পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৩ মে, ২০১৭

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা - ২, চিঠি পত্র

চিঠি পত্র

“রাডার”-কে অভিনন্দন
প্রিয় সম্পাদক,
নিপীড়িত নির্যাতিত জুরাছড়ি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে ও “রাডার” প্রকাশনা কমিটিকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি। রাডারের “রাহুমুক্তি” সংখ্যা আমার খুব ভালো লেগেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান দঃসময়ে আপনাদের এই সাহসী পদক্ষেপকে আমি স্বাগত জানাই। আমাদের ছাত্র সমাজকেই জেগে উঠতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে। “রাডার” জুম্ম ছাত্র সমাজের মধ্যে সংগ্রামী চেতনার অগ্নিমশাল জ্বেলে দিক -এ কামনা করছি।                                                                                                       
জে. পি. চাকমা / জুরাছড়ি।

“আমরাও আছি রাডারের প্রতিবাদী ব্যানারে”
কাপুরুষের মতো সব সহ্য করছি আমরা। দেখেও না দেখার ভান করছি, শুনেও না শুনার মতো, জেনেও না জানার মতো অভিনয় করছি। যেন সবাই নির্জীব জড় পদার্থ হয়ে গেছি। সব সওয়া হয়ে গেছে আমাদের। কখনো শান্তিবাহিনীর লেবাস দিয়ে, কখনো তাদের সাথে গোপন সম্পর্ক থাকার সন্দেহে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় আমাদের ওপর। বিনা পারিশ্রমিকে রুটিন মাফিক প্রতিদিন বেগার খাটতে হয় সেনা ক্যাম্পে। বিশ্রী গালিগালাজ, কটুক্তি-সেতো কিল, ঘুষি আর বুটের লাঠির তুলনায় ভদ্র ব্যবহারই বটে। তবুও যেন হয়রানীর শেষ নেই। সারাদিন খাটুনির পর অবসন্ন দেহ এলিয়ে দিয়ে একটু নিরিবিলি ঘুমোবার যো নেই। স্যারদের হুকুম, পাহারা দিতে হবে সারা রাত - যাতেশান্তি সেনারা ক্যাম্প এট্যাক করতে না পারে।                                                    
কিন্তু আর কতদিন সহ্য করবো আমরা? চিরদিন কি হুকুমের গোলাম হয়ে থাকা ?   
শেষে রাডারকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি - এসব মধ্যযুগীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিবাদের জন্য। ভয় নেই। এগিয়ে চলো। আমরাও আছি “রাডার”-এর প্রতিবাদী ব্যানারে।                                                                          
রাসেল / খাগড়াছড়ি।

“চলার পথের সঙ্গী হতে চাই”
সংগ্রামী সম্পাদক, অভিনন্দন।                                                                                       
“কন্ঠরুদ্ধ কোন সুগায়কের অমর কবিতা
নিজেই প্রকাশ করে - আমি যেন তার
সুধা কন্ঠ হই, সুধা কন্ঠ হই।
রক্তিম যেন এক উত্তাপ হই।”
আপনারা কন্ঠরুদ্ধ পারিজাত ধবল মনের অধিকারী পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাসমূহের মনের কবিতা প্রকাশ করেছেন। প্রতিবাদ করেছেন অন্যায় অত্যাচারের। তাই আপনাদের রক্তিম উত্তাপের সাথে আমার মনের রক্তিম উত্তাপ আমি মিশিয়ে দিতে চাই। আমি আপনাদের চলার পথের সঙ্গী হতে চাই। হোক সে দুর্গম, বন্ধুর।
আমি “রাডার”-এর রিপোর্টার কিংবা সংবাদাতা হতে চাই। যদি হতে পারি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবো।
প্রদীপ তালুকদার / রাউজান।

“সংবাদাতা হতে আগ্রহী”
প্রিয় সম্পাদক
আমি পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার একজন জুম্ম জাতির সদস্য। সম্প্রতি প্রকাশিত “রাডার” -এর রাহুমুক্তি সংখ্যা পেয়েছি। আপনাদের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে “রাডার” -এ সংবাদাতা হতে ইচ্ছুক। পাহাড়ি জনগণ তথা জুম্ম জাতির সুখ-দুঃখ, নিপীড়ন, নির্যাতন ও শোষণের কথা দেশবাসীর সম্মুখে তুলে ধরার লক্ষ্যে আপনাদের অন্যতম প্রকাশনা জুম্ম মুক্তির পথ “রাডার” -এর সংবাদাতা হিসেবে যথাসাধ্য দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেলে আমার মানব জীবন স্বার্থক বলে মনে করবো।
মানিক ত্রিপুরা (মথুরা) / মাটিরাঙ্গা।

“রাডার” পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে
প্রতিবাদের আলো ছড়িয়ে দিক”

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, “রাডার”                                                                                                                       শুভেচ্ছাসহ লিখছি। আপনাদের প্রকাশিত ২৫ শে সেপ্টেম্বর ’৯১ -এর “রাহুমুক্তি সংখ্যা” পেয়েছি। পার্বত্য অঞ্চলের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে এ ধরনের আলো ছড়িয়ে পড়–ক এটাই আমরা চাই। কিন্তু একটা বড় পরিতাপের বিষয় যে, এযাবত যে সব সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল, এবং যত সংখ্যা পাঠিয়েছিলেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। যার কারণে গ্রামের ব্যাপক জনসাধারণের কাছে পৌছানো সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র কয়েকজন শিক্ষিত ব্যক্তি এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ভেতর সীমাবদ্ধ ছিল। সেজন্য আমি “রাডার” প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেসব আলো ছড়িয়ে দেবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এজেন্ট এবং সংবাদাতা হতে আগ্রহী। পরিশেষে আপনাদের পত্রিকার বহুল প্রচার কামনা করছি।
সুভাষ দত্ত চাকমা / মারিশ্য।

“এখন আর জনগণ সেনাবাহিনীর আশ্রয় চায় না”
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক “রাডার”,  
শুভেচ্ছা নিবেন। গত ২৫শে সেপ্টেম্বর ’৯১ - এ প্রকাশিত “রাডার” আমার খুব ভাল লেগেছে। প্রত্যেকে চায় অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। তাই আমাদের শিক্ষিত ছাত্র সমাজকেই এই প্রতিবাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এত কিছু অন্যায় অবিচার হওয়া সত্ত্বেও আমরা নিরবে নিস্তব্ধে বসে আছি। তারা (সেনাবাহিনী) আমাদেরকে পুতুলের মত ব্যবহার করছে। আপনারা হয়ত জানেন, জুরাছড়ির মত উশৃংখল উপজেলা হয়ত অন্য কোথাও নেই। এ এলাকার জনগণকে সেনাবাহিনীরা দু’বছর আগে “গুচ্ছগ্রাম” নামক বন্দীশালায় বন্দী করে রেখেছে। সেনাবাহিনীরা যাকে তাদের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেছে বলে দাবী করে। কিন্তু এ এলাকার জনগণ আর সেনাবাহিনীর আশ্রয় চায় না। যেতে চায় তাদের নিজ নিজ বাসস্থানে। এখানে আগে অনেক নির্যাতন নিপীড়ন হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো আমার মনে নেই। কারণ তখন আমি ছোট ছিলাম। আমি এখনও অংকুরিত বীজ মাত্র। আমাকে বলতে আমার মত তরুণদেরকে যদি আপনারা শিক্ষা দেন তাহলে আমরাই একদিন জাতিকে শিক্ষা দেবো। আমি এখনও মাত্র ১৫ বছরে পা দিয়েছি। এই পনেরটি বসন্ত যেন পার্বত্য এলাকার নির্যাতনের স্বাক্ষী। পরিশেষে “রাডার” পরিবারের শুভ কামনা করে-

জয় গোপাল চাকমা / জুরাছড়ি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন