পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ২ মে, ২০১৭

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ১৮ - ১৯

সংসদীয় গণতন্ত্র ও জনগণের প্রত্যাশা
-         মিঃ পারদর্শী

অবশেষে জনগণের চাপে ক্ষমতাসীন সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা হলো সরকার পদ্ধতির প্রশ্নে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন চুড়ান্ত রূপ লাভ করলো রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বিল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস এবং সর্বোপরি সংবিধানের বিধানানুযায়ী গণভোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। যদিও স্বৈরাচারী এরশাদের আস্তানা রংপুরের জনগণ পাইকারী হারে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির বিরুদ্ধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির গালে চপেটাঘাত লাগায়। দীর্ঘ ৯ বছরের স্বৈরাচারী শাসন-শোষণে পিষ্ট জনগণ বুঝি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। এবার বুঝি বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে চললো। দারিদ্য-পীড়িত বাংলার জনতা পাবে গণতন্ত্রের সোনালী আভা। তাদের ভাত-কাপড়-বাসস্থানের সমস্যা বুঝি দূর হবে। কিন্তু এ স্বপ্ন দেখতে না দেখতে জনতার মোহভঙ্গ হলো যখন বি,এন,পি, সরকার প্রেসিডেন্টের আসনে বসালো রাজাকার আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে। এবপর একের পর এক শুরু হলো রাজাকারদের গুরুত্বপূর্ণ পদে ক্ষমতায় বসিয়ে পুনর্বাসন। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত জনাব পন্নীকে করা হলো দেশের প্রাণকেন্দ্র আইন সভার ডেপুটি স্পীকার। সর্বোপরি দেশের উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষাবস্থা সম্বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করে। কমনওয়েলথ সম্মেলন থেকে ফিরে এসেই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বললেন, দেশে কোন দুর্ভিক্ষাবস্থা নেই। অথচ জনগণ জানে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং পার্বত্যঞ্চলে দারুণ খাদ্যভাব বিরাজ করছে এবং অনাহারে অর্ধাহারে মানুষ দিন গুণছে। মৃত্যুর সংবাদও কম আসেনি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে যদি এ ধরনের মন্তব্য শুনতে হয় তাহলে সংসদীয় সরকারের ভবিষ্য যে কী হবে তা সচেতন জনগণ ভাল করেই জানেন। তদুপরি দেশের প্রধান তিনটি বৃহ রাজনৈতিক জোটের রূপরেখা (যে রূপরেখার ভিত্তিতে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিলো) এবং সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের দশ দফা দাবী বাস্তবায়নের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। তিন জোটের রূপরেখা এবং সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের দশ দফার অন্যতম প্রধান দাবী ছিল স্বৈরাচারী এরশাদের সহযোগীদের কোন দলে আশ্রয় না দেয়া। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশের প্রধান দুটি দল (ক্ষমতাসীন বি,এন,পি এবং বিরোধী আওয়ামী লীগ) তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একের পর এক এরশাদের সহযোগীদের নিজের দলে আশ্রয় দিয়ে পুনর্বাসন করতে থাকলো। এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে ? সবচেয়ে জঘন্যতম বিশ্বাসঘাতকতা হচ্ছে ৯০ -এর ছাত্র-গণ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান অপরাধী নীরু, অভিদেরকে শুধুমাত্র দলের স্বার্থে নিজের দলে আশ্রয় দেয়া। স্বৈরাচারী এরশাদের সহযোগীরা ক্ষমতাসীন সরকারী দল এবং প্রধান বিরোধী দল উভয়ের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে। এরা একে অপরকে দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দোষ ঢেকে রাখার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে। সর্বোপরি এরশাদ পতন আন্দোলনের অন্যতম প্রধান শক্তি সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের দশ দফা দাবীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অগ্রাহ্য করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করলো এই সংসদীয় সরকার জনগণের মৌলিক সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। রংপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে যখন মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে মারা যাচ্ছে ঠিক সেই মুহুর্তে সংসদে আলোচনা হচ্ছে সাংসদরা লাল পাসপোর্ট কিভাবে পাবেন, প্রধান মন্ত্রীর সুযোগ সুবিধা কী হবে, কোন মন্ত্রীরা কত টাকা বেতন পাবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের অবরোধ-হামলা সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে সরকারী দল এবং প্রধান বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠন সমূহের মধ্যে গুলি পাল্টা গুলির কারণে শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ ছাত্র, টোকাই। দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে একে অন্যের উপর। জনগণের টাকায় পোষা পুলিশ পালন করছে নীরব ভূমিকা। এজন্য পুলিশ প্রশাসনকে প্রশ্ন করা হলে তারা স্পষ্টভাবে জবাব দিচ্ছে “আমাদের উপর নির্দেশ না থাকলে আমরা কী করবো।” সরকারী কর্মচারীদের বেতন স্কেল নিয়ে আন্দোলন হলে সরকার তা দমন করে নির্মমভাবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর পুলিশ এবং মাস্তানদের লাঠি চার্জ করা হয়। স্বৈরাচারী ভঙ্গীতে শ্রমিকদের উপর আক্রমণের ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রি। ফলে বেকার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক এবং গার্মেন্টস শিল্পের মত একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হচ্ছে ধ্বংসের মুখোমুখী। ভাঙচুরের প্রতিবাদে বুয়েটের শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ মিছিলেও পুলিশ বাধা দান করে। মুদ্রাষ্ফীতির পরিমাণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে জনজীবন বিপর্যস্ত করেছে। মোদ্দাকথা, সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করার পরও জনগণের এই দশা ! এসবের মূল কারণ হচ্ছে, সরকার পদ্ধতিতে পরিবর্তন হলেও শাসন কাঠামো পূর্বের মতই রয়ে গেছে। কাজেই রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পরিবর্তনের ফলে দেশের শাসন ব্যবস্থায় বড় ধরনের আশা করাটা বোকামী। জনগণের মৌলিক সমস্যা সমাধান করতে হলে দরকার এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভেঙ্গে নতুন করে সাজানো। অর্থা বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক সমস্যা সমাধানের পথ নিহিত রয়েছে।

সংসদীয় সরকার প্রবর্তনের ফলে দেশের শাসন ব্যবস্থায় যে কোন পরিবর্তন হয়নি বা হতে পারে না তা সবচেয়ে বেশী স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয় বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্যাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে। স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে যে শাসন ব্যবস্থার ধরণ সেখানে প্রবর্তিত ছিল তা আজ অবধি বহাল তবিয়তে বিদ্যমান রয়েছে। বলতে গেলে আরও অবনতি ঘটেছে। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জাতীয় সংসদের তিন তিনটি অধিবেশন হয়ে গেলো কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার মত একটি জাতীয় এবং রাজনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে সরকারী  দল ও বিরোধী দলগুলো কোন আলোচনাই করলো না। ফলে স্বৈরাচারী সরকারের আমলে প্রবর্তিত শাসন ব্যবস্থার অবসান তো দূরের কথা বরং দিন দিন আরও নৈরাজ্যের দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দীনের আমলে দেশের ৬১ টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে অপসারণ করা হলো কিন্তু পাহাড়ি জনগণের প্রাণ প্রিয় দাবী পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনটি জেলা পরিষদ আশ্চর্যজনকভাবে বাতিল করা হয়নি। তদুপরি বিচারপতি শাহাবুদ্দীনের মুখ থেকে পার্বত্যবাসীকে শুনতে হল পার্বত্য চট্টগ্রামের (খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান) তিনটি জেলা পরিষদ বাতিল করা হবে না (দৈনিক ইত্তেফাক, ৩১ শে ডিসেম্বর ১৯৯০)। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এইসব জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা নাকি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু পার্বত্য জনগণ ভাল করেই জানে এই সব জেলা পরিষদের চেলা-চামু-ারা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হয়েছে নাকি ভোটারবিহীন পাতানো নির্বাচনী খেলায় জয়ী হয়েছে। সেদিন থেকে পার্বত্যবাসীর মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়ে জনগণের বিশ্বাস ভাঙ্গানো যায় বটে কিন্তু আস্থা মোটেই অর্জন করা সম্ভব নয়। সর্বোপরি নির্বাচিত সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেত্রী খালেদা জিয়া ১৪ই এপ্রিল ৯১ সামরিক বাহিনীর কয়েকজন নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তার সাথে বৈঠক করে ঘোষণা দিলেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বৈরাচারী এরশাদের গৃহীত নীতিমালা চালু থাকবে। এতে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। কারণ স্বৈরাচারী এরশাদের নীতিমালা চালু রাখা মানেই হচ্ছে তার প্রণীত নীতিমালাকে স্বীকৃতি দেয়া। অথচ বাংলাদেশের অপরাপর জনগণের ন্যায় পাহাড়ি জনগণও স্বাভাবিকভাবে আশা করেছিলো যে, এরশাদীয় স্বৈরাচারের অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার একটা সম্মানজনক রাজনৈতিক সমাধান করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী কর্মসুচীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের কথাও ছিল। কিন্তু নির্বাচন উত্তরকালে তাদের মুখ থেকে কোন কথাই শোনা যাচ্ছে না। এভাবে দেখা যাচ্ছে যে, সমস্যা কেবল বেড়েই চলেছে বৈ কমছে না। স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে অত্যাচার-নিপীড়নের ফলে বিদেশের মাটিতে আশ্রয় নেয় ৫০ হাজারের অধিক পাহাড়ি শরণার্থী, যারা, এখনও মানবেতর জীবন যাপন করছে বিদেশের মাটিতে। মানবেতর জীবন যাপনে অতিষ্ঠ হয়ে কিছু সংখ্যক শরণার্থী দেশে ফিরে আসলেও তাদের সমস্যার কোন সমাধান করা হয়নি। তারা শুধুমাত্র বিদেশের শরণার্থী শিবির থেকে ফিরে এসে দেশের আরেক বন্দী শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই বন্দী শিবিরগুলোর নাম হচ্ছে গুচ্ছগ্রাম, শান্তিগ্রাম ও বড়গ্রাম। ফিরে যেতে দেয়া হচ্ছে না তাদের নিজ নিজ গ্রামে যেখানে তাদের বাস্তুভিটা এবং চাষের জমি রয়েছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যাদেরকে সমতল এলাকা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে তাদের অবস্থাও শোচনীয়। তারাও একই ধরনের গুচ্ছগ্রামে রয়েছে। জীবনের নিরাপত্তা তাদেরও বিঘ্নিত এবং অনিশ্চিত। হিংসা এবং প্রতিহিংসার অনলে পড়ে জীবন হারাচ্ছে নিরীহ পাহাড়ি এবং বাঙালি মেহনতি জনগণ। “সরকারের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পগুলোতে অবস্থানরত উপজাতীয়-অউপজাতীয়দের স্বাভাবিক জীবন থেকে সরিয়ে তাদের জন্যে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে পর্যবেক্ষক মহলে” (দৈনিক আজকের কাগজ ২৬ শে অক্টোবর ১৯৯১)। অন্যদিকে, সামরিক কমা-াররা যুক্তি দাঁড় করেছেন যে, নিরাপত্তা দেয়ার জন্য জনগণকে ঐসব শিবিরগুলোতে নেয়া হয়েছে। স্বাভাবিক জীবন থেকে বন্দী শিবিরে এনে জীবনের নিরাপত্তা ? সামরিক বাহিনীর এ নীতি পাহাড়ি জনগণকে পঙ্গুত্বে পরিণত করার সামিল। সামরিক বাহিনীর মনগড়া নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কাঠ এবং বাঁশ ক্রয় বিক্রয়। অথচ পার্বত্যবাসীদের অন্যতম প্রধান আয়ের উস হচ্ছে এই কাঠ এবং বাঁশ। অপরপক্ষে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ব্যাহত হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম কাগজের কল চন্দ্রঘোনা পেপার মিলের কাগজের উপাদন। রাস্তাঘাটে চলা ফেরায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ, সেনা ক্যাম্পের পাসপোর্ট নেয়া, যখন তখন গ্রেফতার করা, বিভিন্ন প্রকার বাধানিষেধ এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত রয়েছে। পার্বত্যবাসীদের চোখের পানিতে গড়া পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই লেকের মস্য উপাদন শোচনীয় পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে হ্রদাঞ্চলের মস্যজীবী মানুষের আর্থিক জীবন হয়েছে বিপর্যস্ত। “কর্পোরেশনের ইচ্ছা অনুসারে হ্রদ সৃষ্টির পর অদ্যাবধি ৬০ কোটি মাছের পোনা ছাড়ার স্থানে ২ কোটি ২৫ লাখ পোনা ছাড়া হয়েছে। এর ফলে এ হ্রদে মাছের বংশ বৃদ্ধি কতটুকু সম্ভব হয়েছে তা এ পরিসংখ্যান থেকেই অনুমান করা যায়” (সাপ্তাহিক “দিক চিহ্ন” ১ বর্ষ ৬ সংখ্যা)। কাপ্তাই হ্রদের জলসীমা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে বলে সম্প্রতি পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। পূর্ব সংকেত ব্যতীত এ ধরনের ইচ্ছাকৃতভাবে পানির লেভেল বাড়ানো সন্দেহের অবকাশ রাখে।

প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পার্লামেন্টারী সরকারকে তোয়াক্কা না করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেনানায়ক মেজর জেনারেল জনাব মাহমুদুল হাসান পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্রোহী শান্তিবাহিনীদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। এ ঘোষণার পর জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ দেশে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় কেন জেনারেল হাসান সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন বিদ্রোহী শান্তিবাহিনীদের প্রতি ? তাহলে কি জেনারেল হাসানরা নির্বাচিত সরকারের উর্ধ্বে রয়েছেন ? দেশের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কি এখনও সামরিক বাহিনীর হাতে রয়েছে ? আর যদি তা না হয়, তাহলে এসবের মানে কি ? পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার জন্য ভারতকে এই বলে দোষারোপ করা হয় যে, ভারত শান্তিবাহিনীদের উস্কানী এবং সাহায্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে জিইয়ে রাখছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্তির মূল কারণ এই শান্তিবাহিনীরা, শান্তিবাহিনীর অত্যাচারে জনজীবন আজ বিপর্যস্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা কি ভারতের সমস্যা না বাংলাদেশের সমস্যা ? বাঙ্গালী হওয়ার উপদেশ কি ভারত দিয়েছিলো না বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দিয়েছিলেন ? পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সমতলবাসী অনুপ্রবেশ ভারত ঘটিয়েছিলো না বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ঘটিয়েছিলেন ? পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে জেলা পরিষদ ভারত চাপিয়ে দিয়েছিলো না স্বৈরাচারী এরশাদ চাপিয়ে দিয়েছিলেন ? এরশাদের গৃহীত নীতিমালা চালু থাকবে বলে ভারত ঘোষণা দিয়েছিলো না বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দিয়েছিলেন ? নিজের দোষ অন্যের ঘারে চাপিয়ে দিয়ে কি দায়িত্ব শেষ ? নিজের দোষ অন্যের ঘারে চাপিয়ে সমস্যার সমাধান তো সম্ভবই নয় বরং নিজের ব্যাপারে অন্যকে নাক গলানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়। ভারত জুজুর ভয় দেখিয়ে জনগণকে বেশী দিন বিভ্রান্ত করা যাবে না। বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণ এ ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবে না। তদুপরি সরকারের মনে রাখা উচিত যে, জনগণের আশা-আকাঙ্খাকে পাশ কাটিয়ে সমস্যার সমাধান মোটেই সম্ভব নয়। এতে দেশ ও জাতির সম্মান বাড়ে না বরং মুখোশ উন্মোচিত হয় স্বৈরাচারী মনোভাবের। অন্যদিকে, সমস্যা সমাধান না হয়ে তা আরো গভীরতর হয় জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে। হামলা-পাল্টা হামলার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় শান্তিপূর্ণ জনপদ। উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় বারে বারে। দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যায়। জীবনের নিরাপত্তা হয় বিঘিœত। জনগণের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। ফলে সৃষ্টি হয় গণ আন্দোলন। গণ আন্দোলন নিশ্চিত করবে শাসক-শোষক শ্রেণীর পতনকে। তাই শাসক শ্রেণীকেই চিন্তা করতে হবে নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে। অন্যথায় জনগণ বাঁচার তাগিদে লড়াইয়ের পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে। এতে অন্যের উপর দোষ চাপানোর কোন মানে নেই। সুতরাং বর্তমান সংসদীয় সরকারকে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য উচিত এসবের দিকে নজর দেয়া। নইলে সংসদীয় সরকারের দৌড় সংসদেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কারণ, সংসদীয় গণতন্ত্রের ভেলকীবাজী দেখিয়ে জনগণকে কিছুদিনের জন্য ভোলানো যাবে বটে, কিন্তু তাতে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কিছুতেই সম্ভব নয়। আর যতদিন না জনগণের মৌলিক চাহিদা-খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদি পূরণ না হবে, ততদিন জনগণ আন্দোলনের মাঠ ছাড়বে না।
-----------------------------------
প্রকৃতি গড়ে যায় নিপুন হাতে
যে শিশু আজ ভূমিষ্ঠ হয়
পার্বত্যে, দেখে বারুদে ধূমায়িত
পৃথিবী, দমন পীড়নের লেলিহান
শিখা, শুনে নিয়ত আগ্রাসন
আর সাম্প্রদায়িক অত্যাচারের
দামামা। স্বভাবতই বেড়ে উঠে
সে প্রতিবাদী চেতনার অগ্নি 
স্ফুলিঙ্গ নিয়ে দমবন্ধ হয়ে আসা
পরিবেশে। তাকে আমি 
কিভাবে বলি, “হে প্রজন্ম 
নিশ্চুপ থাক, সয়ে যা সকল
অন্যায়, বর্বর অত্যাচার, বিলীন
হয়ে যা হে মানব শিশু এ 
ধরণীর মায়া ছেড়ে।” প্রকৃতি
নিজেই বিদ্রোহের বহ্নি জ্বেলে
দেয় পুত পবিত্র মানব সন্তানের 
ধমনীতে। এতো পরিস্থিতির
হাতে গড়া সৃষ্টি।
-------------------------------------------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন