পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ২ মে, ২০১৭

রাডার (বিজয় দিবস সংখ্যা): পৃষ্ঠা: ২৩ - ২৬

 দৈনিক গিরিদর্পনে প্রকাশিত হাতেম তাই-এর কিছু কথার জবাবেঃ
-  মি. গণমুক্তি

দৈনিক গিরিদর্পনের ২২/১০/৯১ ইং তারিখের “হিল লিটারেচার ফোরামের ‘রাডার’, আজকের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং আমাদের কিছু কথা” শীর্ষক লেখাটি আমাদের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। আমরা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছিলাম মত-পথ নির্বিশেষে আমাদের সমালোচনা করার অধিকার সবার। পাশাপাশি আমরাও আমাদরে লেখার অধিকার চেয়েছি। মতামত প্রকাশ ও আলোচনা-সমালোচনার ব্যাপারে এই হচ্ছে আমাদের পরিস্কার বক্তব্য। তাই যে কোন গঠনমূলক, সৃজনশীল, দিক নির্দেশনামূলক সারগর্ভপূর্ণ আলোচনা-সমালোচনা আমাদের কাছে বেশ আদরণীয়। আমরা যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে সে ধরনের লেখা দেখতে চাই।

দৈনিক গিরিদর্পনে প্রকাশিত হাতেম তাই সাহেবের লেখা আমরা যে মনযোগ ও আগ্রহের সাথে দেখতে চেয়েছি, দুঃখজনক হলেও সত্য, তার লেখায় আমরা মনযোগ দেবার মতো কোন কিছুই পাইনি। আগ্রহের পরিবর্তে তার লেখা পড়তে অনীহা এসেছে এবং ঘৃণা জেগেছে।

তিনি পরিণত মন ও কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে লিখতে পারেননি। আবেগের বশবর্তী হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। অনেক অসংলগ্ন, অশোভন ও কুরুচিপূর্ণ উক্তি করে ফেলেছেন। সচরাচর আমরা কোন উদ্ভট ও অন্তসারশূন্য লেখাকে আমল দিই না এবং পরোয়াও করিনা। হাতেম তাই সাহেবের কাণ্ডজ্ঞানহীন সমালোচনাকেও আমরা মোটেই আমল দিতাম না। অহেতুক কাগজ-কালি খরচের বিলাসিতা করতে যেতাম না। কিন্তু তিনি সমালোচনা করার নামে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি লঙ্ঘন করে যেভাবে ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন তা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না।                                                                  
দেশের এত পত্র-পত্রিকা থাকতে কিসের তাড়নায় তিনি দৈনিক গিরিদর্পনের মতো একটা বিশেষ (?) পত্রিকায় রাডারের সমালোচনা করতে গেলেন ? এটা কি ঐ পত্রিকার কাট্তি বাড়াবার একটা বাণিজ্যিক কৌশল ? রাডারের Good will থেকে কিছু ফায়দা লুটার ন্যাকামীপনা ? নাকি আবার অন্য কিছু ? হাতেম তাই সাহেব যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ঐ সমালোচনা লিখে থাকুন- আমরা তার প্রতিটি লাইন ও বাক্যের জবাব দিতে পারি। উদ্ভট সমালোচনার পেছনে কাগজ ও কালি অপচয়ের কথা ভেবে আমরা শুধু নীচের কিছু বিষয়ের উপর আমাদের বক্তব্য তুলে ধরছিঃ

ক) হাতেম তাই সাহেব যে না জেনে - না বুঝে কথা বলেন, সেটা তার লেখাতেই প্রমাণ মিলছে “এ সংখ্যা ছাড়া (রাহুমুক্তি সংখ্যা) ইতিপূর্বে আর কখনো রাডার পড়ার সুযোগ আমার হয়নি। যতটুকু মনে হচ্ছে জন্মলগ্ন থেকেই রাডার এভাবেই বিতর্কিত, উগ্রসাম্প্রদায়িক ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা বিরোধী লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।”
পুরোপুরি না জেনে শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে যে তিনি মনগড়া মন্তব্য করতে পারেন- সেটা তো তার কাণ্ডজ্ঞানহীনতা।
খ) “প্রকাশনা নিষিদ্ধ হয় সবই রাষ্ট্রীয় বৃহত্তর স্বার্থে। রাডারের প্রসঙ্গেও একথা প্রযোজ্য ... ”      
দেশে স্বৈরশাসনকালে “যায় যায় দিন”, “মানচিত্র”, “বিচিত্রা” সহ অনেক পত্রিকার মতো “রাডার”ও নিষিদ্ধ হয়েছিল। পরবর্তীতে স্বৈরশাসনের পতন ঘটলে অন্যায়ভাবে জারীকৃত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। রাডারের নিষেধাজ্ঞাও অন্যায় ছিল বলে সে সময় প্রত্যাহার করা হয়েছিল। অথচ আশ্চর্য, হাতেম তাই সাহেব স্বৈরচারী সরকারের জারীকৃত নিষেধাজ্ঞাকে “রাষ্ট্রীয় বৃহত্তর স্বার্থে” বলে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছেন। এতে বুঝতে আর বাকী নেই তিনি যে এখনো স্বৈরাচারী সরকারের নীতির পক্ষে ওকালতি করে যাচ্ছেন।
এজন্য দেশের পত্র-পত্রিকায় অহেতুক লেখা হচ্ছে না যে - স্বৈরচারের পতন হলেও তাদের দোসর-দালালরা দেশের আনাচে-কানাচে রয়ে গেছে। উপরোক্ত মন্তব্যকারী ব্যক্তিও যে স্বৈরচারের দোসর-দালাল নন তার নিশ্চয়তা কোথায় ?
গ) (১) রাডার-এর অভ্যুদয় লেখাটি সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি নিজের কপালকে দায়ী করে এভাবে বিলাপ করেছেন - “আমাদের (পার্বত্যবাসীর) দুর্ভাগ্য, রাডার ... খুঁজে বের করতে পারেনি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত কারণ। ... কেবল পেরেছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে, সার্বভৌমত্বকে কটাক্ষ করতে, পেরেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করতে।”
রাডার কতটুকু পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত কারণ তুলে ধরতে পেরেছে- সেই বিচারের ভার সচেতন সম্মানিত পাঠক মহলের। তারাই রায় দেবেন রাডার কতটুকু সফল, আর কতটুকু ব্যর্থ। আমরা তো দাবী করিনি যে- রাডার সবকিছু নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে পেরেছে। উক্ত প্রবন্ধের নিবন্ধকার এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন “রাডার প্রকাশনা সবে তিন বছর হয়ে গেলো। সময়ের নিরিখে এই তিন বছর কিছুই নয়। তাই এখনও সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান নিয়ে কিছু বলার সময় হয়নি।”
আর “হিল লিটারেচার ফোরাম” তো এদশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান প্রদর্শন করেই একটি সৃজনশীল সাহিত্য সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কটাক্ষ ও চ্যালেঞ্জ করার তো প্রশ্নই আসে না এবং হিল লিটারেচার ফোরাম সে ধরনের কিছু করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। কোনরূপ যুক্তির ধারে কাছে না গিয়ে হাতেম তাই সাহেব এত অসংলগ্ন কথা কিভাবে বলতে পারেন অবাক হতে হয়। আসলে উনি নিজে সে সম্পর্কে কিছু ধারণা রাখেন কিনা সন্দেহ আছে। “প্রগতিশীলতা” হিল লিটারেচার ফোরামের অন্যতম মূলমন্ত্র। সুতরাং সাম্প্রদায়িকতার মতো পশ্চাপদ মানসিকতার বিষবাষ্প ছড়াবার মতো কোন পরিবেশ ও সুযোগ হিল লিটারেচার ফোরামে নেই।
গ) (২) রাডারকে বিদ্রুপ করে হাতম তাই লিখেছেন “... এরই প্রেক্ষিতে বলতে হয় রাডার বিকল, প্রকৃত পূর্বাভাস ধারণ করতে রাডার ব্যর্থ হয়েছে।”
উনি আসলে হোচট খেয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছেন। তাই বুঝতে না যে- রাডার বিকল হয়নি। বরং পার্বত্যবাসীর দুঃখের কথা অবিকলভাবে তুলে ধরেছে। আর না হলে উনি এত ব্যতিব্যস্ত কেন ? লেজে পা পড়লে তো লম্ফঝম্ফ হবেই। আমরা তো সেটাই দেখতে পাচ্ছি।
ঘ) (১) “জলপাই স্বৈরাচার, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রেক্ষিত” নিবন্ধটি সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন-“এ প্রবন্ধটিতে লেখক আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন বুঝা মুশকিল।”
লেন্স অপরিচ্ছন্ন থাকলে ক্যামেরায় তো ভালো স্পষ্ট ছবি আসবে না, তাতে অবাক হবার কি আছে ? হাতেম তাই নিজে বুঝতে পারেননি বলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। নিজের বুঝার অক্ষমতাকে ঢাকার জন্য তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীকে জড়িত করে বলছেন “পার্বত্যবাসী বিষ্মিত”। নিজের মন কলুষিত বলে তিনি বুঝতে পারেননি তাতে আমরা অবাক হচ্ছি না। কিন্তু পার্বত্যবাসীকে তিনি মিছামিছি জড়ালেন কেন ?
ঘ) (২) “পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিকে জলপাই স্বৈরাচার বলা হয়েছে, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে এযাবকাল আর কেহ এভাবে কটাক্ষ করতে পারেনি।”
দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে কটাক্ষ করা নয়, সেনাশাসনের অকার্যকারীতা ও ব্যর্থতাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। দেশপ্রেমিক জনগণ এত বছর হাড়ে হাড়ে তা উপলব্ধি করেছেন এবং উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারাও তা মানেন। এজন্য এরশাদের পতনের পর তার আহ্বান সত্ত্বেও দেশে সেনাশাসন কায়েম হয়নি। সেনাশাসন যদি উত্তম কিছু হতো, তাহলে জনগণ গণতন্ত্র চায়তো না এবং রাস্তায় প্রাণও দিত না।
ঘ) (৩) “এ নিবন্ধটিতে পুরো বাঙালী জাতিকে কটাক্ষ করা হয়েছে, অমানবিক বাঙ্গালীর উগ্রতা হিসেবে উল্লেখ করে”
 এটা ভালোভাবে না পড়ে না বুঝে মনগড়া মন্তব্য ছাড়া আর কিছুই নয়। হাতেম তাই নিবন্ধটি পড়ে নিজেই তো বলেছেন, “লেখক আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন বুঝা মুশকিল।” তিনি বুঝতে পারেননি বলেই নিবন্ধটিতে ভিন্ন একটা অর্থ আবিস্কার করে সম্ভবতঃ বিরাট (?) একটা কিছু করে ফেলেছেন। মাছিকে হাতি দেখছেন। কই এত লেখক-বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা রাডার পড়েছেন, তারা তো হাতেম তাই-এর মতো মনগড়া অর্থ আবিস্কার করেননি ? তার জ্ঞাতার্থে জানিয়ে দেয়া দরকার যে- হিল লিটারেচার ফোরাম এমন ধরনের একটা সংগঠন যা কোন জাতির উপর কটাক্ষ বা বিদ্বেষ প্রসূত মন্তব্য করার কথা চিন্তাও করে না। সে ধরনের হীন প্রবৃত্তি হিল লিটারেচার ফোরামের নেই এবং তা ফোরামের রীতি বিরুদ্ধও। বাংলাদেশের অনেক বরেণ্য লেখক-বুদ্ধিজীবীদের সাথে ফোরামের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক রয়েছে এবং গড়ে উঠেছে।
ঘ) (৪) “অথচ বাঙ্গালীদের মানবিক আচরণের কারণেই পাহাড়িরা উন্নতির মুখ দেখেছে, চাষবাস থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রী পর্যন্ত বাঙ্গালীরাই পথ দেখিয়েছে। পাহাড়িদেরকে নেংটি থেকে নেকটাই বাঙ্গালীরাই পরিয়েছে।”
তার ঐ উক্তি যারপর নেই কুরুচিপূর্ণ, অশোভন ও আক্রমণাত্মক এবং পুরো পাহাড়ি জাতিসত্ত্বাসমূহের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত ও অবমাননাকর। তাকে আমরা পাহাড়ি জাতিসত্ত্বাসমূহের প্রতি ঐ অবমাননাকর উক্তি প্রত্যাহার করার এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য আহ্বান করছি। অন্যথায় পাহাড়ি জাতিসত্ত্বাসমূহের প্রতি অবমাননার দায়ে আইনের আশ্রই নেবার চিন্তাভাবনা করা হবে।                                                                                                                                      বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী কিংবা নেকটাই .... এসব তো পশ্চিমারাই এ উপমহাদেশে প্রচলন ঘটিয়েছে সে কথা কে না জানে। হাতেম তাই-এর মতো একজন কুপমণ্ডুক-গণ্ডমূর্খ তো ইউরোপিয়ানদের উন্নত শিক্ষা-সংস্কৃতির উপর পোদ্দারি দেখাতে পারেন না।
ঘ) (৫) “এরশাদ স্বৈরাচারী হলেও স্থানীয় সরকার পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সাংবিধানিকভাবে।”
এটা অজ্ঞতাপ্রসূত উক্তি। তথাকথিত  স্থানীয় সরকার পরিষদ যে সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং সাংবিধানিক কোন গ্যারান্টিও নেই সে সম্পর্কে আপনি আরো ভালোভাবে খোঁজখবর  এবং পড়াশুনা করুন। এ নিয়ে উদাহরণ দিয়ে লেখা দীর্ঘ করতে চাই না।
ঘ) (৬) পার্বত্যবাসী একে (জেলা পরিষদকে)স্বাগত জানিয়েছে। এবং আরো ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছে।”
জেলা পরিষদকে স্বাগত ও সমর্থন জানাবার কী কী লক্ষণ তিনি দেখতে পেয়েছেন তা সুস্পষ্টভাবে বলতে পারেন নি। তবে, হাতেম তাই-এর জেলা পরিষদের প্রতি এত কেন দরদ ? এবং এত কেন মায়া ? জেলা পরিষদ ঠিকিয়ে রাখতে কেন এত ওকালতি- বুঝতে অসুবিধা হয় না। জেলা পরিষদের মতো ভণ্ডামীপূর্ণ ব্যবস্থার ফলে বেআইনী অনুপ্রবেশকারীরা যে বৈধতা পেতে পারে - সেই মোক্ষম লাভের তাড়নায় জেলা পরিষদের স্বপক্ষে হাতেম তাই-এর এত প্রচারণা ? জেলা পরিষদ ভাঙলে হালুয়া-রুটি খাবার স্বপ্ন ভেসে যাবে –- কপাল ভাঙবে এ কারণেই কি এত নাচানাচি ?
ঘ) (৭) “স্থানীয় সরকার পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ... হিল লিটারেচার ফোরামের মত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে ... পার্বত্যবাসী নিক্ষেপ করেছে আস্তাকুঁড়ে।”
পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তব অবস্থা তিনি বুঝতে পারছেন না। তাই উল্টাপাল্টা বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলা শুরু করেছেন। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে এই- হিল লিটারেচার ফোরামের রাডার প্রকাশিত হওয়ায় তথাকথিত স্থানীয় সরকার পরিষদের গোমর ফাঁস হওয়ায় পার্বত্যবাসী তাদের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে এবং পরিষদের উচ্ছিষ্টভোগীরাও অনুগ্রহ লোভীদের মুখে চুনকালি লাগিয়ে দিচ্ছে। তাই মতিচ্ছন্ন হয়ে অনেকে প্রলাপ বকতে শুরু করেছে।
ঙ) (১) “সেনাবাহিনী যদি সমস্যা দীর্ঘায়িত করে তাহলে সমস্যাকে সংক্ষিপ্ত করার জন্য ... হিল লিটারেচার ফোরামের মিঃ মানব মিত্র-রা বা অন্যান্যরা এগিয়ে আসেননি কেন ?”
এগিয়ে যাবার সুযোগ ও ক্ষেত্র কোথায় কিভাবে ছিল সেটা সে সময় হাতেম সাহেব কেন দেখিয়ে দেননি ? সে সময় না বলে এখন অবেলায় কেন সে সব কাসুন্দির অবতারণা করছেন ? পান থেকে চুন খসলে সে সময় যেভাবে লোকজনকে নির্বিচারে ধরে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে মাসের পর মাস ঢুকিয়ে রাখা হতো, তাতে কি কোন যুক্তি প্রদর্শনের সুযোগ ছিল ? ? ? তাছাড়া হিল লিটারেচার ফোরামের লক্ষ্য হচ্ছে লিখে কোন সমস্যার স্বরূপ উন্মোচন করা এবং ভুল-ভ্রান্তিকে চিহ্নিত করা। এই নীতিগত অবস্থান থেকে হিল লিটারেচার ফোরাম তখনও এগিয়ে গেছে এবং এখনও এগুচ্ছে।
ঙ) (২) “... অসহায় মানুষ তাদের (মানবমিত্রদের) অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে।”
কি নির্লজ্জ বেল্লেলাপনা ! মিথ্যাচার ও বিকৃতিরও একটা সীমা আছে। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করে মানবমিত্ররা মানুষের দুঃখ-কষ্টের ছবি তুলে ধরছেন, সেটাই কি তিনি অসহায় মানুষের উপর অত্যাচার মনে করছেন ? হাতেম সাহেবের মূল্যায়নের ধরণ দেখে তার মানসিক সুস্থতার উপর সন্দেহ জাগছে।
ঙ) (৩) “... নেতৃত্বের দুর্নীতির কারণে (?) জনকল্যাণ সাধন করতে না পারে তাহলে এর বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে তা দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলে নেতৃত্বকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করে স ও যোগ্য লোককে নেতৃত্বে আনা যায় তাই বলে স্থানীয় সরকার পরিষদ ভেঙ্গে দেয়া যায় না।”
তাহলে হাতেম সাহেব পরোক্ষভাবে হলেও জেলা পরিষদের দুর্নীতির কথা ও জনকল্যান না হবার কথা স্বীকার করে ফেলেছেন। কিন্তু তিনি আবারও ভূল করে ফেলেছেন। তার বক্তব্য মনে হয় তিনি নতুন বোতলে পুরাতন মদ ঢালতে চান। তা তিনি চাইতে পারেন, কিন্তু জনগণ পারে না। ত্রুটিপূর্ণ জেলা পরিষদকে মুলোপাদন করে জনগণ তার ধ্বজাধারীদেরও আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে চায়।
চ) (১) “সামরিক ও স্বৈরাচারে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জনগণ যতটুকু পিষ্ট হয়েছে পাহাড়ি জনগণ ততটুকু হয়েছে বলে মনে হয় না।”
না জেনে মনগড়া মন্তব্য করা ঠিক নয়। হাতেম সাহেবকে " Life is not ours" রিপোর্টখানি ভালোভাবে পড়ে দেখতে অনুরোধ করছি।
চ) (২) “পাহাড়িদের হজম করার শক্তি আছে স্থানীয় সরকার পরিষদ। আর তারা হজম করতে চায় জুমল্যা-। সুতরাং পেটের পীড়া  অনিবার্য।”
অত্যন্ত নীচুমানের ও অশোভন উক্তি। এটা মন্তব্যেরও অযোগ্য।
চ) (৩) “মিঃ পল্লব ও তাদের রাডারে কি গণতন্ত্রের কোন ছোঁয়া আছে ? সবই অগণতান্ত্রিক।”
কি ধরনের অগণতন্ত্র তিনি রাডারে দেখতে পেয়েছেন তা তো পরিস্কারভাবে তুলে ধরতে পারেননি। গণতান্ত্রিক দেশের অধিবাসী হিসেবে রাডারের সংশ্লিষ্টরা গণতান্ত্রিক উপায়ে ও অধিকারে লিখতে চেয়েছে। এতে রাডারে অগণতান্ত্রিক বলে তো কোন ব্যাপারই থাকতে পারে না। আদতে তিনি নিজেই বোধহয় গণতন্ত্র সম্পর্কে বুঝেন না। তাই কোনটা অগণতান্ত্রিক সেটাও ধরতে পারেননি। তার এহেন লেজে গোবরে অবস্থার জন্য আমাদের দুঃখ হচ্ছে। আমাদের পরামর্শ- উনি গণতন্ত্র সম্পর্কে ভালোভাবে পড়ুন।
ছ) “পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালীদের বসবাসের অধিকার সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে সে কথা।”
সংবিধানের ৩৬ নং অনুচ্ছেদটি পড়ে হাতেম সাহেব তাহলে এতটুকু বুঝেছেন ? ঐ অনুচ্ছেদে যে “জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে” কথাটিও সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে, তার মর্মার্থ কি তাহলে তিনি বুঝতে পারেন নি ? ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিতেও সংবিধানের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত অনুরূপ “যুক্তিসঙ্গত বিধি নিষেধ” আরোপিত ছিল। এবং সে কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগত অনুপ্রবেশ ও বসতিস্থাপন বেআইনী এবং অবৈধ। বর্তমানেও সংবিধানের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত “জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ” কথাটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় প্রযোজ্য।
জ) “ইতিমধ্যে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মুখোশ পার্বত্যবাসীর কাছে উন্মোচিত হয়েছে। তাদের গণতান্ত্রিক দাবী হজম করতে না পেরে এর বিরুদ্ধে হরতাল করেছে।”
কেমন হরতাল করেছে নীচের ছবিটা দেখুন। বাড়তি মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। 

আর হাতেম সাহেব পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি কলেজ শাখার সাঃ সম্পাদকের পদত্যাগের কারণ ও যে বিবৃতি উল্লেখ করেছেন- তা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। যেভাবে জোরপূর্বক মিথ্যা বিবৃতি আদায় করা হয়েছে তা সবার জানা। বেশী ব্যাখ্যার দরকার নেই।
ঝ) তিনি “বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের” তথাকথিত মহাসচিবের সাথে সুর মিলিয়ে “পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের” রিপোর্টকে “পক্ষপাতদুষ্ট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও উস্কানিমূলক” বলে প্রত্যাখান করেছেন।
যদি রিপোর্টটি সে ধরনের হয়ে থাকে তাহলে তা যাচাইয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করা দরকার। কিন্তু ঢাকায় নাগরিক কমিটি কর্তৃক তা পুনঃমুদ্রণের সময় কেন ছিনিয়ে নেয়া হবে ? জনাব শহীদুল্লাহকে নিগৃহীত হতে হবে ? তার মানেটা কি ?
ঞ) বদরুদ্দীন উমরের মতো দেশের একজন স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ, লেখক-বুদ্ধিজীবী রাডারে সাক্ষাকার দেয়ায় ব্যক্তিগত আক্রমণ করে হাতেম তাই তাকেও একচোট দেখে নিয়েছেন। বদরুদ্দীন উমর নাকি “একজন রাজনীতিক অথচ সংবিধান সম্পর্কে অজ্ঞ ?” আমাদের প্রশ্ন- হাতেম তাই নিজে সংবিধান সম্পর্কে কতটুকু অভিজ্ঞ ? তিনি সংবিধানের ঐ ৩৬ নং অনুচ্ছেদটি পড়েই নিজেকে সংবিধান বিশেষজ্ঞ মনে করছেন ? এতো কম মিথ্যা আহাস্মক নয়। হাতেম তাই খেই হারিয়ে ফেলে এক পর্যায়ে বদরুদ্দীন উমরকে “বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরীর কাছ থেকে শিক্ষা নিতে উপদেশ দিতে চেয়েছেন।” সেই আব্দর রহমান চৌধুরী কে ? কি তার আসল পরিচয় ? সেই চৌধুরী এমন কে হয়েছেন যে- সাক্ষাকার দেবার জন্য উমর সাহেবকে তার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে ? তাছাড়া হাতেম তাই এর স্পর্ধা এতটুকু গড়িয়েছে যে-তিনি উমর সাহেবের বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে পর্যন্ত খর্ব করতে উদ্যত হয়েছেন এই উক্তি করে, “তাকে এহেন বিতর্কিত বক্তব্য রাখা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।” এর জবাবে উমর সাহেবের বক্তব্য হাতেম তাই পরে পাবেন।

শেষ কথা শিরোনামে হাতেম সাহেব অভিযোগ এনেছেন “হিল লিটারেচার ফোরামের নীতি নাকি আগুন জ্বালানোর, নিভানোর নয়।” তার জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই- অন্ধকার দূরীকরণের জন্য যদি আলো জ্বালানোর দরকার হয়, তাহলে তার জন্য তো আগুন জ্বালতে হবে। আলো ছড়াতে হবে। তিনি রাডার সম্পর্কে বিষোদগার সৃষ্টি করতে বলেছেন “রাডারের জনকরা তো পার্বত্যবাসী নন, তারা রাজধানীর বিলাস বহুল জীবনের অধিকারী। তাই তো তারা গণতন্ত্রও বেশী বুঝে, অধিকারও বেশী চেনে।” নিজের বক্তব্যের সমর্থনে কোনরূপ যুক্তি খাড়া করতে না পেরে উম্মুক্ত [উন্মত্ত] হয়ে তিনি অসংলগ্ন কথা বলেছেন। তার সমালোচনা “নেকড়ে ও মেষ শাবক”-এর গল্পটিই মনে করিয়ে দেয়। গণতন্ত্র বুঝলে এবং অধিকার চিনলে- হাতেম তাই এর এত রাগ হবার কারণ কি ? আসলে কিছু নিমক হারামীর দল তো সব সময়ই চাচ্ছেন- পার্বত্যবাসীরা গণতন্ত্র ও অধিকার সম্পর্কে না বুঝে অন্ধকারে ডুবে থাকুক।

সবশেষ, হাতেম তাই গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে কোনরূপ তোয়াক্কা না করে যেভাবে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন ..... “সমূহ বিপদ। সুতরাং সময় থাকতে সাবধান” আমরা তার এই গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার অশুভ তপরতা ও আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে রাডারের সাথে সংশ্লিষ্টদের ওপর কিছু হলে আমরা হাতেম তাইকে দায়ী করবো।
পরিশেষে, রাডারকে সমালোচনা করতে চাইলে সুস্থ মস্তিষ্কে গঠনমূলক সমালোচনা করার জন্য আমরা আবারও হাতম তাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন