পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

রাডার (বৈসাবি সংখ্যা), পাতা- ২৩

রাডার
হিল লিটারেচার ফোরামের একটি অনিয়মিত প্রকাশনা
১৩ই এপ্রিল ’৯২
বৈসাবি সংখ্যা

পাতা: ২৩

পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
২০ শে মার্চ ’৯২ইং
সাহায্যদাতা দেশসমূহের বৈঠক অত্যাসন্ন
বাংলাদেশ নতুনভাবে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগের সম্মুখীন
বিগত বিশ বছর ধরে স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে সংগ্রামরত উপজাতীয় জনগণের আবাসভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের নতুন অভিযোগসমূহ গত রাত্রে বাংলাদেশ সরকারকে গভীরভাবে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। গণতান্ত্রিক সরকারের শাসনের এক বছর পর পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতির সামান্যই পরিবর্তন হয়েছে। “এখনো সেনাবাহিনী কর্তৃক বেপরোয়া ধরপাকড় অব্যাহত আছে এবং যাবতীয় নির্যাতন ও ধর্ষণ এখনো স্বাভাবিক ব্যাপার” - বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে তথ্যানুসন্ধানের আন্তর্জাতিক কমিশনের কো-চেয়ারম্যান এবং ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলফ্রেড টেলক্যাম্পার। কমিশনের ১৯৯১ইং রিপোর্ট (লাইফ ইজ নট আওয়ারস্ ল্যাণ্ড এ- হিউম্যান রাইটস্ ইন দি চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস) -এর নব-সংস্করণে সংযোজিত নতুন তথ্যসমূহ ঠিক এক বছর আগে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিশেষভাবে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। কমিশন মনে করে, ক্ষমতায় এক বছর থাকার পরও তার গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক কর্তৃত্ত্বকে সামান্যই প্রভাবিত করেছে- বরং বলা যায়, সেনাবাহিনীই পার্বত্য অঞ্চলের প্রকৃত শাসক। অভিযোগসমূহ বাংলাদেশকে সাহায্য লাভে অসুবিধায় ফেলতে পারে। কারণ ইদানিং দাতা দেশসমূহ গ্রহীতা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সাথে তাদের সাহায্যের পরিমাণ সম্পর্কিত করতে আগ্রহী। বিশ্ব ব্যাংকের সভাপতিত্বে সাহায্যদাতা দেশসমূহের বৈঠক আগামী ২১ ও ২২শে এপ্রিল প্যারিসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে - যেখানে দাতা দেশগুলো বাংলাদেশের প্রত্যাশিত ২.৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য পূরণ করবে কিনা তা সিদ্ধান্ত নেবে।

১৯৯০-এর গণ-আন্দোলনে প্রেসিডেন্ট হোসাইন মোঃ এরশাদের পতনের পর গত বছর মার্চ-এ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বার্মা থেকে বাংলাদেশ আসা ৬০/৭০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের ভরণ পোষণের ভার বহনের জন্যও সাহায্যের আবেদন করছে। উইলফ্রেড টেলক্যাম্পার মন্তব্য করে বলেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংখ্যা প্রায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উদ্ভাস্তু উপজাতীয় শরণার্থীদের সমান - যারা ১৯৮৬ সাল থেকে বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতের উত্তর-পূর্ব ত্রিপুরা রাজ্যের শরণার্থী শিবিরে এখনো অবস্থান করছে।

কমিশনের টঢ়ফধঃব রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে কিভাবে লিভার ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) -এর ম্যানেজার বাবু মনতোষ দেওয়ানকে গত জুলাই মাসে আর্মিরা ধরে নিয়ে যায়। তারপর থেকেই তাকে মারাত্মকভাবে মারধর, ইলেকট্রিক শক এবং আঙ্গুলে স্টাপলার মেরে দেয়া হয়। কমিশনের মতে মনতোষ দেওয়ানকে নির্যাতন করার কারণ হচ্ছে, সেনাবাহিনীর অভিযোগ ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক কমিশন বাংলাদেশ সফরে গেলে তিনি তাদের সাথে কথা বলেছিলেন। কমিশনের সদস্যরা বলছেন যে, বাংলাদেশে থাকাকালীন তারা যাদের সাথে কথা বলেছেন তাদের প্রত্যেকের নাম তারা নোট করেছেন এবং তাদের মধ্যে মিঃ মনতোষ দেওয়ান -এর নাম নেই। যখন স্ত্রী তাকে দেখতে যান তখন একজন আর্মি অফিসার তার স্বামী সম্পর্কে কাউকে কিছু না বলার জন্য সতর্ক করে দেন। ডিসেম্বরের শেষে হাই কোর্ট মনতোষ দেওয়ান-এর আটকাদেশ অবৈধ বলে ঘোষণা করে। কমিশনের জানা মতে তাকে এখনো ছেড়ে দেয়া হয়নি।

গত বিশ বছর যাবত পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্মি এবং সরকারী বাহিনীর দ্বারা অসংখ্য মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটেছে। সেনাবাহিনী পাল্টা অভিযোগ করেছে যে, পাহাড়িদের রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সংস্থা শান্তিবাহিনীও মানবাধিকার লংঘন করছে। জে,এস,এস-এর দাবী হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য স্বায়ত্তশাসন প্রদান এবং চার লাখ বাঙালিকে প্রত্যাহার করা যাদেরকে পূর্ববতী দুই সরকার কর্তৃক ইতিপূর্বে পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকায় পুনর্বাসিত করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারী ৯১-এর নির্বাচনে বিগত সরকারসমূহের পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত সংকীর্ণ নীতির অবসানের একটা সুযোগ ছিল বলে কমিশন মনে করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই সুযোগ গ্রহণ করার পরিবর্তে পূর্ববর্তী ঘৃণিত এরশাদ সরকারের সকল নীতি অব্যাহত রেখেছে।   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন