পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৮

রাডার (বৈসাবি সংখ্যা), পাতা : ৪

রাডার
হিল লিটারেচার ফোরামের একটি অনিয়মিত প্রকাশনা
১৩ই এপ্রিল ’৯২
বৈসাবি সংখ্যা

পাতা: ৪


ঘটনা প্রবাহ
পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে মুক্ত আলোচনা
গত ২১ শে মার্চ ’৯২ আন্তর্জাতিক বর্ণবাদ বিরোধী দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় গণউন্নয়ন গ্রন্থ কেন্দ্রের সেমিনার কক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সম্পর্কে এক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সাপ্তাহিক “দেশদশ” এই মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে। মানবাধিকার কর্মী ফাদার আর, ডব্লিউ, টিম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভার শুরুতে বিশিষ্ট সাংবাদিক চিম্ময় মুসুদ্দী পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা বিষয়ক তার একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। তারপর আলোচনায় অংশ নেন যথাক্রমে রাশেদ খান মেনন এম, পি, (ওয়ার্কার্স পার্টি): জনাব কর্ণেল (অবঃ) আকবর হোসেন এম,পি,(বিএনপি); তোফায়েল আহমদ এম,পি,(আওয়ামী লীগ); দীপংকর তালুকদার এম,পি, (আওয়ামী লীগ); চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, পাহাড়ি গণ পরিষদ সভাপতি বাবু সুবোধ বিকাশ চাকমা, সাবেক ছাত্র নেতা মোস্তফা ফারুক, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক সালিম সামাদ।
আলোচকগণের মধ্যে কর্ণেল (অবঃ) আকবর হোসেন ব্যতীত সকলেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা বলে স্বীকৃতি দেন এবং রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানান। বক্তাগণ পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে সামরিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করায় সমস্যা আরো জটিল হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। কর্ণেল (অবঃ) আকবর হোসেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে মূলতঃ অর্থনৈতিক এবং আইন শৃংখলা জনিত সমস্যা বলে উল্লেখ করেন। সভাপতির ভাষণে ফাদার টিম পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘুদের জমি জবর দখলের প্রক্রিয়া রোধ করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা হাতে নেয়ার আহ্বান জানান। সভা শেষে “দেশদশ” পত্রিকার সম্পাদক জনাব ফারুক ফয়সাল একটি প্রস্তাবনা পেশ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের দাবী দেশে যেহেতু সার্বভৌম সংসদ রয়েছে, অতএব এই সমস্যা সংসদে উপস্থাপন করা হোক এবং সংসদীয় পদ্ধতিতেই এই সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হোক।  
------------------------
বেশ কয়েকটি আটকাদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জ  
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান পরিস্থিতির শিকার হয়ে দীর্ঘ দিন যাব বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক প্রায় ৪২ জন পাহাড়ি বন্দীর আটকাদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে মহামান্য হাইকোর্টে রীট আবেদন পেশ করা হয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় হতে এই রীট আবেদন শুরু হয়। আন্তার্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ব্যারিষ্টার আমীরুল ইসলাম ও এডভোকেট নাসিমসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী পিটিশনারদের পক্ষ হয়ে রীট আবেদনগুলো পরিচালনা করছেন।
এযাব মোট ২৬টি রীট পিটিশনের রায় বের হয়েছে এবং সব কয়েকটি আটকাদেশ অবৈধ বলে মহামান্য হাইকোর্ট রায় প্রদান করেছেন। এই রায় সমূহে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “যে মড়ঁহফ -এর ভিত্তিতে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এই আদেশ প্রদান করেছেন তা অবৈধ এবং এই অবৈধ আটকাদেশ বর্ধিত করাও অবৈধ। ঢাকায় অধ্যয়নরত পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে পিটিশনার হয়ে এই রীট আবেদনগুলো দাখিল করেছেন।                             --------------------------

CHT কমিশনের Update Report প্রকাশিত 
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন সম্প্রতি তাদের মূল রিপোর্ট " Life is not Ours "-এর  Update Edition প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে যে, স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। কমিশন অভিযোগ করেছে যে, এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে আগের মতই হত্যা, ধর্ষণ, ভূমি বেদখল, অনুপ্রবেশ, শারীরিক নির্যাতন, ধর্মীয় পরিহানি ইত্যাদি মানবতা বিরোধী কাজ চলছে। কমিশনের এই Update রিপোর্ট -এ মানবাধিকার লংঘনের বিভিন্ন ঘটনা সচিত্র উল্লেখ পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের সুপারিশ সমূহ পুনর্ব্যক্ত করা হয়। উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরের শেষার্ধে ভারতের ত্রিপুরার শরণার্থী শিবির এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরের পর CHT কমিশন ১৯৯১ সালের মে মাসে তাদের রিপোর্ট "Life Is Not Ours, Land and Human Rights in Chittsgong Hill Tracts, Bangladesh" প্রকাশ করে।  
----------------------------

স্পীকার সমীপে ছাত্র পরিষদের স্মারকলিপি পেশ        
দীর্ঘদিন যাবত বিরাজিত পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত রাজনৈতিক সমাধানের জন্য গত ১৭ই ফেব্রুয়ারী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ মাননীয় স্পীকারের সমীপে ৫ দফা দাবী সম্বলিত একটি স্মারকলিপি পেশ করে। স্মারকলিপি প্রদানের সময় রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত এম,পি, যথাক্রমে দীপংকর তালুকদার ও কল্পরঞ্জন চাকমাও উপস্থিত ছিলেন। পরিষদের সভাপতি মিঃ প্রসিত বিকাশ খীসা স্মারকলিপি পাঠ করার পর মাননীয় স্পীকারের নিকট প্রদান করেন। মাননীয় স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলী অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি এই সমস্যার সমাধানের জন্য একটি ঝঃধহফরহম কমিটি গঠনেরও আশ্বাস দেন।  
 
স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সমাবেশের আয়োজন করে। এতে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ৬ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে। মিঃ প্রসিত বিকাশ খীসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের নেতা নাজমুল হক প্রধান, বেলাল চৌধুরী, উদয় পাল, নাসিরুদ্দৌজা প্রমুখ এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিঃ করুণাময় চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিঃ কে,এস,মং। সমাবেশ শেষে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীরা স্পীকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে সংসদ ভবন অভিমুখে মিছিল সহকারে যাত্রা করে। মিছিলটি বাংলা মোটরে পুলিশ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হলে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে সংসদ ভবনে যান। একই দিন বিকালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলনেরও আয়োজন করে।   
---------------------

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতীক অনশন পালিত   
পার্বত্য চট্টগ্রামে বেপরোয়া ধরপাকড়, ধর্ষণ, বোমাবাজি ইত্যাদির প্রতিবাদে এবং ৬ জন ছাত্রনেতার মুক্তির দাবীতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে ঢাকা, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে একযোগে গত ২৩শে ফেব্রুয়ারী এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রদীপন, মনোপল, পুলকসহ ছয় জন ছাত্রকে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী মানিকছড়ি সেনাক্যাম্পে আটক করা হয়। তারা ১৭ তারিখ ঢাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সমাবেশ ও স্পীকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠান শেষে খাগড়াছড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন।                                                                                                                                      
তা ছাড়া উক্ত ছয়জন ছাত্রের মুক্তির দাবীতে গত ১২ই মার্চ ঢাকা, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে একযোগে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ প্রতীক অনশন ধর্মঘট পালন করে।
----------------------------


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন