পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

রাডার (বৈসাবি সংখ্যা), পাতা- ২০

রাডার
হিল লিটারেচার ফোরামের একটি অনিয়মিত প্রকাশনা
১৩ই এপ্রিল ’৯২
বৈসাবি সংখ্যা



পাতা: ২০


প্রতিবাদের অগ্নিশিখা হ’য়ে জ্বলে উঠুক এ তারুণ্য
মিঃ সুপ্রিয়

কারাগারের সংকীর্ণ প্রকোষ্ঠে আঠকে গেছে ছয়টি শ্লোগান। আঘাতে আঘাতে দুঃশাসন গুড়িয়ে দেবার মত অমিততেজী তারুণ্যের সেই শ্লোগান। সতেরই ফেব্রুয়ারী রাজধানীর পীচ ঢালা পথে টি,এস,সি, অপরাজেয় বাংলা থেকে পান্থপথ অবধি সেই শ্লোগান কাঁপিয়েছে ঢাকার মুক্ত আকাশ। পার্বত্য এলাকায় ভূতের মত জেকে বসা জলপাই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে মিছিলে এসেছিল তারা। লক্ষ নিপীড়িতের অব্যক্ত বেদনার ভাষা বলতে চেয়েছে তারা এদেশের কোটি মেহনতি মানুষের কাছে। সকল প্রকার নাগরিক অধিকার নিয়ে গণতন্ত্রকে ঐ শৈলচত্বরব্যাপী বিস্তৃত করতে চায় তারা। রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই সংসদীয় গণতন্ত্রকে অর্থবহ করে তুলতে অবিচ্ছেদ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অঘোষিত সামরিক শাসনের অবসান চেয়েছে তারা। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার সংগ্রামে তাদের এ আন্দোলন একটি অন্যতম শক্তি নিঃসন্দেহে।

অথচ হায় নির্লজ্জ উর্দী সাম্রাজ্য। ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে মানিকছড়ি ক্যাম্পে আটকে রেখে তামাসা তামাসা খেলা খেললো তারা। অতঃপর দেশে প্রচলিত আইনের কোনরূপ তোয়াক্কা না করেই চল্লিশ ঘন্টার পর থানা হাজতে সোপর্দ করে তারা হয়ে গেলো ধোয়া তুলসী পাতা। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা ও,সি, খালেদ ভাই অস্বস্থিতে পড়ে যান। কিন্তু না, থানা কর্তৃপক্ষকে নেংটি ইঁদুরের মত অনায়াসে বাধ্য করালো ছয়জন ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার জঘন্য মিথ্যা মামলা সাজাতে। সাবাস নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ। সাবাস ! কি বিচিত্র এ দেশ, মানুষ। জগ দেখলো না কি সহজ বেহায়াপনা। আর্ন্তাজাতিক ভাবমূর্তি সম্পন্ন এ দেশের সার্বভোমত্ব রক্ষায় নিবেদিত-প্রাণ কর্মীরা অবশ্যই জনগণের অংশ। এ বাহিনী এখন আর শিশু নয়। তারা এখন দক্ষ, সমর্থ ও সুশৃংখল বাহিনী - এতে আমাদের দ্বিমত নেই। দ্বিমত সেখানেই, যখন তারা দেশ রক্ষার নামে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে প্রশাসনকে বগলদাবা করেন। সন্ত্রাস দমনের নামে নিরীহ মানুষকে অত্যাচার করেন। বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে জিম্মি করে রাখেন অবাধে।

তবে আমরা নিশ্চিত জানি ঐ সাজানো অভিযোগে কারারুদ্ধ তরুণরা আগ্নেয় লাভায় জ্বলে উঠবে নিয়ত। ঐ লৌহ কপাট দিয়ে তারুণ্যকে আটকে রাখা হাস্যকর। গণতান্ত্রিক অধিকারকে শৃংখলাবদ্ধ করা নিন্দনীয়। এর চেয়ে লজ্জাকর রাষ্ট্রদ্রোহীতার মিথ্যা মামলা ঠুকিয়ে দেবার অরাজকতা। এটি আইনশৃংখলা রক্ষার নামে ভাওতাবাজী। সংবিধান পরিপন্থি অপশাসন মাত্র। আমরা এ নোংরামীর প্রাণঢালা ঘৃণা করি। প্রতিবাদ জানাই আমৃত্যু। দ্রুত অবসান দেখতে চাই এ ক্ষুদ্র প্রিয় রাজ্যের যত্তোসব নৈরাজ্যের।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন