রাডার
হিল লিটারেচার ফোরামের একটি অনিয়মিত প্রকাশনা
১৩ই এপ্রিল ’৯২
বৈসাবি সংখ্যা
পাতা: ১৫
আর, এস, ও এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী কর্তৃক
যৌথভাবে পাহাড়ি গ্রামে হামলা
গত ১২ইং ফেব্রুয়ারী ’৯২ তারিখ রাত ১০টার
দিকে বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাধীন সোনাইছড়ি ইউনিয়নের রেজু মৌজার
চুলাপাড়ায় (প্রোত্তংথি রোয়া) কমপক্ষে ৪০ জনের বার্মার আরাকানের একদল সশস্ত্র মুসলিম
মৌলবাদী R.S.O.
(Rohingya Solidarity Organization) ARIF(Arakan Rohingya Islamic Front) এবং কিছু সংখ্যক
স্থানীয় মৌলবাদী দুষ্কৃতিকারীদের সহায়তায় ১১টি সংখ্যালঘু চাক পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে
সর্বসহায় সম্পত্তি লুট করে নিয়ে যায়। হামলা চালানো কালে দুষ্কৃতিকারীরা নিরীহ গ্রামবাসীদেরকে
শারীরিক অমানুষিক নির্যাতন করে এবং মহিলাদেরকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। উক্ত গ্রামের আক্রান্ত
পরিবারের পুরুষদেরকে ঘরের বাইরে নিয়ে অমানুষিক শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় এবং মহিলাদেরকে
পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করা হয়। দুস্কৃতিকারীদের দ্বারা আক্রান্তদের নাম নি¤েœ দেয়া হলো-
১) ওয়ে
থোঁয়ে ও (বয়স-৩০ বৎসর) - তাকে শারীরিকভাবে অমানুষিক মারধোর
করা হয়। তার স্ত্রী ডমে নিন (২৭) কে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করা হয়।
২) হং
শোয়ে হ্লা- তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়
এবং তার স্ত্রী ছো মা হ্রীকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করা হয়।
৩) মং
ছা অং (৪০) -তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা
হয়। তার বৃদ্ধা মা থাউকে (৮০) মারধোর করা হয় এবং স্ত্রীকেও নির্যাতন করা হয়।
৪) ছা
ফ্রু অং (৯০) -এই অশিতিপর বৃদ্ধাকে নির্যাতন করা
হয়। তার মেয়ে নাং চিং গুকে মারধোর করা হয় এবং তার অবিবাহিতা নাতনী চিং রাখাইনকে (২৫)
দুস্কৃতিকারীরা পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে।
৫) তেজেন্দ্র
বড়–য়া (ক্রামং) - তাকে অমানুষিক
নির্যাতন করা হয় এবং তার স্ত্রী হ্রা মো তুকে পলাক্রমে ধর্ষণ করে।
৬) অং
থোঁয়ে চিং (২৭) - তাকে শারীরিকভাবে
অমানুষিক নির্যাতন করা হয় এবং তার সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়।
৭) আলুং
(৪০) - তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। তার স্ত্রী তা ধা
ওয়ানকে (৩৫) ধর্ষণের জন্য ঝাপিয়ে ধরলে তার শিশু পুত্রটি চিৎকার করে তখন দুস্কৃতিকারীরা
শিশুটিকে দা দিয়ে আঘাত করলে শিশুটি আহত হয় এবং তা ধা ওয়ানের মাথা কেটে যায়।
৮) মা
রেইন নু (১১) - তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।
৯) হ্লো
অং (২৮) - দুস্কৃতিকারীরা তার সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়।
১০) হ্রা
মো ছু (৪৫) - দুস্কৃতিকারীরা তাকে ধর্ষণ করে
এবং তার স্বামীকে অমানুষিক নির্যাতন করে।
১১) উ
মে ছিং (২৭) - স্বামী উ ওয়ে ডো - দুস্কৃতিকারীরা তাদেরকে অমানুষিক নির্যাতন করে এবং
সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়।
১২) মা
ঞেন্ট (৩০) - দুস্কৃতিকারীরা তার স্বামীকে অমনুষিক
নির্যাতন করে এবং তাকে পর্যায় ক্রমে ধর্ষণ করা হয়।
১৩) উমং
(৪০) - দুস্কৃতিকারীদের হাত থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু
তার নববিবাহিতা কন্যা মা না গুয়েকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করা করা হয়।
দুস্কৃতিকারীরা তাদের পাশবিকতা চরিতার্থ
করে চলে যাবার সময় নির্যাতিতদেরকে বার্মা চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে যায়। বাংলাদেশ
ছেড়ে না গেলে পরবর্তীতে তাদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে যায়।
এই ঘটনার সময় গ্রামের নিকটতম পুলিশ ফাঁড়িতে
খবর দিলে অসময়ে যেতে পারবে না বলে ফিরিয়ে দেয়। তবে দুস্কৃতিকারীরা চলে যাবার ৪ ঘন্টা
পর একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। অপর দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি বি.ডি.আর ক্যাম্পে গিয়ে
আক্রান্ত গ্রামবাসীরা নিরাপত্তার প্রার্থনা জানালে বি.ডি.আর Ñএর মেজর সাহেব তাদেরকে অন্যত্র চলে যেতে পরামর্শ দেন।
অন্যথায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। উক্ত গ্রামের পাহাড়িরা এখন
চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
বর্তমানে বান্দরবান ও কক্সবাজার এলাকায় বার্মা থেকে আগত রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী
ও স্থানীয় মৌলবাদীরা সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক হীন চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। অত্র এলাকায়
এখন সংখ্যালঘুদের জান মালের নিরাপত্তার অভাব বিরাজমান। এ মুহুর্তে সরকারের উচিত সেখানকার
স্থানীয় সংখ্যালঘুদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা। - হারবাং প্রতিনিধি
কর্তৃক প্রেরিত।
-------------------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন