পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৮

রাডার (বৈসাবি সংখ্যা), পাতা: ১৬ - ১৭

রাডার
হিল লিটারেচার ফোরামের একটি অনিয়মিত প্রকাশনা
১৩ই এপ্রিল ’৯২
বৈসাবি সংখ্যা

পাতা: ১৬ - ১৭


চা ল চি ত্র

সমীরণের স্বপ্ন  
তথাকথিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কুখ্যাত দালাল সমীরণ দেওয়ান এখন বিদেশে রাষ্ট্রদূত হবার স্বপ্নে বিভোর। ব্রিগেডিয়ার ইব্রাহীম নাকি তাকে কথা দিয়েছিলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানশীপ চলে গেলে তাকে বিদেশে রাষ্ট্রদূত বানিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সমীরণ নাকি এখন মহা ভাবনায় আছেন, পাছে তাকে ফিলিফাইনে রাষ্ট্রদূত বানিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কারণ এখানে নাকি কমিউনিষ্ট বিদ্রোহিদের শক্তি খুব বেশী।
-------------------------------------
গৌতমের একটি ধাপ                                                                                                            তথাকথিত রাংগামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান শৃগালের ন্যায় ধূর্ত। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হবার পর তিনি বরাবরই বলতে থাকেন যে জেলা পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের একটি “ধাপ” মাত্র, চূড়ান্ত সমাধান নয়। এটা বলে তিনি দু’কূল রক্ষা করার চেষ্টা করেন। প্রথমতঃ জেলা পরিষদের যারা বিরোধী তাদেরকে বুঝাতে চান যে তিনিও এটাতে তৃপ্ত নন। অন্যদিকে সরকারকে বুঝাতে চান যে, তার প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা আরো একটু বাড়িয়ে দিলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। অথচ তিনি “স্বায়ত্তশাসন” প্রয়োজন মনে করেন না। গৌতমের এই ধূর্তামী প্রসঙ্গে রসিকজনেরা বলেন, গৌতমের এসব নাকি গর্বাচেভীয় কায়দায় রাজনীতি।                                                                                                                                   
------------------------------------
জেরীর মহানুভবতা                                                                                                               
বান্দরবান পার্বত্য জেলা চেয়ারম্যান চাচিংপ্রু জেরী এই তথাকথিত জেলা পরিষদের ইতিহাসে একটা চমক সৃষ্টি করতে চান। সরকার প্রচার করে থাকেন যে, পাহাড়িদের বেলায় চাকুরীর ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা একধাপ শিথিলযোগ্য (যদিও বাস্তব বড়ই কঠিন)। জেরী মনে করেন এটা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত অ-পাহাড়িদের প্রতি একটা বৈষম্য। তাই তিনি বিশেষ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি লিখেন এই দাবী করে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অ-পাহাড়িদের ক্ষেত্রেও চাকুরীর ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা একধাপ শিথিল করতে হবে। বিশেষ মন্ত্রণালয় তার এই দাবী কতটুকু আমল দিয়েছেন জানা যায়নি। কিন্তু এখন জেরী সাহেব সুযোগ মত অ-পাহাড়িদের বলেন, “দেখ আমি তোমাদের কত মহানুভবতা দেখিয়েছি। সুতরাং আগামী নির্বাচনে আবার........”                    
-----------------------------------------
সমীরণের গাড়ির বাহার                                           
সমীরণের পাজেরো গাড়িটি একদা খাগড়াছড়ি বাজার ট্রাফিক জামে আটকা পড়ে। এমন সময় আরো কয়েকটি সম-মানের পাজেরো গাড়ি তার গাড়িটির আশে-পাশে এসে থামে। তখন সমীরণ ড্রাইভারের কাছে জিজ্ঞাসা করেন “এখানে থামানো পাজেরোর মধ্যে কোনটা বেশী ভালো?” ড্রাইভার প্রভুর সন্তুষ্টির জন্য বলে, “স্যার আপনারটা”। সমীরণ পিকপিক করে হেসে বলেন, “ঠিক বলেছ। ঐগুলো বাজে, দাম বেশী হলে ১২/১৪ লাখ হবে Ñ আমারটা তো ২৫ লাখ।”                                    
-----------------------------------------
দালালদের পদত্যাগ কর্মসূচী                                     
পাহাড়ি গণ পরিষদ ও ছাত্র পরিষদসহ সর্বস্তরের জনগণ যখন গণধিকৃত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত রাজনেতিক সমাধানের দাবী জানাচ্ছে, তখনই তিন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করার হীন কৌশল অবলম্বন করে। এরই অংশ হিসেবে ৭/১১/৯১ইং তিন চেয়ারম্যান এক যুক্ত ঘোষণায় তথাকথিত ১১ দফা দাবী ঘোষণা করে। সেখানে জেলা পরিষদের ২২টি বিষয় হস্তান্তরের দাবী ছাড়াও আরো কিছু শ্রুতিমধুর দাবী ছিল। সবচেয়ে বড় কথা, এই দাবী পূরণের জন্য সরকারকে ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় সীমাও বেঁধে দেয়া হয়েছিল, অন্যথায় পদত্যাগ। সময়সীমা অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু তিন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এখনো ..........।                    
-----------------------------------------
নন্দিতের গুলিবিদ্ধ হবার নাটক                                               
গত ২২শে ফেব্রুয়ারি ’৯২ নন্দিত নামের এক আত্মসমর্পনকৃত ব্যক্তিকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে তিনি গুলিবিদ্ধ হলেও বেঁচে যান। গুলিবিদ্ধ হবার পর নন্দিত যখন হাসপাতালের জরুরী চিকিসায় রয়েছেন, তখন জনৈক জেলা পরিষদ সদস্য মন্তব্য করেন, “পিস্তলটা এখন পূর্ণজ্যোতির বাসা তল্লাশী করলে পাওয়া যাবে।” এই পূর্ণজ্যোতিও একজন জেলা পরিষদ মেম্বার, যার নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে দহরম-মহরম সম্পর্ক রয়েছে এবং অনেক সময় আর্মির পোশাক পড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে অপারেশনে গিয়ে নিরীহ লোক ধরে নিয়ে আসে বলেও অভিযোগ রয়েছে।            
----------------------------------------
কুখ্যাত হেডম্যান দীপংকরের কারসাজী              
দীঘিনালার কুখ্যাত হেডম্যান দীপংকরের দৌরাত্ম্যে দীঘিনালার নিরীহ জনসাধারণ অতিষ্ঠ। তিনি এখন একটা চমকার ব্যবসা আরম্ভ করেছেন। ব্যবসাটা হলো নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের হাতে যে কোন নিরীহ লোককে “শান্তিবাহিনী” বলে ধরিয়ে দেয়া এবং গ্রেফতারকৃতদের ছাড়িয়ে আনার আশ্বাস দিয়ে মোটা অংকের ঘুষ (যা ৫০ হাজার টাকার নীচে নয়) আদায় করা। যারা এই মোটা অংকের ঘুষ দিতে না পারবেন তারা রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা মাথায় নিয়ে বছরের পর বছর শ্রীঘরে থাকবেন। এই অংক তার সাথে গ্রেফতারকারীর আনুপাতিক হারে ভাগ হয়। তার এই পুঁজি ছাড়া ব্যবসায় তিনি যে দাপট দেখাচ্ছেন তাতে ওখানে তাকে উপাধি দেয়া হয়েছে 2-I.C
অর্থা ব্রিগেডিয়ার সাহেবের নীচের র‌্যাংক। এভাবে মোটা অংকের ঘুষ নেয়ার সময় স্বয়ং D.G.F.I.এর জনৈক ক্যাপ্টেনের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়লেও ক্যান্টম্যান্ট থেকে টেলিফোন আসার কারণে এই কুখ্যাত দীপংকরকে গ্রেফতার করতে পারেন নি। সেদিন থেকে দীপংকর তার 2-I.C -র দাপট আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।              
----------------------------------------
ছেলের জীবনের দাম এক হাজার টাকা  
গত ৫/১/৯২ইং পানছড়ি জোন-এর C. O. সাহেব পানছড়ি থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। খুব দ্রুত বেগে চলছিল তার গাড়িটি। গুইমারার লুনধুক্যা গ্রামে এসে হঠা তার চলমান গাড়িটি গংরী মারমা নামে তের বছরের এক বালককে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে বালকটি সংগে সংগে মারা যায়। পরদিন গুইমারা জোন-এর অধিনায়ক বেদনাহত পিতা কংজ মারমাকে ছেলের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক হাজার টাকা প্রদান করেন।                         
-----------------------------------------
তোমাকে গুলি করলেও . . .
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক পাহাড়ি ছাত্র তার বড় ভাইকে ছাড়িয়ে আনার জন্য গত ১৯ শে ফেব্রুয়ারি বগাছড়ি আর্মি ক্যাম্পে গিয়েছিলেন। সেখানে আলাপের এক পর্যায়ে ক্যাম্প কমাণ্ডার মেজর গাজী ফিরোজ তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, “তোমার মত ছেলেকে বাড়িতে গিয়ে গুলি করে হত্যা করলেও এই মেজর ফিরোজ -এর কিচ্ছু হবে না।” গাজী ফিরোজ আরো বলেন, “সরকার আমাদের যেটুকু ক্ষমতা দিয়েছে, তার এক বিন্দুও আমরা ব্যবহার করছি না। যেকোন লোককে গুলি করে মারার ক্ষমতা আমাদের আছে।”
------------------------------------------
এগুলো ধরতেও লজ্জা করে
পার্বত্য চট্টগ্রামে রাডার একটি পাঠক সমাদৃত পত্রিকা। গত বিজয় দিবস সংখ্যার একটি কপি নানিয়াচর জোন-এর কমাণ্ডিং অফিসার ওয়াকিব মিঞার হাতে পড়লে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুর্বাশামনিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এগুলোতো (রাডার উচিয়ে ধরে) ধরতেও লজ্জা করে। চেয়ারম্যান সাহেব, ছেলেরা এসব কি লেখে ?”
-----------------------------------------
তুমি জুম্মল্যাণ্ড থেকে এসেছ   
নানিয়াচর জোন -এর কমাণ্ডিং অফিসার লেঃ কর্ণেল ওয়াকিব মিঞা জনৈক পাহাড়িকে প্রশ্ন করেন, “তুমি কোন দেশ থেকে এসেছো ?” উক্ত ব্যক্তি উত্তরে বলেন, “কেন স্যার, বাংলাদেশ থেকে।” এর পর C.O. সাহেব হোঃ হোঃ করে হেসে বললেন, “না, না, তুমিতো জুম্মল্যা- থেকে এসেছো।” লোকটি কোনকিছু না বুঝে বললো, ‘হ্যাঁ স্যার, আমি জুম কাটি।’ C.O. সাহেব তাকে আবার বললেন, “না, না, জুম কাটা নয়। ঐ যে শান্তিবাহিনীরা জুম্মল্যাণ্ড চায়, তুমি সেই জুম্মল্যাণ্ড থেকেই এসেছো।”
------------------------------------------
গরুও গেলো, শাস্তিও পেলো  
তিনি শীলছড়ি সাম্রাজ্যের অধিপতি মেজর আরফিন। গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিনা পয়সায় গরু ক্রয় করে গোমাংস ভক্ষণ করতে অভ্যস্ত। যেন “সিংহ আমি বনের রাজা”। অবশেষে জানুয়ারী ২৭ তারিখে এলো শাক্য সিংহ তালুকদারের কপাল ভাংগার পালা। একটা গরু দিতে হবে স¤্রাটকে। অগত্যা অনুরোধ “বেছে নিন স্যার”। কিন্তু দুর্ভাগ্যে, একমাত্র হালের জোড়ার একটিই মনপুতঃ হলো স্যারের। বিনয়ের সাথে হাত জোড় করে শাক্য সিংহ বললেন, “স্যার, এটি আমার হালের জোড়া . . . . স্যার। অন্য একটি বেছে নিন, স্যার।” অতঃপর এই কথা বলার পুরস্কার বেধড়ক শারীরিক অত্যাচার, শুধু অত্যাচার এবং পানিতে ডুবিয়ে অত্যাচার। তারপর বীরবেশে বীরপুত্র মেজর আরফিনের পছন্দসই সেই গরুটি নিয়ে প্রস্থান।
                                                       --------------------------------------
দাদা ডাকাতে . . . . . . . . . .           
সেদিন ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ৯২ইং। ইউ,পি নির্বাচনের দিন। জুড়াছড়ি উপজেলার বেগেনাছড়ি আর্মি ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন হায়দার তার দল বল নিয়ে টহলদানে রত। এমন সময় একটি নৌকা তাদের টহলযানের মুখোমুখি হলে ক্যাপ্টেন হায়দার কয়েকজন ছাত্রের সাথে কথা বলেন। বরকল -এর একজন ছাত্র তাকে “দাদা” বলে সম্বোধন করে। দাদা ডাকাতে ক্যাপ্টেন সাহেব নিজেকে অপমানিত বোধ করলেন এবং ছেলেটিকে আচ্ছাভাবে চার্জ করতে লাগলেন। পরে ক্যাপ্টেন সাহেব ছেলেটিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন সে ভবিষ্যতে যেন আর কোন আর্মিকে “দাদা” বলে সম্বোধন না করে। হায়দার সাহেব আরো বলেন, “বরকলে তোমাদের মত ছেলেদের ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে, কাজেই সাবধান।”
-------------------------------------
লেঃ কর্ণেল ইকবালের কৃষি ঋণ বন্টন    
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক বরকল শাখায় গত ১/৩/৯২ইং থেকে প্রকৃত কৃষকদের জন্য বোরো মৌসুমের ঋণ বিতরণ শুরু হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ব্যাংকের ঋণ বিতরণের নিয়ম কানুন লংঘন করে প্রকৃত বোরো মৌসুমের পাহাড়ি চাষীদের বঞ্চিত করে শুধুমাত্র পছন্দই এবং মুসলিম বাঙালি অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে লেঃ কর্ণেল ইকবাল কর্তৃক কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়।
------------------------------------
বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান করতে পারবে না কারণ . . . . .
গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বান্দরবান জেলায় নব নির্মিত স্থানীয় সরকার পরিষদের অফিস উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান বি,এন,পি সরকারের মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) অলি আহম্মদ। তার ভাষণে প্রধান অতিথি বলেন, “অশান্ত পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যা বর্তমান সরকার সমাধান করতে পারবে না। কারণ পার্বত্যবাসীরা বর্তমান বি,এন,পি সরকারকে বিগত সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয় নাই। তারা ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা অব্যাহত থাকবেই। “প্রধান অতিথির কাছ থেকে এ কথা শুনে জনগণের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পরিষদের চেয়ারম্যান সাচিংপ্রু জেরী, ম্যামাচিং এম,পি, প্রমুখ।

------------------------------------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন