর দিন অর্থাৎ ৩/৯/৯১ ইং তার লিখিত সাৎকার নেয়া হয়তিনি প্রশ্নগুলির উত্তর মুখে মুখে বলে যান এবং বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য জনাব ফিরোজ আহসান তা লিখে সাহায্য করেনআটটি প্রশ্ন সম্বলিত তার সাৎকার আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে প্রকাশ করলাম।]

রাডার : পার্বত্য চট্টগ্রামের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন সম্পর্কে মন্তব্য করুনজুম্ম জনগণের স্বায়ত্তশাসনের দাবীকে কি আপনি ন্যায্য মনে করেন?
বদরুদ্দীন উমর : পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী জুম্ম জনগণ যেহেতু বাঙালি নন এবং সেখানে কিছু সংখ্যক অন্যান্য জাতিসত্তার অধিবাসীরাই দীর্ঘ দিন ধরে সেই এলাকায় বসবাস করে আসছেন, তাঁদের ভাষাগত, সংস্কৃতিগত স্বাতন্ত্র্য আছে সেজন্য তাঁদের স্বায়ত্তশাসনের ও আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবী ন্যায়সঙ্গত বলেই আমরা মনে করি
রাডার : বাংলাদেশ সরকারের নিকট পেশকৃত জনসংহতি সমিতির পাঁচ দফা দাবীনামা এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পাঁচ দফা দাবী সম্পর্কে অবগত আছেন কি? যদি অবগত থাকেন তবে এ দাবী সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
বঃ উঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পাঁচ দফা এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পাঁচ দফা দাবীর সাথে আমরা পরিচিত এবং এই দাবীগুলি সাধারণভাবে গণতান্ত্রিক এবং সেজন্য এ দাবীগুলি সাধারণভাবে আমরা সমর্থন করি
রাডার : পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র আন্দোলন সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?
বঃ উঃ সশস্ত্র আন্দোলন সম্পর্কে কিছু বলার সময় যেটা প্রাসঙ্গিকভাবে বিবেচনা করা দরকার সেটা হলো সেই সংগ্রাম জনগণের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একটি বিশেষ রূপ অথবা কোন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কিনাকারণ কোন জনবিচ্ছিন্ন সশস্ত্র কার্যকলাপ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সহায়ক হতে পারে নাকিন্তু সশস্ত্র সংগ্রাম যদি ব্যাপক জনগণকে সংগঠিত করে তাঁদের সমর্থনের ভিত্তিতে সংগঠিত হয় তাহলে তা নিশ্চয়ই সমর্থন করা দরকারএবং এ ধরনের সংগ্রাম আমরা সমর্থন করে থাকিএখানে আরেকটি বিষয়ে বিবেচনা অবশ্যই করা দরকার যে, বিশ্বের কোন এলাকাতেই জনগণ প্রথমে অস্ত্র ধারণ করেন নাতাঁরা অস্ত্রধারণ করেন এমন অবস্থায় যখন শোষক শাসক শ্রেণী তাঁদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করে এবং অব্যাহত রাখেএ কথা সকলেরই জানা যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশাল সামরিক উপস্থিতি রয়েছেএই উপস্থিতির কারণ হিসেবে সেখানকার সশস্ত্র সংগ্রাম এবং তাকে দমন করার জন্য সরকারী প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়ে থাকেকিন্তু আসল ব্যাপার যে সেটা হতে পারে না তা বলাই বাহুল্যপ্রথম থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হওয়ার ফলে সামরিক বাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়নিউপরন্তু সরকারী প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর নির্যাতন ও হামলা প্রতিরোধের জন্যই পাল্টা হিসেবে সেখানে সশস্ত্র সংগ্রামের শর্ত সৃষ্টি হয়েছেএভাবে বিষয়টিকে দেখলে পরিষ্কার বোঝা যাবে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগ্রাম যেভাবে চলছে সেটা সরকার যদি বন্ধ করতে চায় তাহলে যে কারণে এই সশস্ত্র সংগ্রামের উদ্ভব ঘটেছে সে কারণগুলি দূর করতে হবেঅর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসনিক নির্যাতন বন্ধ এবং সামরিক বাহিনীর যে ধরনের উপস্থিতি রয়েছে সে উপস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে
রাডার : বিদ্যমান রাষ্ট্রযন্ত্রের অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার কতটুকু সমাধান সম্ভব?
বঃ উঃ বিদ্যমান রাষ্ট্রযন্ত্রের অধীনে অর্থাৎ বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক সম্পর্কগুলি বজায় রেখে বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে জনগণেরই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়বিগত নির্বাচনের পর গণতান্ত্রিক সরকার নামে যে সরকারটি এখন মতায় রয়েছে তাদের সঙ্গে এরশাদের সামরিক সরকারের যে কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই সেটা ইতিমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গেছে কারণ এরাও এরশাদের সামরিক শাসন আমলের আর্থ-সামাজিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং সেই রাষ্ট্র যন্ত্রকেই ব্যবহার করছে
সমগ্র বাংলাদেশের যখন এই অবস্থা তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের পে এঁদের থেকে সহজভাবে কিছু আশা করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেইএই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্যে সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের এবং তাঁদের একটি অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের হাতেও রাষ্ট্র মতা আসা দরকারএবং এর জন্য দরকার এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন
রাডার : আপনার মতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘুদের জাতীয় অস্তিত্ব কিভাবে সংরতি হতে পারে?
বঃ উঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলির নিজস্ব সংস্কৃতি, আর্থিক জীবন, সামাজিক জীবন ইত্যাদি সংরণের জন্য তাঁদের সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি বজায় রেখেই সেই অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নতি সাধনের জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার
রাডারঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে পুনর্বাসিত বাঙালিদের প্রত্যাহার এবং তাদের কর্তৃক বেদখলকৃত জমি পাহাড়ি জনগণের নিকট ফেরত দেয়ার দাবী সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?
বঃ উঃ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেভাবে হিলট্র্যাক্টস রেগুলেশন ১৯০০ বাতিল করে অবাধে এবং কৃত্রিমভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের এলাকা বহির্ভূত লোকজনদের বসতি সেখানে স্থাপন করা হয়েছে তার দু'টি দিক আছেপ্রথমতঃ এবং মূলতঃ এর উদ্দেশ্য হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের আদি অধিবাসীদেরকে সংখ্যালঘুতে অথবা প্রায় সংখ্যালঘুতে পরিণত করা এবং তাঁদের উপর প্রথমদিকে পাকিস্তানী এবং ১৯৭১ সালের পর বাঙালিদের উগ্র জাতীয়তাবাদী আধিপত্য কায়েম করাদ্বিতীয়তঃ এই কাজ করার উদ্দেশ্যে যাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে তাঁরাও হলেন বাঙলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের জমি থেকে উৎখাত হওয়া লোকজনদারিদ্র্যের চাপেই এরা জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র বসতি স্থাপনের মতো অবস্থায় পড়ার কারণেই সরকার কর্তৃক তাঁদেরকে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছেএ বিষয়টি মনে রেখে একদিকে যেমন এ ধরনের বহিরাগত লোকদের অবাধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে অন্যদিকে তেমনি ইতিমধ্যে পুনর্বাসিত যে সমস্ত বহিরাগতরা পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছে তাঁদের জন্য জমিজমা অথবা বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে তাঁদের অধিকাংশকেই সেখান থেকে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে
রাডার : পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশের বামপন্থী দলগুলোর কর্তব্য কি বলে আপনি মনে করেন?
বঃ উঃ বাংলাদেশের বামপন্থী নামে পরিচিত যে দলগুলি আছে তাঁদের কি কর্তব্য সেটা তাঁরাই জানেনআমাদের ঠিক জানা নেইতবে আমাদের কি কর্তব্য, আমাদের দেশে যে কোন গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী সংগঠনের কি কর্তব্য সে সম্পর্কে সংক্ষেপে শুধু এটুকুই এখানে বলা যেতে পারে যে, আমরা যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের সাধারণ ও তাঁদের কতকগুলি সুনির্দিষ্ট অধিকার স্বীকার না করি এবং সেই দাবীগুলি অর্জনের সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান না করি তাহলে সারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী সংগ্রাম সঠিকভাবে সংগঠিত ও পরিচালনা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে নাএর মূল কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণও সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সেই হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের প্রকৃত মুক্তির সংগ্রাম, শোষণ নির্যাতন থেকে মুক্তির সংগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রকৃত মুক্তির সংগ্রাম, তাঁদের শোষণ মুক্তির সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিতবাঙালি উগ্র জাতীয়তাবাদের বশবর্তী হয়ে যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার বৈশিষ্ট্যগুলিকে অস্বীকার করে তাঁদের উপর শোষণ নির্যাতন অব্যাহত রাখলে তাদের দ্বারা বাঙালি জনগণের মুক্তি অর্জন তো সম্ভবই নয়, এমনকি বাঙালি জনগণের নিম্নতম স্বার্থ রা করাও সম্ভব নয়শেখ মুজিবের আওয়ামী-বাকশালী আমল থেকে খালেদা জিয়ার বর্তমান "গণতান্ত্রিক" সরকারের আমল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের অনুসৃত নীতির মাধ্যমেই এই সত্যটি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছেআমরা মনে করি সাধারণভাবে বাঙালি জনগণেরও এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের দাবী দাওয়াকে নিজেদের গণতান্ত্রিক দাবী দাওয়ার সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে দেখে তাঁদের দাবী দাওয়ার প্রতি সমর্থনের জন্য সোচ্চার হওয়া তাঁদের নিজেদের স্বার্থেই প্রয়োজন
রাডার : পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের ঘোষণা ও কর্মসূচী কি?
বঃ উঃ শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিষয়ই নয়, সামগ্রিকভাবে জাতিগত, ভাষাগত ইত্যাদি সংখ্যালঘু জনগণের অধিকার ও সংগ্রাম সম্পর্কে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট প্রতিষ্ঠার সময় ৯ই জানুয়ারী ১৯৮৭ তারিখে ২০ দফা কর্মসূচীর ১৯ নং দফায় যা গৃহীত হয়েছিলো তা হল, "পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সংখ্যালঘুদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং ময়মনসিং, দিনাজপুর, রাজশাহী, পটুয়াখালী ইত্যাদি অঞ্চলে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিসত্তার উপর এবং ভাষাগত সংখ্যালঘুদের উপর উগ্র জাতীয়তাবাদী শোষণ ও নির্যাতন প্রতিরোধ করা, তাঁদের স্ব স্ব জাতিসত্তা ও ভাষাগত বিকাশে সহায়তা করা।" -রাডার

পাতা : ২২-২৩

দিনের পর দিন
মিঃ অপ্রিয়
অতি সম্প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়নে ওলট-পালট কাণ্ড ঘটে গেলোগর্বাচেভের গ্লাসনষ্টের (গ্লাসনস্ত) পাল্লায় পড়ে রাশিয়া আর কতদূর যাবে কে জানে
বিপ্লব মনে মনে ভাবছেতাহলে কি সেই ইংরেজ লেখকের কথাটাই ঠিক “The world is a stage, men and women are actors and actresses.” দুনিয়ার রঙ্গমঞ্চে মানুষেরা অভিনয় করে যাচ্ছেআমরা বুঝি দর্শকঅভিনয় দেখছি
কত বিচিত্র মানুষজনকত বিচিত্র কাজ কারবার তাদের! কত ঘটনা, দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছেল্যাটিন আমেরিকা থেকে শুরু করে এশিয়া আফ্রিকাসহ সারা দুনিয়া জুড়েযেমন ঘটে গেলো সম্প্রতি রাশিয়ায়
"পার্বত্য চট্টগ্রাম"বাংলাদেশের তো বটেইদক্ষিণ এশিয়ারও এক অশান্ত-বিক্ষুদ্ধ অঞ্চলএকটি অবহেলিত-উপেক্ষিত জনপদের নামসে তো আরো অদ্ভুত! ভয়ঙ্কর!! যেখানে নিঃশ্বাস ফেলতেও কষ্টপ্রচণ্ড নরক যন্ত্রণায় ভুগছে ছয় লাখ পাহাড়ি জনতাএক মুহূর্তেরও কোন নিশ্চয়তা নেইপ্রতি পদে পদে লাঞ্ছিত হবার ভয়জীবন হারাবার আশঙ্কাসরলপ্রাণ পাহাড়িরা সদা ভীত-ত্রস্তCHT Commission -এর রিপোর্টটিতে পাহাড়িদের করুণ আকুতি যথার্থই প্রকাশ পেয়েছে “Life is not ours. আসলে পার্বত্য চট্টগ্রামে তো পাহাড়িদের বেঁচে থাকাটাই দায়প্রতিনিয়তই লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে
বিপ্লব এসব কথা ভেবে বিষণ্ন হয়ে পড়েছেনির্মম, বিক্ষোভ আর মুক্তিদের কথা ভেবে সে উদ্বিগ্নঅনেকদিন তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ নেইপার্বত্য চট্টগ্রামে থাকলে নির্ঘাত হেনস্তা হবেরাজধানীর কোলাহলময় পরিবেশে তাদের কথা কতটুকুই বা জানা যাবেমুক্তিদের খবর জানতে বিপ্লব উৎসুক হয়ে পড়েছেসহসা মুক্তিকে রিং করলো
ওপাশ থেকে মুক্তির মৃদু স্বর ভেসে এলোঃ
"ওহ! বিপ্লবকতদিন পরকিছু শুনেছো?"
"তা শুনবো কি করেআবার কিছু হয়েছে?" বিপ্লবের কৌতুহল আর চাপা উত্তেজনা
"আবার কিছু মানে", মুক্তি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, "আমরা বড়ই অভাগাআমাদের মেরে ফেলতে পারলেই যেন সরকারের আনন্দবেঁচে থাকার কোন অধিকার আমাদের নেইযেন অপরাধইদানিং সুপরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে উৎপাদিত ধান-চাল বাইরে পাচার করে কিছু কিছু জায়গায় কৃত্রিম দুর্ভি সৃষ্টি করা হচ্ছেযাতে না খাইয়ে নিরীহ সহজ সরল মানুষকে মেরে ফেলা যায়ধান-চালসহ সমস্ত খাদ্য দ্রব্যের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছেএতে বরকল, জুড়াছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়িসহ অনেক জায়গায় কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছেঅতিসম্প্রতি মহালছড়িতে না খেয়ে দু'জন মারা পড়েছেনা খেয়ে মরার ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে নজিরবিহীনযা কিছু ঘটুক, পার্বত্য চট্টগ্রামে দুর্ভিরে কথা কোনদিন শোনা যায়নিসেখানে আজ কৃত্রিম দুর্ভি সৃষ্টি করা হচ্ছেমানুষকে না খাইয়ে রেখে মেরে ফেলা হচ্ছেসভ্য দুনিয়ায় এর চাইতে অসভ্য কাজ আর জঘন্য অপরাধ কি হতে পারে?
শুধু কি তাই? নির্বিচারে মানুষকে খুন করা হচ্ছেআমরা পাহাড়িরা যেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নামে ডক আবদ্ধ খাঁচায় বাস করছিছাগল-মুরগীর মতো ধরে নিয়ে যখন যাকে খেয়ালখুশী জবাই করা হচ্ছেসবাই নির্বিকারযেন জীব জন্তু হয়ে গেছেকোন প্রতিকার নেইএই তো গত মে মাসে কাউখালী উপজেলার মিদিঙ্যাছড়িতে নিরীহ চাষা কাশীরাম চাকমাকে মেরে ফেলা হয়েছেএসবের কোন প্রতিকার নেইকবে যে আমরা দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবো !
দেশে কত কিছু হয়ে গেলোস্বৈরাচার পতনসংসদ নির্বাচনসংসদীয় সরকার গঠনসম্প্রতি হতে যাচ্ছে গণভোটকিন্তু কি হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে? আচ্ছা বিপ্লব এই জেলা পরিষদ দিয়ে কি কিছু হচ্ছে?"
"নাকিছুই নাশুধু পুতুল নাচ চলছেনানা রঙে, নানা ঢঙে -- তার ইয়ত্তা নেইআমরা উপভোগ করছি।"
"পুতুল নাচ" মানে? কথাটি ঠিক মুক্তি বুঝে উঠতে পারেনি
"মানে আবার কিসেই ছোট বেলায় পুতুল নাচ দেখোনি? কতকগুলো পুতুলকে সূতোয় বেঁধে পর্দার আড়াল থেকে নাচাতোবাঁশির সুরে সুরে পুতুলের কথা বলে দিতোআরো কত কি ... ...ছোটবেলায় সেসব দেখে বেশ মজা পেতামপুতুলের কাণ্ডকারখানা দেখে হাসতে হাসতে পেটে কিল ধরতো
সেই ছোটবেলায় যে পুতুল নাচ দেখেছি, আজও কি তার কোন ব্যতিক্রম আছে? শুধু কিছু দৃশ্যপট বদলেছেপ্লাস্টিকের পুতুলের বদলে জ্বলজ্যান্ত মানুষগুলোই পুতুল সেজেছেপর্দার আড়াল থেকে জমকালো ভুতগুলো সূতো টানছেআর মনুষ্য পুতুলগুলো হরদম নাচতেছে।"
হো-হো হেসে মুক্তি বলে উঠলো, “Exactly, Exactly. এতণেই সে কথাটি বুঝতে পেরেছে
আসলে ঐ খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি আর বান্দরবানের জেলা পরিষদগুলোতো পুতুল নাচানোর এক একটা যাত্রা প্যাণ্ডেললজ্জা শরমের মাথা খেয়ে সুবিধাবাদীরা রঙ বেরঙের পুতুল সেজে আছেনাচ-গান-যাত্রায় মেতে উঠেছেএকযোগে 'শান্তি আর উন্নয়নের' জারীগান গাইছেকখনো কখনো 'মিটিং মিটিং' খেলে দিব্যি প্রলাপ বকে যাচ্ছেতাদের নাচে-গানে মুগ্ধ হয়ে ভুতগুলো দেদার বখশিস দিচ্ছেআর উচ্ছিষ্টের লোভে কাঙালের মতো কিছু ভণ্ড যাত্রা প্যাণ্ডেলে ঘুরপাক খাচ্ছেজীবনে কত কি দেখলামবেঁচে থাকলে আরো কি দেখবো কে জানেতবে মনুষ্যত্বহীন কাজ কারবারের জঘন্যতা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।"
"আচ্ছা মুক্তি গুচ্ছগ্রামের কথা কিছু শুনেছো?" বিপ্লবের প্রশ্ন
"সেকথা আর বলো নামানুষের কি দুঃখের শেষ আছে! নিজ বাস্তুভিটা থেকে জোর করে উৎখাত করা হচ্ছেগরু-মহিষের মতো তাড়িয়ে নিয়ে গুচ্ছগ্রাম, শান্তিগ্রাম, বড়গ্রাম নামের বন্দীশালায় জড়ো করা হচ্ছেএই কুকর্মের পেছনে তো রঙ বেরঙের দালালরাই দায়ীমানুষকে দুঃখ-দুর্দশায় ফেলে দিয়ে তারা মহা আনন্দে বিলাসীতার সাগরে গা ভাসিয়ে দিচ্ছেআর হতভাগ্য মানুষেরা নিজের জায়গা-জমি হারিয়ে চাষ-বাস করতে না পেরে নিঃস্ব, সর্বহারাঅনাহারে, অর্ধাহারে, রোগে-শোকে ঢুঁকে ঢুঁকে মরছে ঐ গুচ্ছগ্রামের বন্দীশালায়যারা পালাতে পেরেছে দেশ ছেড়ে, তারা তো বেঁচে গেছেযারা পালাতে পারেনি, তারাই গুচ্ছগ্রামের বন্দীশালায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে।"
"জানো মুক্তি সবকিছুর একটা শুরু আছে এবং শেষও আছেমানুষের দুঃখের দিনগুলো একদিন শেষ হবেই।" বিপ্লব মুক্তিকে বললো, "এই যে শত শত নিরীহ শিশু-আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা গুচ্ছগ্রামের বন্দীশালায় ঢুঁকে ঢুঁকে মরছে, -- আজ তুমি তাদের চোখে পানি দেখছো, তাদের গ্লানির দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাচ্ছোকিন্তু তাদের অন্তরে যে নীরবে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে, -- তা শুধু তারাই জানেতারা একদিন জেগে উঠবেদুনিয়া টলমল করে ছাড়বে
যারা আজ তাদের চোখে পানি ঝরাচ্ছে, তারা একদিন তাদের হাসি কেড়ে নেবেগুচ্ছগ্রাম, শান্তিগ্রাম, বড়গ্রাম নামের যতোসব বন্দীশালা ভেঙ্গেচুরে ফেলে তারা বেরিয়ে আসবেনিজেদের বন্দীশালার দশা থেকে মুক্ত করবেফিরে যাবে নিজেদের সেই বিধ্বস্ত আবাসভূমিতেআবার গড়বে নতুন করেদুনিয়ায় তাদের বেঁচে থাকতে হবে মানুষের মতো করেআমি তাদের বিজয় কামনা করে আজকের মতো “Goodbye” বিপ্লব ফোন রেখে দিলো
-রাডার

------------------------
* রাডার ছাত্র সমাজের মুখপত্রজন মানুষের কণ্ঠস্বর
এই রাডার বাঁচিয়ে রাখতে আপনিও সোচ্চার হোন

* রাডার ভালো লাগলে বন্ধুদের বলুন,
আর ভালো না লাগলে আমাদের বলুন

* আমরা ঘোষণা দিচ্ছি -- আমাদের সমালোচনা করার অধিকার
                                     সবার
                                     মত-পথ নির্বিশেষে আমাদের সমালোচনা
                                     করার আহ্বান জানাচ্ছিপাশাপাশি
                                     আমরাও আমাদের লেখার অধিকার
                                     চাই

* রাডার আপনার কথা বলবে, আপনার কথা বলতে
রাডারকে বাঁচিয়ে রাখুন
* রাডার কিনুন, রাডার কেনাও একটা সহায়তা
-------------------------------

পাতা : ২৪

শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের
যে কোন সংগ্রাম, আন্দোলনের নির্ভীক উপস্থাপক

জনযুগ

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন,
শোষণ, হস্তেক্ষেপের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত নির্যাতিত জাতিসমূহ
জনগণের বলিষ্ঠ মুখপত্র

জনযুগ

সামরিক, বেসামরিক স্বৈরাচার ও মৌলবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক
আন্দোলনের স্বপক্ষে সোচ্চার কণ্ঠস্বর

জনযুগ

স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও বস্তুনিষ্ঠ জাতীয় পাক্ষিক
জনযুগ

মূল্য : ৫.০০ টাকা মাত্র




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন