পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৩ মে, ২০১৭

রাডার বিজয় দিবস সংখ্যা (সম্পূর্ণ)


* পিডিএফ কপি পেতে ক্লিক করুন এখানে

[ব্লগ সম্পাদকের নোট: রাহুমুক্তি সংখ্যা আপলোড করার দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর  অবশেষে রাডারের বিজয় দিবস সংখ্যা তুলে দেয়া সম্ভব হলো। নানা কারণে এতদিন এ বিষয়ে কাজ করা যায়নি, এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

রাহুমুক্তি সংখ্যার পরই ১৯৯১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। অনিয়মিত ম্যাগাজিনটির ৩২-পৃষ্ঠার এই সংখ্যাটিও অন্যান্য সংখ্যাগুলোর মতো সে সময় ব্যাপক প্রাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছিল। আমরা এখানে এই সংখ্যার সব লেখা আগা থেকে গোড়া বহুবহু তুলে দিয়েছি। কিছু বানান সংশোধন করা ছাড়া কোন লেখা এডিট করা হয়নি। আশাকরি লেখাগুলো এ সময়ের পাঠকদেরও ভালো লাগবে।]


রাডার
হিল লিটারেচার ফোরামের একটি অনিয়মিত প্রকাশনা
১৬ই ডিসেম্বর’৯১
বিজয় দিবস সংখ্যা


বিজয় দিবস ও আজকের বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্র ও জনগণের প্রত্যাশা

তথাকথিত কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি পার্বত্য জনগণের দুর্ভোগ

খালেদার প্রতি CHT Commisson -এর চিঠি

এম. এন. লারমাকে যেমন দেখেছি

পেরুর গণযুদ্ধই বিশ্ব বিপ্লবের নতুন অগ্রযাত্রা

তিন জন ছাত্র নেতার সাক্ষাতকার


পৃষ্ঠা - ২

চিঠি পত্র

“রাডার”-কে অভিনন্দন
প্রিয় সম্পাদক,
নিপীড়িত নির্যাতিত জুরাছড়ি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে ও “রাডার” প্রকাশনা কমিটিকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি। রাডারের “রাহুমুক্তি” সংখ্যা আমার খুব ভালো লেগেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান দঃসময়ে আপনাদের এই সাহসী পদক্ষেপকে আমি স্বাগত জানাই। আমাদের ছাত্র সমাজকেই জেগে উঠতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে। “রাডার” জুম্ম ছাত্র সমাজের মধ্যে সংগ্রামী চেতনার অগ্নিমশাল জ্বেলে দিক -এ কামনা করছি।                                                                                                       
জে. পি. চাকমা / জুরাছড়ি।

“আমরাও আছি রাডারের প্রতিবাদী ব্যানারে”
কাপুরুষের মতো সব সহ্য করছি আমরা। দেখেও না দেখার ভান করছি, শুনেও না শুনার মতো, জেনেও না জানার মতো অভিনয় করছি। যেন সবাই নির্জীব জড় পদার্থ হয়ে গেছি। সব সওয়া হয়ে গেছে আমাদের। কখনো শান্তিবাহিনীর লেবাস দিয়ে, কখনো তাদের সাথে গোপন সম্পর্ক থাকার সন্দেহে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় আমাদের ওপর। বিনা পারিশ্রমিকে রুটিন মাফিক প্রতিদিন বেগার খাটতে হয় সেনা ক্যাম্পে। বিশ্রী গালিগালাজ, কটুক্তি-সেতো কিল, ঘুষি আর বুটের লাঠির তুলনায় ভদ্র ব্যবহারই বটে। তবুও যেন হয়রানীর শেষ নেই। সারাদিন খাটুনির পর অবসন্ন দেহ এলিয়ে দিয়ে একটু নিরিবিলি ঘুমোবার যো নেই। স্যারদের হুকুম, পাহারা দিতে হবে সারা রাত - যাতেশান্তি সেনারা ক্যাম্প এট্যাক করতে না পারে।                                                    
কিন্তু আর কতদিন সহ্য করবো আমরা? চিরদিন কি হুকুমের গোলাম হয়ে থাকা ?   
শেষে রাডারকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি - এসব মধ্যযুগীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিবাদের জন্য। ভয় নেই। এগিয়ে চলো। আমরাও আছি “রাডার”-এর প্রতিবাদী ব্যানারে।                                                                          
রাসেল / খাগড়াছড়ি।

“চলার পথের সঙ্গী হতে চাই”
সংগ্রামী সম্পাদক, অভিনন্দন।                                                                                       
“কন্ঠরুদ্ধ কোন সুগায়কের অমর কবিতা
নিজেই প্রকাশ করে - আমি যেন তার
সুধা কন্ঠ হই, সুধা কন্ঠ হই।
রক্তিম যেন এক উত্তাপ হই।”
আপনারা কন্ঠরুদ্ধ পারিজাত ধবল মনের অধিকারী পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাসমূহের মনের কবিতা প্রকাশ করেছেন। প্রতিবাদ করেছেন অন্যায় অত্যাচারের। তাই আপনাদের রক্তিম উত্তাপের সাথে আমার মনের রক্তিম উত্তাপ আমি মিশিয়ে দিতে চাই। আমি আপনাদের চলার পথের সঙ্গী হতে চাই। হোক সে দুর্গম, বন্ধুর।
আমি “রাডার”-এর রিপোর্টার কিংবা সংবাদাতা হতে চাই। যদি হতে পারি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবো।
প্রদীপ তালুকদার / রাউজান।

“সংবাদাতা হতে আগ্রহী”
প্রিয় সম্পাদক
আমি পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার একজন জুম্ম জাতির সদস্য। সম্প্রতি প্রকাশিত “রাডার” -এর রাহুমুক্তি সংখ্যা পেয়েছি। আপনাদের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে “রাডার” -এ সংবাদাতা হতে ইচ্ছুক। পাহাড়ি জনগণ তথা জুম্ম জাতির সুখ-দুঃখ, নিপীড়ন, নির্যাতন ও শোষণের কথা দেশবাসীর সম্মুখে তুলে ধরার লক্ষ্যে আপনাদের অন্যতম প্রকাশনা জুম্ম মুক্তির পথ “রাডার” -এর সংবাদাতা হিসেবে যথাসাধ্য দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেলে আমার মানব জীবন স্বার্থক বলে মনে করবো।
মানিক ত্রিপুরা (মথুরা) / মাটিরাঙ্গা।

“রাডার” পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে
প্রতিবাদের আলো ছড়িয়ে দিক”

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, “রাডার”                                                                                                                       শুভেচ্ছাসহ লিখছি। আপনাদের প্রকাশিত ২৫ শে সেপ্টেম্বর ’৯১ -এর “রাহুমুক্তি সংখ্যা” পেয়েছি। পার্বত্য অঞ্চলের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে এ ধরনের আলো ছড়িয়ে পড়–ক এটাই আমরা চাই। কিন্তু একটা বড় পরিতাপের বিষয় যে, এযাবত যে সব সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল, এবং যত সংখ্যা পাঠিয়েছিলেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। যার কারণে গ্রামের ব্যাপক জনসাধারণের কাছে পৌছানো সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র কয়েকজন শিক্ষিত ব্যক্তি এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ভেতর সীমাবদ্ধ ছিল। সেজন্য আমি “রাডার” প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেসব আলো ছড়িয়ে দেবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এজেন্ট এবং সংবাদাতা হতে আগ্রহী। পরিশেষে আপনাদের পত্রিকার বহুল প্রচার কামনা করছি। 
সুভাষ দত্ত চাকমা / মারিশ্য।

“এখন আর জনগণ সেনাবাহিনীর আশ্রয় চায় না”
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক “রাডার”,  
শুভেচ্ছা নিবেন। গত ২৫শে সেপ্টেম্বর ’৯১ - এ প্রকাশিত “রাডার” আমার খুব ভাল লেগেছে। প্রত্যেকে চায় অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। তাই আমাদের শিক্ষিত ছাত্র সমাজকেই এই প্রতিবাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এত কিছু অন্যায় অবিচার হওয়া সত্ত্বেও আমরা নিরবে নিস্তব্ধে বসে আছি। তারা (সেনাবাহিনী) আমাদেরকে পুতুলের মত ব্যবহার করছে। আপনারা হয়ত জানেন, জুরাছড়ির মত উশৃংখল উপজেলা হয়ত অন্য কোথাও নেই। এ এলাকার জনগণকে সেনাবাহিনীরা দু’বছর আগে “গুচ্ছগ্রাম” নামক বন্দীশালায় বন্দী করে রেখেছে। সেনাবাহিনীরা যাকে তাদের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেছে বলে দাবী করে। কিন্তু এ এলাকার জনগণ আর সেনাবাহিনীর আশ্রয় চায় না। যেতে চায় তাদের নিজ নিজ বাসস্থানে। এখানে আগে অনেক নির্যাতন নিপীড়ন হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো আমার মনে নেই। কারণ তখন আমি ছোট ছিলাম। আমি এখনও অংকুরিত বীজ মাত্র। আমাকে বলতে আমার মত তরুণদেরকে যদি আপনারা শিক্ষা দেন তাহলে আমরাই একদিন জাতিকে শিক্ষা দেবো। আমি এখনও মাত্র ১৫ বছরে পা দিয়েছি। এই পনেরটি বসন্ত যেন পার্বত্য এলাকার নির্যাতনের স্বাক্ষী। পরিশেষে “রাডার” পরিবারের শুভ কামনা করে-

জয় গোপাল চাকমা / জুরাছড়ি।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা), কভার পৃষ্ঠা

রাডার
হিল লিটারেচার ফোরামের একটি অনিয়মিত প্রকাশনা
১৬ই ডিসেম্বর৯১
বিজয় দিবস সংখ্যা

 
বিজয় দিবস ও আজকের বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্র ও জনগণের প্রত্যাশা

তথাকথিত কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি পার্বত্য জনগণের দুর্ভোগ

খালেদার প্রতি CHT Commisson -এর চিঠি

এম. এন. লারমাকে যেমন দেখেছি

পেরুর গণযুদ্ধই বিশ্ব বিপ্লবের নতুন অগ্রযাত্রা

তিন জন ছাত্র নেতার সাক্ষাতকার

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা - ২, চিঠি পত্র

চিঠি পত্র

“রাডার”-কে অভিনন্দন
প্রিয় সম্পাদক,
নিপীড়িত নির্যাতিত জুরাছড়ি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে ও “রাডার” প্রকাশনা কমিটিকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি। রাডারের “রাহুমুক্তি” সংখ্যা আমার খুব ভালো লেগেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান দঃসময়ে আপনাদের এই সাহসী পদক্ষেপকে আমি স্বাগত জানাই। আমাদের ছাত্র সমাজকেই জেগে উঠতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে। “রাডার” জুম্ম ছাত্র সমাজের মধ্যে সংগ্রামী চেতনার অগ্নিমশাল জ্বেলে দিক -এ কামনা করছি।                                                                                                       
জে. পি. চাকমা / জুরাছড়ি।

“আমরাও আছি রাডারের প্রতিবাদী ব্যানারে”
কাপুরুষের মতো সব সহ্য করছি আমরা। দেখেও না দেখার ভান করছি, শুনেও না শুনার মতো, জেনেও না জানার মতো অভিনয় করছি। যেন সবাই নির্জীব জড় পদার্থ হয়ে গেছি। সব সওয়া হয়ে গেছে আমাদের। কখনো শান্তিবাহিনীর লেবাস দিয়ে, কখনো তাদের সাথে গোপন সম্পর্ক থাকার সন্দেহে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় আমাদের ওপর। বিনা পারিশ্রমিকে রুটিন মাফিক প্রতিদিন বেগার খাটতে হয় সেনা ক্যাম্পে। বিশ্রী গালিগালাজ, কটুক্তি-সেতো কিল, ঘুষি আর বুটের লাঠির তুলনায় ভদ্র ব্যবহারই বটে। তবুও যেন হয়রানীর শেষ নেই। সারাদিন খাটুনির পর অবসন্ন দেহ এলিয়ে দিয়ে একটু নিরিবিলি ঘুমোবার যো নেই। স্যারদের হুকুম, পাহারা দিতে হবে সারা রাত - যাতেশান্তি সেনারা ক্যাম্প এট্যাক করতে না পারে।                                                    
কিন্তু আর কতদিন সহ্য করবো আমরা? চিরদিন কি হুকুমের গোলাম হয়ে থাকা ?   
শেষে রাডারকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি - এসব মধ্যযুগীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিবাদের জন্য। ভয় নেই। এগিয়ে চলো। আমরাও আছি “রাডার”-এর প্রতিবাদী ব্যানারে।                                                                          
রাসেল / খাগড়াছড়ি।

“চলার পথের সঙ্গী হতে চাই”
সংগ্রামী সম্পাদক, অভিনন্দন।                                                                                       
“কন্ঠরুদ্ধ কোন সুগায়কের অমর কবিতা
নিজেই প্রকাশ করে - আমি যেন তার
সুধা কন্ঠ হই, সুধা কন্ঠ হই।
রক্তিম যেন এক উত্তাপ হই।”
আপনারা কন্ঠরুদ্ধ পারিজাত ধবল মনের অধিকারী পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাসমূহের মনের কবিতা প্রকাশ করেছেন। প্রতিবাদ করেছেন অন্যায় অত্যাচারের। তাই আপনাদের রক্তিম উত্তাপের সাথে আমার মনের রক্তিম উত্তাপ আমি মিশিয়ে দিতে চাই। আমি আপনাদের চলার পথের সঙ্গী হতে চাই। হোক সে দুর্গম, বন্ধুর।
আমি “রাডার”-এর রিপোর্টার কিংবা সংবাদাতা হতে চাই। যদি হতে পারি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবো।
প্রদীপ তালুকদার / রাউজান।

“সংবাদাতা হতে আগ্রহী”
প্রিয় সম্পাদক
আমি পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার একজন জুম্ম জাতির সদস্য। সম্প্রতি প্রকাশিত “রাডার” -এর রাহুমুক্তি সংখ্যা পেয়েছি। আপনাদের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে “রাডার” -এ সংবাদাতা হতে ইচ্ছুক। পাহাড়ি জনগণ তথা জুম্ম জাতির সুখ-দুঃখ, নিপীড়ন, নির্যাতন ও শোষণের কথা দেশবাসীর সম্মুখে তুলে ধরার লক্ষ্যে আপনাদের অন্যতম প্রকাশনা জুম্ম মুক্তির পথ “রাডার” -এর সংবাদাতা হিসেবে যথাসাধ্য দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেলে আমার মানব জীবন স্বার্থক বলে মনে করবো।
মানিক ত্রিপুরা (মথুরা) / মাটিরাঙ্গা।

“রাডার” পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে
প্রতিবাদের আলো ছড়িয়ে দিক”

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, “রাডার”                                                                                                                       শুভেচ্ছাসহ লিখছি। আপনাদের প্রকাশিত ২৫ শে সেপ্টেম্বর ’৯১ -এর “রাহুমুক্তি সংখ্যা” পেয়েছি। পার্বত্য অঞ্চলের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে এ ধরনের আলো ছড়িয়ে পড়–ক এটাই আমরা চাই। কিন্তু একটা বড় পরিতাপের বিষয় যে, এযাবত যে সব সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল, এবং যত সংখ্যা পাঠিয়েছিলেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। যার কারণে গ্রামের ব্যাপক জনসাধারণের কাছে পৌছানো সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র কয়েকজন শিক্ষিত ব্যক্তি এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ভেতর সীমাবদ্ধ ছিল। সেজন্য আমি “রাডার” প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেসব আলো ছড়িয়ে দেবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এজেন্ট এবং সংবাদাতা হতে আগ্রহী। পরিশেষে আপনাদের পত্রিকার বহুল প্রচার কামনা করছি।
সুভাষ দত্ত চাকমা / মারিশ্য।

“এখন আর জনগণ সেনাবাহিনীর আশ্রয় চায় না”
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক “রাডার”,  
শুভেচ্ছা নিবেন। গত ২৫শে সেপ্টেম্বর ’৯১ - এ প্রকাশিত “রাডার” আমার খুব ভাল লেগেছে। প্রত্যেকে চায় অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। তাই আমাদের শিক্ষিত ছাত্র সমাজকেই এই প্রতিবাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এত কিছু অন্যায় অবিচার হওয়া সত্ত্বেও আমরা নিরবে নিস্তব্ধে বসে আছি। তারা (সেনাবাহিনী) আমাদেরকে পুতুলের মত ব্যবহার করছে। আপনারা হয়ত জানেন, জুরাছড়ির মত উশৃংখল উপজেলা হয়ত অন্য কোথাও নেই। এ এলাকার জনগণকে সেনাবাহিনীরা দু’বছর আগে “গুচ্ছগ্রাম” নামক বন্দীশালায় বন্দী করে রেখেছে। সেনাবাহিনীরা যাকে তাদের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেছে বলে দাবী করে। কিন্তু এ এলাকার জনগণ আর সেনাবাহিনীর আশ্রয় চায় না। যেতে চায় তাদের নিজ নিজ বাসস্থানে। এখানে আগে অনেক নির্যাতন নিপীড়ন হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো আমার মনে নেই। কারণ তখন আমি ছোট ছিলাম। আমি এখনও অংকুরিত বীজ মাত্র। আমাকে বলতে আমার মত তরুণদেরকে যদি আপনারা শিক্ষা দেন তাহলে আমরাই একদিন জাতিকে শিক্ষা দেবো। আমি এখনও মাত্র ১৫ বছরে পা দিয়েছি। এই পনেরটি বসন্ত যেন পার্বত্য এলাকার নির্যাতনের স্বাক্ষী। পরিশেষে “রাডার” পরিবারের শুভ কামনা করে-

জয় গোপাল চাকমা / জুরাছড়ি।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): সম্পাদকীয়, পৃষ্ঠা - ৩

নিজের ঢোল নিজে বাজাই - ২
আমরা পাহাড় চিরে বেরিয়ে আসা
দুর্দান্ত ঝর্ণার মতো একঝাঁক প্রতিবাদী তরুণ।
তারুণ্যের অমোঘ শক্তিতে ছিন্ন করতে চাই
শত প্রতিকুলতা-জঞ্জাল-বাধাবন্ধন। 
ভাসিয়ে নিতে চাই সকল অন্যায়-অত্যাচার-শোষন-বঞ্চনা। 
প্রগতির উজান বেয়ে পৌঁছে যেতে চাই মুক্তির মোহনায়।
স্থান নেই এখানে সুবিধাবাদ ও শক্তির লেহী দালালদের।
আমরা নিপীড়িত মেহনতি মানুষের শত্রুদের
অকাতরে মৃত্যু কামনা করি।
বিরোধীতা করি সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা,
স্বৈরাচার আর সামরিক আধিপত্যের অশুভ শক্তির।
নিষ্কৃতি চাই নিয়ন্ত্রণের করাল থাবা থেকে।
ভাঙতে চাই জরাগ্রস্থ এই অপুংসক সমাজদেহকে। 
ইতিহাসের রক্ত ফেনিল পথ বেয়ে পৌঁছে যেতে চাই
শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থার স্বর্ণাভ জগতে।
অতএব, প্রগতির মন্ত্রে বিশ্বাসী 
টগবগে তারুণ্যের আপোষহীন সংগ্রামী
বন্ধুদের খুঁজে বেড়াচ্ছি সন্তর্পনে।
বেরিয়ে এসো অচলায়তন -
প্রতিক্রিয়াশীলতার পাহাড় ভেঙে।
মহাকালের নতুন স্বপ্ন নিয়ে এসো
হাতে হাত মেলাই।
এগিয়ে যাই দুঃসাহসী অভিযাত্রায়। 
রুঢ় বাস্তবতার কষাঘাত চিরে অনিবার্য
বিজয় অর্জনে যায় যদি জীবনটা যাক।


যোগাযোগ (বার্তা ও চিঠি) :-
৩২০, পূর্ব বাড়ী, জগন্নাথ হল, ঢা, বি।
৩০৯, শান্তি নিকেতন, চ, বি।

প্রাপ্তিস্থানঃ-
পাঠক সমাবেশ, মুজিব হলের বিপরীতে, ঢাকা।
দীপ্র প্রকাশনী, ৬৮/২ পুরানা পল্টন, বাসস-এর নীচে।
কারেন্ট বুক সেন্টার, চট্টগ্রাম।
বুক স্টল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
৩৫৬, নবাব আব্দুল লতিফ হল, রা, বি।

রাডার
সম্পাদকীয়
সুপ্রিয় পাঠক, প্রাণঢালা রক্তিম অভিবাদন। আপনাদের ব্যাপক সাড়া আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। স্রেফ “রাডার” কেনা অথবা  বেচার জন্যে অনেককে নিগৃহীত হতে হয়েছে। অনেককে পরতে হয়েছে শারীরিক নির্যাতনের মতো সহজলভ্য অলংকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঐ দানবীয় হিংস্রতা আপনাদের “মার্ডার হলেও রাডার কিনবো” - এই বুকফাটা বজ্র উচ্চারণকে রুদ্ধ করতে পারেনি। পারেনি রাডারের প্রতি আপনাদের অকৃত্রিম ভালোবাসাকে মার্ডার করতে। আমরাও আপনাদের অদম্য সাহস ও ভালোবাসাকে আমাদের বুকে ধারণ করে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করতে চাই - “মার্ডার হলেও রক্ত-অক্ষরে নিপীড়িত-নির্যাতিত জনতার কথা লিখে যাবো রাডারের পাতায় পাতায়।”
তাই প্রিয় পাঠক, শ্যোন দৃষ্টির রোষানলে পড়েছি আমরা। শত্রুর সন্দেহজনক গতিবিধি রাডারে স্পষ্ট। সম্মুখে কর্কটের অশুভ রাহু উদ্যত। যে কোন মুহুর্তে ’৭৪ এর মরণাস্ত্র আবার আঘাত হানতে পারে রাডারকে। অসহ্য নরক যন্ত্রনায় গোঙাতে পারে আমাদের প্রচ- প্রতিবাদী কন্ঠ। তবুও আমরা শংকিত নই। কারণ তারুণ্যের মহাশক্তির কোনো মৃত্যু নেই। আমরা অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছি রাডারের রাহুমুক্তিতে। প্রয়োজনে যে কোন অশুভ শক্তির অগ্নিকুণ্ডে তারুণ্যের সতীত্ত্ব পরীক্ষা দেবো অধিকারহারা দুর্ভাগা জনতার কথা বলতে। প্রিয় পাঠক, আমাদের সুখে, দুঃখে, বেদনাতে আমরা শুধু আপনাদের ভালোবাসার উঞ্চ উত্তাপ বুকে নিবিড়ভাবে অনুভব করতে চাই।
গণঅভ্যুত্থানের পর এক বছর পেরুলো। সামরিক স্বৈরাচার সরে গেছে শাসন কাঠামো থেকে। আজকের বিংশতিতম বিজয় বর্ষেও তো গণতন্ত্রের প্রাণখোলা নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। গণতন্ত্রের আদ্যাক্ষরও ভাবা যায় না আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে। অলিখিত সামরিক শাসন চলছে সুদীর্ঘ কাল থেকে। এভাবে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এ দেশের জওয়ান সেনাদের ভাবমূর্তিকে ধ্বংস করছে। হীন স্বার্থে সেনা ভাইদের অবতীর্ণ করানো হচ্ছে হানাদারের ভূমিকায়। একাত্তরে যারা দুর্ভাগা জনতার মুক্তির জন্য লড়েছিল জীবন বাজী রেখে, আজ তারাই পার্বত্য জনতার (অস্তিত্বের) সংগ্রামকে দমন করতে ব্যস্ত। কি বিচিত্র আমাদের এই দেশ।
আমরা সেনাবাহিনীর নয়, সেনাশাসনের বিরোধী। তাই আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অচিরেই সেনাশাসনের অবসান কামনা করি। এই বিংশতিতম বিজয় বার্ষিকীতে নির্বাচিত সরকারকে অবশ্যই গণতন্ত্রের পরীক্ষা দিতে হবে।
প্রিয় পাঠক, সামনে ইংরেজী নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছা।

“হিল লিটারেচার ফোরাম” -এর পক্ষে “রাডার” প্রকাশনা কমিটি ও সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ৪

ঘটনা প্রবাহ

১০ই নভেম্বর মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার মৃত্যু বার্ষিকী উদযাপিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের উদ্যোক্তা, প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপিত হয়। উল্লেখ্য, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর জনসংহতি সমিতির বিভেদপন্থীদের দ্বারা নৃশংসভাবে নিহত হন।
এই মহান নেতার স্মরণে ছাত্ররা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। ঢাকায় অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদ কক্ষে প্রয়াত নেতার জন্য এক স্মরণ সভার আয়োজন করে। স্মরণ সভার শুরুতে ছাত্ররা প্রয়াত নেতা ও তার সাথে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে। তারপর আলোচনা সভা শুরু হয়। আলোচকগণ প্রয়াত নেতার মৃত্যুকে জুম্ম জাতি সহ সমগ্র বাংলাদেশের অপুরণীয় ক্ষতি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। ছাত্র-ছাত্রীরা এই মহান নেতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে। আলোচনা সভা শেষে জগন্নাথ হল মন্দিরে প্রয়াত নেতার উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো হয়।                                                                                                                                      
খাগড়াছড়ির স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ঐ দিন খালি পায়ে স্কুল কলেজে যায় এবং কালো ব্যাজ ধারণ করে। বিকালে মহান নেতার উদ্দেশ্যে জনবল বৌদ্ধ বিহারে ফানুচ উড়ানো হয় এবং হাজার বাতি জ্বালানো হয়। কমপক্ষে ৪০০ জন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও যুবক-যুবতী এ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে।

রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি ছাত্ররা কলেজ প্রাঙ্গনে প্রয়াত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার মৃত্যু বার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বাঙ্গালী ছাত্র গণপরিষদ এতে বাধা প্রদান করে এবং সেখানে তারা সভা অনুষ্ঠিত করবে বলে তক্ষণাভাবে ঘোষণা দেয়। অনেক বাদানুবাদের পর কলেজ প্রাঙ্গনে কোন সভা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। ফলে পাহাড়ি ছাত্ররা লারমার স্মরণে একটি শোক মিছিল বের করে।                                                                                               
রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাঙ্গামাটি জেলখানার পাহাড়ি কয়েদীরাও ১০ই নভেম্বর প্রয়াত নেতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেন।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ৫-৮

মানবাধিকার
পার্বত্য চট্টগ্রাম মানবাধিকার লংঘনের স্বর্গপুরী

[সুষ্টু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে কথিত গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতার মসনদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরও পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। জেল-জুলুম, শারীরিক নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নি-সংযোগ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলা-ইত্যাদি ঘটনার খবর আমাদের হাতে অহরহ আসছে। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লংঘনের খবরগুলো এই কলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। - সম্পাদনা পরিষদ]

মাটিরাঙ্গা
মাটিরাঙ্গায় দুর্গাপূজা উসব পণ্ড দুর্গাদেবী প্রতিমাসহ গনেশ-কার্তিকের মূর্তি ভাঙচুর ঠাকুরবাবা প্রহৃত
মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। ১৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার ৯১ ইং। “গোমতী সর্বজনীন কালি মন্দির কমিটি” কর্তৃক বিপুল উসাহ উদ্দীপনা ও ভক্তি সহকারে যে “সারদীয় দুর্গা পূজা” আয়োজন করা হয় তা ভন্ডুল হয়েছে।
দুর্গোসবের ৮/১০ দিন পূর্বে প্রতিমাগুলো রঙ করানোর উদ্দেশ্যে রৌদ্রে শুকোতে দিলে স্থানীয় অনুপ্রবেশকারীরা রাতের অন্ধকারে সেগুলো ভাঙচুর করে দেয়। এতে দুর্গাদেবীর প্রতিমাসহ গনেশ-কার্তিক প্রভৃতি মূর্তিগুলোর হাত-পা ভেঙ্গে যায়। উক্ত ঘটনার সুবিচার পাবার আশায় পূজা উদযাপনকারীরা স্থানীয় ক্যাম্পের অধিনায়কের শরণাপন্ন হলে তাদেরকে ৫০০/৬০০ টাকা দিয়ে ফের দেয়া হয়। সুবিচার না পেয়ে তারা বিফল মনোরথে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষেরা ক্ষোভে-দুঃখে প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলে। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তারা আবারও মূর্তি নির্মাণ করে কোন মতে উসবের আয়োজন সম্পন্ন করেন।
কিন্তু অত্যাচার উপীড়নে তাদের সমস্ত আয়োজন ভন্ডুল হয়ে যায়। পূজা মহোসব চলাকালে মোঃ দুলাল মিয়া নামের এক বেআইনী অনুপ্রবেশকারী পাণ্ডা সন্দেহজনকভাবে মন্দির এলাকায় সারাদিন ঘোরাফেরা করে। সন্ধ্যায় মদ্যাসক্ত অবস্থায় সে প্রাক্তন ওয়ার্ড মেম্বার বিপ্র কুমারের বাড়ীতে যায় এবং বাসরিক পূজার আহার আয়োজনকালে মহোসবের উপাসক ঠাকুরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। দেব-দেবীদের উদ্দেশ্যে অবমাননাকর কথাবার্তা বলে মিথ্যা সংবাদ দেয়। মহোসবের উপাসক ঠাকুর শান্তিবাহিনীদের সাথে বসে খাওয়া-দাওয়া করছে বলেও ষড়যন্ত্রমূলক রিপোর্ট দেয়। নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন সহসা বিপ্র কুমারের বাড়ীতে চড়াও হয়ে ঠাকুরবাবাকে নির্বিচারে মারধোর করতে থাকে। এলাকার জনৈক ব্যক্তি তাতে আপত্তি জানালে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন তাকেও নিষ্ঠুরভাবে প্রহার করে।
উক্ত ঘটনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাড়াও এলাকাবাসীদের মনে দারুণ ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আনাচে কানাচে যেভাবে ধর্মীয় উপীড়নের মাত্রা বেড়ে চলেছে তাতে পাহাড়িদের মন বিষিয়ে উঠছে। নিজেদের আচার-প্রথা ও রীতি অনুসারে কোন সামাজিক অনুষ্ঠান করতে গেলে যেভাবে প্রতিবন্ধকতা আসছে তাতে মাটিরাঙ্গা উপজেলার পাহাড়ি জনসাধারণ বিক্ষুব্ধ। জানা গেছে, অনুপ্রবেশকারী দুলাল মিয়া নাকি স্থানীয় ক্যাম্পে মিথ্যা বানোয়াট রিপোর্ট দিয়ে এলাকাবাসীদের হয়রানী করছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।  [সংবাদটি মাটিরাঙ্গা থেকে প্রেরিত]

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ৯ - ১০

বিশেষ রচনা
বিজয় দিবস ও আজকের বাংলাদেশ
-মিঃ সুপ্রিয়

এবার আমরা বিশতম বিজয় বার্ষিকী পালন করছি। একুশে পা দেবে বাড়ন্ত যৌবনা এই বঙ্গ ললনা। পেছনে ফেলে এলো সে ধূসর অতীত। সমুখে নিরাশায় কুঁকড়ে যাওয়া অনুজ্জ্¦ল ভবিষ্যত। বর্তমানে চলছে এই প্রিয় মাতৃভূমির বুক জুড়ে তীব্র ক্ষুধা, দুর্যোগ, রাজনীতির বেসাতি আর অবিরাম সন্ত্রাসের রক্তাক্ত নৈরাজ্য। অবাধ ন্যাকামী নৃত্যের আস্ফালনে স্বাধীনতা বিরোধী কালো শকুনেরা অবজ্ঞা করছে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দ্রুত বিকাশে বিষিয়ে যাচ্ছে সামাজিক পরিবেশ। রাষ্ট্রীয় মঞ্চে অভিনয় করছে তারাই যারা একাত্তোরে বিজয় চায়নি। যারা হাত রাঙিয়েছে আমার মুক্তিযোদ্ধা পিতা কিংবা ভাইয়ের রক্তে। অসুরে চাহিদা মিটিয়ে নিয়েছে আমার স্নেহময়ী মা-বোনের ইজ্জত হরণ করে। সাধের সংসদীয় গণতন্ত্রের মহেন্দ্রকালে তারাই ভীড় জমিয়েছে খোলস পরে। তর তর করে উঠে গ্যাছে গণতন্ত্রকামী শত মানুষের লাশের সিঁড়ি ভেঙে ক্ষমতার লোভনীয় মোহনায়। পল্লী বাংলা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পর্যায়ে উদঙ্গ বাজিয়ে নাচানাচি শুরু করেছে তারা। বস্ত্র হরণ পর্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এখন স্রেফ লুটেপুটে নেয়ার আনন্দ আয়োজন। লক্ষ মুক্তিকামী জনতার রক্ত ভেজা পথ বেয়ে যে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে এই সুজলা, সুফলা নারীর পৃথিবী কাঁপানো জন্ম, তার হৃপিণ্ডেই চলছে নখর অস্ত্রোপচার। বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ, মহামারীর মত আজন্ম পাপে ভারী হয়ে আসছে মাটি। রূপসী বাংলার চোখে বিস্ময়, হৃদয় তার অসহনীয় বেদনায় বিক্ষত। ক্লান্তিকর এ পদযাত্রা।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ১১ - ১৩

প্রচ্ছদ নিবন্ধ
তথাকথিত কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি : পার্বত্য জনগণের দুর্ভোগ
- মিঃ মানবমিত্র ।

১.প্রাক-কথনঃ  রক্তাক্ত সংঘাতময় এক জনপদের নাম পার্বত্য চট্টগ্রাম। একদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দশ ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য সশস্ত্র গণসংগ্রাম এবং অন্যদিকে সেই সংগ্রামকে দমন করার জন্য সামরিক প্রচেষ্টা- পার্বত্য চট্টগ্রামকে পরিণত করেছে এক অগ্নিগর্ভ রণক্ষেত্রে। এখানে উগ্র বারুদ অত্যাচারে জনজীবন হয়েছে দুর্বিসহ। তথাকথিত কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির যাঁতাকলে পিষ্ঠ পাহাড়ি বাঙালী নির্বিশেষ। দীর্ঘ অত্যাচার, নির্যাতন আর যন্ত্রণায় ক্ষত-বিক্ষত পার্বত্য জনতার আজ বেদনার্ত উচ্চারণ - “জীবন আমাদের নয়”। সত্যিই সারা পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ এক “অপারেশন থিয়েটার”। কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি নামক বেয়নেট দিয়ে জনজীবনের ওপর চালানো হচ্ছে আনকোরা ডাক্তারের অপারেশন সার্জারী। পার্বত্য জীবন আজ কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির হাতে জিম্মি।

২.কেন কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি?: কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির আক্ষরিক অর্থই হলো সামরিকভাবে বিদ্রোহ দমন। পার্বত্য চট্টগ্রামে একজন সামরিক অফিসারের ভাষায়, “Our aim is to gradually finish the insurgency" কিন্তু কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির আপাতঃ উদ্দেশ্য বিদ্রোহ দমন হলেও এর চুড়ান্ত লক্ষ্য পাহাড়ি জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে দেয়া। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা তথা অস্তিত্ব সংরক্ষণের সমস্যা। অন্য কোন কারণে নয়, একমাত্র জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই এই বিদ্রোহের সূত্রপাত। কাজেই পাহাড়ি জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের গ্যারান্টি না দিয়ে সামরিক উপায়ে অর্থা কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির মাধ্যমে উদ্ভুত বিদ্রোহ দমন করার অর্থই হলো জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেয়া।

৩.কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির জন্য নিয়োজিত বাহিনীঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে বিশাল সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। Chittagong Hill Tracts Campaign and Information Network এর একটি প্রচারপত্র অনুযায়ী দেশের নিয়মিত বাহিনীর এক তৃতীয়াংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত। অপরদিকে CHT কমিশনের রিপোর্ট মতে যদি প্রতি দশজন পাহাড়ির জন্য একজন সেনাবাহিনী নিয়োজিত থাকে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাসংখ্যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০,০০০। কিন্তু কেন এই বিশাল সামরিক বাহিনী বা এই সামরিক বাহিনীর কাজ কি ? CHT কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী " The justification for the massive military buildup in the CHT is that it needed to counter and contain insurgency activities of the Shanti Bahini (SB). Counter-insurgency is their main task." বর্তমানে সারা পার্বত্য চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম এরিয়া কমাণ্ডারের নেতৃত্বে কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি চালাচ্ছে নিয়মিত সেনাবাহিনী, BDR, পুলিশ, আনসার, VDP, এবং একটি   Naval Base.

৪.কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির ট্রেনিং : কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির ট্রেনিং দেয়ার জন্য ঢাকায় Defence Staff College নামে একটি সামরিক কলেজ রয়েছে। সেখানে বৃটেনের সামরিক বাহিনীর অভিজ্ঞ অফিসারগণ প্রশিক্ষণ দেন। তাছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসারগণ বিদেশ থেকেও কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির ট্রেনিং নিয়ে থাকেন। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের US Army Intelligence Centre Military Staff College Fort Lavenworth, যুক্তরাজ্যের  Aldershot and Camberley, পাকিস্তানের  National Defence College এবং মালয়েশিয়ার Staff College ইত্যাদি।

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ১৪ - ১৫

এম, এন, লারমাকে যেমন দেখেছি
-আব্দুল্লাহ সরকার

সত্তোর দশকের কথা। আজ দীর্ঘ প্রায় দেঢ় যুগ পর মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আমার অনেক কথাই বেশ মনে পড়ছে। তকালীন জাতীয় সংসদে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এবং আমি নিজের এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। সমসাময়িক রাজনৈতিক জীবনে আমরা পরস্পর খুবই কাছাকাছি ছিলাম। এতে করে তার চিন্তা, চেতনা, রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে কাছ থেকে জানার সুযোগ আমার হয়েছে। তখন সারা দেশের নানাবিধ সমস্যাসহ পার্বত্যাঞ্চলের সংখ্যালঘু পাহাড়ি জনগণের ন্যায্য অধিকার নিয়েও আমরা বিস্তারিত আলাপ করেছি। তিনি বরাবরই নিপীড়িত নির্যাতিত মেহনতি শ্রেণীর দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে জাতীয় সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করতেন। বাংলাদেশের মত একটি অনুন্নত পুজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় কোন রাজনৈতিক ধারণায় সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় তা তিনি গভীরভাবে ভাবতেন। দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার সমস্যাকে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নিয়ে আসার গুরুত্ব সম্পর্কে আমি প্রায়ই লারমাকে বলতাম। যেহেতু পাহাড়িয়া এলাকার জনগণ বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কোন বিচ্ছিন্ন অংশ নয়, কাজেই তাদের সমস্যা অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণেরই সমস্যা। ৭২ সালে তিনি পাহাড়ি জনগণের চার দফা দাবী শেখ মুজিবর রহমানের নিকট পেশ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, তকালীন সরকার তার দাবী সমূহের মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও বাঙালী জাতীয়তা থেকে ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বকীয় বৈশিষ্টের অধিকারী পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের অস্তিত্বের প্রশ্নে এম, এন, লারমা সুস্পষ্টভাবে যুক্তি দেখিয়েছেন। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকারের পর যে সরকারসমূহ ক্ষমতাসীন হয়েছেন তারাও পার্বত্য এলাকার ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতি অনুসরণ করেছে। যেহেতু তাদের শ্রেণীগত চরিত্র অভিন্ন, সুতরাং তাদের শাসন শোষণের প্রকৃতিও এক। এটাই বাস্তব। তাই স্বাধীনতাত্তোর প্রতিটি সরকারই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে একইভাবে চিহ্নিত করে তারই ভিত্তিতে দমন পীড়নের কৌশল অবলম্বন করেছে। ফলে সংখ্যালঘু জনগণের মনে মূল ভূ-খন্ডের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ক্রমেই অবিশ্বাস আর সন্দেহ বেড়েছে বই কমেনি।