পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ২ মে, ২০১৭

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ২৯ - ৩১

আন্তর্জাতিক
পেরুর গণযুদ্ধই বিশ্ব বিপ্লবের নতুন অগ্রযাত্রা
-         মিঃ পল্লব

“পেরু” হচ্ছে ল্যাটিন আমেরিকার একটি দেশ। কৃষি প্রধান এই দেশটির উত্তর-দক্ষিণ প্রলম্বিত ভাবে সমগ্র মধ্যভাগ জুড়ে রয়েছে সুউচ্চ আন্দেজ পর্বতমালা, যার সবটাই সবুজ অরণ্য দ্বারা আচ্ছাদিত। দেশের অবশিষ্টাংশ নদী বিধৌত সমতল ভূমি। রাজধানী হচ্ছে লিমা। এই পার্বত্যাধিক্য দেশটির মোট আয়তন ১৩ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। মোট ২৫টি Department বা রাজ্যে বিভক্ত। প্রতিটি Department আবার কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করা হয়েছে। পেরুর বর্তমান লোকসংখ্যা ২ কোটি ৩০ লক্ষ। কু-ই-চুয়া আর স্প্যানিশ হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের ভাষা।

তেল, তামা, রূপা, লৌহা, সীসা, দস্তা, বিসমাথ, সোনা, পারদ, ট্যাংষ্টেন ও ইউরেনিয়াম ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশের মানুষ আজ বিশ্বের অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত। উপরোক্ত প্রাকৃতিক সম্পদই যেন পেরুর জনগণের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তখনকার স্পেনীয় সরকারের। তাই ১৫শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পেরুর জনগণের উপর নেমে আসে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদের কালো থাবা। গ্রাস করে নেয় সমগ্র পেরু। সুদীর্ঘ ৩শত বছর ধরে পেরুর মেহনতি জনগণের উপর চলে স্পেনীয় বর্বর উপনিবেশিক শোষণ নির্যাতন। কিন্তু পেরুর জনগণ সেই দানবীয় অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাবার লক্ষ্যে অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে ১৮২১ সালের ২১শে জুলাই স্পেন তার সাম্রাজ্যবাদের কালো হাত গুটিয়ে নিলেও প্রকৃত মুক্তি আসে ১৮২৯ সালের দিকে আয়াকুচো রাজ্যে সংঘটিত এক ইতিহাসখ্যাত যুদ্ধের মাধ্যমে। স্পেনের উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেলেও তার চেয়ে আরও হিংস্র মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পেরুর জনগণের উপর নতুন করে চেপে বসে। আজও পেরুর মেহনতি জনগণ মুক্তি লাভ করতে পারেনি সেই তথাকথিত ইয়াংকী সভ্যতার কালো হাত থেকে। বর্তমান বিশ্বের তথাকথিত গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা ও বিশ্ব শান্তির প্রবক্তা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নির্লজ্জভাবে দমন পীড়ন চালাচ্ছে পেরুর জনগণের উপর। ষাটের দশকের শেষের দিকে ক্রুশ্চেভের নেতৃত্বে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের কালো হাতও পেরুর জনগণের উপর প্রসারিত হয়। যার ফলে ১৯৬৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও কিউবার সৈন্যে[র] উপস্থিত ঘটে। কৃষি অর্থনীতি নির্ভর পেরু এখন বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের করাল থাবায় ক্ষত-বিক্ষত। কৃষি অর্থনীতি থেকে আরম্ভ করে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান দেশীয় সামান্ত, মুসুদ্ধি বুর্জোয়া ও বহুজাতিক কোম্পানীদের হাতে।

এই YANKEE (মার্কিন) সাম্রাজ্যবাদসহ সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদ, এবং দেশী সামন্ত ও মুসুদ্দি বুর্জোয়াদের অত্যাচার থেকে মুক্ত করে প্রকৃত জনগণের সরকার কায়েম করার জন্য পেরুর জনগণ সুদীর্ঘকাল ধরে কমরেড মাও নির্দেশিত “গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও” নীতির ভিত্তিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কসবাদ, লেনিনবাদ, ও মাওসেতুং চিন্তাধারার আদর্শকে উর্ধ্বে তুলে ধরে যুদ্ধের পর যুদ্ধ করে যাচ্ছে পেরুর মেহনতি জনগণ। বর্তমান বিশ্বে যেখানে কমিউনিজমের এক বিরাট সংকটময় মুহুর্ত; ঠিক সময়ে পেরুর জনগণ প্রমাণ করে দিচ্ছে সঠিকভাবে মার্ক্সবাদ, লেনিনবাদ ও মাওসেতুং-এর চিন্তাধারার আদর্শে সজ্জিত কমিউনিস্ট পার্টিকে ধ্বংস করার কোন শক্তি এই পৃথিবীতে নেই। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মত পরাক্রমশালী শক্তির সম্মুখে পেরুর গণযুদ্ধ আজ সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কোনঠাসা হয়ে পড়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক লালিত কুখ্যাত প্রেসিডেন্ট আল বার্তো ফুজিমোরো ও তার সরকার। তাই অনন্যোপায় হয়ে তার লালিত পুত্রকে রক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রেরণ করেছে গেরিলা যুদ্ধ বিরোধী বিশেষ ট্রেনিং প্রাপ্ত এবং ভিয়েতনাম ও পানামায় কুখ্যাতি অর্জনকারী “গ্রীন বেরেট” সেনা দলকে। এই গণযুদ্ধের নেতৃত্বে রয়েছে পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি (PCP)। আজ যার নেতৃত্বে পেরুর গণযুদ্ধ উত্তর উত্তর বৃদ্ধি ঘটছে তিনি হচ্ছেন কমরেড আবিম্যাল গুজমান। যার পরিচয় কমরেড গণজালো নামে। পিসিপি সংগ্রামের বর্তমান যে স্তরে উপনীত হয়েছে, তার পিছনে রয়েছে সুদীর্ঘ এক উত্তান পতনের ইতিহাস। এই সামান্য পরিসরে যদিও পিসিপি-এর বিস্তারিত ইতিহাস বর্ণনা করা সম্ভব নয়, তথাপি মোটামুটি ধারণাটা পাঠকের সামনে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করবো।

পিসিপি এর আনুষ্ঠানিক জন্ম ১৯২৮সালে। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তরুণ মার্ক্সবাদী জোসে কার্লোস ম্যারিয়েতে গুই । এই ক্ষণজন্মা বিপ্লবী মানুষটির রোগে মৃত্যু ঘটে পাটি প্রতিষ্ঠার দুবছর পরে। অর্থা ১৯৩০ সালে। তার জীবদ্দশায় লেনিন-ষ্টালিন প্রতিষ্ঠিত তৃতীয় আন্তর্জাতিকে সদস্য পদ লাভ করে পিসিপি। কিন্তু কমরেড ম্যারিয়েতে গুই যে স্বপ্ন নিয়ে পাটি গঠন করেছিলেন, তার মৃত্যুর পর, সেভাবে আর পার্টি পরিচালিত হয়নি। সংশোধনবাদে অধঃপতিত হয়ে নির্বাচন পন্থী সংসদীয় রাজনীতি ও অভ্যুত্থানের লাইনের নামে পিসিপি বৈপ্লবিক সত্ত্বাকে হারিয়ে ফেলে। পার্টি চলতে থাকে সুবিধাবাদী ধারায়। ১৯৫৩ সালে কমরেড স্টালিনের মহাপ্রয়ান ঘটলে ক্রুশ্চেভের নেতৃত্বে রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টিও সংশোধনবাদে অধঃপতিত হয়। যার ফলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কমরেড মাও সেতুঙের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মহা বিতর্ক Great Debate গড়ে তুলে। এই মহা বিতর্কের সময় পিসিপি দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তারপর হতে চলতে থাকে দু’ ধারার মতাদর্শগত সংগ্রাম। মাও সেতুঙ চিন্তাধারার আদর্শে উজ্জীবিত একান্ত বিপ্লবীরা কমরেড গনজালোর নেতৃত্বে মার্ক্সবাদ লেনিনবাদ ও মাওসেতুঙ চিন্তাধারার পতাকাকে উর্ধ্বে তুলে ধরে এবং শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। ১৯৬৪ সালে ক্রুশ্চেভপন্থী সংশোধনবাদীরা পার্টি থেকে বহিস্কৃত হয়। তারপর হতে পার্টিকে পুনর্গঠনের জন্য আত্মনিয়োগ করেন বিপ্লবীরা। পিসিপি ম্যারিয়েতে গুই এর লাইনকে পর্যালোচনা করে তাকে উর্ধ্বে তুলে ধরে। এবং পেরুর আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক ও ভৌগৌলিক অবস্থার সাথে সংগতি রেখে মাও এর প্রদর্শিত গণযুদ্ধের লাইনকে আকড়ে ধরে।

কমরেড গনজালো ছিলেন শিক্ষক। আয়াকুশো রাজ্যের হুয়ামাঙ্গা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক কমরেড গনজালোর নেতৃত্বে ১৯৭০ সালে “ব্যানডেরা রোজা” বা লাল পতাকা নামে একটি কমিউনিস্ট গ্রুপ ভেঙ্গে পিসিপি এর নতুন ভ্রুণ জন্ম নেয়। যার পরিচয় “মেণ্ডেরো লুসি নোসো” সাইনিং পাথ বা অলোকোজ্জ্বল পথ। ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে পার্টি কেন্দ্রীয় কাজ হিসেবে নির্ধারণ করে শ্লোগান তুলে “সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হও”। এই শ্লোগানকে সম্মুখে রেখে ম্যারিয়েতে গুই এর সূত্রবদ্ধ “সাধারণ রাজনৈতিক লাইন ও সশস্ত্র সংগ্রামের লাইন” গৃহীত হয়। এবং ৭৮ সালের কমরেড গনজালো অধ্যাপনার কাজ ছেড়ে আত্মগোপন করেন এবং পার্টিকে প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৯ সালে পার্টির নবম প্লেনামে সশস্ত্র সংগ্রামকে কেন্দ্রীয় কাজ হিসেবে গ্রহণ করে ঘোষণা করা হয় - “সশস্ত্র সংগ্রাম সূচনা কর”। ১৯৮০ সালে ১৭ মে “সশস্ত্র সংগ্রাম আরম্ভ করুন” এই শ্লোগানের ভিত্তিতে গণযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। তারপর দিন অর্থা ১৮ মে তারিখে আয়াকুশো রাজ্যের চুমকি ভোট কেন্দ্রে প্রথম সশস্ত্র হামলা হয়। একই বছরে চীনের দুতাবাসের সামনে একটি মৃত কুকুর ঝুলিয়ে রাখে এবং মৃত কুকুরের গলায় ঝুলানো ছিল “দেং শিয়া পিং” এর নাম। এভাবে পেরুর গেরিলারা সশস্ত্র সংগ্রামের শুরুতে নয়া সংশোধনবাদের উপর আঘাত হানলেন। তারপরই বিভিন্ন দুতাবাসে ও সরকারের উপর আক্রমন চালানোর মধ্য দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সশস্ত্র সংগ্রামের ব্যাপকতা দেখে ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট বেলা উন্দে বিপ্লবীদেরকে দমানোর জন্য প্রথম সারির সেনাবাহিনী মাঠে নামালেন। শুরু হয় জনগণের উপর দমন পীড়ন। এই দমন পীড়নের সময়েই পিসিপি গঠন করে জনগণের নিজস্ব বিপ্লবী বাহিনী " "Peoples Guerrilla Army (PGA)"। জনগণের বিপ্লবী গণযুদ্ধকে ধ্বংস করার জন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ “মাদক বিরোধী অভিযান” এর ধুয়া তুলে ফুজিমোরো সরকারকে ঋণ, অনুদান, সামরিক সাহায্য বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়। এত কিছু আয়োজন করা সত্ত্বেও পরিস্থিতি আয়ত্ত্বে আনতে না পেরে রাজধানী লিমা সহ ৯ টি ডিপার্টমেন্ট-এ জরুরী আইন জারী করতে হয়েছে। “একজন সেণ্ডোরা বিপ্লবী গেরিলাকে খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজনে ১০ জন নিরিহ জনগণকে হত্যা করার” নীতি পেরুর প্রতিক্রিয়াশীল সরকার হাতে নিয়েছে। ১৯৮১ হতে ৯১ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে পিসিপি নেতা কর্মী সহ প্রায় ৩০ হাজারের অধিক জনগণ শহীদ হয়েছেন। বন্দী শিবির গুলোতে চলছে নিয়মিত হত্যাকা-। সেভিয়েত সমর্থিত পেরুর প্রতিক্রিয়াশীল সরকার প্রধান এলাগার্সিয়া পিসিপি বন্দী নেতা ও কর্মীদের হত্যা করার জন্য সমগ্র দেশের বন্দী শিবিরগুলো থেকে বাছাই করে রাজধানী লিমার তিনটি জেলে একত্রিত করার ষড়যন্ত্র আরম্ভ করে। এই ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা বন্দীরা বুঝতে পেরে ১৯৮৬ সালে অন্যান্য বন্দীদের সহায়তায় লুরিগাস্নো, এবং নারী বন্দী শিবির মল্লাও এর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। নিজের হাতে যা আছে তা দিয়ে তারা লেলিয়ে দেয়া সৈন্য বাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং সরকারী বাহিনী হতে কেড়ে নেয়া হাতিয়ার নিয়ে ৬ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করে। পরে সরকার বিমান, গানবোট ও কামান থেকে অবিরাম গোলা বর্ষণের মধ্য দিয়ে তিনটি বন্দী শিবির ধ্বংস করে। এতে প্রায় তিন শতাধিক বিপ্লবী বন্দীকে হত্যা করা হয়। ১৯ জুন দিনটি পেরুর বিপ্লবী জনগণ " Day of Heroism" বা বীরত্বের দিন হিসেবে পালন করে। পিসিপি কর্তৃক আহুত ১৯৯০ মার্চের বন্ধ বানচাল করার লক্ষ্যে সরকার রাজধানী লিমা’র এক বস্তী এলাকার জন সমাবেশের উপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে ১১ জনকে হত্যা করে। এসব দানবীয় শাসনের বিরুদ্ধে পেরুর জনগণ শুধু নিজের উপর আস্থা রেখে কোন বিদেশী সাহায্য ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ সহ বিশ্বের সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে পেরুর জনগণ যে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন, তার একমাত্র তত্ত্বিক ভিত্তি হচ্ছে মার্ক্সবাদ, লেনিনবাদ ও মাওসেতুঙ চিন্তাধারার বাস্তব প্রযোগ।       

১৯৯০ সালের এপ্রিলে PGA -র কয়েক শত গেরিলা জনগণের সক্রিয় সহযোগিতায় হুয়ালাঙ্গা রিভারভ্যালির সান্টলুসিয়া’র শক্তিশালী ও সুরক্ষিত মার্কিন যুদ্ধ ঘাটি আক্রমণ করে। এতে সাতটি মার্কিন হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়। ১৯৮৯ সালে জুলাই মাসে ইয়ানুকো ডিপার্টমেন্ট এর সবচেয়ে সুরক্ষিত মাদ্রিয়ার সেনা ঘাটি দখল করে নেয়। চার ঘন্টা স্থায়ী যুদ্ধে প্রায় দেড় শতাধিক সৈন্য হতাহত হয় এবং প্রচুর পরিমাণ গোলা বারুদ দখল করে নেয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় গেরিলা আক্রমণের কারণে ফুজিমোরো সরকার এখন ব্যাতিব্যস্ত। PCP এর মতে পেরুর বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা আধা-সামান্ততান্ত্রিক, আধা-উপনিবেশিক। পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির আসল লক্ষ্য হচ্ছে মার্ক্সবাদ, লেনিনবাদকে সামনে রেখে পেরুর বাস্তব অবস্থানুসারে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব সমাধান করার লক্ষে নিম্নলিখিত কর্মসূচী গ্রহণ করা। সশস্ত্র গণযুদ্ধের পদ্ধতি হবে গ্রাম দিয়ে শহর দখল করা এবং তারই ভিত্তিতে -
(১) সাম্রাজ্যবাদের শাসন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা। প্রধানতঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ সহ সকল সাম্রাজ্যবাদের মুলোপাটন করা। (২) আমলাতান্ত্রিক পুজিবাদ ধ্বংস সহ দেশের এবং দেশের বাহিরে একচেতিয়া পুঁজি বাজেয়াপ্ত করা। (৩) সামন্ততান্ত্রিক ভূমি মালিকানা ধ্বংস করা “লাঙ্গল যার জমি তার” ভিত্তিতে কৃষকদেরকে জমি বন্টন করা এবং শর্ত সাপেক্ষে মাঝারী বুর্জোয়াদেরকে সমর্থন দেয়া। বিপ্লবী সশস্ত্র গণযুদ্ধের মাধ্যমে পুরানো রাষ্ট্র ব্যবস্থা ধ্বংস করে নয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা। উপরোক্ত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পেরুর গণযুদ্ধ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আন্দেজ পর্বতমালা ও দীর্ঘ নদী অববাহিকা থেকে পশ্চিমের প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত গেরিলাদের মুক্ত ঘাটি এলাকা গড়ে উঠেছে। PCP এর পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার গণ কমিটি। প্রতিক্রিয়াশীল সরকারের প্রশাসনের পরিবর্তে নিজস্ব বিপ্লবী সরকারের  প্রশাসন চালু রয়েছে। ভূমি সংস্কার ও উপাদন ব্যবস্থার পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠছে নতুন অর্থ ব্যবস্থা। ধর্মীয় মৌলবাদ ও সামন্ত প্রতিক্রিয়াশীল সরকারের পরিবর্তে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন শিল্প-সংস্কৃতি। প্রতিদিন প্রসারিত হচ্ছে নতুন নতুন ঘাটি এলাকা। যে কোন মূহুর্তে সাম্রাজ্যবাদের কালো শাসন ভেঙ্গে গোটা দেশ ব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হতে পারে জনগণের সরকার। পেরুর বিপ্লবী যুদ্ধকে বিশ্ব বিপ্লবে পরিণত করার লক্ষে " Revolutionary International Movement (RIM)) ১৯৯১ সালকে " 1991 Year of the International Solidarity with the Peoples War in Peru" বা পেরুর গণযুদ্ধের সাথে আন্তর্জাতিক সংহতি বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এতে শ্লোগান তোলা হয়েছে " Yankee go home" (মার্কিনীরা হাত গুটাও)। দেশে দেশে সত্যিকার বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিগুলো পেরুর গণযুদ্ধের সাথে সংহতি গড়ে তুলেছে। আমাদের দেশেও গড়ে উঠেছে “পেরুর গণযুদ্ধ সংহতি পরিষদ” নামে একটি কমিটি। ফ্রান্স, স্পেন, মেক্সিকো, নেপাল, ভারত, আমেরিকা ও ইতালী সহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের কমিটি গড়ে উঠেছে।

----------------------------------------------------------------------------------------------------

ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষের পক্ষে, অন্যায়, অত্যাচার তথা প্রচলিত অপশাসনের নারকীয় অবস্থা থেকে নিস্কৃতির সাহসী সংগ্রামে যারা আপোষহীন, সুবিধাবাদী লেজুড়দের যারা ঘৃণা করে তারাই আমাদের সহযোদ্ধা। সুতরাং শুধু তারাই এসো শংকাহীন দৃপ্ত চেতনায় অনির্বাণ মশাল নিয়ে আমাদের প্রতিবাদী ব্যানারে।

প্রতিনিধি/সংবাদ দাতা/রিপোর্টার/বিক্রয় এজেন্ট-এর আবেদন পত্র

প্রিয় সম্পাদক                                                                                                          
 রাডার (RADAR)

আমি আপনাদের “রাডার” প্রকাশনার সাথে প্রতিনিধি/সংবাদ দাতা/রিপোর্টার/বিক্রয় এজেন্ট হিসেবে সম্পৃক্ত হতে চাই। এ প্রেক্ষিতে আমি আমার প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ পূরণ করে পাঠালাম।

নামঃ                                                   পিতার নামঃ
পেশাঃ                                                   যোগ্যতাঃ
যোগাযোগের ঠিকানাঃ                                                                                                                                                       
আবেদনকারীরর স্বাক্ষর
বিঃদ্রঃ    আগ্রহীরা অবশ্যই শুধুমাত্র এই ফরম পূরণ করে কেটে পাঠাবেন। অন্য কোন ফরমে আবেদন গ্রহণ করা হবে না।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন