পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৩ মে, ২০১৭

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ৪

ঘটনা প্রবাহ

১০ই নভেম্বর মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার মৃত্যু বার্ষিকী উদযাপিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের উদ্যোক্তা, প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপিত হয়। উল্লেখ্য, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর জনসংহতি সমিতির বিভেদপন্থীদের দ্বারা নৃশংসভাবে নিহত হন।
এই মহান নেতার স্মরণে ছাত্ররা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। ঢাকায় অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদ কক্ষে প্রয়াত নেতার জন্য এক স্মরণ সভার আয়োজন করে। স্মরণ সভার শুরুতে ছাত্ররা প্রয়াত নেতা ও তার সাথে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে। তারপর আলোচনা সভা শুরু হয়। আলোচকগণ প্রয়াত নেতার মৃত্যুকে জুম্ম জাতি সহ সমগ্র বাংলাদেশের অপুরণীয় ক্ষতি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। ছাত্র-ছাত্রীরা এই মহান নেতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে। আলোচনা সভা শেষে জগন্নাথ হল মন্দিরে প্রয়াত নেতার উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো হয়।                                                                                                                                      
খাগড়াছড়ির স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ঐ দিন খালি পায়ে স্কুল কলেজে যায় এবং কালো ব্যাজ ধারণ করে। বিকালে মহান নেতার উদ্দেশ্যে জনবল বৌদ্ধ বিহারে ফানুচ উড়ানো হয় এবং হাজার বাতি জ্বালানো হয়। কমপক্ষে ৪০০ জন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও যুবক-যুবতী এ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে।

রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি ছাত্ররা কলেজ প্রাঙ্গনে প্রয়াত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার মৃত্যু বার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বাঙ্গালী ছাত্র গণপরিষদ এতে বাধা প্রদান করে এবং সেখানে তারা সভা অনুষ্ঠিত করবে বলে তক্ষণাভাবে ঘোষণা দেয়। অনেক বাদানুবাদের পর কলেজ প্রাঙ্গনে কোন সভা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। ফলে পাহাড়ি ছাত্ররা লারমার স্মরণে একটি শোক মিছিল বের করে।                                                                                               
রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাঙ্গামাটি জেলখানার পাহাড়ি কয়েদীরাও ১০ই নভেম্বর প্রয়াত নেতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেন।

পদত্যাগ না করা পর্যন্ত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের সাথে এক টেবিলে বসা সম্ভব নয়
পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত তিন এম.পি. পাহাড়ি গণপরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও ঢাকায় অবস্থানরত বিশিষ্ট পাহাড়ি বুদ্ধিজীবীগণ গত ৯/১১/৯১ দীর্ঘ আলোচনার পর এই মত ব্যক্ত করেন যে, পদত্যাগ না করা পর্যন্ত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের সাথে এক টেবিলে বসা সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বাবু দীপংকর তালুকদার তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণ পরিষদ, বুদ্ধিজীবী ও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন চীফদের বৈঠকের ব্যাপারে অনেক দিন আগে এক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জেলা পরিষদের সাথে আলোচনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পাহাড়ি ছাত্র নেতা রাডারকে বলেন, “গণধিকৃত জেলা পরিষদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব একটি কুটচাল ছাড়া আর কিছুই নয়।” বস্তুতঃ স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া জেলা পরিষদ পার্বত্য জনগণের দুর্বার আন্দোলন, আন্তর্জাতিক চাপ এবং জেলা প্রশাসক ও সেনা প্রশাসনের সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ফলে বর্তমানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এই দ্বন্দ্বের সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা সম্পর্কে গৌতম দেওয়ানের বিবৃতি প্রদান এং সরকারের কাছে তিন জেলা পরিষদের হুঁশিয়ারীযুক্ত ১১ দফা দাবী পেশ করার মধ্য দিয়ে। এই সকল বিষয় বিবেচনা করে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণপরিষদ, বুদ্ধিজীবী ও পার্বত্য এম.পি. গণ উক্ত বৈঠকে ঐক্যমত ব্যক্ত করেন যে, আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে তিন জেলা পরিষদের সকল চেয়ারম্যান ও পাহাড়ি সদস্যদের পদত্যাগ করতে হবে।

তিন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ১১ দফায় পাহাড়ি গণপরিষদ ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের তীব্র প্রতিবাদ
গণধিকৃত তিন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ১১ দফা ৭/১১/৯১ ইং তারিখ পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশিত হবার সাথে সাথে পাহাড়ি গণপরিষদ ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকের পর পাহাড়ি গণপরিষদ ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ যুক্তভাবে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের যুক্ত ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ ব্যক্ত করে একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, পাহাড়ি গণপরিষদ ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ মনে করে মূল সমস্যায় না গিয়ে তথাকথিত ২২ টি বিষয়ের হস্তান্তর, গণবিরোধী জেলা পরিষদের সাংবিধানিক গ্যারান্টি দাবী এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের তিন জেলা পরিষদের পরামর্শ নেয়ার দাবী সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অবাস্তব। কারণ এই জেলা পরিষদ হচ্ছে পার্বত্য জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে কয়েজন গণবিচ্ছিন্ন তথাকথিত নেতার মাধ্যমে প্রহসনমূলক সমাধান, যে কারণে কোটি কোটি টাকার বাজেট দিয়েও এই পরিষদ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যে সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনবরত লোকক্ষয় ও রক্তপাত ঘটছে সে সময়ে চেয়ারম্যান ত্রয়ের এই যুক্ত ঘোষণার ১১ দফা পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করার হীন কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই পাহাড়ি গণপরিষদ ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ অবিলম্বে এই জেলা পরিষদ বাতিলের মাধ্যমে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে নতুন প্রক্রিয়া শুরু করার সাথে সাথে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানত্রয়কে তাদের দ্বিমুখী চরিত্র পরিহার করে পদত্যাগের মাধ্যমে জনতার কাতারে সামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

দুই অধিনায়কের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জনগণের নাভিঃশ্বাস

কুতুকছড়ি, রাঙ্গামাটি। এখান থেকে খাগড়াছড়ি যাবার সড়ক চেঙ্গীভেলী রোড নামে পরিচিত। কুতুকছড়ির ৫ মাইল পরেই ঘিলাছড়ি। এই দু’টো জায়গাতে রয়েছে আর্মি ক্যাম্প। রাস্তার দু’পাশে রয়েছে অনেক চেকপোষ্ট। বর্তমানে এই দুই এলাকায় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। কুতুকছড়ি ও ঘিলাছড়ি ক্যাম্পের দুই অধিনায়ক নিজেদের ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে একই তারিখে দু’টো বাজারে বাজার মিলানোর নির্দেশ দিয়েছে। এক কমা-ারের আওতাধীন এলাকায় কোন ব্যক্তি অন্য কমা-ারের এলাকাধীন বাজারে যাওয়া-আসা করতে পারছে না। অর্থা কুতুকছড়ি ক্যাম্পের অধীন কুতুকছড়ি বাজার ফেলে কেউ ঘিলাছড়ি বাজারে যেতে পারবে না। অনুরূপভাবে ঘিলাছড়ি ক্যাম্পের অধীন ঘিলাছড়ি বাজারে না গিয়ে কেউ কুতুকছড়ি বাজারে যাওয়া-আসা করতে পারবে না এবং কেনা-বেচা করাও বন্ধ। এর অন্যথা হলে জনসাধারণকে মারধর করা হচ্ছে। এতে জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়েছে। উপাদিত পণ্য সামগ্রী এই দুই এলাকার মানুষ অন্য কোথাও নিতে পারছে না। ফলে সস্তায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া বাজারে প্রবেশের জন্য ক্যাম্প কর্তৃক অনুমোদিত পাস লাগে। পাস ছাড়া কেউই বাজারে ঢুকতে পারে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন