রাডার
হিল লিটারেচার ফোরামের একটি অনিয়মিত প্রকাশনা
১৩ই এপ্রিল ’৯২
বৈসাবি সংখ্যা
পাতা: ২১
জাগো জনতা, গড়ো প্রতিরোধ
- মিঃ চাইলা অং
অনেক হারিয়েছি আমরা। ভিটেমাটি, জায়গা-জমি, আত্মীয়-স্বজন, মান-ইজ্জত একে
একে সব কেড়ে নেয়া হয়েছে আমাদের। এখন জাতীয় অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকার জন্মগত অধিকার
কেড়ে নিতে উদ্যত হয়েছে কিছু অশুভ দানব। সেই ষাট দশক থেকেই হারানোর বিষাদময় ইতিহাসের
শুরু। কাপ্তাই বাঁধের উল্লাসী রাক্ষুসী নীল জল সেদিন ছলাৎ ছলাৎ করে পাহাড়িদের
ঘরবাড়ি জায়গা-জমি গ্রাস করে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। স্তব্ধ করেছিল সেদিন আনন্দ-কোলাহলপূর্ণ
নয়নাভিরাম সবুজ পাহাড়ি জনপদ। ছন্নছাড়া, দেশছাড়া হয়েছিল সেদিন আমাদের অনেকেই। তারপর
সেই হারানোর ধারাবাহিকতায় আজ মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি অস্তিত্ব বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।
এই দীর্ঘ সময় আমরা অনেক অসহনীয় অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-বঞ্চনার হিমালয়
বয়েছি। অনেক দঃসহ ভয়াল কালোরাত পেরিয়েছি এতকাল। অত্যাচারীর চাবুকের আঘাতে পিঠের ছাল
উঠে গেলেও নীরবে সহ্য করেছি আমরা। নিজের চৌদ্দ পুরুষের ভিটেমাটি কেড়ে নিলেও কোনো প্রতিবাদ
করিনি। দ্বগ্ধ বুকে হজম করেছি শোভা, অঞ্জলি, বটুদের ইজ্জত হারানোর করুণ আর্তনাদ।
আমরা মুহুর্তের মধ্যে আমাদের বিস্তীর্ণ জনাকীর্ণ জনপদগুলো শ্মশান হয়ে
যেতে দেখেছি। চোখের সামনে নিজের মা-বোনকে ধর্ষণ করার কুৎসিত রূপ দেখেছি।
অসুরদের রক্তনেশা মেটাতে পশুর মত হাজার হাজার পাহাড়ি নরনারীকে জবাই করতে দেখেছি। আর
দেখেছি দানবীয় হিং¯্রতায় উম্মত্ত
হয়ে ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুদের গলা টিপে হত্যা করে উল্লসিত হতে। স্মরণাতীত কাল হতে
সবুজ পাহাড়িয়া প্রকৃতি মাতার কোলে বেড়ে ওঠা এ জনপদের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীদের নিশ্চিহ্ন
করতে সর্বশক্তি দিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে একটি অশুভ শক্তি।
আমরা এখনো দেখি তথাকথিত কাউন্টার-ইন্সার্জেন্সির নগ্ন নখরাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত
হতে জনজীবন। এখনো প্রতিনিয়ত দেখি অশুভ শক্তির লাগামহীন দৌরাত্ম্য আর দান্তিক পদচারণা।
দেখি ভ- জনদরদী পদলেহীদের চক্ষুলজ্জাহীন উলঙ্গ বেহায়াপনা। আমরা এখানে প্রতিমুহুর্তে মৃত্যুর সাথে খেলা
করে বেঁচে আছি। আমরা প্রতি পাঁচ জনে পেয়েছি একজন স্বশস্ত্র রক্ষাকর্তা - আমাদের জীবন মরণের মালিক। এখানে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে
আমাদের মুক্ত বিচরণ। মানবাধিকার এখানে বুটের তলায় পিষ্ঠ। আর চিতাউর্দীর পকেটেই যাবতীয়
আইন-কানুন, বিধি-বিধান।
আমরা অনেক সহ্য করেছি। এবার নতুন করে জেগে উঠতে হবে। নতুন করে গড়তে হবে
সবকিছু। হারানোর আর কোন ভয় নেই। স্বপ্ন আছে স্বাধীন মুক্ত জীবন ফিরে পাবার। যে ঘর জ্বলে
পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, তা আবার নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। ফিরে পেতে হবে সেই কোলাহলপূর্ণ
স্বর্গীয় জীবন। যতসব অন্যায়-অত্যাচার-শোষণ-উৎপীড়ন ভাসিয়ে নিয়ে
ফেলে দিতে হবে বঙ্গোপসাগরে।
আজ তাই হতে হবে সংগঠিত, গড়তে হবে দৃঢ় ও লৌহকঠিন ঐক্য। ঐক্য মানেই শক্তি।
সমগ্র পাহাড়ি জনগণের দৃঢ়তার ঐক্য মানেই এক দুর্জয় মহাশক্তি। এই মহাশক্তি রোধে কারোর
সাধ্য নেই। জনতার এই মহাশক্তি দিয়েই সমস্ত অশুভ শক্তিকে চিরতরে ধূলিস্যাৎ করতে হবে। আর
কালক্ষেপণ নয়। দিকে দিকে এই ঐক্যশক্তি গড়ে তুলতে হবে। বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে প্রতিরোধ
সংগ্রামে। লক্ষ মানুষের প্রতিবাদের দুর্বার তেজী ¯্রােত বয়ে দিতে
হবে সারা চট্টলায়। জাগো জনতা, গড়ো প্রতিরোধ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন